যারা ইসলামের বিধি-বিধান ও ইসলামি আদর্শ সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করবে, সে অবশ্যই দেখতে পাবে যে মূলত: ইসলামই নারীদের যুলুম- নির্যাতন থেকে রক্ষা করছে ও তাদের ফিতনা- ফ্যাসাদ হতে মুক্তি দিয়েছে। একজন নারী ইসলামের অনুশাসনের আওতায় ও ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে অত্যন্ত পবিত্র, উন্নত ও সন্তোষজনক জীবন যাপন করে। ইসলামী অনুশাসন মেনে যারা জীবন যাপন করবে তাদের জীবন হবে সুন্দর, ক্লেশ-মুক্ত ও পরিচ্ছন্ন। থাকবে না কোন অশান্তি, বিশৃঙ্খলা ও দূষণ। কোন ষড়যন্ত্র তাদের স্পর্শ করতে পারবে না। ইসলামের পূর্বে জাহিলিয়্যাতের যুগের নারীদের অবস্থা কেমন ছিল, ইসলামের যুগের নারীদের অবস্থা সম্পর্কে পর্যালোচনা করলে দুয়ের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট হবে।
ইমাম বুখারী তার সহিহতে ওরওয়া ইবনে যুবাইর রা. হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী আয়েশা রা. বলেন,
روى البخاري في صحيحه عن عروة بن الزبير: أنَّ عائشة رضي الله عنها زوج النَّبيِّ أخبرته: أنَّ النكاح في الجاهلية كان على أربعة أنحاء: فنكاح منها نكاح الناس اليوم، يخطب الرَّجلُ إلى الرَّجل وليته أو ابنته فيصدقها ثم ينكحها، ونكاح آخر كان الرجل يقول لامرأته إذا طهرت من طمثها: أرسلي إلى فلان فاستبضعي منه، ويعتزلها زوجها ولا يمسُّها أبداً حتى يتبين حملها من ذلك الرجل الذي تستبضع منه، فإذا تبين حملُها أصابها زوجها إذا أحبَّ، وإنَّما يفعل ذلك رغبة في نجابة الولد، فكان هذا النكاح نكاحَ الاستبضاع، ونكاح آخر يجتمع الرَّهط دون العشرة، فيدخلون على المرأة كلُّهم يصيبها، فإذا حملت ووضعت ومرَّ ليل بعد أن تضع حملها أرسلت إليهم، فلم يستطع رجل منهم أن يمتنع، حتى يجتمعوا عندها تقول لهم: قد عرفتم الذي كان من أمركم، وقد ولدت، فهو ابنك يا فلان، تسمِّي من أحبَّت باسمه، فيلحق به ولدها، ولا يستطيع أن يمتنع عنه الرجل، والنكاح الرابع يجتمع الناس الكثيرون، فيدخلون على المرأة لا تمنع من جاءها وهنَّ البغايا، كنَّ ينصبن على أبوابهنَّ الرايات تكون علَماً، فمَن أرادهنَّ دخل عليهنَّ، فإذا حملت إحداهنَّ ووضعت حملها جمعوا لها، ودعوا لهم القافة، ثم ألحَقوا ولدَها بالذي يرون، فالتاطته به، ودُعي ابنه لا يمتنع من ذلك، فلمَّا بُعث محمد بالحقِّ هدم نكاح الجاهلية كلِّه إلاَّ نكاح الناس اليوم
“জাহিলিয়্যাতের যুগে বিবাহ ছিল চার প্রকার:
এক- বর্তমানে মানুষ যেভাবে বিবাহ করে- কোন ব্যক্তি কারো অভিভাবক অথবা কোন মেয়ের নিকট বিবাহের প্রস্তাব করে। তারপর সে তাকে মোহরানা দিয়ে বিবাহ করে।
