Main Menu
أكاديمية سبيلي Sabeeli Academy

কত মত কত পথ কোন দিকে যাবো?

কত মত কত পথ কোন দিকে যাবো?

কত মত কত পথ কোন দিকে যাবো?

সাধারণত আমরা অনেক সময় একটি কথা শুনতে পাই যে, মুসলমানদের আল্লাহ এক, রাসূল এক, কিতাব এক, দ্বীন বা ধর্ম এক। কিন্তু বাস্তবে এই মুসলমানদের মধ্যেই বহু মত, বহু দল, একেক জন একেক প্রকারের কথা বলেন। অপছন্দনীয় হলেও সত্য যে, এই নানাবিধ মত কিন্তু সাধারণ জনগণ তৈরি করেনি। আলেম, পীর, বুজর্গ কিংবা নামধারী কিছু আলেমের কারণেই নিজ স্বার্থ উদ্ধারের জন্য এত মত তৈরি হয়েছে। আর এই বিভিন্ন মত ও তরিকার দ্বন্দ্ব-কলহের সুযোগ নিয়ে আন্তার্জাতিক ইসলাম বিরোধী চক্রগুলো বর্তমান মুসলিম সমাজ ও তাদের চিন্তা-চেতনায় বিভ্রান্তির ব্যাপক ধুম্রজাল বিস্তার করে যাচ্ছে।
কুরআন ও সুন্নাহর সঠিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের ধার ধারেনা এমন এক শ্রেণীর পেট পূজারী ও মাজার পূজারী ও নেড়া ফকিরের দল ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ আধুনিক শিক্ষার নামে আল্লাহদ্রোহী বস্তুবাদী চিন্তাধারা মুসলিম উম্মাহর চিন্তা-চেতনায় এই বিভ্রান্তিকে ষোলকলায় পূর্ণ করে দিয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও ভৌগলিক জাতীয়তাবাদ এই বিভ্রান্তির কণ্ঠহারে লকেটের মত স্থান করে নিয়েছে। যার ফলে মুসলিম সমাজ কালেমা তাইয়্যেবা বা ইসলামের মূল চেতনাই ভুলে গিয়েছে। আসল কর্ম বাদ দিয়ে মুসলিম সমাজ গোলক-ধাঁধাঁয় নিমজ্জিত।
মানুষের হেদায়াতের জন্য মহান আল্লাহ সর্বযুগে আসমানী কিতাবকেই বিধান হিসেবে নির্ধারিত করে দিয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে মুসলিম সমাজ জীবনের প্রায় সর্বক্ষেত্রে কুরআনকে পরিহার করে চলছে। পবিত্র কুরআনকে মন্ত্র-তন্ত্রের বই হিসেবে পড়া হচ্ছে। যেই উদ্দেশ্যে পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে, তা বেমালুম ভুলে রয়েছে। কুরআনকে শুধু তেলাওয়াতের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখছে, অর্থ বুঝার চেষ্টাই করে না। মানুষের কথা, পীর-বুজর্গের কথা ও মুরব্বীদের কথা বাস্তবে কুরআন ও সুন্নাহ থেকে বেশি গুরুত্ব লাভ করছে।
গেল শতক হতে এ যাবৎ বিশ্বে যে ক’জন সফল ইসলামী চিন্তানায়ক ও সংস্কারক আবির্ভূত হয়েছিলেন, তাদের অধিকাংশই আর আজ বেঁচে নেই। তাদের অনুসারী দলগুলো চিন্তার বিভ্রান্তি হতে মুক্ত হলেও বাস্তব জীবনে রাসূল (সা.) ও খুলাফায়ে রাশেদীনের সরল জীবন মানের ¯্রােত তাদেরকে আংশিক পরাজিত করেছে বলেই বাস্তবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। তারা সত্যের বাস্তব সাক্ষ্য হবে বলে দ্বীন ও উম্মাহর একান্ত আশা ও দাবী ছিল। আশা ছিল, তারা আধুনিক সংস্কৃতি ও দেশীয় সংস্কৃতির নামে পরিচিত অপসংস্কৃতির সফলভাবে মোকাবালা করবেন। যাতে মুসলিম সমাজ বিভ্রান্তির আবর্ত থেকে নিষ্কৃতি