মানুষ জেনে না জেনে, বুঝে না বুঝে, জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে অনেক পাপ করে থাকে। এসব পাপ থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। সে যে কোন গুনাহ করুক না কেন আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হয়ে খালেছ অন্তরে তওবা করলে আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন ও তাকে ক্ষমা করে দিবেন। মহান আল্লাহ বলেন,তারা কি এটা অবগত নয় যে, আল্লাহই নিজ বান্দাদের তওবা কবুল করেন (তওবা ৯/১০৪)। তিনি আরো বলেন,তিনিই তাঁর বান্দাদের তওবা কবুল করেন এবং পাপ মোচন করেন এবং তোমরা যা কর তিনি তা জানেন (শূরা ৪২/২৫)। মহান আল্লাহ আরো বলেন,যে কেউ দুষ্কর্ম করে অথবা স্বীয় জীবনের প্রতি অত্যাচার করে পরে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থী হয়, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল, করুণাময় পাবে’ (নিসা ৪/১১০)।
আল্লাহ ত‘আলা মুনাফিক্বদের সম্পর্কে বলেন, নিশ্চয়ই মুনাফিকরা জাহান্নামের নিম্নতম স্তরে অবস্থান করবে এবং তুমি কখনও তাদের জন্য সাহায্যকারী পাবে না। কিন্তু যারা তওবা করে ও সংশোধন হয় তারা ব্যতীত (নিসা ৪/১৪৫-১৪৬)।
কাফেরদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, – নিঃসন্দেহ তারাও কুফরী করেছে যারা বলে, আল্লাহ তিনের (অর্থাৎ তিন মা‘বূদের) এক। অথচ এক মাবূদ ভিন্ন অন্য কোনই (সত্য) মাবূদ নেই। আর যদি তারা স্বীয় উক্তি সমূহ হতে নিবৃত না হয়, তবে তাদের মধ্যে যারা কাফের থাকবে তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি গ্রাস করবে। এর পরও কি তারা আল্লাহর নিকটে তওবা করবে না এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে না? অথচ আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম করুণাময় (মায়েদা ৫/৭৩-৭৪)। তিনি আরো বলেন, যারা ঈমানদান নর-নারীর উপর যুলুম-নির্যাতন করেছে এবং পরে তওবা করেনি, তাদের জন্যে জাহান্নামের আযাব ও দহন যন্ত্রণা রয়েছে (বুরূজ ৮৫/১০)। আল্লাহ অন্যত্র বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হ’তে পার’ (নূর ২৪/৩১)।
মহান আল্লাহ আরো বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা কর একান্ত বিশুদ্ধ তওবা; যাতে তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দ কর্মগুলোকে মোচন করে দেন এবং তোমাদের প্রবেশ করান জান্নাতে, যার তলদেশে নদী সমূহ প্রবাহিত (তাহরীম ৬৬/৮; ইবনু কাছীর, ৭/১০৫)।
তওবা ও ইস্তেগফারের গুরুত্ব সম্পর্কে অনেক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যেমন আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে সত্তরবারেরও অধিক ইসতিগফার ও তওবা করে থাকি’। বুখারী হা/৬৩০৭। রাসূল (ছাঃ) এভাবে তওবা-ইসতিগফার করতেন, ‘হে প্রভু! আমাকে ক্ষমা কর এবং আমার তওবা কবুল কর। নিশ্চয়ই তুমি তওবা কবুলকারী ও দয়াবান’। আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৩৫২]
শাদ্দাদ ইবনু আউস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, সাইয়িদুল ইস্তিগফার হ’ল-
‘হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক! তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে কৃত প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি, তুমি আমার প্রতি তোমার যে নে‘মত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা কর। কেননা তুমি ছাড়া গুনাহ ক্ষমা করার আর কেউ নেই’।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি দিনে (সকালে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ ইস্তিগফার পড়বে এবং সন্ধ্যা হবার পূর্বে সে মারা যাবে সে জান্নাতবাসী হবে। আর যে ব্যক্তি রাতে (প্রথম ভাগে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ দো‘আ পড়বে এবং সে ভোর হবার পূর্বে মারা যাবে সেও জান্নাতবাসী হবে’। বুখারী হা/৬৩০৬।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি বলবে, আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি, যিনি ব্যতীত কোন হক্ব উপাস্য নেই, যিনি চিরস্থায়ী ও সবকিছুর ধারক এবং আমি তাঁর দিকেই ফিরে যাচ্ছি। তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে, যদিও সে যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করে’।[তিরমিযী, মিশকাত হা/২২৫৩]
পরিশেষে বলা যায় যে, মানব জীবনের সার্বিক সফলতা নিহিত আছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর আনুগত্য ও যথাযথ অুসরণের মধ্যে। এছাড়া দ্বিতীয় কোন পথ নেই। এ পথেই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়, যা পরকালীন জীবনে জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভের উপায়। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে তাঁর সন্তোষ ও রহমত লাভ করে পরকালে পরিত্রাণ লাভের তাওফীক দান করুন- আমীন!!