( শেষ পর্ব:)
এইভাবে ঠিকানা লেখায় আমার সহকর্মী বোনেরা আপত্তি জানালেন। বললেন “আপনার হাসব্যান্টের ঠিকানাই তো স্থায়ী ঠিকানা। বললাম “ বুঝি কি করে?” “তার মানে?” অবাক কণ্ঠ বোনদের। বললাম “ অপ্রিয় হলেও এটাই বাস্তব যে হাসব্যান্টের ঠিকানা স্থায়ী ঠিকানা না।
যে কোনো সময় সে ঠিকানা বদলে যেতে পারে। আমাদের মা দাদীরা একই ঠিকানায় জীবন পার করে দিয়ে গেছেন। আমাদের জীবনের ও অর্ধেকের বেশি সময় পার হয়ে গেছে। বাকী দিন কয়টিও হয়ত যাবে। কিন্তু সবার জন্য না। অথচ বাপের নাম কোনোদিন বদল হবে না। বাপ বেঁচে থাকতেও না মরে গেলেও না” আমার কথা কারো মনঃপুত হলো কেউ মুখ টিপে হাসল। আশ্চর্যের বিষয় কি জানেন? মাত্র মাস ছয়েকের মধ্যে আমাদের এক বোন বরের সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলো। তিনটি সন্তান, মজবুত সংসার। যে কারণেই হোক ভেঙ্গে গেল। আমার সেই বোনটি এখন স্থায়ী ঠিকানায় থাকে। হ্যা বাপের বাড়িতে। যদিও বাপ জীবিত নেই।
ইবনে অথবা বিনতেঃ- নামের পরে ইবনে অথবা বিনতে দিয়ে পিতার নাম দেওয়া খুবই বিজ্ঞান সম্মত এবং সুষ্ঠু একটা বিধান। যেমন- আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারাক, অর্থাৎ মুবারাকের পূত্র আবদুল্লাহ, সন্তান যদি মেয়ে হয় তাহলে ফাতিমা বিনতে মুবারক-মানে মুবারকের মেয়ে ফাতিমা। এইভাবে নাম রাখা হলে এক নামের যত ব্যক্তিই হোক না কেন চিনতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না। এতে আর একটা সুবিধা এই যে নাম শুনেই পরস্পর ভাই বোন কিংবা ভাই ভাই অথবা বোন বোন ইত্যাদি বোঝা যায়। যেমন উম্মে হারাম বিনতে মিলহান এবং উম্মে সুলাইম বিনতে মিলহান এরা যে দুই বোন তা কারো বলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। যদিও নামের এই ধারাটা ব্যাপকভাবে আমাদের সমাজে চালু নেই। তবে কিছু কিছু আছে।
যে সব নাম রাখা নিষেধঃ- শাহানশাহ, রাজাধিরাজ, শাহ জাহান, আলমগীর এই প্রকৃতির নাম রাখতে রাসূল (সঃ) নিষেধ করেছেন কারণ এইনাম গুলো আল্লাহর জন্যই প্রযোজ্য। তেমনি আল্লাহর নাম বাদে অন্য কারো সাথে আব্দু যোগ করে নাম রাখাও অত্যন্ত আপত্তিকর। যেমন- গোলাম নবী, গোলাম মুহাম্মাদ, গোলাম হোসেন, গোলাম রাসূল, আব্দুনবী ইত্যাদি। মানুষ গোলাম বা আব্দু (দাস) হবে তো একমাত্র আল্লাহর। কারো নাম দিদার বখশ, পীর বখশ। বখশ শব্দের অর্থ দান বা উপহার। উপর্যুক্ত নাম গুলো শীর্ক যুক্ত। এধরনের কোনো নাম যেন আমরা সন্তানদের না রাখি। এ ধরনের নাম যাদের আছে তাদের সঠিক কাজ হবে এই সব নাম বদলে অন্য কোনো ভালো নাম রাখা।
আমাদের সমাজে ডাকনাম হিসাবে ছোট ছোট কিছু নাম আছে যার অর্থ মোটেও ভালো না- যেমন রিয়া বেবী, নিপা ইত্যাদি। ডাকতে এবং শুনতে শব্দটি ভালো লাগলেও অর্থ মোটেও ভালো না। রিয়া অর্থ লোক দেখানো কাজ বা প্রদর্শোনিচ্ছ।
আবার এমন কিছু নাম আছে যা কোনো অর্থ বোধক শব্দই না। যেমন- নান্নু, টুন্নু, মন্নু, রুনু, মিনু, রানু, মিন্টু, সেন্টু, পিন্টু, পল্টু, বল্টু, টুলটুল, টুটুল, মিঠুন, কালা, ধলা, রাঙ্গু, – জানিনা প্রিয়তম সন্তানের জন্য এইসব নিরর্থক নাম কেন রাখে মা বাবারা?
