১. ব্যক্তি চরিত্র গঠনে : মানুষের ব্যক্তি জীবনে তাকওয়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। ব্যক্তি চরিত্র গঠনে তাকওয়ার বিকল্প নেই। যে মুমিনের হৃদয়ে তাকওয়া আছে, সে কোন অবস্থাতেই প্রলোভনে পড়ে না এবং নির্জন থেকে নির্জনতর স্থানেও পাপ কাজে লিপ্ত হয় না। কারণ, সে জানে সবাইকে ফাঁকি দেয়া গেলেও আল্লাহকে ফাঁকি দেয়া যায় না। তাই চরিত্র গঠনে তাকওয়া একটি সুদৃঢ় দুর্গস্বরূপ।
২. ইবাদতের মূল বস্তু : তাকওয়া হচ্ছে ইবাদত-বন্দেগীর মূল বস্তু। ইবাদতের আনুষ্ঠানিকতার কোন মূল্য নেই, যদি সেখানে তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় না থাকে। যেমন আল্লাহর ঘোষণা ‘‘আল্লাহর নিকট তোমাদের কুরবানীর গোশত, রক্ত কিছুই পৌঁছে না, পৌঁছে শুধু এ থেকে অর্জিত শিক্ষা সংযমের অভ্যাস তাকওয়া।’’ (সূরা আলহাজ্জ : ৩৭)।
৩. ঈমানের পরিপূর্ণতা : আল্লাহ তায়ালাকে যথাযথভাবে ভয় না করলে, ঈমানের পরিপূর্ণতা আসে না। তাই আল্লাহ তাকওয়া অর্জনের নির্দেশ দিয়ে ঘোষণা করেন ‘‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় কর এবং আল্লাহর কাছে পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ না করে মৃত্যু বরণ করো না। ’’ (সূরা-আল ইমরান-১০২)।
৪. আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ : আল্লাহর সান্নিধ্য, নৈকট্য ও সহায়তা লাভের জন্য তাকওয়া অবলম্বন করা অপরিহার্য। আল্লাহ বলেন : ‘‘তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। কেননা, জেনে রেখ আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন।’’ (সূরা-আল বাকারাহ : ১৯৪)।
মর্যাদার মাপকাঠি : আল্লাহর নিকট তাকওয়াই হচ্ছে শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা লাভের মাপকাঠি। আল্লাহ ঘোষণা করেন : ‘‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তিই বেশি মর্যাদাবান, যার মধ্যে বেশি তাকওয়া আছে।’’ (সূরা-আল হুজুরাত : ১৩)।
৬. জীবনের সাফল্য : তাকওয়ার গুণই মানুষের ইহ-পরকালীন জীবনে সামগ্রিক সাফল্য বয়ে আনবে। আল্লাহ বলেন : ‘‘নিশ্চয়ই তাকওয়াবানদের জন্যে রয়েছে সফলতা।’’ (সূরা আন-নাবা : ৩১)।
৭. আত্মার পরিশুদ্ধি : মানুষের আত্মার পরিশুদ্ধি ও পরিশোধনের জন্য তাকওয়া একান্ত অপরিহার্য। হৃদয়ে তাকওয়া থাকলে সে মানুষ কোন অন্যায়-অশ্লীল কাজ করতে পারে না এবং কোন পাপ চিন্তা তার আত্মাকে কলুষিত করতে পারে না।
৮. নিষ্ঠায় : তাকওয়া ব্যক্তি মানুষের চরিত্রে, তার আকীদা-বিশ্বাসে, কাজ-কর্মে, আচার-আচরণে, ইবাদত-বন্দেগীতে এবং দায়িত্ব পালনে নিষ্ঠার সৃষ্টি করে। তাই সে হয় সকল কাজে অতীব আন্তরিক ও নিষ্ঠাবান।
৯. ঈমানের মজবুতি : তাকওয়া মানুষের ঈমানের মজবুতি ও পূর্ণতা এনে দেয়। যে ব্যক্তি যত তাকওয়া সম্পন্ন, তার ঈমান তত বেশি মজবুত। সে জীবনে-মরণে কখনো তাকওয়া থেকে এতটুকু বিচ্যুত হয় না। সে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করে চলে এবং তাকওয়ার সাথে জীবনযাপন করে।
১০. জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ : তাকওয়া মানুষকে জাহান্নামের ভয়াবহ কঠিন শাস্তি হতে মুক্তি দান করে। মহানবী (সা.) এ বিষয়ে বলেন: ‘‘জ্ঞান-বিজ্ঞানের মূল হলো আল্লাহর ভয়।’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘সে দু’টো চোখকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না : (ক) যে চোখ আল্লাহর ভয়ে অশ্রু ঝরায়, (খ) আর যে চোখ আল্লাহর রাস্তায় পাহারায় রত থেকে কাঁদে। (তিরমিযি)
১১. জান্নাতে দু’টি উদ্যান লাভ : মুত্তাকীরা নিশ্চিতভাবে জান্নাত লাভ করবে, তাকওয়ার মানদন্ড অনুযায়ী কেউ কেউ দু’টি উদ্যান লাভে ধন্য হবে। আল্লাহ বলেন : ‘‘যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সামনে পেশ হওয়ার ভয় রাখে, তার জন্য দু’টি উদ্যান রয়েছে।’’ (সূরা-আল-রাহমান : ৪৬)।
১২. আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ : তাকওয়ার গুণ অর্জিত হলে মানবজীবনের সবচেয়ে বড় নিয়ামত আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ভালোবাসা লাভ করা যায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন : ‘‘আল্লাহ মুত্তাকীদের ভালোবাসেন।’’ (সূরা-আত-তাওবাহ : ৪)।