Main Menu

আল্লাহর তাআলার পরিচয়

পূর্বে প্রকাশিতের পর

মুরগি ও ডিমের বিস্ময়কর রহস্য

মোরগ ও মুরগি এবং ডিম

মোরগ ও মুরগি এবং ডিম

সৃষ্টির অগণিত রহস্যের মধ্যে আমাদের গৃহপালিত পক্ষীকুলের একটি হল মোরগ মুরগি। তাকিয়ে দেখুন তাদের জন্ম রহস্য এবং চলাফেরার মধ্যে কত আশ্চর্যজনক দৃশ্যমান ও অদৃশ্য বিষয় রয়েছে। মোরগ-মুরগি ভোর বেলায় ঘর থেকে বেরিয়ে এসেই তারা তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্যের সন্ধানে আবর্জনার স্তূপের দিকে এগিয়ে যায় এবং সেখান থেকে তারা পছন্দ ও রুচি-মত খাদ্য সংগ্রহ করতে থাকে। তাদের বিচিত্র পছন্দ থেকে পোকামাকড়, সাপের বাচ্চা, বিচ্ছু, কীটপতঙ্গ,ঘাস, ফল-ফুল, কাচ পাথর বালি সোনা-চাঁদি-কিছুই বাদ পড়ে না। তাদের পাকস্থলী আল্লাহ তা‘আলার নির্মিত এমনই এক অভিনব কারখানা যেখানে পড়ার সাথে সাথে সকল কিছু হজম বা আত্মস্থ হয়ে যায়। প্রয়োজনীয় উপাদান তাদের শরীরে পৌঁছে যাওয়ার পর বর্জ্য-পদার্থ মল আকারে বেরিয়ে যায়। এমন পাকস্থলী বাঘ-ভল্লুক হাতি-ঘোড়া, এমনকি মানুষেরও নেই, যেখানে লোহা-কাচ পাথর, শাক-সবজি, ঘাস-পাতা, তরিতরকারি, গোশত, মাছ-সবকিছুই হজম হয়ে যায়। যা তার শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রয়োজন মেটানোর জন্য প্রকৃতি থেকে উপাদান সংগ্রহ করে। শুধু তাই নয়, রাব্বুল আলামিন তার মধ্যে এমন বীজ রেখে দিয়েছেন, যার ফলে এমনি আরো মুরগি পয়দা হবে এবং দুনিয়ায় তাদের বংশ বিস্তার হতে থাকবে। এইভাবে, প্রতিনিয়তই আমরা দেখতে পাব যে প্রকৃতির মধ্যে অবস্থিত জীব-জন্তু ও পক্ষীকুলকে আল্লাহ তা‘আলা ভিন্ন ধরনের ওহি বা ইলহাম দ্বারা তাদের কার্যক্রম ও খাদ্য গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ করছেন। রাব্বুল আলামিনের ইলহামী ইশারাতে মুরগি জমিনের অভ্যন্তরে ও উপরিভাগের অসংখ্য জিনিস থেকে ডিম দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় মালমসলা সংগ্রহ করে নেয়। কিন্তু যখন ডিম দেয়ার মেয়াদ শেষ হয়ে যায় তখন আল্লাহপাক তাকে গোপন ওহির মাধ্যমে নির্দেশ দেন : এখন তার এতসব খাদ্য দরকার নেই, এতদিন ডিমের খোলস শক্ত বানানোর জন্য নানাবিধ খাদ্যসহ ওইসব ধাতব দ্রব্য প্রয়োজন ছিল। এখন ডিম দেয়া বন্ধ, কাজেই ঐগুলি আর খেয়ো না এবং প্রজননের জন্য এখন নর ও মাদির মিলনের দরকার নেই। এবার একুশ দিনের জন্য বসে যাও, ডিমগুলি তা দিতে থাক। এ জীবনটাকে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদে যতটুকু প্রয়োজন আল্লাহ তা‘আলার হুকুমে ততটুকু খাদ্য গ্রহণের জন্য দিনে একবার বের হবে। কতটুকু তাপ কত সময় ধরে দিতে হবে সে বিষয়েও তাকে ইলহামের মাধ্যমে জানানো হয়। তাই সে প্রথম সপ্তাহে একটি নির্দিষ্ট নিয়মে বেরিয়ে কিছু খাবার খেয়ে আবার গিয়ে বসে। দ্বিতীয় সপ্তাহে তার বের হওয়ার সময় আরও কমিয়ে দেওয়া হয় এবং তৃতীয় সপ্তাহে তাপ আরও দীর্ঘক্ষণ ধরে রাখার প্রয়োজনে ডিম থেকে উঠে আসা আরও কমিয়ে দেয়া হয়। শুধু যে ডিমের তাপ সংরক্ষিত রাখার জন্য তার বসে থাকতে হয়, তা নয়, বরং ডিমগুলি মাঝে মাঝে নাড়তে হয়। নেড়েচেড়ে তার সকল দিকের পরিচর্যা সুসমঞ্জসভাবে করা লাগে। এ বিষয়েও তাকে গায়েবি নির্দেশ দেয়া হয়। একুশ দিন পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর ডিমের মধ্যে বাচ্চার গঠন যখন পূর্ণ হয়ে যায় তখন গায়েবি নির্দেশ আসে : এখন আর ডিম নাড়াচাড়া নয়, এখন দুনিয়ার জীবনে পদার্পণ করার জন্য বাচ্চা প্রস্তুত, তার দেহ অত্যন্ত নাজুক ; অতএব সে নিজে নিজে চেষ্টা করে শক্ত খোলটি ভেঙে ফেলে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসবে। সুতরাং সবর করতে হবে, যখন তার কানে হালকা হালকা মনোরম আওয়াজ আসতে থাকে। এ সময়ে বাচ্চাকে দেখার জন্য মুরগিটি অস্থির হয়ে উঠে। এজন্য সে ডিমের উপর বার বার ঠোকর দিতে থাকে। তখন তাকে সতর্ক করার জন্য তার কানে গায়েবি শব্দ বেসে আসে : হে নাদান মুরগি, তোর সামান্য ভুলের কারণে ডিমের মধ্যে এতদিন ধরে লালিত বাচ্চাটি মারা যেতে পারে। তুই যদি তোর চঞ্চু দিয়ে ঠোকর মেরে বাচ্চাকে তাড়াতাড়ি বের করার চেষ্টা করিস সেই আঘাত বা চাপে বাচ্চাটা মারা যেতে পারে। সুতরাং মুরগির কর্তব্য হচ্ছে, বাচ্চা নিজে নিজেই খোল ভেঙে বেরিয়ে আসুক-তার জন্য অপেক্ষা করতে থাকা। গায়েবের জগতে আল্লাহ তা‘আলার প্রতিপালন, রহমত এবং হেদায়েত দানের কাজ একই সাথে চলছে।

