মিসওয়াকের ফজিলত

index

প্রকৃতি কখনো মানুষের স্বভাববিরোধী নয়, বরং তা সর্বদাই মানব স্বভাবের অনুকূলে। শুধু তাই নয়, মানুষ যখন দুনিয়ার চাকচিক্য ও ভোগবিলাসিতায় ডুবে গিয়ে কোনো একসময় নানাবিধ বিপদের সম্মুখীন হয় এবং তা থেকে বেঁচে থাকার কোনো উপায় না দেখে পুনরায় প্রকৃতির দিকে ফিরে আসে, প্রকৃতি তখনো আগের মতোই মানুষের উপকারে আসে। চমৎকার ও মহামূল্যবান হীরার টুকরোকে ফেলে দিয়ে সামান্য এক টুকরো কাচ গ্রহণ করা যেমন বুদ্ধিহীনতা ও বোকামির কাজ, ঠিক তেমনিভাবে মুসলমানদের জন্য নবী সা:-এর মহান সুন্নত মিসওয়াকের মতো স্বভাব অনুকূলের আমলটিকে পরিত্যাগ করে ব্রাশ ইত্যাদি গ্রহণ করাও তদ্রƒপ অজ্ঞতা ও বোকামির কাজ। যখন থেকে আমরা এ মহান নেয়ামতটিকে হাতছাড়া করেছি, তখন থেকে নানাবিধ পেরেশানিতে ভুগছি। হাজার হাজার টাকা ব্যয় করেও দৈহিক সুস্থতার উৎস ফিরে পেতে সক্ষম হচ্ছি না। মিসওয়াক সম্পর্কে জনৈক জ্ঞানী তার উক্তি এভাবে করেছেনÑ ‘যে দিন থেকে আমরা মিসওয়াকের ব্যবহার ত্যাগ করেছি, সে দিন থেকেই ডেন্টাল সার্জনের সূত্রপাত হয়েছে।’ নবী সা:-এর সুন্নত মানুষের স্বভাবসুলভ। এ সুন্নত আমাদের উন্নতির পাথেয় ।

রাতে মিসওয়াক : রাসূল সা: রাতে ঘুম থেকে জেগে মিসওয়াক করতেন। রাতে শয়নকালে মিসওয়াক করা ছিল নবী করিম সা:-এর মহান অভ্যাস (জাদুল মায়াদ)। মহানবী সা:-এর সুন্নত হচ্ছে তিনি সর্বদা অজু অবস্থায় শয়ন করতেন, আর মিসওয়াক ছাড়া কখনো তিনি অজু করতেন না। যদি কেউ খাবার শেষে অজু করে এবং মিসওয়াক করে তাহলে সে দন্তরোগ থেকে রেহাই পাবে।

নামাজের আগে মিসওয়াক : প্রকৃতপক্ষে নামাজ যেহেতু কুল মাখলুকের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ইবাদত। তাই নামাজের সময় মুখ পরিষ্কার হওয়া আবশ্যক। যদি আহারের পর মিসওয়াকবিহীন অজু করা হয়, তাহলে দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাবারের ক্ষুদ্র অংশগুলো জিহ্বায় লেগে নামাজের একাগ্রতায় বিঘœ ঘটায়। তা ছাড়া নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় নামাজি ব্যক্তির মুখ থেকে যদি দুর্গন্ধ বের হয়, তাহলে এর দ্বারা অন্য মুসল্লির কষ্ট হয়। তাই মিসওয়াক দ্বারা মুখের দুর্গন্ধ দূর করে নেয়া উচিত। মিসওয়াক করার সময় মুখ এমনভাবে হিল্লেলিত হয়, যার দ্বারা কুরআন তিলাওয়াত, তাসবি-তাহলিল ইত্যাদিতে অনাবিল সুখ-শান্তি ও মনের প্রশান্তি লাভ হয়। নামাজ হয় মহান প্রভুর সম্মুখে হাজিরা দেয়া।
মুখের দুর্গন্ধ দূরীকরণে মিসওয়াক : এক ব্যক্তির মুখে ছিল খুবই দুর্গন্ধ। এর জন্য সে উন্নতমানের টুথপেস্ট, ওষুধ, মাজন ও দুর্গন্ধনাশক বিভিন্ন ওষুধ ব্যবহার করে। কিন্তু তাতে সে উপকৃত হয় না। অতঃপর সে এ ব্যাপারে জনৈক আলেমের কাছ থেকে পরামর্শ চাইলে তিনি তাকে পিলুগাছের মিসওয়াক ব্যবহার করার পরামর্শ দেন এবং সাথে সাথে ব্যবহারপদ্ধতিও বলেন যে, মিসওয়াকের আগার চিকন অংশগুলো প্রতিদিন নতুন হওয়া বাঞ্ছনীয়। এ পদ্ধতিতে মিসওয়াক ব্যবহারের পর অতি অল্প দিনের মধ্যেই সে আরোগ্য লাভ করে।
গলার রোগ নিরাময়ে মিসওয়াক : টনসিলের রোগীদের জন্য মিসওয়াক ব্যবহারে যথেষ্ট ফল পাওয়া যায়। এক ব্যক্তির গলায় মাংসগ্রন্থি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে খুব পেরেশান ছিল। তাকে তুতফলের শরবত ও মিসওয়াক ব্যবহার করতে দেয়া হলো, অর্থাৎ তুতের শরবত পান করবে এবং তাজা মিসওয়াক ব্যবহার করবে এবং মিসওয়াক টুকরো টুকরো করে ফুটন্ত পানিতে জাল দিয়ে গড়গড়া করবে। এ পন্থা অবলম্বন করার পর রোগ দ্রুত আরোগ্য লাভ করল।
মস্তিষ্ক সতেজকরণে মিসওয়াক : হজরত আলী রা: বলেন, মিসওয়াক দ্বারা মস্তিষ্ক সতেজ হয়। প্রকৃতপক্ষে মিসওয়াকের মধ্যে থাকে ফসফরাস-জাতীয় পদার্থ। রিসার্চ ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে এ কথা স্বীকৃত যে, যে জমিতে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস অধিক বিদ্যমান থাকে সেখানেই পিলু, নিম, বাবলা এসব গাছ অধিক হারে জন্মায়। দাঁতের প্রধান খাদ্যই হলো ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস। আর বিশেষ করে পিলুগাছের ডালে এই উপাদানগুলো সাধারণত বেশি পাওয়া যায়। অভিজ্ঞতা দ্বারা এ কথা প্রমাণিত যে, পিলুগাছের মিসওয়াক তাজা ও নরম অবস্থায় চিবালে তার মধ্য থেকে তিক্ত তেজস্ক্রিয় একপ্রকার পদার্থ বেরিয়ে আসে ।
সর্দি, কাশি ও মিসওয়াক : স্থায়ী সর্দি-কাশি রোগের শ্লেষ্মা যদি জমাট বেঁধে থাকে, সে ক্ষেত্রে মিসওয়াক ব্যবহার করলে শ্লেষ্মা ভেতর থেকে বের হয়ে মস্তিষ্ককে হালকা করে। একজন প্যাথলজিস্ট বলেছেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা আমাকে স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, মিসওয়াক হলো সর্দি ও কাশির সর্বোচ্চ প্রতিরোধক। এমনকি মিসওয়াক সর্বদা ব্যবহার করলে নাক ও গলার অপারেশন করার মতো পরিস্থিতি কমই সৃষ্টি হয় । সমাপ্ত।

Related Post