জুমার দিনে করনীয়

 images

১ জুম’য়ার দিন গোসল করা রাসুল (সাঃ) ওয়াজিব করেছেন তাদের উপর যাদের উপর জুম’য়া ফরজ। তাদের জন্য পরিচ্ছন্নতার অংশ হিসাবে সেদিন নখ ও চুল কাটা একটি ভাল কাজ।(বুখারী: ৮৭৭, ৮৭৮, ৮৮০, ৮৯৭, ৮৯৮)।

২। জুম’আর সালাতের জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা। (বুখারী: ৮৮০)

৩। মিসওয়াক করা। (ইবনে মাজাহ ১০৯৮, বুখারী: ৮৮৭, ইঃফাঃ ৮৪৩)

৪। শরীরে তেল ব্যবহার করা। (বুখারী ৮৮৩)

৫। উত্তম পোশাক পরিধান করে জুম’য়া আদায় করা। (ইবনে মাজাহ ১০৯৭)

৬। মুসুল্লীদের ইমামের দিকে মুখ করে বসা। (তিরমিযী ৫০৯, ইবনে মাজাহ ১১৩৬)

৭। মনোযোগ সহ খুৎবা শোনা ও চুপ থাকা ওয়াজিব। (বুখারী ৯৩৪, মুসলিম ৮৫৭, আবু       দাউদ ১১১৩, আহমাদ ১/২৩০)

৮। আগে ভাগে মসজিদে যাওয়া। (বুখারী ৮৮১, মুসলিম ৮৫০)

৯। পায়ে হেঁটে মসজিদে গমন। (আবু দাউদ ৩৪৫)

১০। জুম’য়ার দিন ফজরের নামাজে ১ম রাক’য়াতে সূরা সাজদা (সূরা নং-৩২) আর ২য় রাকা’য়াতে সূরা                   ইনসান (দাহর)(সূরা নং-৭৬) পড়া। (বুখারী ৮৯১, মুসলিম ৮৭৯)

১১। সূরা জুম’য়া ও সূরা মুনাফিকুন দিয়ে জুম’য়ার সালাত আদায় করা। অথবা সূরা আলা ও সূরা গাশিয়া   দিয়ে জুম’য়া আদায় করা। (মুসলিম ৮৭৭, ৮৭৮)

১২। জুম’য়ার দিন ও জুম’য়ার রাতে বেশী বেশী দুরুদ পাঠ। (আবু দাউদ ১০৪৭)

১৩। এ দিন বেশি বেশি দোয়া করা। (বুখারী ৯৩৫)

১৪। মুসুল্লীদের ফাঁক করে মসজিদে সামনের দিকে এগিয়ে না যাওয়া। (বুখারী ৯১০, ৮৮৩)

১৫। মুসুল্লীদের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনের কাতারে আগানোর চেষ্টা না করা। (আবু দাউদ ৩৪৩, ৩৪৭)

১৬। কাউকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে বসার চেষ্টা না করা। (বুখারী ৯১১, মুসলিম ২১৭৭, ২১৭৮)

১৭। খুৎবা চলাকালীন সময়ে মসজিদে প্রবেশ করলে তখনও দু’রাকা’য়াত ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ সালাত আদায় করা ছাড়া না বসা। (বুখারী ৯৩০)

১৮। জুম’য়ার দিন জুম’য়ার পূর্বে মসজিদে জিকর বা কোন শিক্ষামূলক হালকা না করা। অর্থাৎ ভাগ ভাগ হয়ে, গোল গোল হয়ে না বসা, যদিও এটা কোন শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান হোক না কেন। (আবু দাউদ ১০৮৯)

১৯। কেউ কথা বললে ‘চুপ করুন’ এটুকুও না বলা। (নাসায়ী ৭১৪, বুখারী ৯৩৪)

২০। মসজিদে যাওয়ার আগে কাঁচা পেয়াজ, রসুন না খাওয়া ও ধুমপান না করা। (বুখারী ৮৫৩)

২১। ঘুমের ভাব বা তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে বসার জায়গা বদল করে বসা। (আবু দাউদ ১১১৯)

২২। ইমামের খুৎবা দেওয়া অবস্থায় দুই হাঁটু উঠিয়ে না বসা। (আবু দাউদ ১১১০, ইবনে মাজাহ ১১৩৪)

২৩। খুৎবার সময় ইমামের কাছাকাছি বসা। জান্নাতে প্রবেশের উপযুক্ত হলেও ইমাম থেকে দূরে উপবেশনকারীরা বিলম্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (আবু দাউদ ১১০৮)

২৪। জুম’য়ার দিন সূরা কাহফ পড়া। এতে পাঠকের জন্য আল্লাহ তায়ালা দুই জুম’য়ার মধ্যবর্তী সময়কে আলোকিত করে দেন। (হাকেম ২/৩৬৮, বায়হাকী ৩/২৪৯)

২৫। জুম’য়ার আযান দেওয়া। অর্থাৎ ইমাম মিম্বরে বসার পর যে আযান দেওয়া হয় তা।(বুখারী ৯১২)