এখন আসুন, আমরা বুঝতে চেষ্টা করি কেমন করে অদৃশ্য জগৎ থেকে কীভাবে ডিমের মধ্যে প্রাণ সৃষ্টি সম্ভব হয়। অতি দুর্বল নবজাতক মুরগি বা মুরগির বাচ্চা কঠিন একটি পরদা ও তার উপরের শক্ত খোলের মধ্যে কীভাবে প্রাণ পেল, কীভাবে বন্দী জীবন যাপন করল, কীভাবে পেল পরদা ও খোলের জিন্দানখানা ভেঙে দুনিয়াতে আসার সামর্থ্য! যে পরদা ও খোলের মধ্যে এতদিন সে বাস করল, সেখানে না ছিল চোখ খোলার কোন উপায়, না বাহু বা পাখনা মেলার জায়গা। সেখানে সে না পা বিস্তার করতে পারে, আর না বাহ্যিক জগতের সাথে তার কোন সম্পর্ক গড়ে উঠে যার ফলে বাইরের কোন সাহায্য পাওয়া তার পক্ষে সম্ভব। এ সময় তার মালিক, বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা দয়াময় আল্লাহ তা‘আলাই তার একমাত্র সাহায্যকারী এবং ত্রাণকর্তা, আর অবশ্যই তার জীবনশিরা বা শাহরগ থেকেও তিনি তার সন্নিকটে। ঐ রহস্যময় অজানা-অচেনা গভীর অন্ধকার জগৎ থেকে দিকনির্দেশনা আসে ডিমের খোলের মধ্যে আগত নবীন ঐ বাচ্চাটির জন্য এবং তখন সে তার ছোট্ট মোলায়েম ঠোঁট বা চঞ্চু দিয়ে ঠোকর মেরে মেরে পরদার স্তরগুলি ছিঁড়ে ফেলতে থাকে এবং পরিশেষে বাহিরের শক্ত খোলটি ভেঙে সে বাহিরে আসার পথ করে নেয়। ঠিক কোন্‌ মুহূর্তে কীভাবে সে পথ করে নেবে, তা তাকে জানানো হতে থাকে কুল মখলুকাতের মালিকের পক্ষ থেকে। যাঁর একক নিয়ন্ত্রণে সবকিছু চলছে ও সংঘটিত হচ্ছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে ডিমের মধ্যে রক্ষিত বিভিন্ন স্তর ও আকৃতি উদ্দেশ্যবিহীন নয়। লাটিমের মত এই গোলকটির নিচের দিকে থাকে একটি কালো ক্ষুদ্র গোলক। এই কালো বিন্দুকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে তার মাথা এবং উপরের মোটা অংশটিতে ধড়। এভাবে আরও বিভিন্ন স্তরে তার পাখনা, হৃৎপিণ্ড, যকৃৎ, পাকস্থলী ইত্যাদির গঠন হতে থাকে মালিকের ইচ্ছা মত। এসব কিছুর পরিচর্যার জন্য সে ব্যবস্থা নিতে থাকে।

