Main Menu

আমরা কেমন মুসলমান?

আমরা কেমন মুসলমান?

আমরা কেমন মুসলমান?

আমার বোনের শ্বশুর দীর্ঘ রোগ ভোগের পর মারা যান। (ইনালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিঊন ) তার মৃত্যু পরবর্তী কালীন দোয়া অনুষ্ঠানে আমাকেও দাওয়াত দেয় আমার ভগ্নিপতি। যেয়ে দেখি কোথায় দোয়া অনুষ্ঠান? এতো বিরাট ব্যাপার স্যাপার।

বাবা যতো দিন অসুস্থ্য  হয়ে জীবিত ছিলেন ততদিন তার ছেলে মেয়েরা তাকে সেবা যত্ন করার খুব একটা সময় সুযোগ করে উঠতে পারেন নি। তাই তার মৃত্যুর পর চল্লিশার মাধ্যমে সেই ঘাটতিটুকু বুঝি পুষিয়ে নিতে চাচ্ছেন। বড় বড় দুইটি গরু আর তিনটি খাসি জবাই হয়েছে, চাল কতো মণ তা আমার জানা নেই। দওয়াত দেওয়া হয়েছে প্রায় পাঁচশতরও বেশি মানুষকে। হাফেজি মাদ্রাসা থেকে ২০/২৫ জন তালেবে এলেম আনা হয়েছে যারা দুলেদুলে কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করছে। এদের পড়া দেখে বোঝা যাচ্ছে এইভাবে বিভিন্ন জায়গায় যেয়ে কুরআন পড়ায় এরা অভ্যস্ত। দূরের কাছের সব আত্মীয় স্বজনের উপস্থিতিতে বাড়িতে যেনো একটা আনন্দের ঢেউ খেলে যাচ্ছে। কারো মধ্যে এতটুকু শোকের বালাই নেই।

অতগুলো গরু, খাসি জবাই আর গোশত তৈরী করতে সারা রাত জাগতে হয়েছে কিছু মানুষকে। তাই তাদের জন্য ভি,সি,ডির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারা রাতভর সিনেমা দেখেছে আর কাটাকাটি রান্না-বান্নার কাজ করেছে। একজন মাওলানা সাহেব আছেন, তিনি ঘুরে ঘুরে সবকিছু তদারকি করছেন। খাওয়া দাওয়ার আগেই মিলাদ পড়ালেন। দোয়া করলেন কবরবাসীদের জন্য। তারপর গোরস্থানে যেয়ে কবর যেয়ারত করলেন নারী পুরুষ সবাইকে নিয়ে। খাওয়ার পর মাওলানাকে বিদায় করা হলো লুঙ্গি ও পাঞ্জাবী দিয়ে। তাছাড়াও টাকা চাল ও প্রচুর পরিমাণে গোশত দেওয়া হয়েছে। এই অনুষ্ঠানের নাম হলো চল্লিশা বের করা। অনুষ্ঠান শেষ করতে এদের খরচ হলো প্রায় ৫৫/৬০ হাজার টাকা। আমার ভগ্নিপতিকে একটু বোঝানোর চেষ্টা করে বললাম, তোমরা যে কাজটা করছ তা মোটেও ইসলাম সম্মত নয়। সে আমাকে বুঝিয়ে বলল, এসব কথা এখানে বলা যাবে না। এটাই আমাদের এখানকার নিয়ম। বাপ দাদার কাল থেকে চলে আসছে এই সিষ্টেম। আমার বাবাও এইভাবে তার বাবার চল্লিশা বের করেছে। এখানকার সবার ধারণা চল্লিশা বের না করা পর্যন্ত আত্মা শান্তি পায় না। কেঁদে কেঁদে বাড়ির আনাচে কানাচে ঘুরতে থাকে।

আমি শুধু বললাম, তুমি অর্থসহ কুরআন পড়েছ, হাদীস পড়েছ, তুমিও কি এসব বিশ্বাস করো?  দুলাল হেসে বলল, আমার বিশ্বাস অবিশ্বাসে কিছু আসে যায় না। আমার কথা কেউ মানবে না। এই যে আমাদের মাওলানা সাব উনি কী কুরআন হাদীস পড়েন নি? কী করব বলেন? তাই আমিই এদের কথা মেনে চলি। হাসতে হাসতে চলে গেলো দুলাল। আল কুরআনে কী এদের কথাই বলা হয়েছে? তারা বলে আমাদের বাপ দাদাদের যা করতে দেখেছি আমরা তো তাই করবো। কিংবা এরা কী সেই লোক? তাদের জন্য সমান;  তোমরা তাদের সতর্ক কর বা না করো- তারা মেনে নেবে না। আল্লাহ তাদের হৃদয় ও কানে মোহর মেরে দিয়েছেন। (সূরা বাকারা-৭)