লাভ করে সঠিক ইসলামী চেতনা ও সংস্কৃতির সন্ধান পেতে পারে। কিছু লোক এই কাজ আঞ্জাম দেওয়ার জন্য অগ্রণী ভূমিকা রাখতে বদ্ধপরিকর হলেও, তাদেরকে বিভিন্নভাবে উপহাস করা হচ্ছে। আর অধিকাংশ লোক এ কাজে অগ্রণী ভূমিকা রেখে আলোকবর্তিকা হাতে নিয়ে এগিয়ে এলেও, বাস্তব জীবন যাত্রার ক্ষেত্রে আধুনিক জীবন মানের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে প্রচলিত সমাজ-সংস্কৃতি তাদের আলোকবর্তিকাকে মুসলিম সমাজের দৃষ্টি থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে। অপর দিকে যাদের সরল জীবনযাত্রার বাহ্যিকরূপ জাতির একাংশকে আকর্ষণ করছে, তারা কুরআনকে বাস্তবে আমল না করে সাধারণ মুসল্লিদেরকে মুরব্বী ও বুজর্গের অনুসরণের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আবার এক শ্রেণীর আলেমগণ অতিরঞ্জিত ও অলৌকিক ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জনমন আকর্ষণ করছে। সব মিলিয়ে সাধারণ জনগণ দেখতে পাচ্ছে আলেমদের মধ্যে কত মত কত পথ!
প্রায়শই আমাদের নিকট টেলিফানে, ই-মেইলে, হোয়াটসঅ্যাপে, ভাইবারে ফেসবুকে, টুইটার এক কথায় সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে কিংবা বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে বা দারসে একটি প্রশ্নে সম্মুখীন হতে হয়। তা হলো: আলেমদের এত মত কেন? হুজুর! আমরা কোন পথে যাবো?
এই প্রশ্নে সোজা উত্তর হলো: আপনাকে কোন আলেমেরই মত গ্রহণ করতে হবে না। আপনি নিজে কুরআন ও সুন্নাহর সঠিক জ্ঞান অর্জন করুন। কারণ জ্ঞানার্জন করা ফরয। কুরআন ও সুন্নাহর সঠিক জ্ঞান দ্বারা আপনি বিচার করুন। আপনাকে কী করতে হবে? দেখুন আপনি দুনিয়ার যে কোন মহৎ কাজের জন্য নিজে চিন্তা-ভাবনা করেন, এবং পারদর্শী লোকের পরামর্শ নিয়ে নিশ্চিত হয়ে কাজটি সম্পাদন করে থাকেন। তাহলে ইসলামের বেলায় এসে কেন একজন আলেমের মুখের কথার উপর তা ছেড়ে দিবেন?
আমাদের দেশের অনেক আলেমদের অবস্থা খুব’ই করুণ। যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কিংবা মসজিদে বা মাদ্রাসায় কর্মরত আছেন। কমিটির চেয়ারম্যান, সেক্রেটারী, মোতাওয়াল্লী এবং প্রভাবশালী সদস্যের মন খুশি রাখতে না পারলে চাকরী যাওয়ার ভয় থাকে। তারা চাকরী বাঁচিয়ে কথা বলেন, বিধায় কুরআন ও সুন্নাহর সঠিক কথাটি বলতে পারেন না। অনেক ক্ষেত্রেই ইমামগণ কমিটি এবং প্রভাবশালী মুসল্লিদের মত মতো চলতে বাধ্য থাকেন।
ইসলামের বিধান হলো; বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করা। কারণ এত মত এত পথতো আল্লাহ মনোনীত করেননি। তিনিতো মাত্র একটি পথ মনোনীত করেছেন। সেই পথটির নাম হলো সীরাতুল মুস্তাকীম, ইসলাম বা নবীর পথ। এই পথ হতে ছিটকে পড়লে জাহান্নাম অবধারিত। নিজের মেধা ও বিবেক খরচ করেই সঠিক পথটি নিরুপণ করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সেই তাওফীক দান করুন। আমীন

Related Post