আগে গ্রামের মেয়েদের নাম রাখা হতো বড়–, মাঝু, সাজু , ছুটু, সোনা, ইত্যাদি। ছেলেদের নাম কেদু, গেদু ইত্যাদি। ইদানিং মেয়েদের নাম রাখছে- সাবানা, ববিতা, কবরি, শাবনূর, পূর্ণিমা ইত্যাদি নায়িকা ও মডেল কন্যাদের নাম। ছেলেদের নামের বেলায় ও বিভিন্ন চিত্রতারকা, খেলোয়ার, মডেল তারকাদের নাম পছন্দ করছে।
প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত স্যাটালাইট টি.ভির বদৌলতে গ্রামের লোক আর যাই শিখুক না কেন নায়ক নায়িকাদের, খেলোয়ার মডেল তারকাদের নাম শিখছে। টি.ভিতে বিভিন্ন চ্যানেলে প্রায় সর্বক্ষণ নাটক সিনেমা, মডেলিং, নাচ গান আর নায়ক নায়িকা, গায়ক গায়িকাদের জীবনী চর্চাই করা হয়। আর সবাই বিশেষ করে মহিলারা নিবিষ্ট মনে চিত্ত বিনোদনের নামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঐ সবই দেখে। আর ভালোবেসে, শখ করে মহব্বত করে ঐসব নাম রাখে সন্তানদের।
ঘর সংসার আর স্যাটালাইট টি.ভি দেখার পর এই সব গৃহিণীরা আর কোনো সময় ই পায়না যে কুরআন হাদীস কিংবা সাহাবা তাবেঈনদের জীবনী পড়বে কিংবা জানবে। ইসলামী টি.ভি নামে একটা চ্যানেল থাকলেও তা খুব কম মহিলাই দেখে। (২০১৩ সালের ৬ই মে হতে আজ পর্যন্ত তা বন্ধ রয়েছে) গ্রামের মহিলারা বোধ হয় জানেও না যে ইসলামিক টি.ভি নামে কোনো চ্যালেন আছে। কি করে ইসলামী নামের সন্ধান তারা পাবে?
এইসব মহিলা কিংবা এদের ঘরের কিশোর কিশোরীদের একটা পরীক্ষা করে দেখেন- তাদের কাছে-দশজন নায়িকা-দশজন গায়িকার নাম কিংবা দশজন খেলোয়ার বা মডেল তারকাদের নাম জানতে চান দেখেন তারা ঝটপট দেশী বিদেশী বিশজন করে নায়ক নায়িকা, গায়ক গায়িকা, খেলোয়ার, মডেল তারকার নাম বলে দেবে।
কিন্তু দশজন নবীর নাম বলতে বলেন, দশজন সাহাবী এবং মহিলা সাহাবীর নাম বলতে বলেন কিংবা দশজন তাবেঈন অথবা ইসলামী চিন্তাবিদের নাম বলতে বলেন দেখবেন পারবে না।
অশিক্ষিত মেয়েরা বোধ হয় একদম পারবে না কিন্তু নায়ক নায়িকাদের নাম বলতে পারবে। শিক্ষিত মেয়েরা নবী রাসূলদের চার/পাঁচ জনের নাম হয়ত বলতে পারবে। সাহাবীদের হয়ত চার খলিফা পর্যন্ত, মহিলা সাহাবীদের নাম কমই আশা করা যায়। সাহাবী যে মহিলা হয় এই ধারনাই অনেকের নাই। আর তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন? জিজ্ঞেস করে দেখেন অবাক হয়ে বলবে ‘সে আবার কি জিনিস?’ আর ইসলামী চিন্তাবিদ বললেও- কিছু বলতে পারবে বলে মনে হয় না।
অবশ্য ইদানীং বিভিন্ন বৈঠকাদিতে যারা যায় তাদের ধ্যান ধারনা চিন্তা চেতনা বেশ পরিবর্তন হয়েছে। নিজেদের ইতিহাস ঐতিহ্যের ব্যাপারে বেশ সচেতন হয়েছেন। জাতির জন্য এটা ভালো লক্ষণ। আমাদের পূর্বসুরীদের নাম জানা একান্ত জরুরী।