ডিমের সরু অংশ যেখানে ছোট্ট গোলকটি উৎপন্ন হয়ে মাথা তৈরির কাজ করে, ঠোকর মেরে খোলসটি ভাঙ্গার কাজ কিন্তু ওখান থেকে হয় না। কারণ ঐ অংশটি থাকে অপেক্ষাকৃত ছোট ও শক্ত। ওখান থেকে মাথা বের হতে পারলেও বড় ধড়টি বের হওয়া মুশকিল। এজন্য খোলটির সাথে সংলগ্ন উপরের ঝিল্লির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে বাচ্চাটিকে ঘুরতে হয় এবং এটা রাব্বুল আলামিনের নির্দেশেই সে করে। তবে, গম্বুজের মত মোটা অংশের দিকে ঘুরে সে ঠোকরাতে থাকে না। এ পদ্ধতি তার বাহিরে বেরিয়ে আসার পথ সুগম না হয়ে তার মৃত্যু ডেকে আনবে। যেহেতু মোটা অংশে থাকে অক্সিজেন ট্যাংক, এজন্য তাকে পাশে ঠোকর দিয়ে বেরোনোর পথ করে নিতে হয়। একটু খেয়াল করলেই আমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ব্যবস্থাপনা ও সরাসরি নিয়ন্ত্রণ বুঝতে পারব। নরম তুলতুলে ঐ মুরগির বাচ্চাটির শরীরে কোন প্রকার চাপ বা আঁচড় না লাগে তার জন্য তাকে তিনি এলহামের মাধ্যমে নির্দেশ দিচ্ছেন : ধীরে ধীরে ঠোকর দিয়ে খোলটির এমনভাবে দাগ করে দাও যেন খোলটি দুর্বল হয়ে দু‘ভাগে বিভক্ত হয়ে যায় এবং তুমি আসানীতে দুনিয়ার আলোতে বেরিয়ে আসতে পার। কে তাকে এই সুনিপুণভাবে ডিমের গায়ে দাগ লাগিয়ে দেয়ার কৌশল ও টেকনিক শেখাল? এসব আর কিছু নয়, প্রকৃতির যাবতীয় বিষয়ের উপর আল্লাহ তা‘আলার নিয়ন্ত্রণ ও হেদায়েত বা ওহির মাধ্যমে পরিচালনার ফল যা ভাসা ভাসা দৃষ্টিতে তাকালে বুঝা যাবে না।

Related Post