নাকি এর জন্য আমরাই দায়ী যারা ‘দায়ীইল্লাল্লাহ’ বলে দাবী করি অথচ তাদের কাছে সঠিক দাওয়াতটা পৌঁছাতে পারি নি।

আমাদের দেশের প্রায় সব জায়গাতেই এই অনুষ্ঠান বিভিন্ন নামে প্রচলিত আছে। যার প্রকৃত নাম শ্রাদ্ধ। যা হিন্দুদের শেষকৃত অনুষ্ঠান। হিন্দুরা যাকে জল বলে আমরা তাকে বলি পানি। এ যেন ঠিক তেমনি। হিন্দুরা বলে শ্রাদ্ধ আর আমরা বলি চল্লিশা জেয়াফত, কুলখানী। যে নামেই ডাকি না কেন জিনিস একই। এই অনুষ্ঠান সম্পূর্ণভাবে হিন্দুদের। এর সাথে ইসলামের সামান্যতম সম্পর্ক নেই। সাওয়াবের তো প্রশ্নই আসেনা। রাসূল (সা.) এর কাছে এক ব্যক্তি এসে বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার মা মারা গেছেন, আমি এখন কী করবো। রাসূল (সা.) বললেন; তোমরা মায়ের জন্য দোয়া করো আর তার আত্মীয় স্বজনের সাথে ভালো ব্যবহার করো।

হযরত ওমর (রা.) এর মৃত্যুর পর তার পুত্র আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর দূরের এক বেদুইন পল্লীতে গেলেন বেশ কিছু উপঢৌকনাদি নিয়ে বেদুইন সর্দারের কাছে। সর্দার চিনতে না পেরে বললেন, কে বাবা তুমি? আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর সালাম দিয়ে বললেন, আমি হযরত ওমর (রা.) এর পুত্র। আমি ছোট বেলায় বাবার সঙ্গে আপনার এখানে এসেছি। আমার বাবা মারা গেছেন, আপনি আমার বাবার বন্ধু ছিলেন। বাবার হক আদায় করার জন্য আপনার কাছে এসেছি। বৃদ্ধ সর্দার আব্দুল্লাহকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলেন। হযরত ওমর (রা.) এর জন্য অনেক দোয়া করলেন। এই আমল রাসূল (সা.) শিখিয়েছেন।

আল্লাহ পাক একটা দোয়াও শিখিয়েছেন ‘রাব্বির হামহুমা কামা রব্বা ইয়ানী সগীরা’। অর্থ- ‘হে আল্লাহ! আমার বাবা মাকে তুমি তেমনি আদরে রাখ যেমন আদর যতেœ শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছে।’ আর বাবা মা জীবিত থাকতে তাদের সাথে করণীয় সম্পর্কে বলা হয়েছে ‘পিতা মাতার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করো। যদি তোমাদের কাছে তাদের কোনো একজন বা উভয়ে বৃদ্ধ অবস্থায় থাকে। তাহলে তাদের কে উহ্ পর্যন্ত বলো না এবং তাদেরকে ধমকের সুরে জবাব দিয়ো না বরং তাদের মর্যদা সহকারে কথা বলো। আর দয়া ও কোমলতা সহকারে তাদের সামনে বিনম্র থাকো।’ (সূরা বনী ইসরাইল-২৩)

কিন্তু বাবা মা- এর মৃত্যুর পর এই ভোজ অনুষ্ঠানের কথা আল্লাহ কিংবা রাসূল (সা.) কোনো দিন বলেননি। শুধু বাবা মা বলি কেন? যে কোন আত্মীয় স্বজন মারা গেলে এই ধরনের অনুষ্ঠান করা জঘন্যতম বিদায়াত। এই অনুষ্ঠানে কোনো একটা কাজের সাথেও ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। এই অনুষ্ঠানের মধ্যে আমরা কয়েকটি কাজ দেখতে পাই-যাকে আমরা আপাত দৃষ্টিতে ভালো কাজ  মনে করি। যেমন