আমরা হযরত খাদিজা, ফাতিমা, আয়েশা, উম্মে সুলাইম, উম্মে আম্মার, খাওলা দের উত্তরসুরী যারা ছিলেন-ঈমানে দৃঢ়, ইবাদাতে অবনত, বিপদ মুসিবতে ধৈর্যশীল। যাবতীয় ভালো কাজে অগ্রগামী। তাদের ছিল খারাপ কাজের প্রতি চরম ঘৃণা, আল্লাহর নাফরমানীর পর্যায় পড়তে পারে এমন কোন কাজ জীবন গেলেও তারা করতে রাজী হতেন না। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের নির্দেশ পালনে তারা ছিলেন তৎপর। তারা একদিকে ছিলেন বীর সাহসী অন্য দিকে ছিলেন বিদূসী, তাপসী, গুণবতী, প্রেমময়ী। আমরা তাদের উত্তরসূরী।
আমরা শীলাদেবী কিংবা প্রীতিলতাদের উত্তরসুরী না, বিপদে পড়লে যারা আত্মহত্যা করে।
“নামের বড়াই করো না, নাম দিয়ে কি হয়?” আসলে কথাটি ঠিক না, নামে অনেক কিছু হয়। আমি যে মুসলমান, তার প্রথম চিহ্নই হলো নাম। মার্গারেট মারকিউস নাম শুনলেই বুঝবো ভদ্র মহিলা পাশ্চাত্যবাসী কোনো ইহুদি কিংবা খ্রিস্টান। কিন্তু যখন শুনবো ভদ্র মহিলার নাম মারইয়াম জামিলা। তখন তাকে মুসলমান ছাড়া অন্য কিছু ভাববো কি?
যখন সুদর্শন ভট্টাচার্য, সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি, ক্যাট ষ্টিফেন্ট নাম শুনি তখন কি তাদের মুসলিম মনে হয়? আর যখন এই মানুষদের নাম হয় আবুল হোসেন ভট্টাচার্য, ইসমাইল হোসেন দিনাজী, ইউসুফ ইসলাম, তখন আর কারো বুঝতে সমস্যা হয় কি এরা মুসলমান না অন্য কিছু? আসলে নামটাই প্রথম। তাই আমাদের ছেলে মেয়েদের এমন নাম রাখতে হবে যা শুনেই অপরিচিত কেউ বুঝতে পারে যে মুসলমানের সন্তান।
কিছু নামে বোধ হয় এলার্জি আছেঃ- নওগাঁ থেকে যশোর যাচ্ছিলাম ট্রেনে। যশোর বাপের বাড়ি বিধায় প্রায়ই যাই। প্রায় ছয়/সাত ঘণ্টার জার্নি। পাশাপাশি সহযাত্রীদের সাথে মোটামুটি খাতির হয়ে যায়। বিভিন্ন প্রকারের টুকটাক খাবার, পত্র পত্রিকা বই ইত্যাদি কেনা যায়। জার্নিটা একঘেয়ে মনে হয় না। ভালোই লাগে। আমার সামনের সিটে বসা এক ভদ্রলোক। লেখা পড়া শেষ করে নতুন চাকরিতে ঢুকছেন। অফিসের কাজে খুলনা যাচ্ছেন।
আমি জানালার ধারে বসে বই পড়ছিলাম। আমার প্রিয় লেখক অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবের আদম সৃষ্টির হাকিকত। ভদ্রলোক আমাকে বললেন “ কি বই?”
আমি মুখে কিছু না বলে বইটি উল্টে দেখালাম। ভদ্র লোক চমকে উঠলেন যেন “ ও রে বাব্বা গোলাম আযমের বই?”
বললাম “ কেন, এলার্জি আছে নাকি?”
ঃ“তার মানে?”
ঃ “যে ভাবে কেঁপে উঠলেন মনে হলো এই নামে বুঝি আপনার এলার্জি আছে।”
ঃ “ আর কি বই আছে আপনার কাছে?”
আমি একটু আগেই ফেরিওয়ালার কাছ থেকে দু’টো বই কিনেছি। একটা সমরেশ মজুমদারের উপন্যাস অন্যটি জীবনানন্দ দাসের কবিতার বই। আমি ঐ বই দুটি ভদ্রলোককে দেখালাম। ভদ্রলোক বললেন “বাঃ সব ধরনের বই ই তো আছে।”
বললাম “ হ্যা সব ধরনের বই ই পড়ি। কোনো নামেই আমার এলার্জি নেই।”
ঃ “ কি যে বলেন, নামে আবার এলার্জি থাকে নাকি? আমি ও সব লেখকের বই পড়ি।”
আমার হাতের বইখানা দেখিয়ে বললাম, “ এই লেখকের বই কোনোদিন পড়েছেন?”
