Main Menu

মানব জীবনে তাওহীদের গুরুত্ব -১ম পর্ব

MainImage_Thumbnail_640px

তাওহীদ তিন প্রকার। যথা- (ক) তাওহীদে রুবূবিয়্যাহ (খ) তাওহীদে উলূহিয়্যাহ (গ) তাওহীদে আসমা ওয়াছ ছিফাত।
(ক) তাওহীদে রুবূবিয়্যাহ :
তাওহীদে রুবূবিয়্যাহ হল প্রতিপালক হিসাবে আল্লাহকে একক গণ্য করা। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা সকল সৃষ্টির পালনকর্তা, সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা, জীবন ও মৃত্যুদাতা, কল্যাণ-অকল্যাণের মালিক। অতএব সকল বিপদাপদে তাঁর নিকটেই প্রার্থনা করতে হবে। তাঁর কোন শরীক নেই। তিনি বিশ্বজাহানের প্রতিপালক। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, َ ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি জগৎসমূহের প্রতিপালক’ (ফাতেহা ১)। মহান আল্লাহ তাঁর নবীকে বলেন,
‘বল, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি মানুষের প্রতিপালকের নিকট’ (নাস ১)। আল্লাহ তা‘আলা সকলের সৃষ্টিকর্তা। তিনি বলেন, ‘তারা কি স্রষ্টা ব্যতীতই সৃষ্ট হয়েছে,না তারা নিজেরাই (নিজেদের) স্রষ্টা’(তূর ৩৫)। মহান আল্লাহ আরো বলেন,
‘তুমি যদি তাদেরকে (মুশরিকদেরকে) জিজ্ঞেস কর, কে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছে? তারা অবশ্যই বলবে, এগুলো তো সৃষ্টি করেছেন পরাক্রমশালী,সর্বজ্ঞ আল্লাহ’ (যুখরুফ ৯)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
‘তিনি আকাশমন্ডলী নির্মাণ করেছেন স্তম্ভ ব্যতীত, তোমরা এটা দেখছ। তিনি পৃথিবীতে স্থাপন করেছেন পর্বতমালা যাতে এটা তোমাদেরকে নিয়ে ঢলে না পড়ে এবং এতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সর্বপ্রকার জীব-জন্তু এবং আমরাই আকাশ হ’তে বৃষ্টি বর্ষণ করে এতে উদগত করি সর্বপ্রকার কল্যাণকর উদ্ভিদরাজি। এটা আল্লাহর সৃষ্টি! তিনি ছাড়া অন্যেরা কি সৃষ্টি করেছে তা আমাকে দেখাও; বরং সীমালংঘনকারীরা তো স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছে’ (লোকমান ১০-১১)। মহান আল্লাহই সকল সৃষ্টির রিযিকদাতা। তিনি বলেন,
‘আর ভূ-পৃষ্ঠে যত প্রাণী বিচরণ করে তাদের সকলেরই রিযিক আল্লাহ দিয়ে থাকেন’ (হূদ ৬)। আল্লাহই মানুষের জীবনদাতা ও মৃত্যুদাতা। মহান আল্লাহ বলেন,
‘কিরূপে তোমরা আল্লাহকে অবিশ্বাস করছ? অথচ তোমরা নির্জীব ছিলে, পরে তিনিই তোমাদেরকে জীবিত করেছেন, পুনরায় তিনি তোমাদেরকে নির্জীব করবেন, পরে আবার জীবন্ত করবেন। অবশেষে তোমাদেরকে তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে’(বাক্বারাহ ২৮)।
উপরে বর্ণিত বিষয় সমূহে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা যাবে না। কারণ আমরা সবাই রূহের জগতে মহান আল্লাহকে প্রতিপালক হিসাবে স্বীকৃতি দান করেছি। মহান আল্লাহ বলেন,
‘হে নবী! যখন তোমার প্রতিপালক বনী আদমের পৃষ্ঠদেশ হ’তে তাদের সন্তানদেরকে বের করলেন এবং তাদেরকেই তাদের উপর সাক্ষী বানিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই? তারা বলল, হ্যাঁ! আমরা সাক্ষী থাকলাম। (এই স্বীকৃতি এজন্য যে), যাতে তোমরা ক্বিয়ামতের দিন বলতে না পার আমরা এ বিষয়ে সম্পূর্ণ অনবহিত ছিলাম’ (আ‘রাফ ১৭২)।
প্রত্যেক আদম সন্তানই ইসলামের উপর তথা তাওহীদের উপর জন্মলাভ করে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,