১. গরু খাসি জবাই করে ঢালাও ভাবে মানুষকে একবেলা খাওয়ানো।

২. হাফেজ দিয়ে কুরআন খতম করানো।

৩. সবাই মিলে কবর জেয়ারত করা।

৪. মীলাদ পড়া।

৫. মাওলানা সাহেবকে তুষ্ট করা।

এই কাজগুলো কুরআন ও হাদীস দিয়ে বিশ্লেষণ করলে কাজগুলো সঠিক না বেঠিক তা বোঝা যাবে। প্রথমেই বুঝতে হবে ইবাদাত কাকে বলে? মনে রাখতে হবে রাসূল (সা.) যেভাবে যে কাজ করেছেন সেভাবে সেই কাজ করার নামই ইবাদাত। আর ইবাদাতের বিপরীত কাজ হলো বিদায়াত। অর্থাৎ রাসূল (সা.) যে কাজ করেননি করতে বলেননি সেই কাজ সাওয়াবের আশায় করার নাম বিদায়াত।

১. অতএব কারো মৃত্যুর পরে এইভাবে অনুষ্ঠান করে মানুষকে খাওয়ানোর মধ্যে সওয়াব তো নেই বরঞ্চ এই সব অসুষ্ঠানে যেভাবে বেপর্দা হয় তা কি কেউ ভেবে দেখে?

২. টাকা দিয়ে হাফেজ দ্বারা কুরআন পড়িয়ে নেওয়ার মধ্যে কি করে সাওয়াব হতে পারে? কুরআন যে পড়ে তার সওয়াব হয়। কিন্তু সাওয়াব কি কখনও বিক্রি করা যায়? আর টাকা পাওয়ার নিয়তে যে কুরআন পড়ে তার তো সওয়াব হয়ই না, তা আবার অন্যকে দেবে কি? একজনে খাবে আর অন্য একজনের পেট ভরবে এ যেমন সম্ভব না তেমনি একজনে কুরআন পড়বে আর অন্য একজনকে তার সওয়াব বখশিস করবে তাও কিছুতেই সম্ভব না।  কুরআন পড়ানোর এই পদ্ধতিটা সম্পূর্ণ বিদায়াত।

৩. কবর জেয়ারত করলে কবরবাসীর কোনো উপকার হয় না। কবরবাসীর জন্য দোয়া করতে হলে যে কোন জায়গা থেকেই করা যায়। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা কবর জেয়ারত করো তাহলে তোমাদের মন নরম হবে।’ অর্থাৎ যে কবর জেয়ারত করবে তার মৃত্যুর কথা স্মরণ হবে, মন নরম হবে এবং নিজেকে অন্যায় ও পাপ থেকে দূরে রাখতে পারবে।

৪. মীলাদ শব্দের অর্থই হলো জন্মদিন। মিলাদুন্নবী মানে নবী (সা.) এর জন্মদিন। কারো মৃত্যু দিনকে জন্মদিন বলার মতো হাস্যকর আর কী হতে পারে? এই অনুষ্ঠান আল কুরআন কিংবা রাসূল (সা.) এর হাদীস থেকে পাওয়া যায় না। এই কাজটাও বিদায়াত।

৫. তারপর থাকল মাওলানা সাবকে তুষ্ট করা। মাওলানা সাবকে তুষ্ট করতে যা যা করা হয় তাতো রীতিমতো হারাম। হিন্দু ধর্ম থেকে চুরি করা কাজ। হিন্দুরা যেমন কেউ মারা গেলে শ্রাদ্ধের পর ব্রাহ্মণকে যে দান দক্ষিণা দেয় আত্মার মুক্তির জন্য, ঠিক সেই কাজটাই করছি আমরা মুসলমান নামধারীরা। আর এই তথাকথিত মাওলানারা এই সব ধরে রেখেছে। এরা কী না বুঝে এসব কাজ করছে? নাকি বুঝে সুঝে জাহান্নামের আগুনে পেট ভরছে, জানি না। ইবাদাত মনে করে এতোগুলো বিদায়াত ও কবিরা গুনাহ করে আত্মতুষ্টি লাভ করে আমরা আমাদের দেশে সমাজে সগৌরবে মুসলমান হিসাবে টিকে আছি। অনেকে আবার বোঝে, এগুলো ইবাদাত নয়। আল কুরআন কিংবা হাদীসে এসব নেই শুধু সমাজ এবং প্রচলনের জন্য করে। তারা বিবেকের কাছে একটু প্রশ্ন করুন তো এই সব বিদায়াতের মধ্যে নিজেকে নিমজ্জিত রেখে আল্লাহপাকের দরবারে মুসলমান হিসেবে পরিচয় দেওয়া যাবে তো? পাওয়া যাবে তো রাসূল (সা.) এর শাফায়াত? নাকি শেষ পর্যন্ত মিলবে ‘ছুহকান-ছুহকান ’ দূর হয়ে যাও দূর হয়ে যাও।