দুই- স্বামী তার স্ত্রীকে বলত, তুমি তোমার অপবিত্রতা হতে পবিত্র হলে অমুকের নিকট গিয়ে তার কাছ থেকে তুমি উপভোগ করার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ কর। তারপর তার স্বামী তাকে সম্পূর্ণ আলাদা করে রাখত এবং যতদিন পর্যন্ত ঐ লোক যার সাথে সে যৌনাচারে লিপ্ত হয়েছিল, তার থেকে গর্ভধারণ না করা পর্যন্ত সে তাকে স্পর্শ করত না। আর যখন সে গর্ভধারণ করত, তখন চাইলে সে তার সাথে সংসার করত। অথবা ইচ্ছা করলে সে নাও করতে পারত। আর তাদের এ ধরনের অনৈতিক কাজ করার উদ্দেশ্য হল, যাতে তাদের গর্ভে যে সন্তান আসবে তা যেন মোটা তাজা ও সুঠাম দেহের অধিকারী হয়। এ বিবাহকে জাহিলি যুগে নিকাহে ইস্তেবযা বলে আখ্যায়িত করা হত।
তিন- দশজনের চেয়ে কম সংখ্যক লোক একত্র হত, তারা সকলেই পালাক্রমে একজন মহিলার সাতে সঙ্গম করত। সে তাদের থেকে গর্ভধারণ করার পর যখন সন্তান প্রসব করত এবং কয়েকদিন অতিবাহিত হত, তখন সে প্রতিটি লোকের নিকট তার কাছে উপস্থিত হওয়ার জন্য খবর পাঠাত।
নিয়ম হল, সে যাদের নিকট সংবাদ পাঠাতো। নিয়ম হল সে যাদের নিকট সংবাদ পাঠাতো তাদের কেউ তা অস্বীকার করতে পারতো না। ফলে তারা সকলে তার সামনে একত্র হত। তখন সে তাদের বলত তোমরা অবশ্যই তোমাদের বিষয়ে অবগত আছ। আমি এখন সন্তান প্রসব করছি এর দায়িত্ব তোমাদের যে কোন একজনকে নিতে হবে। তারপর সে যাকে পছন্দ করত তার নাম ধরে তাকে বলত এটি তোমার সন্তান। এ ভাবেই সে তার সন্তানকে তাদের একজনের সাথে সম্পৃক্ত করে দিত। তখন লোকটি তাকে কোন ভাবেই নিষেধ করতে পারত না।
চার- অসংখ্য মানুষ কোন এক মহিলার সাথে যৌন কর্মে মিলিত হত। তার অভ্যাস ছিল যেই, তার নিকট আসতো সে কাউকে নিষেধ বা বাধা দিত না। এ ধরনের মহিলারা হল, ব্যভিচারী মহিলা। তারা তাদের দরজায় নিদর্শন স্থাপন করত, যাতে মানুষ বুঝতে পারত যে, এখানে কোন যৌনাচারই মহিলা আছে যে কেউ ইচ্ছা করে সে তার নিকট প্রবেশ করতে পারে। তারপর যখন তারা গর্ভবতী হত এবং সন্তান প্রসব করত, তারা সবাই তার নিকট একত্র হত, এবং একজন গণককে ডাকা হত। সে যাকে ভালো মনে করত, তার সাথে সন্তানটিকে সম্পৃক্ত করে দিত এবং তাকে তার ছেলে বলে আখ্যায়িত করা হতো। নিয়ম হল গণক যাকে পছন্দ করবে সে তাকে অস্বীকার করতে পারতো না।
এভাবেই চলতে ছিল আরবদের সামাজিক অবস্থা ও তাদের নারীদের করুণ পরিণতি। তারপর যখন রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সত্যের বাণী দিয়ে দুনিয়াতে প্রেরণ করা হল, রাসূল জাহিলিয়্যাতের যুগের সব বিবাহ প্রথাকে বাদ দিলেন এবং একমাত্র বর্তমানে প্রচলিত বিবাহকে তিনি স্বীকৃতি দিলেন।” [বুখারি; ৫১২৭]
