(৩) শোকাহতকে সান্ত্বনা প্রদান : সমাজের কোন ব্যক্তি কোন দুর্ঘটনায় পতিত হ’লে তার পাশে দাঁড়ানো, তাকে সান্ত্বনা প্রদান করা ও আশার বাণী শোনানো বিরাট ছওয়াবের কাজ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
مَا مِنْ مُؤْمِنٍ يُعَزِّى أَخَاهُ بِمُصِيْبَةٍ إِلاَّ كَسَاهُ اللهُ سُبْحَانَهُ مِنْ حُلَلِ الْكَرَامَةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ- ‘যে ব্যক্তি তার মুমিন ভাইকে বিপদে সান্ত্বনা প্রদান করবে, আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন তাকে সম্মানের পোশাক পরিধান করাবেন’। ( ইবনু মাজাহ হা/১৬০১)
(৪) মৃতব্যক্তির পরিবার-পরিজনের জন্য খাদ্য সরবরাহ : কোন ব্যক্তি মারা গেলে তার পরিবার-পরিজন শোকে মুহ্যমান থাকে। ঐ সময় পাড়া-প্রতিবেশীদের কর্তব্য হ’ল তাদেরকে খাদ্য সরবরাহ করা। মুতার যুদ্ধে জা‘ফর (রাঃ) শহীদ হ’লে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছাহাবীদেরকে বলেছিলেন, اصْنَعُوا لآلِ جَعْفَرٍ طَعَامًا فَقَدْ أَتَاهُمْ مَا يَشْغَلُهُمْ أَوْ أَمْرٌ يَشْغَلُهُمْ ‘তোমরা জা‘ফরের (রাঃ) পরিবারের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা কর, কেননা আজ তাদের প্রতি এমন জিনিস বা এমন বিষয় এসেছে, যা তাদেরকে ব্যস্ত রেখেছে’।(ইবনু মাজাহ হা/১৬১০; )
(৫) প্রতিবেশীর খবর রাখা ও তার সাথে ভাল ব্যবহার করা : পাড়া-প্রতিবেশীর খোঁজ-খবর নেয়া একজন মুসলিমের কর্তব্য। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,
وَاعْبُدُوا اللهَ وَلاَ تُشْرِكُوْا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِيْنِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ-
‘আল্লাহর ইবাদত কর তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না। পিতা-মাতার সাথে সৎ ব্যবহার কর এবং নিকটাত্মীয়, ইয়াতীম, মিসকীনদের সাথে ভাল ব্যবহার কর। নিকট প্রতিবেশী ও দূর প্রতিবেশী এবং সহকর্মীদের সাথে ভাল ব্যবহার কর’ (নিসা ৩৬)।
প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণ করা সম্পর্কে বহু হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যেমন- রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ قَالُوا وَمَا ذَاكَ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ الْجَارُ لاَ يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ ‘আল্লাহর কসম! সে মুমিন নয়, আল্লাহর কসম! সে মুমিন নয়, আল্লাহর কসম! সে মুমিন নয়। জিজ্ঞেস করা হ’ল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! কে সেই ব্যক্তি? তিনি বললেন, যার অন্যায় থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ থাকে না’।(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৪৯৬২) অন্য হাদীছে এসেছে, مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلاَ يُؤْذِ جَارَهُ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়’।( বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪২৪৩)
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لَيْسَ الْمُؤْمِنُ بِالَّذِيْ يَشْبَعُ وَجَارُهُ جَائِعٌ إِلَى جَنْبِهِ ‘যে ব্যক্তি তৃপ্তি সহকারে পেটপুরে খায়, অথচ তার পাশেই তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে সে ঈমানদার নয়’।(মিশকাত হা/৪৯৯১, ) অন্য হাদীছে এসেছে, لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ لاَ يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ. ‘সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়’। (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৬৩ )
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, مَا يُوْصِيْنِي بِالْجَارِ حَتَّى ظَنَنْتُ أَنَّهُ سَيُوَرِّثُهُ ‘জিবরীল (আঃ) এসে আমাকে প্রতিবেশীর ব্যাপারে অবিরত উপদেশ দিতে থাকতেন। এমনকি মনে হ’ত যে, হয়তো তিনি প্রতিবেশীকে সম্পদের অংশীদার বানিয়ে দিবেন’।(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৬৪। )
