১ম পাঠ
ভূমিকা:
অসীম শক্তি ও ক্ষমতার মালিক আল্লাহ তা’আলা হলেন একমাত্র স্রষ্টা এবং অবশিষ্ট সবই তাঁর সৃস্টি। সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা গবেষণার দ্বারা স্রষ্টার পরিচয় লাভের সাথে সাথে তাঁর শ্রেষ্টত্ব ও অসীম ক্ষমতার প্রমাণ পাওয়া যায়। মানুষ তাঁর এক বিস্ময়কর সৃষ্টি। একদিকে সে তাঁর বান্দা অপরদিকে তাঁর প্রতিনিধি। সৃষ্টিকর্তার সাথে মানুষের এই উভয়বিধ সম্পর্ক রয়েছে। এ সম্পর্ক সঠিকভাবে অনুধাবন করার জন্য প্রয়োজন জ্ঞান। আর জ্ঞানের মূল উৎস হচ্ছে কুরআন ও সুন্নাহ এ দু’টি উৎস স্বতন্ত্র ও স্বয়ংসম্পূর্ণ মর্যাদায় অভিষিক্ত। মানুষ এই জ্ঞানে সমৃদ্ধ হলে তার দায়িত্ব ও কতর্ব্য পালন করে দুনিয়া ও আখেরাতের সত্যিকার কল্যাণ ও উন্নতি এবং মুক্তি ও শান্তি লাভ করতে পারবে। শিরোনামে উল্লিখিত বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিধায় নি বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
১। জ্ঞান বা ইলম কী? ইলম এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
২।জ্ঞানের মূল উত্স কুরআন ও হাদীস
৩।কুরআনের পরিচয় ক. কুরআনের বিষয়বস্তু খ. জ্ঞানের উত্স হিসেবে কুরআন
৪।সুন্নাহর পরিচয় ক. উত্স হিসেবে সুন্নাহ, খ. সুন্নাহর বিষয়বস্তু, গ. জ্ঞানের উত্স হিসেবে সুন্নাহ, ঘ. সুন্নাহের প্রয়োজনীয়তা।
৫।উপসংহার,
ইলম বা জ্ঞান:
ইল্ম শব্দটি আরবি, অর্থ বিদ্যা, আলো, জ্ঞান, জানা, বুঝা, অনুধাবন করা, স্মৃতিপটে কোন বস্তু আসা,.এছাড়া বিভিন্ন সময় যৌগিক শব্দ হিসেবে প্রত্য পরিচয়, বোধশক্তি, বিশ্বাস, ধ্বনি বিজ্ঞান, অর্থ বিদ্যা, অলংকার শাস্ত্র, বীজগণিত, কান্তিবিদ্যা, প্রত্নবিদ্যা, প্রাণী বিদ্যা, শব্দ প্রকরণ, পর্দাথবিদ্যা, ছন্দ বিদ্যা, জোর্তিবিদ্যা, ধর্মতত্ত্ব, ধর্মশাস্ত্র, ভাষাবিজ্ঞান, পরিভাষাবিজ্ঞান, যুক্তিবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা, জোতিষ শাস্ত্র, মনোবিজ্ঞান, প্রকৌশল, নিশ্চত জ্ঞান। অর্থ সমূহেও পবিত্র কুরআনে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন স্থানে এগুলোর আলোচনা এসেছে।
পরিভাষায় ইল্ম হচ্ছে আত্মার এমন এক শক্তি ও যোগ্যতার নাম যা দ্বারা ব্যক্তি কল্যাণ ও অকল্যাণের মাঝে পার্থক্য নিরুপণ করতে পারে। দার্শনিকদের মতে,“জ্ঞান হচ্ছে অন্তরে কোন জিনিসের আকৃতি অর্জিত হওয়া। কোন জিনিসের প্রকৃত রূপ অনুধাবণ করাই জ্ঞান”।
জ্ঞানের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা:
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ هل يستوي الذين يعلمون والذين لايعلمون যারা জ্ঞান রাখে আর যারা জ্ঞান রাখেনা তারা উভয়ই কি সমান? (সূরা যুমার-০৯) অন্যত্র আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
يرفع الله الذين امنوا منكم والذين أوتوا العلم درجات
আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের মধ্যে থেকে মুমিনদের মর্যাদা সমুন্নত করেছেন, আর যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে তাদের মর্যাদা বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছেন। (সূরা মুজাদালা-১১) আল্লাহ তা’আলা আরও বলেনঃ إنما يخشى الله من عباده العلماء নিশ্চয়ই আল্লাহকে তাঁর বান্দাদের হতে আলেমগণই ভয় করেন। (সূরা ফাতির-২৮) এ প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসূল (সা) বলেনঃطلب العلم فريضة على كل مسلم প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জ্ঞান অর্জন করা ফরয। অতএব, পার্থিব ও পরকালীন জীবনে শান্তি ও সফলতার জন্য জ্ঞান অর্জন অপরিহার্য।
জ্ঞানের উত্স:
মুসলমানদের জ্ঞানের উত্স দুটিঃ ১. আল্লাহ তা’আলার বাণী। ২. মুহাম্মদ (সা) এর জীবন চরিত।
প্রতিটি বস্তু অনুধাবন ও জানার জন্য প্রয়োজন সঠিক মাধ্যম, যা দ্বারা জানা ও অনুধাবন নির্ভুল হয়। আর এ মাধ্যমটিই হচ্ছে সবচেয়ে বড় উত্স। যেহেতু আল্লাহ তা’আলা একমাত্র স্রষ্টা ও মুহাম্মদ (সা) তাঁর প্রেরিত দূত, সেহেতু তাঁর পবিত্র বাণীই হবে জ্ঞানের প্রধানতম উত্স এবং তাঁর প্রেরিত রাসূলের কথা, কাজ ও অনুমোদন হবে দ্বিতীয় উত্স।
কুরআনের পরিচয়:
পবিত্র কুরআন হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার বাণী এতে কোন সন্দেহ নেই। মূলত এটি নভোমন্ডলের গভীর ও গোপন রহস্যের উদঘাটক। বিশ্বালোকের উপর আল্লাহর নিকট থেকে বিচ্ছুরিত নির্মল আলোকধারা। এটি এমন একখানি কিতাব, যা আল্লাহর কিতাব হওয়া এবং তাতে বিবৃত সব কিছুর পরম ও অকাট্য সত্য হওয়ার ব্যপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী হয়ে যারা তাঁকে ভয় করে তাঁর বান্দাহ হিসেবে জীবন যাপন করতে প্রস্তুত এ গ্রন্থ তাদেরই জন্যে জীবন-বিধান, তাদেরই প্রদর্শন করে নির্ভূল সত্য ও শাশ্বত পথ। শুধু প্রদর্শনই করে না, সে পথে চালিয়ে ল্যস্থলে পৌছবার ব্যাপারেও এ গ্রন্থ পুরোপুরি নিয়ামক শাস্তি হিসেবে কাজ করে। আল্লাহ তা’আলা অহীর মাধ্যমে এই গ্রন্থখানি তাঁর প্রিয় নবী-রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সা) এর প্রতি নাযিল করেছেন।
**- কুরআন এর সংজ্ঞায় মুসলিম স্কলারদের অভিমত:
এর শব্দ-ভাষা-অর্থ-র্মম সবই আল্লাহর নিকট থেকে অবর্তীণ। এ গ্রন্থের ভাষা আরবী। যা অত্যন্ত স্পষ্ট ও প্রাঞ্জল। এ গ্রন্থ একদিকে বিপথগামীদের সাবধান ও সর্তক করে। অন্যদিকে আল্লাহ অনুগত লোকদের জন্যে বিতরণ করে সুসংবাদ, শুভফল ও পরিণতির আশ্বাসবাণী।