২৬।জুম’য়ার ফরজ নামাজ আদায়ের পর মসজিদে ৪ রাকা’আত সুন্নাত সালাত আদায় করা। (বুখারীঃ ১৮২, মুসলিম ৮৮১, আবু দাউদ ১১৩০)

২৭। উযর ছাড়া একই গ্রাম ও মহল্লায় একাধিক জুম’য়া চালু না করা। আর উযর হল এলাকাটি খুব বড় হওয়া, বা প্রচুর জনবসতি থাকা, বা মসজিদ দূরে হওয়া, বা মসজিদে জায়গা না পাওয়া, বা কোন ফিতনা ফাসাদের ভয় থাকা। (মুগনি লিবনি কুদামা ৩/২১২, ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ ২৪/২০৮)

২৮। ওজু ভেঙ্গে গেলে মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া। অতঃপর আবার ওজু করে মসজিদে প্রবেশ করা। (আবু দাউদ ১১১৪)

২৯। একান্ত উযর না থাকলে দুই পিলারে মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গায় সালাত আদায় না করা। (হাকেম ১/১২৮)

৩০। সালাতের জন্য কোন একটা জায়গাকে নির্দিষ্ট করে না রাখা, যেখানে যখন জায়গা পাওয়া যায় সেখানেই সালাত আদায় করা (আবু দাউদ ৮৬২)। অর্থাৎ আগে থেকেই নামাজের বিছানা বিছিয়ে জায়গা দখল করে না রাখা বরং যে আগে আসবে সেই আগে বসবে।

৩১। কোন নামাজীর সামনে দিয়ে না হাঁটা অর্থাৎ মুসুল্লী ও সুতরার মধ্যবর্তী জায়গা দিয়ে না হাঁটা। (বুখারী ৫১০)

৩২। এতটুকু জোরে আওয়াজ করে কোন কিছু না পড়া, যাতে অন্যের সালাত ক্ষতিহ্রস্তহয় বা মনোযোগে বিঘœ ঘটে। (আবু দাউদ ১৩৩২)

৩৩। পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়ার ফযীলত অন্তরে জাগরূক রাখা।

৩৪। হাঁটার আদব মেনে মসজিদে গমন করা।

৩৫। খুৎবার সময় খতীবের কোন কথার সাড়া দেওয়া বা তার প্রশ্নের জবাব দানে শরীক হওয়া জায়েজ। (বুখারীঃ ১০২৯, মুসলিমঃ ৮৯৭)

৩৬। হানাফী আলেমগন বলেছেন যে, ভিড় প্রচন্ড হলে সামনের মুসুল্লীর পিঠের উপর সিজদা দেওয়া জায়েজ (আহমাদ ১/৩২)। দরকার হলে পায়ের উপর ও দিতে পারে (আর রাউদুল মুরবী)

৩৭। যেখানে জুম’য়ার ফরজ আদায় করেছে, উত্তম হল ঐ একই স্থানে সুন্নাত না পড়া। অথবা কোন কথা না বলে এখান থেকে গিয়ে পরবর্তী সুন্নাত সালাত আদায় করা। (মুসলিম ৭১০, বুখারী ৮৪৮)

৩৮। ইমাম সাহেব মিম্বরে এসে হাজির হওয়র পূর্ব পর্যন্ত তাসবীহ-তাহলীল, তাওবা-ইস্তিগফার ও কুরআন তিলাওয়াতে রত থাকা।

মসজিদের ফজিলত

হযরত আবু উমামা (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন এক ইহুদি জ্ঞানী ব্যক্তি হুজুর পাক (সা.) হতে জিজ্ঞেস করেন জমিনের মধ্যে সর্বোত্তম জায়গা কোনটি? হুজুর পাক (সা.) বললেন- তুমি জিব্রাঈল (আ.) আসার আগ পর্যন্ত চুপ থাক। হুজুর পাক (সা.) চুপ থাকলেন এবং ঐ ইহুদি ব্যক্তিও চুপ থাকলেন। অত:পর জিব্রাঈল (আ.) আসলেন। তারপর হুজুর পাক (সা.) তার থেকে বিষয়টি জিজ্ঞেস করলেন জিব্রাঈল (আ.) বললেন- জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি জিজ্ঞেসকারী থেকে বেশী জ্ঞাত নয়। তারপর জিব্রাঈল (আ.) বললেন- ইয়া রাসূল (সা.) আমি আল্লাহর এত নিকটবর্তী হয়ে ছিলাম যতটা ইতিপূর্বে হইনি। হুজুর পাক (সা.) জিজ্ঞেস করলেন কত নিকটে? জিব্রাঈল (আ.) বললেন আমার এবং আল্লাহর মাঝে সত্তর হাজার নূরের পর্দা ছিল। তারপর আল্লাহ তায়ালা বলেন জমিনের মধ্যে সর্বোত্তম জায়গা মসজিদ এবং সর্ব নিকৃষ্ট জায়গা বাজার (মুসলিম, মিশকাত)

সমাপ্ত

Related Post