Main Menu

ইসলামের দৃষ্টিতে অনলাইন ও এর ব্যবহার

ইন্টারনেট ব্যবহার বিধি

ইন্টারনেট ব্যবহার বিধি

১। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতিকল্পে অনলাইন বা ইন্টারনেট আমাদের জীবনে আজ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি গণমাধ্যম। সংবাদ সংগ্রহ, তথ্য আদান-প্রদান, সামাজিক যোগাযোগ রক্ষায় অনলাইন বা ইন্টারনেটের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সাথে সাথে অনলাইন নগ্নতা, অশ্লীলতা এবং অনৈতিকতার সয়লাবে ভরপুর একটি নোংরা হাতিয়ার। তাই অনলাইন ব্যবহারে আমাদের অবস্থান ও করণীয় সম্পর্কে যতœবান হওয়া উচিত।

২। ইন্টারনেট হল উন্মুক্ত একটি ময়দান সাদৃশ্য, যাতে রয়েছে ছোট বড় অসংখ্য ওয়েবসাইটের সমাহার। অধুনা বিশ্বের মানব জীবনের উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্রসমূহে ইন্টারনেট অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাড়িয়েছে। ইন্টারনেটে কিছু ভাল বৈধ দ্বীনি সাইটের বিপরীতে অশ্লীল ও অবৈধ সাইটের সংখ্যাও প্রচুর। যদ্দরুন মানুষ আজ দিন দিন আমল আখলাক দ্বীন ও নৈতিকতা হারিয়ে পশুর কাতারে নেমে যাচ্ছে। এছাড়াও বিধর্মী কাফির মুশরিক ও নাস্তিকদের প্রাবল্য ও অধিক নিয়ন্ত্রণ থাকায় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর অন্তরে ধীরে ধীরে ইসলাম বিমুখতা আখিরাত বিষয়ে উদাসীনতা ও তান্ডব প্রীতি সৃষ্টি হতে থাকে। যার কুফলে আজ যুব সমাজ নাস্তিকতার দিকে পা বাড়াচ্ছে।

৩। এতে সন্দেহ নাই যে, ইন্টারনেটে খারাপের পাশাপাশি কিছু ভাল উপকারী সাইট ও রয়েছে। তথাপি শয়তানের ধোকায় পরতে মানুষেরর সময় লাগে না। তাই দেখা যায়, ভাল বৈধ সাইট চালানো অবস্থায় শয়তানের প্ররোচনায় এক সময় নিষিদ্ধ সাইট গুলোতে ঢুকে পরে ও এর ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে যায়। অনেকের আবার ফেইসবুক টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোর প্রতি রয়েছে সীমাতিরিক্ত আসক্তি, যা তার দ্বীন-দুনিয়ার জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ। মোট কথা এতে উপকারের চাইতে ক্ষতির আশংকাই বেশি, যেমনটি মদ, জুয়ার ব্যাপারে কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, “আপনি বলুন, এ দু’য়ের মাঝেই রয়েছে মহাপাপ ও মানুষের জন্য উপকার। তবে এগুলার পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অধিক গুরুতর।” (সূরা বাকারা: ২১৯)

৪। তাই মুসলিমদের জন্য স্বীয় দ্বীন ও আমল-আখলাক হেফাযতের নিমিত্তে এরকম স্পর্শকাতর একটি বিষয় থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় ও সতর্ক দৃষ্টি রাখা চাই। তবে যেহেতু ক্ষেত্র বিশেষে এর প্রয়োজনীয়তা ও অনস্বীকার্য তাই দ্বীনি বা পার্থিব বৈধ প্রয়োজনে ইন্টারনেট ব্যবহার একান্ত জরুরী হলে নিন্মোক্ত শর্তাবলী ও মূলনীতি সামনে রেখে কাজ করা যেতে পারে।

ক। যে ডিভাইসটিতে ইন্টারনেট ব্যবহার করবে তাতে বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করে অশ্লীল, অবৈধ ও এডাল্ট সাইটগুলো ব্লক করে দিবে। যেন সহজে শয়তানের ধোকায় না পরে।

