ভোট একটি পবিত্র আমানত ও গণতান্ত্রিক অধিকার। তবে ভোট প্রার্থীদের সম্পর্কে জেনে-শুনে ভোট দেয়া নাগরিক দায়িত্ব ও ইসলামের বিধান। ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে টাকার লোভ, দুর্নীতি আর পেশিশক্তির কাছে জিম্মি হওয়া যাবে না। কারণ নির্বাচনের দিন ভোটের মাধ্যমে যে বীজ বপন করা হয়, তার ফসল পাওয়া যায় পরবর্তী পাঁচ বছর। তাই বুঝে-শুনে ভোটাধিকার প্রয়োগ না করলে সমূহ ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সুষ্ঠু ও যথাযথ বিকাশের জন্য শুধু ভোটের দিনই নয়, তার পূর্বের সময়ও গুরুত্বপূর্ণ। তাই ভোটের প্রাক্কালে প্রার্থীদের অতীত ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে ভালোভাবে জানা প্রয়োজন। ভোট প্রদানের সময় প্রার্থীর সততা ও যোগ্যতাকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। ভোট দেয়া এক মহান দায়িত্ব
। রোজ কিয়ামতের দিন এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালার জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে। সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিলে তো কথা নেই। কিন্তু জেনে-শুনে, অযোগ্য ও দুর্নীতিপরায়ণ প্রার্থীকে ভোট দিলে তার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। ইসলামি শরিয়ত ভোট ও ভোটাধিকারকে একটি সাক্ষ্য এবং সুপারিশ বলে মনে করে। বস্তুত কাউকে ভোট দেয়ার অর্থ হলো তার ব্যাপারে এ সাক্ষ্য দেয়া যে, তিনি সৎ ও যোগ্য। এর বিপরীতে কোনো অসৎ ও অযোগ্যকে ভোট প্রদান বস্তুত ওই প্রার্থী সম্পর্কে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া। এটা মহাপাপের কাজ। কুরআন ও হাদীসে এমন কাজ করতে বারণ করা হয়েছে। মিথ্যা সাক্ষ্য প্রসঙ্গে কুরআন কারিমে ইরশাদ হচ্ছে : ‘তোমরা মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান থেকে বিরত থাক।’ সূরা হজ : ৩০
তাই জাতীয় কিংবা স্থানীয় নির্বাচনে সৎ ও যোগ্য প্রার্থী দেখে ভোট দিতে হবে। যারা ভোটারদের মিথ্যা কথা বলে লোভ-লালসা দিয়ে প্রলুব্ধ করে, নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও প্রতারণার আশ্রয় নেয়, অন্যায় ও অবৈধ কার্যক্রমে লিপ্ত হয়, ভোট ক্রয়-বিক্রয় করে, জাল ভোট প্রদান করে, ভোটকেন্দ্র দখলসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালায়; তাদেরকে বর্জন করতে হবে। ভোটের মতো একটি পবিত্র আমানতকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে ভোটের বিষয়টি শুধু পার্থিব নয়, পরকালেও এ জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন; নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন, যে তোমাদের আমানত তোমরা তার প্রাপককে পৌঁছে দাও। আর যখন লোকদের মাঝে বিচার ফয়সালা কর, তখন নিরপেক্ষ ও ইনসাফের সাথে ফয়সালা করবে। আল্লাহ কত সুন্দরভাবে তোমাদেরকে বুঝাচ্ছেন। আর আল্লাহ সব দেখেন ও শুনেন। (সূরা নিসা: ৫৮ আয়াত)
ভোটও একটি আমানত, সুতরাং যে এই ভোটের পাওনাদার, ভোটটি তাকে পৌঁছে দেয়া আপনার পবিত্র দায়িত্ব। সৎ ও যোগ্য প্রার্থী এই ভোটের পাওনাদার। সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে আপনার ভোট প্রদান করুন। পক্ষান্তরে অযোগ্য ব্যক্তিকে ভোট দেয়া আমানতের খেয়ানত করা। হাদীস শরীফে আসছে, সাহাবাগণ রাসূল (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল কেয়ামত কখন হবে? রাসূল (সাঃ) জবাব দিলেন, যখন আমানতের খেয়ানত করা হবে। সাহাবাগণ আবার প্রশ্ন করলেন , হে আল্লাহর রাসূল! আমানতের খেয়ানত কিভাবে হয়? রাসূল (সাঃ) বললেন, যখন অযোগ্য ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেয়া হবে, তখন কিয়ামতের জন্য অপেক্ষা করবে। সুতরাং উপরিউক্ত আলোচনা থেকে একথা স্পষ্ট হলো যে, ভোটের মত পবিত্র আমানতকে যথা স্থানে প্রয়োগ করাই আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিই ভোট পাওয়ার অধিকার রাখে। তাই আসুন আমরা সৎ ও যোগ্য ব্যক্তি খুঁজে, তাদের প্রতি নিজেসহ পরবারবর্গকে ভোট প্রদান করার প্রতি যতœবান হই। আল্লাহ আমাদের সহায়ক হোন। আমীন