 

ফারজানা এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরল, ‘কেমন আছিস?’ হাসি মুখে ‘ভালো আছি’ বলে ওকে ধরে সোফায় বসালাম। বললাম ‘তারপর তুই কেমন আছিস? বাচ্চারা কেমন আছে? প্রফেসর সাবেব কেমন আছেন?

‘সব ভালো- সব ভালো’ বলে কন্ঠস্বর একটু নিচু করে আবার বলল,‘বাসায় অনেক লোকজন মনে হচ্ছে। মেহমান এসেছে বুঝি? বললাম ‘হ্যাঁ আমার ভাসুর, জা, আর তাদের ছেলে মেয়ে…’

কথা শেষ করতে না দিয়ে ফারজানা বলল, এই সব মেহমানের জন্য তোর বেপর্দা হয় না? তোর ভাসুরের ছেলে কতো বড়?’ বললাম, ‘এই ১৫/১৬ বছর হবে। এবার এস.এস.সি দেবে।’ ‘তাহলে তো বেশ বড়। এত বড় ছেলে- তা আবার গ্রামের ছেলে। যখন তখন হুট করে ঘরে ঢুকে পড়ে না? বললাম, ছেলে তো ছোট মানুষ। আমার ভাসুর ও পর্দার ব্যাপারটা ঠিক মতো বোঝে না। সেও যখন তখন ঢুকে পড়ে। আমাকেই একটু সাবধান হতে হচ্ছে।’

‘ও তাই বুঝি এতো ঢোলা ফুল হাতা ম্যাস্কি পড়ে আছিস?’

বললাম, ‘হ্যাঁ, আত্মীয় স্বজন তো আসবেই। তাদের আদর যত্নও করতে হবে। আমার ভাসুর তো আবার আমি তুলে না দিলে খেতেই চায় না।

ফারজানা ঠোঁট উল্টিয়ে বেশ গর্বের সাথে বলল, ‘ঐ সব আব্দার আমার কাছে নেই। আল্লাহর হুকুমের ব্যাপারে কারো সাথে আমার খাতির নেই। সেদিন কি হয়েছে শোন বলে, যে কাহিনী আমাকে শোনালো, আমি স্তব্ধ হয়ে বসে থাকলাম।’ ঘটনা এই রকম ফারজানার ছোট ননদের স্বামী তার এক বন্ধুকে নিয়ে ফারজানাদের বাসায় বেড়াতে এসেছে। বছর খানেক হলো বিয়ে হয়েছে। ভদ্রলোক উপজেলা শহরের এক কলেজের প্রভাষক। অফিসিয়াল কাজে জেলা শহরে এসেছে। সেই সুবাদে ফারজানাদের বাসায়। কলিংবেলে নক করতেই ফারজানার মেয়ে দরজা খুলে দেয়। বন্ধুকে ড্রইংরুমে বসিয়ে রেখে ভদ্রলোক বড় এক ব্যাগ আপেল আর কমলা নিয়ে বাসার ভেতর ঢুকতেই ফারজানার সামনা সামনি হয়ে যায়। ননদাই সালাম দিয়ে হাসিমুখে ফলের ব্যাগটা ফারজানার দিকে এগিয়ে ধরতেই ফারজানা ক্ষিপ্ত বাঘিনীর মতো ফলের ব্যাগটা ছুড়ে ফেলে দেয়। তারপর গর্জন করে ওঠে, ‘বেঈমানের বাচ্চা তোর ফল খাওয়ার জন্য আমি বসে আছি নাকি? তুই বাসার ভেতর ঢুকলি ক্যান? তুই আমাকে বেপর্দা করলি ক্যান? তোর মতো আত্মীয় আমার দরকার নেই। এই মুহূর্তে আমার ঘর থেকে বের হয়ে যা।’ ননদাই একটা কথারও জবাব দেয় নি। মাথা নিচু করে বন্ধুর হাত ধরে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। ফারজানার ভাষায়,‘ ছোড়ার মুখে আর কথা নেই। মুখ চুন করে বন্ধুর হাত ধরে বেড়িয়ে গেছে।’ হাসতে লাগলো ফারজানা বিজয়নীর মতো শোন, ওর বন্ধু বলছে কি হয়েছে, ছোড়া বলে কিনা আমার ভাবীর মাথায় একটু ছিট আছে। মাঝে মাঝে বাড়ে। এখন তার বাড়তি সময়। এই সময় সে কাউকে চেনে না। আমি এবার হেসে ফেললাম।  বললাম, ‘ তার মানে বন্ধুর কাছে প্রমাণ করেছে তুই পাগল।’ হ্যাঁ। কতো বড় বদমাইশ দেখলি তো?

বললাম, ‘তা কথাটা কিন্তু ঠিকই বলেছে তোর ননদাই। তোর আচরণটা পাগলের মতোই হয়েছে। বন্ধুর কাছে এই কথা বলা ছাড়া তোর ননদাইÑএর তো আর উপায় ছিল না। তোর এই ননদাই আর জীবনে তোর বাসায় আসবে?

‘না আসুক। তাই বলে ঘরের মধ্যে আমি কি অবস্থায় না কি অবস্থায় আছি তা না জেনেই হুট করে আমার ঘরে ঢুকে পড়বে?

ফারজানা যে পর্দা দেখালো ইসলাম তাকে এভাবে পর্দা করতে বলেনি। পর্দার নামে নিশ্চয়ই আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শিক্ষা ইসলাম দেয় না। আমি পরে খবর নিয়ে জেনেছি ফারজানার ঐ আচরণে তার শ্বশুর শাশুড়ি অত্যন্ত মন খারাপ করেছে। ফারজানা তার স্বামীর পক্ষের কোনো আত্মীয় স্বজনের বাড়ি যায় না। তাদের বিয়ে শাদী বা অন্য কোনো অনুষ্ঠানেও যায় না। কারণ আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে গেলে তার নাকি পর্দা রক্ষা হয় না । এই দিকের কারো সাথেই ফারজানার সুসম্পর্ক নেই। তারা ফারজানাকে ঘৃণা করে-ফারজানাও তাদের ঘৃণা করে।

ফারজানার ননদাই ‘আসেমের’ আচরণ থেকেও বোঝা গেছে ইসলামী বিধান সম্পর্কে তার কোন ধারণা নেই। কারো বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার নিয়মও ইসলাম শিক্ষা দিয়েছে, গৃহে ঢোকার আগে গৃহবাসীকে ছালাম দেওয়া ও গৃহবাসীর অনুমতি নেওয়া ইসলমের নির্দেশ। এই নির্দেশ আসেম মানে নি। আমাদের দেশের শতকার ৯৮ জন মুসলমানই এই রকম। এদের কাছে কৈফিয়ত চাওয়া হলে এরা অবলীলায় বলে দেবেন, ‘কি জানি? আমরা অতসব জানি না। ’ এই না জানার মধ্যে তাদের কোনো  লজ্জাও নেই। কিন্তু ফারজানা? ফারজানারা তো ইসলামের ধারক বাহক হয়ে আছে। ওরা যা করে ইসলামের নামেই করে। ওরা যদি দোষ করে সে দোষ ইসলমের হয়। ওরা যা কিছু ভালো করে সে প্রশংসাও ইসলামের হয়। এদের ব্যবহারে এদের আচরণে মানুষ ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হবে এমনই তো কথা ছিল।

কিন্তু বাস্তবে হচ্ছে তার বিপরীত। পাড়া প্রতিবেশী দুরে থাকুক, আমাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজনেরাই আমাদের পছন্দ করে না । দীর্ঘশ্বাসের সাথে বুক চিরে বের হয়ে আসে- “আমরা কেমন মুসলমান?”

Related Post