এ গ্রন্থটি ঠিক যেভাবে নবী করীম (সা) এর প্রতি নাযিল হয়েছিল ঠিক সেভাবে এখন পর্যন্ত দুনিয়াবাসীর নিকট বর্তমান রয়েছে। নাযিল হওয়ার সময় থেকে অসংখ্য লোকের মাধ্যমে লিখিত ও পাঠ আকারে বর্তমান সময়ের লোকদের নিকট পৌছেছে। অগণিত হাফেয কুরআন মুখস্থ করে রেখেছেন। মূল কুরআন রাসূলের নিজস্ব প্রযত্নে ও ব্যবস্থাপনায় নিখুঁত ভাবে লিখিত ও গ্রন্থাকারে সুবিন্যস্ত হয়েছিল। সাহাবীদের সময়ও এই গ্রন্থখানি এমনি রূপেই বর্তমান ছিল যেমন রয়েছে আজকের এই মূহুর্তে। কুরআনে এ দীর্ঘ সময়ে একটি শব্দও এদিক ওদিক হয়নি। রদ-বদল বা বিকৃতির বিন্দুমাত্র স্পর্শও লাগেনি এর কোন একদিকে। দলীল বা প্রমাণ হিসেবে এই গ্রন্থ অকাট্য। এ গ্রন্থের প্রতিটি নির্দেশ অবশ্য পালনীয়। কুরআনের অংশ-বিশেষ কিংবা সম্পূর্ণটা যে লোক অমান্য বা অস্বীকার করবে এর স্পষ্ট ঘোষণানুযায়ীই সে কাফির। আইন ও শরীয়ত রচনার ক্ষেত্রে এ গ্রন্থই হচ্ছে সর্বপ্রথম উত্স। অন্য কোন কারণে বা অন্য কোন কিছুর খাতিরে এটি উপো করা চলবে না, তা এড়িয়ে যাওয়াও যাবে না।
কুরআন আল্লাহর নিকট থেকে আরবী ভাষায় হযরত মুহাম্মদ (সা) এর প্রতি নাযিল হয়েছিল। এই মূল আরবী ভাষার গ্রন্থই কুরআন নামে অভিহিত। তা যদি দুনিয়ার অন্য কোন ভাষায় অনূদিত হয় তাহলে সেই অনুবাদকে মূল কুরআন মনে করা যাবেনা। কেননা কুরআন হচ্ছে আল্লাহর বাণী ও তার ভাবার্থ উভয়ের নাম। বড়জোর এ তার অনুবাদ বা তরজমা হতে পারে, আসল কুরআন নয়। আসল কুরআন আল্লহর কালাম।
**- পবিত্র কুরআনের বিষয়বস্তু:
কুরআনে বর্ণিত মূল প্রতিপাদ্য বিষয় পাঁচটিঃ
এক. ইলমুল আহকাম বা সাংবিধানিক জ্ঞান। ইবাদাত-উপাসনা, লেনদেন, ঘর-সংসার, আচার-অনুষ্ঠান ও রাজনীতিসহ যে কোন ক্ষেত্রে ওয়াজিব, মূবাহ, মাকরূহ ও হারাম বিষয়াদির জ্ঞানই হল সাংবিধানিক জ্ঞান।
দুই. ইলমুল মুখাসামা তথা তর্ক শাস্ত্রীয়জ্ঞান। ইয়াহুদী, নাছারা, মুশরিক ও মুনাফিক এ চার ভ্রষ্টদলের সাথে তর্ক শান্ত্রে পান্ডিত্য অর্জন করা।
তিন. ইলমুত তাযকীর বি আলাইল্লাহ অর্থাত্ আল্লাহর নিদর্শন সংক্রান্ত জ্ঞান। আল্লাহর নিদর্শন সংক্রান্ত জ্ঞান হল আসমান-যমীন সৃষ্টির রহস্য,
বান্দার দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় জ্ঞান এবং আল্লাহর সিফাতে কামালিয়া বর্ণনা করা।
চার. ইলমুত তাযকীর বি আয়্যামিল্লাহ তথা আল্লাহ তা’আলার সৃজিত বিশেষ ঘটনাসমূহের জ্ঞান। আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক স্বীয় অনুগত
বান্দাদের নেক আমলের পুরস্কার প্রদান এবং নাফরমান বান্দাদের পাপের শাস্তি প্রদান সংক্রান্ত ঘটনাবলীর বর্ণনা।
পাঁচ. ইলমুত তাযকীর বিল মাউত তথা পারলৌকিক জ্ঞান। মৃত্যু ও তৎপরবর্তী অবস্থা, হাশর-নাশর, হিসাব, মীযান এবং জান্নাত-জাহান্নাম
সম্পর্কিত জ্ঞান। এ পাঁচ প্রকার ইলমের বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদান করা এবং এ সংক্রান্ত হাদীসসমূহের বর্ণনা দান করা আলিম ও
গবেষকদের দায়িত্ব।
মূলতঃ কুরআন একদল এমন মানবজাতি সৃষ্টি করতে চায় যারা হবে একাধারে নিষ্ঠাবান, সত্যবাদী, আমানতদার, ন্যায়পরায়ণ, বিশ্বস্ত, অঙ্গীকার রাকারী, কর্মঠ, দায়িত্ব পরায়ণ, সত্য প্রতিষ্ঠায় নিবেদিত প্রাণ, নির্লোভ, পান্তরে তারা মুক্ত থাকবে মিথ্যাচার, অহংকার, কৃপণতা, গীবত, অপব্যয়- অপচয়, প্রতারণা, ক্রোধ ও রাগ, হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ লালসা, আত্মম্ভরিতা ও আত্মগৌরব, অশ্লীল কথাবার্তা, ধোঁকাও প্রতারণা, খোশামোদ- তোষামোদ ও অতিপ্রশংসার মত জঘন্য মন্দস্বভাব থেকে।