ভদ্র লোক মাথা নেরে বললেন “ না”। বললাম কেন পড়েন নি?
ঃ “ আসলে লেখক মানুষটিতো বিতর্কিত।
তাছাড়া উনি যে কি ধরনের বই লেখেন তাও জানি না। নামটাই জানি এই মাত্র। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিল এই টুকু ছাড়া তার সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না।”
আমি বইখানি ভদ্র লোকের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম “পড়ে দেখেন। জীবনের যতো বই পড়েছেন সব বই এর মধ্যে শ্রেষ্ঠ বই হবে এটি। যদি সত্যিকারের পাঠক হয়ে থাকেন।”
ভদ্রলোক ইতস্তত করে বললো “ আপনি পড়ছিলেন।”
বললাম “তাতে কি? এ বইটি আগে আমি আরও দুইবার পড়েছি। এইবার দিয়ে তিনবার হচ্ছিল।”
ভদ্রলোক বইটি নিলেন এবং খুব আগ্রহের সাথেই পড়তে লাগলেন।
দেখতে দেখতে যশোর ষ্টেশনে চলে এলাম। আমি নামার জন্য উঠে দাড়াতেই ভদ্রলোক ব্যস্ত হয়ে বললেন “আপা আপনি তো এখানেই নামবেন কিন্তু আপনার বইটা যে——-।”
বললাম“ ভাই বইটি আপনাকে গিফট করলাম। ভদ্রলোকের পড়ার আগ্রহ দেখেই বইটি তাকে গিফট করতে ইচ্ছে হলো।
অনেককে দেখেছি কোনো কোনো লেখকের নাম দেখেই তার বই পড়ে না। কি অন্ধকারাচ্ছন্ন মন!
কুরআনী জ্ঞানের সল্পতাঃ- কুরআন সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান যে কতো কম, তা কুরআনের শব্দচয়ন করে সন্তানদের নাম রাখার ধরন দেখে বোঝা যায়। আমার ঘনিষ্ট কয়েক জনের নাম বলি, আম্বিয়া, জাহিমা। আম্বিয়া শব্দের অর্থ নবীগণ, জাহিম অর্থ জাহান্নাম।
অন্যদের কথা থাক নিজেকে নিজেই একটু পরীক্ষা করে দেখেন। জ্ঞানের বহর দেখে লজ্জা পেয়ে যাবেন।
আল কুরআনে একশত চৌদ্দটি সূরা আছে। এইবার এই একশত চৌদ্দটি সূরার নাম বলেন তো? হাতে গোনা কয়েক জনে হয়ত পারতেও পারেন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই পারবে না। নামই যেখানে জানা নাই তাহলে সূরার মধ্যে কি বলা হয়েছে তা কি করে জানবে?
আমাদের সবার উচিত আল কুরআনের সূরা কয়টির নাম মুখস্ত করা। সূরা কয়টির নাম জানা খুবই জরুরী।
আমাদের ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা, যারা প্রাইমারী কিংবা হাইস্কুলে পড়ে- তাদের পাঠ্য পুস্তকে বাংলা ইংরেজিতে কয়টি গল্প, প্রবন্ধ, আর কবিতা আছে তা জানে, সে সবের নাম জানে, তার লেখক বা কবিদের নাম জানে, সেই লেখক কবিদের পরিচয়ও জানে। আর আমাদের পাঠ্য পুস্তকে একশ চৌদ্দটি সূরা তার নাম জানি না। তাছাড়া ছেলেমেয়েদের সিলেবাস এক বছরের আর আমাদের সিলেবাস সারা জীবনের। দুইদিনে একটা সূরার নাম মুখস্ত করলে এক বছর লাগে না। দশ মাসে সব সূরার নাম মুখস্ত হয়ে যায়।
কোনো কিছুর নামের মাধ্যমে মানুষ তার সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে থাকে। এটিই জ্ঞান লাভের পদ্ধতি। ফেরেশতাদের চেয়ে আদম (আঃ) কে বেশি জ্ঞান দেওয়া হয়েছে এই বিষয়টি ফেরেশতাদের জানানোর জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা আদম (আঃ) কে সব কিছুর নাম শিখান। তারপর আদম (আঃ) বলেন,“তুমি ওদেরকে (ফেরেশতাদের কে) এই জিনিস গুলোর নাম বলে দাও।” সূরা বাকারা-৩৩
ইতোপূর্বে তিনি ফেরেশতাদের কাছে জিনিস গুলোর নাম জানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফেরেশতারা তা বলতে পারে নি। ফেরেশতারা যা বলতে পারে নি তা আদম (আঃ) কে দিয়ে বলায়ে আল্লাহ প্রমাণ করলেন যে মানুষ ফেরেশতাদের চেয়ে বেশি জানে। জাননেওয়ালা হওয়াই মানুষের ফিতরাত (স্বভাব)। মানুষতো সবই জানতে চায়। যা প্রয়োজন না তাও জানতে চায়। তাহলে যা প্রয়োজন তা জানার চেষ্টা কেন করব না?