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, أَوَّلُ خَصْمَيْنِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ جَارَانِ ‘কিবয়ামতের মাঠে প্রথম যে বাদী বিবাদীর বিচার হবে তারা হচ্ছে দুই প্রতিবেশী’।(আহমাদ, মিশকাত হা/৫০০০; )
ইসলাম প্রতিবেশীদের প্রতি কর্তব্য পালনে এবং তাদের খোঁজ-খবর রাখতে মুসলিমকে সদা উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করেছে। যেমন- রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, يَا نِسَاءَ الْمُسْلِمَاتِ لاَ تَحْقِرَنَّ جَارَةٌ لِجَارَتِهَا وَلَوْ فِرْسِنَ شَاةٍ ‘হে মুসলিম মহিলাগণ! কোন প্রতিবেশী যেন তার প্রতিবেশীকে তুচ্ছ মনে না করে, এমনকি ছাগলের পায়ের ক্ষুর হ’লেও প্রতিবেশীর নিকট পাঠাবে’।(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৮৯২ ) তিনি আরো বলেন, يَا أَبَا ذَرٍّ إِذَا طَبَخْتَ مَرَقَةً فَأَكْثِرْ مَاءَهَا وَتَعَاهَدْ جِيرَانَكَ ‘হে আবূ যার! যখন তুমি তরকারী রান্না কর, তখন একটু বেশী পানি দিয়ে ঝোল বেশী করো এবং তোমার প্রতিবেশীর হক্ব পৌঁছে দাও’।( মুসলিম, মিশকাত হা/১৯৩৭।)
প্রতিবেশীর যেন কোন অসুবিধা না হয়, ইসলাম সেদিকে লক্ষ্য রাখতে বলেছে। এমনকি নিজের ক্ষতি হলেও প্রতিবেশীর সুযোগ-সুবিধা করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, لاَ يَمْنَعْ أَحَدُكُمْ جَارَهُ أَنْ يَغْرِزَ خَشَبَةً فِي جِدَارِهِ ‘এক প্রতিবেশী যেন অপর প্রতিবেশীকে দেয়ালের সাথে খুঁটি গাড়তে নিষেধ না করে’।( বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৯৬৪)
(৬) ঋণ প্রদান : জীবনে চলতে গিয়ে অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল ব্যক্তিতো বটেই, এমনকি সচ্ছল ব্যক্তিরও কখনো কখনো ঋণ গ্রহণের প্রয়োজন হ’তে পারে। এ অবস্থায় যার নিকট ঋণ প্রদানের মত অর্থ থাকবে তার দায়িত্ব হ’ল ‘করযে হাসানা’ বা সুদমুক্ত ঋণ প্রদান করে তার মুসলিম ভাইকে সহায়তা করা। এতে অনেক ছওয়াব রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُقْرِضُ مُسْلِمًا قَرْضًا مَرَّتَيْنِ إِلاَّ كَانَ كَصَدَقَتِهَا مَرَّةً ‘যদি কোন মুসলিম ব্যক্তি তার অপর কোন মুসলিম ভাইকে (টাকা-পয়সা) দুইবার ঋণ প্রদান করে তবে তার আমলনামায় এ অর্থ একবার ছাদাক্বা করে দেয়ার ছওয়াব লিখা হবে’।( ছহীহুল জামে‘ হা/৫৭৬৯(
(৭) সমস্যাগ্রস্তের সমস্যা সমাধান করা : সমাজের কোন লোক যখন সমস্যায় আক্রান্ত হয় তখন সকলের কর্তব্য হ’ল তাকে এ বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِمٍ كُرْبَةً فَرَّجَ اللهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرُبَاتِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ ‘যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের কোন দুঃখ দূর করবে তার বিনিময়ে আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন তার দুঃখ দূর করে দিবেন’। (বুখারী হা/২৪৪২; মুসলিম হা/২৫৮০ ) রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন মুমিনের পার্থিব দুঃখ-কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ ক্বিয়ামতে তার দুঃখ-কষ্ট দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোন সংকটাপন্ন ব্যক্তির সংকট নিরসন করবে, আল্লাহ তার দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় সংকট নিরসন করে দিবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। আর আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দার সাহায্য করে থাকেন, যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দা নিজ ভাইয়ের সাহায্যে রত থাকে’।(মুসলিম, তিরমিযী হা/১৯৩০ )
অপর এক হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘প্রত্যেক মুসলমানের উপর ছাদাক্বা করা ওয়াজিব। একজন প্রশ্ন করলেন, যদি কারো সে সামর্থ্য না থাকে, তবে কি হবে? … ছাহাবাদের পর্যায়ক্রমিক প্রশ্নের উত্তরে এক পর্যায় তিনি বলেন, فَيُعِيْنُ ذَا الْحَاجَةِ الْمَلْهُوْفَ ‘তাহ’লে কোন দুঃখে বা বিপদে পতিত ব্যক্তিকে সাহায্য করবে’। (মিশকাত হা/১৮৯৫।