জ্ঞানের উৎস হিসেবে কুরআন:
পবিত্র কুরআন হচ্ছে জ্ঞানের মূল ও প্রধান উত্স, এটি আল্লাহ তা’আলা তাঁর রাসূলের উপর অবর্তীণ করেছেন এবং প্রথমে ইক্বরা তথা পড়া ও গবেষণার নির্দেশ দিয়েছেন। ইলম বৃদ্ধির জন্য দু‘আ করতে বলেছেন। رب زدني علما হে আমার প্রতিপালক! আমার জ্ঞানের বৃদ্ধি সাধন কর (সূরা তোয়াহা-১৪৪) رب اشرح لي صدري ويسرلي امري-হে আমার প্রতিপালক! আমার ব প্রশস্ত করে দাও (সূরা তোয়াহা-২৫) কুরআন মানব জাতির ইহকালীন যাভতীয় জ্ঞানের তথ্য ভান্ডারে সমৃদ্ধ একটি গ্রন্থ। পার্থিব জীবনের উত্কর্ষ সাধন আধুনিক বিজ্ঞানের সার্বিক দিক-দর্শন, শিল্প-সাহিত্য, তথা সকল জ্ঞান-বিজ্ঞানের মূল উত্স হিসেবে কুরআন অতুলনীয়। কুরআন মানব জাতিকে জানিয়ে দিয়েছে ল বছর পূর্বের অজানা কাহিনী চাঁদ, সূর্য, গ্রহ তারার অবস্থান ও এদের গতি-বিধির সূক্ষ্ম বিষয়াবলী।
ভুপৃষ্ঠের অভ্যন্তরের অজানা কাহিনী ও এ গ্রন্থের মাধ্যমেই মানুষ সর্ব প্রথম জ্ঞান লাভ করে। মানুষ থেকে শুরু করে পৃথিবীর সকল সৃষ্টিকুলের জন্ম ধারা ও তার জীবন ধারার রহস্য একমাত্র কুরআনের মাধ্যমেই জানা সম্ভব হয়েছে।
এ ভাবে ইহকালের সূচনা লগ্ন থেকে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত প্রয়োজনীয় সকল বস্তুর জ্ঞান এ গ্রন্থে সন্নিবেশিত রয়েছে। কুরআন মানুষকে ইহকালিন জ্ঞান দানেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। বরং পরকালিন জীবনে কি হবে, সেখানের সুখ-দুঃখ, হিসাব-নিকাশ, মুয়ামালাত কি হবে এ সকল বিষয়ের একমাত্র জ্ঞান কুরআন থেকেই লাভ করা যায়। আল্লাহ তা’আলা ঘোষনা করেছেন- ونزلنا عليك الكتاب تبيانا لكل شيئ আর আমি অবতীর্ণ করেছি তোমার উপর এমন গ্রন্থ যেখানে রয়েছে সকল বস্তুর বিস্তারিত বর্ণনা বা জ্ঞান। (সূরা আননাহল-৮৯)
আল্লাহ তায়ালা সূরা আল এমরানের ১৯০-১৯১ আয়াতে ঘোষণা করেছেন, নিঃসন্দেহে আসমানসমূহ ও যমিনের (নিখুঁত) সৃষ্টি এবং দিবা রাত্রির আবর্তনের মধ্যে জ্ঞানবান লোকদের জন্য প্রচুর নিদর্শন রয়েছে। (এ জ্ঞানবান তারা) যাঁরা দাড়িয়ে বসে এবং শুয়ে সর্বাস্থায় আল্লাহ তা’আলাকে স্মরণ করে এবং আসমানসমূহ ও যমীনের এই সৃষ্টি (নৈপূণ্য) সম্পর্কে চিন্তা-গবেষনা করে (এবং স্বতস্ফুর্ত ভাবে বলে ওঠে) হে আমাদের মালিক (সৃষ্টি জগতের) কোন কিছুই তুমি অযথা সৃষ্টি করনি। তোমার সত্তা পুত-পবিত্র, অতএব তুমি আমাদেরকে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে পরিত্রাণ দাও। অন্যত্র এভাবে বর্ণনা রয়েছে- এরা কি আমার যমিন পরিভ্রমণ করেনি, (করলে অবশ্যই) তারা দেখতে পেতো, এদের পূর্বেকার লোখকদের কি (ভয়াবহ) পরিনতি হয়েছিল।
সুন্নাহর পরিচয়:
সুন্নাহ একটি আরবী শব্দ, এক বচন বিশেষ্য, বহু বচনে সুনান, অর্থ রীতি-নীতি পদ্ধতি, পথ, পন্থা, নিয়ম, স্বভাব তা ভালো হোক বা মন্দ। যেমন রাসূল (সা) বলেছেন- من سن سنة حسنة كان له اجرها وأجرمن عمل بها إلى يوم القيامة, ومن سن سنة سيئة كان عليه وزرها ووزر من عمل بها إلى يوم القيامة যে ব্যক্তি কোন ভালো রীতি-পদ্ধতি চালু করে সে তার প্রতিদান পাবে এবং কিয়ামত পর্যন্ত যারা তার ওপর আমল করবে সে তাদের সমপরিমাণ প্রতিদানও পাবে। আর যে ব্যক্তি কোন খারাপ রীতি-পদ্ধতি চালু করবে সে তার প্রতিফল পাবে, তেমনিভাবে কিয়ামাত পর্যন্ত যারা তা অনুসরণ করবে তাদের সমপরিমাণ প্রতিফল সে পেতে থাকবে। ( সহীহ মুসলিম)
কুরআনে সুন্নাহ শব্দের ব্যবহার পাওয়া যায়, যেমন-يريد الله ليبين لكم ويهديكم سنن الذين من قبلكم আল্লাহ চান তোমাদের জন্য বর্ণনা করতে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদের পন্থায় হিদায়ত করতে। (সুরা নিসা- ২৬) এ শব্দটি কুরআনে রীতি হুকুম ও চুড়ান্ত ফায়সালা বুঝানোর জন্যও ব্যবহৃত হয়েছে। سنة الله فى الذين خلو من قبل ولن تجد لسنة الله تبديلاপূর্বে যারা অতীত হয়ে গেছে তাদের ব্যাপারে এ ছিল আল্লাহর রীতি, তুমি কখনো আল্লাহর রীতিকে কোন পরিবর্তন পাবে না (সূরা আহযাব-৬২)
মুহাদ্দিছগণের পারিভাষায় সুন্নাহ হলো- كل ما أثر عن النبي صلى الله عليه وسلم من قول أو فعل أو تقرير أو صفة خلقية أو خلقية أو سيرة سواء كان ذلك قبل البعثة أوبعدها রাসূলুল্লাহ (সা) এর নবুওয়াত পূর্ব অথবা নবুওয়াত পরবর্তী জীবনের কোন কথা, কাজ, মৌন সমর্থন, দৈহিক গঠন প্রকৃতি, নৈতিক গুণাবলী ও জীবন চরিত সম্পর্কে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে, তাই সুন্নাহ।
মুহাদ্দিছগণের এ সংজ্ঞা মতে রাসূলে কারীমের (সা) সাথে সম্পর্কিত সব কিছুই সুন্নাহ। অন্য ভাষায় রাসূল (সা) হতে বা রাসূল (সা) সংক্রান্ত কুরআন ব্যতীত যে সব বর্ণনা এসেছে সবই সুন্নাহ। রাসূলে করীমের (সা) জীবনের যে সব বিষয় তাঁর নিজের ইচ্ছাধীন নয়, যেমন তাঁর দৈহিক আকার-আকৃতি, জন্ম-মৃত্যু ইত্যাদির বর্ণনাগুলোও সুন্নাহর অন্তভ্র্ক্তূ।
উছুল বিদদের পরিভাষায় সুন্নাহ- ما نقل عن النبي صلى الله عليه وسلم من قول أو فعل أو تقرير নবী (সা) এর কথা অথবা কাজ অথবা মৌন সর্মথন সম্পর্কে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে তা হলো সুন্নাহ।
আর ফকীহদের পারিভাষায়: ماثبت عن النبي صلى الله عليه وسلم من غير افتراض ولا وجوب রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে ফরয ও ওয়াজিব ছাড়া অন্য যা কিছু প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাই সুন্নাহ।
এ সুন্নাহ ও হাদীছ চর্চার ক্ষেত্রেত্ আরো দুটি শব্দের প্রচলন আছে। যেমন আল-খাবর, আল-আছার, খবর অর্থ সংবাদ। বহু বচনে আখবার। মুহাদ্দিছগণের মতে হাদীছ ও খাবর একই অর্থবোধক। তবে অনেকে বলেছেন, নবী (সা) সম্পর্কিত বিষয়কে হাদীছ এবং অন্যদের সম্পর্কিত বিষয়কে খবর বলা হয়। — চলবে