আসলে নাম অতি প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। নাম শুধু চিহ্নমাত্র নয়। নাম জ্ঞানের পরিচয় বাহক, সৌন্দর্যের পরিচয় বাহক, সুসংস্কৃতির পরিচয় বাহক, সু-সভ্যতার পরিচয় বাহক, সুস্থ্য সুন্দর মনের, সুষ্ঠু রুচি বোধের পরিচয় বাহক।
রাসূল (সাঃ) শুধু মানুষের নামই রাখতেন না তিনি ব্যবহার্য প্রত্যেকটি জিনিসের নাম রাখতেন। তার ঘোড়ার নাম ছিল দুলদুল। যা তিনি ইমাম হুসাইন (রাঃ) কে দিয়েছিলেন। হযরত আলীর (রাঃ) তরবারীর নাম রেখেছিলেন জুলফিকার। তিনি অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কৌতুক করেও কিছু নাম রেখেছেন। যেমন প্রখ্যাত সাহাবা আব্দুর রহমান যার পূর্ব নাম ছিল আব্দুস শামস। তিনি একটি বিড়ালের বাচ্চা পুশতেন। বাচ্চাটিকে সব সময় সাথে সাথে রাখতেন। রাসূল (সাঃ) এই জন্য তাকে একদিন আবু হুরাইরা বলে ডাকলেন। আবু হুরাইরা মানে বিড়ালের বাবা (বিড়াল ওয়ালা)। সেই সাহাবীর আব্দুর রহমান নামটা সবাই যেন ভুলেই গেল। সবাই তাকে আবু হুরাইরা বলেই ডাকতে লাগল। আমরা তো অনেকে বোধ হয় জানিই না তার আসল নাম আব্দুর রহমান।
একদিন হযরত আলী (রাঃ) মসজিদে নববীর মেঝের উপর ঘুমিয়ে ছিলেন। শরীরে ধুলোমাটি লেগেছিল। রাসূল (সাঃ) তাকে আদর করে ডাকলেন,“ ওঠ আবু তোরাব। তারপর গায়ের ধুলোবালি মুছে দিলেন। আবু তোরাব অর্থ মাটির বাবা (মাটি ওয়ালা)। হযরত আয়েশা কে (রাঃ) প্রায়ই হুমায়রা বলে ডাকতেন। হুমায়রা অর্থ লাল বর্ণের। আয়েশা (রাঃ) ছিলেন লাল বর্ণের ফর্সা।
এমনিভাবে নাম কখনও কখনও হয় আদর স্নেহ ভালোবাসার প্রকাশ। তাই আমরা যখন প্রিয়জনদের নাম রাখব তখন এই সব দিকে লক্ষ্য রেখেই যেন নাম রাখি। শির্ক, বিদ’য়াত বর্জন করে, অর্থহীন শ্র“তিকটু শব্দ বাদ দিয়ে অর্থযুক্ত, শ্র“তি মধুর, সহজে উচ্চারণ যোগ্য নাম গুলোই হোক আমাদের প্রিয়তম সন্তানদের নাম। আমি যে মুসলিম তা যেন আমার নামের মধ্যেই ফুটে ওঠে। আমি মুসলিম না অন্য কোনো বিশ্বাসাবলম্বি, আমার নাম শুনে এই দ্বিধায় যেন কেউ না পড়ে। আমার নামই হোক আমার পরিচয় পত্র, আমার প্রশংসা পত্র। আমার গৌরব। অথচ এক শ্রেণীর মুসলমান আছে যারা মুসলিম নাম রাখাই অপছন্দ করে।
বলেনতো ……….
মুসলিম নাম রাখাই যদি অপছন্দ করি তাহলে আমরা – কেমন মুসলমান?