‘প্রত্যেক নবজাতকই ফিৎরাতের উপর (তাওহীদের উপর) জন্মলাভ করে। অতঃপর তার পিতা-মাতা তাকে ইহূদী, নাছারা বা অগ্নিপূজক রূপে গড়ে তোলে। যেমন চতুষ্পদ প্রাণী একটা পূর্ণাঙ্গ বাচ্চা জন্ম দেয়। তোমরা কি তাকে কোন (জন্মগত) কানকাটা দেখতে পাও? অতঃপর আবু হুরায়রা (রাঃ) তিলাওয়াত করলেন, তাঁর (আল্লাহর) দেয়া ফিৎরাতের অনুসরণ কর, যে ফিৎরাতের উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই, এটাই সরল সুদৃঢ় দ্বীন’ (রূম ৩০)।[বুখারী হা/১৩৫৯। অতএব যে ফিৎরাতের উপর মানুষ সৃষ্টি হয়েছে তার উপর অটল থাকলে সে সরল-সঠিক সুদৃঢ় পথে টিকে থাকবে। এতে তার ঈমান বাড়বে এবং পরকালে সুখময় স্থান জান্নাত লাভ করবে ইনশাআল্লাহ। পক্ষান্তরে ফিৎরাতের পরিবর্তন করলেই সঠিক পথ হারিয়ে বিভ্রান্ত হবে।
(খ) তাওহীদে উলূহিয়্যাহ বা তাওহীদে ইবাদত :
সকল প্রকার ইবাদতে আল্লাহকে একক গণ্য করা। যেমন ছালাত, ছিয়াম, হজ্জ, যাকাত, যবেহ-কুরবানী, নযর-নিয়াজ, রুকূ-সিজদা, ভয়-ভীতি, আশা-ভরসা ইত্যাদি সকল কিছু আল্লাহর জন্যই হ’তে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,
إ ‘আমরা শুধুমাত্র আপনারই ইবাদত করি এবং আপনারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি’ (ফাতেহা ৪)। অতএব আমরা আমাদের প্রকৃত মা‘বূদের নিকটেই সকল বিপদ-আপদ থেকে আশ্রয় চাইব। একমাত্র তাঁরই ইবাদত করব। মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘আমরা প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠিয়েছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাগূত হ’তে নিরাপদ থাকবে’ (নাহল ৩৬)। অতএব শুধু আল্লাহরই ইবাদত করতে হবে, অন্য কারো নয়। মহান আল্লাহ বলেন,
‘আমরা তোমার পূর্বে কোন রাসূল প্রেরণ করিনি এই অহী ব্যতীত যে, আমি ছাড়া অন্য কোন (হক্ব) মা‘বূদ নেই। সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদত কর’ (আম্বিয়া ২৫)। তিনি আরো বলেন,
لَقَدْ ‘নূহকে তার কওমের নিকট পাঠিয়েছিলাম। সে বলল, হে আমার কওম! তোমরা শুধু আল্লাহর ইবাদত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন সত্য মা‘বূদ নেই’ (আ‘রাফ ৫৯)। তিনি অন্যত্র বলেন,
‘আর তোমরা আল্লাহরই ইবাদত কর এবং তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করো না’ (নিসা ৩৬)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন,
‘আমি জিন ও মানুষকে কেবল মাত্র আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি’ (যারিয়াত ৫৬)। অতএব বুঝা যাচ্ছে যে, মহান আল্লাহ জিন ও মানুষকে শুধুমাত্র তাঁর ইবাদত করার জন্যই সৃষ্টি করেছেন। ইবাদতের মধ্যে শিরক মিশ্রিত হ’লে ইবাদত বাতিল হয়ে যায়, যেমন পবিত্রতার মধ্যে অপবিত্র মিশ্রিত হ’লে সেটি বাতিল বলে গণ্য হয়। আর শিরককারী চিরস্থায়ী জাহান্নামী হয়ে যায়। এজন্য শিরক থেকে বেঁচে থাকতে হবে। আল্লাহ বলেন,
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সাথে অংশী স্থাপনকারীকে ক্ষমা করবেন না, তবে এতদ্ব্যতীত তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন’ (নিসা ১১৬)। আল্লাহ আরো বলেন,
‘নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে (অন্য কাউকে) শরীক করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন’ (মায়েদাহ ৭২)। অতএব শুধু আল্লাহর উদ্দেশ্যে ইবাদত করলে ঈমান বাড়বে। পক্ষান্তরে শিরক মিশ্রিত ইবাদত করলে ঈমানে ঘাটতি পড়বে।

Related Post