খ। নেটযুক্ত ডিভাইসটি লোক চক্ষুর অন্তরালে না রেখে প্রকাশ্যলোকে ব্যবহার করবে। যেন চক্ষু লজ্জায় হলেও এর অবৈধ ব্যবহার থেকে বেঁচে থাকা যায়।

গ। নেট চালানো অবস্থায় বেগানা নারী কিংবা অবৈধ, অশ্লীল কোন কিছুর ছবি সামনে এসে পরলে তৎক্ষণাত দৃষ্টি অবনত করে, প্রয়োজন না হলে উক্ত পেইজটি সরিয়ে ফেলবে।

ঘ। প্রয়োজনাতিরিক্ত নেট ব্যবহারের আসক্তি থেকে সম্পূর্ণরূপে বেঁচে থাকবে। কেননা এতে মানুষের মূল্যবান সময় ও দেহ মনে মারাত্মক ক্ষতি সাধন হয়।

ঙ। নেটের মাধ্যমে ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে কারো সাথে প্রতারনা, ধোঁকাবাজি ও ক্ষতিসাধন করবে না, কারণ এটা সত্যিকারের মুসলিম ও উম্মত হওয়ার পরিচায়ক নয়।

চ। বৈধ পার্থিব প্রয়োজনে যথা পড়াশুনা, তথ্য সংগ্রহ, লেনদেন, যোগাযোগ ইত্যাদি ও দ্বীনি প্রয়োজনেই কেবল নেট ব্যবহার সীমাবদ্ধ রাখবে। কখনোই প্রয়োজনের অতিরিক্ত বা অযথা তা ব্যবহার করবে না।

৫। ইন্টারনেটে দ্বীনি প্রোগ্রাম প্রচার করা বর্তমান মুসলিম উম্মাহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন। একদিকে রয়েছে শরিয়াহ কতৃক ছবির নিষেধাজ্ঞা আবার অন্যদিকে রয়েছে বাতিল প্রতিরোধে ছবি এবং ভিডিওযুক্ত মিডিয়ার অসামান্য অবদান। বিষয়টি একটু স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় দীর্ঘ আলোচনার দাবী রাখে। আমরা সংক্ষিপ্ত পরিসরে এ বিষয়ে কিছু আলোকপাত করছি। বর্তমানের মিডিয়া প্রযুক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম যুগে না থাকলেও শরয়ী মূলনীতি অনুসারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এর যুগ পরবর্তী নব আবিস্কৃত কোনো বস্তু শরিয়ার সাথে সাংঘর্ষিক না হলে তার ব্যবহার একজন মুসলিমের জন্য বৈধ। স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ও স্বীয় যুগে সালমান ফার্সি রাযিঃ এর পরামর্শে ইরানের অগ্নি পূজারিদের আবিস্কৃত নতুন একটি সমর কৌশল “পরিখা খনন” নীতি গ্রহণ করেছিলেন।
এতে বুঝা যায়, বাতিল প্রতিরোধে বাতিল সম্প্রদায়েরই নব্য কোন আবিস্কার ও প্রযুক্তি গ্রহণ করা যায়, যদি তা ইসলামের কোন বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক না হয়। তদ্রƒপ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা বলেন- “আর তোমরা তাদের বিরুদ্ধে প্রস্তুত রাখবে যা কিছুতে তোমরা সামর্থ হও। (সূরা আনফাল: ৬০) এই আয়াতে কারীমা থেকেও প্রমাণ হয় যে, বাতিলের মোকাবেলায় স্বীয় যুগে প্রাপ্ত বৈধ সকল প্রযুক্তি ও কৌশল গ্রহণ করা উচিত।

৬। এসব শর্ত ও মূলনীতি সামনে রেখে কোন মুসলিম ইন্টারনেট চালাতে চাইলে আশা করা যায় তা অবৈধ হবে না এবং দ্বীন দুনিয়ারসমূহ ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকতে পারবে, ইনশা আল্লাহ! অন্যথায় দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা অর্জনে ও ধ্বংস থেকে বাঁচতে কিছুতেই তার জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার উচিত ও সমীচিন হবে না।

 

Related Post