নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি, জাতি বা সম্প্রদায়ের জন্য আল কুরআন অবতীর্ণ হয়নি। সুনির্দিষ্ট কোনো সীমারেখা, ভূখণ্ড, দেশ বা রাষ্ট্রের জন্যও কুরআন আসেনি। এই পুস্তকখানা নির্ধারিত কোনো সময় বা গণ্ডির মধ্যেও আবদ্ধ নয়। বরং এই গ্রন্থটি হলো সব মানুষের, সব দেশের এবং পৃথিবী ধ্বংসের পূর্বণ পর্যন্ত যা সবার কাক্সিত চাহিদা পূরণ করতে সম। এ কুরআন আল্লাহর দেয়া পথনির্দেশ (সূরা জুমার, ২৩)। আল কুরআন নাজিল করা হয়েছে মানবজাতির জীবনযাপনের ব্যবস্থা হিসেবে। আর এই গ্রন্থ এমন অকাট্য ও সুস্পষ্ট নির্দেশিকা সংবলিত, যা সঠিক পথ দেখায় এবং সত্য মিথ্যার তফাৎ পরিষ্কার করে দেয় (সূরা আল বাকারা, ১৮৫)।
তাই কুরআন হলো সমগ্র মানবজাতির জন্য গ্রহণযোগ্য একমাত্র সংবিধান। অহি-ভিত্তিক এ সংবিধান হলো চিরন্তন শাশ্বত। অন্য সংবিধান বা শাসনতন্ত্র দিয়ে কোনো শ্রেণিপেশার নাগরিক কামিয়াব হতে পারবে না। কোনো মুসলিম অন্য কোনো সংবিধান বা কনস্টিটিউশনের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখতে পারবে না। কুরআন ব্যতিরেকে অন্য কোনো সাংবিধানিক দর্শনকে গ্রহণ করে মুসলিম পরিচয়ের সুযোগ নেই। আল কুরআনের হুকুমাবলিই ইসলাম অনুসারীদের যাপিত জীবনের ইশতেহার। তাই আল কুরআনকেই সাথী হিসেবে গ্রহণ করতে হবে এ জাতিকে। কুরআন গবেষণাই হতে হবে মুসলমানদের দৈনন্দিন কার্যতালিকার প্রধান। কুরআন নাজিলের উদ্দেশ্য এটাই। ‘এটা একটা বরকতময় কিতাব, যা (হে নবী) আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, যাতে তারা এর আয়াত সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণা করে এবং জ্ঞানী ও চিন্তাশীলেরা তা থেকে উপদেশ গ্রহণ করে’ (সূরা আসসুয়াদ : ২৯)।
কুরআন অধ্যয়ন তথা বুঝে বুঝে পড়া এবং কুরআন নিয়ে চিন্তাভাবনা ও গবেষণা করে তা থেকে উপদেশ গ্রহণ করার জন্যই কুরআন নাজিল করা হয়েছে। এটাই কুরআন নাজিলের মূল উদ্দেশ্য। কুরআনকে তার মূল উদ্দেশ্যের বাইরে মূল আহ্বানকে বাদ দিয়ে অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা কুরআনকে অবমূল্যায়ন বা অবমাননার শামিল।
কুরআন মাজিদ সব মানুষের প্রতি নাজিলকৃত এক সৌভাগ্যময় গ্রন্থ। এই সংবিধান অনুসরণ, অনুধাবন, হৃদয়ঙ্গম এবং এর আলোকে সামষ্টিক জীবন গড়ে তুললে তাদের কল্যাণ ও সৌভাগ্য বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। এটা দুনিয়া ও আখিরাত তথা উভয় জাহানের সফলতা ও ব্যর্থতার চাবিকাঠি। এই সংবিধানই আরবের নিকৃষ্ট বর্বর অসভ্য, নরপিশাচ, দানব, খুনি এবং ডাকাত দলকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষে পরিণত করেছিল। দ্বিতীয় খলিফা উমর রা: এর সত্যায়ন করে বলেছিলেন, আমরা ছিলাম বর্বর অসভ্য অর্বাচীনের দল, আমাদের সুসভ্য মার্জিত রুচিবান মানুষ বানিয়েছে এই কুরআনুল কারি। সমাপ্ত