এ ছাড়াও জাহিলি যুগে নারীদের চতুষ্পদ জন্তু ও পণ্যের মত বাজারে বিক্রি করা হত, তাদের ব্যভিচার ও অনাচারের উপর বাধ্য করা হত, তাদের সম্পদের মালিক হত কিন্তু তারা মালিক হত না, তারা নিজেরা অন্যের মালিকানায় থাকত কিন্তু তারা নিজেরা মালিক হত না। তাদের স্বামীরা তাদের ধন সম্পত্তিতে ব্যয় করতে পারত কিন্তু তারা তাদের স্বামীদের সম্পত্তিতে কোন প্রকার ব্যয় করতে পারতো না। এমন কি বিভিন্ন দেশে পুরুষরা এ নিয়ে মতবিরোধ করতো যে, নারীরা কি রক্তে মাংসে গড়া পুরুষের মতই মানুষ না অন্য কোন বস্তু? তাদের এ তাদের এ মতবিরোধের প্রেক্ষাপট পারস্যের একজন সমাজ বিজ্ঞানী এ সিদ্ধান্ত দেন যে, নারীরা কোন মানুষ নয় তারা এক প্রকার জীব যাদের কোন আত্মা বা স্থায়িত্ব বলতে কিছু নাই। তবে তাদেরও গোলামী করা ও খেদমত করা কর্তব্য। তারা তাদের বোবা উট ও কুকুরের মত বোবা বানিয়ে রাখতো যাতে তারা কোন কথা বলতে না পারে এবং হাসা হাসি করতে না পারে। কারণ, তারা হল শয়তানের মন্ত্র।
তাদের নিয়মের সবচেয়ে মারাত্মক দিক হল, বাব তার মেয়েকে বিক্রি করত, এর চেয়ে আরও আশ্চর্য হল, পিতার জন্য তার মেয়েকে হত্যা করা এমনকি জীবন্ত প্রোথিত করারও অধিকার আছে। তাদের মধ্যে কতক আরবদের বিধান ছিল নারীদের যদি হত্যা করা হয়, তাহলে পুরুষের উপর কোন কিসাস বা দিয়াত দিতে হবে। তাদের সমাজে নারীদের প্রতি এত বেশি যুলুম নির্যাতন করা হত, তাতে নারীদের জীবনের কোন মূল্য ছিল না তাদের জীবনটা ছিল বিষাক্ত এবং তিক্ততাপূর্ণ। এখন পর্যন্ত ইসলামের আদর্শের বাহিরে গিয়ে যারা জীবন যাপন করছে, বর্তমানে তারা অসহনীয় এক যন্ত্রণার মধ্যে জীবন যাপন করছে। তারা অত্যন্ত কষ্টের মধ্যে আছে। যার ফলে অমুসলিম নারীরা তাদের জীবনের প্রতি অতিষ্ঠ হয়ে এ কামনা করছে যে, যদি আমরা মুসলিম সমাজে বসবাস করতে পারতাম।
একজন বিখ্যাত লেখক মাস আতুরদ, বলে, আমাদের মেয়েদের জন্য ঘরের বাহিরে গিয়ে বিভিন্ন কল কারখানায় কাজ করা হতে তারা তাদের নিজ গৃহে অবস্থান করে ঘরের কাজকর্ম সমাধান করা অনেক উত্তম। কারণ, নারীরা যখন ঘরের বাহিরে যায় তখন তাদের জীবনের সৌন্দর্য চিরতরে ধ্বংস হয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, আফসোস যদি আমাদের দেশ মুসলিম দেশের মত হত, তাহলে কতনা ভালো হত! মুসলিম দেশে নারীরা পবিত্র ও ইজ্জত-সম্মানের অধিকারী। তাদের ইজ্জত সম্মানের উপর কোন আঘাত আসে না। তাদের সাথে ঘরের সন্তানদের সাথে যে ধরনের আচরণ করা তাই করা হয়ে থাকে। আমাদের ইংলিশ দেশের জন্য এর চেয়ে খারাব আর কি হতে পারে আমরা আমাদের নারীদের নাপাকের দৃষ্টান্ত বানিয়ে রেখেছিলাম। আমাদের এ ধরনের করুণ পরিণতি কেন? আমরা কেন আমাদের মেয়েদের জন্য এমন ধরনের কাজ নির্ধারণ করি না যা তাদের স্বভাবের সাথে মিলে। যেমন তারা ঘরের কাজগুলো আঞ্জাম দেবে, বাচ্চাদের লালন পালন করবে, পুরুষদের খেদমত করবে ইত্যাদি এবং পুরুষরা যেসব কাজ করে তা হতে তারা সম্পূর্ণ বিরত থাকবে। এতে তাদের ইজ্জত সম্মান ঠিক থাকবে এবং তাদের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকবে।