রাসূলুল্লাহর হিজরত (খুতবাতুল জুমুয়াহ)
الحمدُ لله الذي جَعَلَ الْهِجْرَةَ لِنَشْرِ الْإِسْلَامِ وَنَصَرَ الْأَنْصَارُ الْمُهَاجِرِيْنَ كَالْإِخْوَانِ وَ بَشَّرَهُمَا بِدُخُوْلِ الْجَنَّةِ بَعْدَ وَعْدِ الْغُفْرَانِ ، أَحْمَدُهُ سُبْحَانَه وَ أَشْكُرُهُ وَأَسْتَعِيْنُهُ وَأَسْتَغْفِرُهُ، وأعوذُ بالله مِنْ شُرُورِ أَنْفُسِنَا، وَمِنْ سَيِّئَاتِ أَعْمَالِنَا، مَنْ يَهْدِهِ اللهُ فَلَا مُضِلَّ لَهُ، وَمَنْ يُضْلِلْ فَلَا هَادِيَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَن لَّا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وحدَهُ لاَ شَرِيْكَ لهُ ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُه، بلَّغَ الرِّسَالَةَ وَأَدَّى الْأَمَانَةَ، وَجَاهَدَ فِيْ اللهِ حَقَّ الْجِهَادِ، حَتَّى أُوْذِيَ فِيْ نَفْسِهِ وَشَخْصِهِ، وَأَهْلِهِ وَحِزْبِهِ، فَصَبَرَ حَتَّى أَتَاهُ وَعْدُ رَبـِّهِ، فنَصَرَهُ وَأَيـَّدَهُ، وَجَعَلَ كَلِمَةَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا السُّفْلَى، وَكَلِمَةُ اللهِ هِيَ الْعُلْيَا. فَصَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَعَلَى آلِهِ وَصَحْبِهِ, وَمَنْ سَارَ عَلَى نَهْجِهِ إِلَى يَوْمِ الدِّيْنِ، أما بعد…
يَقُولُ اللهُ تَعَالَى فِيْ مُحْكَمِ كِتَابِه : إلاَّ تَنصُرُوهُ فَقَدْ نَصَرَهُ اللهُ إِذْ أَخْرَجَهُ الَّذِينَ كَفَرُواْ ثَانِىَ اثْنَيْنِ إِذْ هُمَا فِى الْغَارِ إِذْ يَقُولُ لِصَاحِبِهِ لاَ تَحْزَنْ إِنَّ اللهَ مَعَنَا. فَأَنْزَلَ اللهُ سَكِينَتَهُ عَلَيْهِ وَأَيَّدَهُ بِجُنُودٍ لَّمْ تَرَوْهَا وَجَعَلَ كَلِمَةَ الَّذِينَ كَفَرُواْ السُّفْلَى ، وَكَلِمَةُ اللهِ هِىَ الْعُلْيَا ، وَاللهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ (40)﴾ سورة التوبة
হিজরত অর্থ দেশ ত্যাগ। রাসূলুল্লাহ (সা:) তাঁর জন্মভুমি মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় চলে যান। পবিত্র ইসলাম ধর্মের প্রচারে জুলম-নির্যাতন, দুঃখ-কষ্ট, লাঞ্ছনা-গঞ্জনা ও দেশত্যাগ নবীদের সুন্নাহ। এই সুন্নাহর যেখানে যতটুকু অভাব, সেখানে দ্বীন প্রচারও ততখানি দুর্বল। বাতিলের সাথে আপোষ করলে এ সকল নির্যাতন ও সুন্নাহর প্রয়োজন নেই। আর নবীর (সা.) মত আপোষহীন ভূমিকা পালন করলে ঐ সকল কঠোর সুন্নাহ বা পরিস্থিতির সম্মুখীন হতেই হয়।
দ্বীন প্রচারের কারণে,মক্কার মুশরিকগণ তাঁর বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সকল নির্যাতন প্রক্রিয়া প্রয়োগ করেছে। শেষ পর্যন্ত তারা তাঁকে হত্যার উদ্যোগ নেয়। মসজিদে হারামে অবস্থিত দারুন-নাদওয়া তথা তদানিন্তন মক্কা পরিষদে মক্কার নেতাদের এক বৈঠক বসে। বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার পর আবু জাহলের প্রস্তাব অনুযায়ী, মক্কার প্রতিটি গোত্রের একজন করে যুবক হাতে তলোয়ার নিয়ে মুহাম্মদকে রাত্রে হত্যা করার গোপন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর জিবরীল (আ) ওহী নিয়ে আসেন এবং মুহাম্মাদ (স.)-কে বলেন, আল্লাহ আপনাকে হিজরতের আদেশ দিয়েছেন এবং এই রাতেই আপনাকে হিজরত করতে হবে।
বিশ্ব ইতিহাসেও সবচেয়ে তাৎপর্যবহ, গুরুত্বপূর্ণ ও সুদূরপ্রসারী ঘটনা হল এই হিজরতের ঘটনা। ‘যোসেফ হেল’ যথার্থই বলেছেন, ‘Hijrat is the Greatest Turning Point in the History of Islam’ অর্থাৎ হিজরত ইসলামের মোড় পরিবর্তনকারী মহান ঘটনা।
‘হিজরত’ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। হিজরত শব্দটির একটি সাধারণ অর্থ এবং একটি পারিভাষিক অর্থ রয়েছে। হিজরতের সাধারণ অর্থ আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোনো বস্তু, স্থান বা ব্যক্তিকে পরিত্যাগ করা, তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া। এই অর্থটি ব্যাপক। এই ব্যাপক অর্থেই নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, الْمُهَاجِرُ مِنْ هَجَرَ مَا نَهَى اللَّهُ عَنْهُ ‘প্রকৃত মুহাজির সেই ব্যক্তি যে আল্লাহর বারণকৃত বস্তুকে পরিত্যাগ করে। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ১০) অপর একটি হাদীসে এসেছে, নবীজীকে প্রশ্ন করা হল,
، أَنَّ رَجُلًا قَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَيُّ الْهِجْرَةِ أَفْضَلُ ؟ قَالَ ” أَنْ تَهْجُرَ مَا كَرِهَ رَبُّكَ
রাসূল (সা.)-কে কোন এক ব্যক্তি প্রশ্ন করলো যে, কোন হিজরত উত্তম? তখন তিনি বললেন, তোমার রবের অপছন্দীয় বস্তু ছেড়ে দেয়া। মুসনাদে আহমদ ২/১৬০ হাদীস : ৬৪৮৭
জ্ঞানার্জন, ইসলামী দাওয়াত ও জিহাদের জন্য দেশ থেকে সফর করাও হিজরতের এই ব্যাপক ও সাধারণ অর্থের অন্তর্ভুক্ত। যেমন একটি হাদীসে এসেছে, নবীজীকে প্রশ্ন করা হল,
وما الهجرة قال أَْنْ تَهْجُرَ السُّوْءَ قَالَ فَأَيُّ الْهِجْرَةِ أَفْضَلُ قَالَ الْجِهَادُ
হিজরত কী? তিনি বললেন, পাপ ছেড়ে দেওয়া। প্রশ্নকারী বললেন, কোন হিজরত উত্তম? নবীজী বললেন, জিহাদ …। -মুসনাদে আহমদ ৪/১১৪ হাদীস ১৭০২৭
উল্লেখ্য যে, এই ব্যাপক অর্থের হিজরতের জন্য নির্দিষ্ট কোন সময় নেই; বরং তা তো একজন মুমিন বান্দার সার্বক্ষণিক আমল। কিন্তু হিজরত যা শরীয়তের একটি ‘বিশেষ পরিভাষা’ তার অর্থ হল, ‘স্বীয় দ্বীন ও ঈমানের সুরক্ষা ও নিরাপদভাবে তার ইবাদতে মগ্ন হওয়ার জন্য আল্লাহ ও তার রাসূলের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দারুল হারব বা দারুল খাওফ অর্থাৎ কুফরী ভূখণ্ড বা অনিরাপদ ভূখণ্ড ত্যাগ করে দারুল ইসলাম বা দারুল আমন অর্থাৎ ইসলামী ভূখণ্ড বা নিরাপদ ভূখণ্ডে গমন করা।
হিজরতে শরয়ী’র আসল অর্থ তাই। এই অর্থেই সাহাবীদের মধ্যে হিজরতকারী জামাতকে ‘মুহাজির’ উপাধি দেওয়া হয়েছে। আর তাদের সাহায্যকারীদের বলা হয়েছে আনসার। কুরআন মজীদের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা সাহাবীদের এই দুই জামাতকে এই অর্থেই ‘মুহাজির’ ও ‘আনসার’ উপাধি দিয়ে বারবার বিভিন্ন প্রশংসা ও ফযীলতের কথা উল্লেখ করেছেন।
হিজরতের ফযীলত;
১। মুহাজিরের পূর্ণ সাওয়াব যদিও তিনি গন্তব্যে পৌঁছতে না পারেন: হযরত সাঈদ বিন জুবায়ের হতে বর্ণিত তিনি বলেন. খুযাআ গোত্রের যুমরা বিন আইস বিন যুমরা বিন যানবা মক্কায় অসুস্থ হয়ে পড়েন, তিনি তার পরিবারের লোকদের বললেন আমাকে খাটে করে মদীনায় নিয়ে চলো, কিন্তু তানঈম নামক স্থানে পৌঁছার পর তিনি ইন্তেকাল করেন। তখন আল্লাহ তায়ালা এই আয়াত নাযিল করেন:
وَمَنْ يَخْرُجْ مِنْ بَيْتِهِ مُهَاجِرًا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ يُدْرِكْهُ الْمَوْتُ فَقَدْ وَقَعَ أَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ النساء:
যে কেউ নিজ গৃহ থেকে বের হয় আল্লাহ ও রসূলের প্রতি হিজরত করার উদ্দেশে, অতঃপর মৃত্যুমুখে পতিত হয়, তবে তার সওয়াব আল্লাহর কাছে অবধারিত হয়ে যায়। আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।
২। মুহাজিরের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে রয়েছে জান্নাত ও মাগফিরাত:
فَالَّذِينَ هَاجَرُوا وَأُخْرِجُوا مِن دِيَارِهِمْ وَأُوذُوا فِي سَبِيلِي وَقَاتَلُوا وَقُتِلُوا لَأُكَفِّرَنَّ عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَلَأُدْخِلَنَّهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ثَوَابًا مِّنْ عِندِ اللَّـهِ ۗ وَاللَّـهُ عِندَهُ حُسْنُ الثَّوَابِ
‘সুতরাং যারা হিজরত করেছে, নিজেদের ঘর-বাড়ি হতে বিতাড়িত হয়েছে, আমার পথে নির্যাতিত হয়েছে, জিহাদ করেছে এবং শহীদ হয়েছে। আমি অবশ্যই তাদের পাপসমূহ মাফ করে দেব এবং তাদেরকে এমন বাগানে প্রবেশ করাব, যার তলদেশে বইবে নহর। এই প্রতিদান আল্লাহর পক্ষ হতে। আর আল্লাহর কাছেই রয়েছে উত্তম প্রতিদান। (সূরা আল ইমরান ১৯৫)
৩। হিজরতের মাধ্যমে বিগত জীবনের গুনাহ মাফ হয়ে যায়: হাদীসে এসেছে,
أَمَا عَلِمْتَ أَنَّ الإِسْلاَمَ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ وَأَنَّ الْهِجْرَةَ تَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهَا وَأَنَّ الْحَجَّ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ ».
‘হিজরত তার পূর্ববর্তী সকল পাপসমূহকে মিটিয়ে দেয়।’ -সহীহ মুসলিম হাদীস : ১২১
৪। আল্লাহর রাসূলের ৫টি নির্দেষের একটি হলো হিজরত:
قال رسول الله صلى الله عليه و سلم:وَأَنَا آمُرُكُمْ بِخَمْسٍ؛ اللَّهُ أَمَرَنِي بِهِنَّ: بِالْجَمَاعَةِ, وَالسَّمْعِ, وَالطَّاعَةِ, وَالْهِجْرَةِ, وَالْجِهَادِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ, فَإِنَّهُ مَنْ خَرَجَ مِن الْجَمَاعَةِ قِيدَ شِبْرٍ فَقَدْ خَلَعَ رِبْقَةَ الإِسْلاَمِ مِنْ عُنُقِهِ إلاَ أَنْ يَرْجِعَ, وَمَنْ دَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ فَهُوَ مِنْ جُثَاءِ جَهَنَّمَ, قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَإِنْ صَامَ وَ صَلَّى؟ قَالَ: وَإِنْ صَامَ وَإِنْ صَلَّى وَزَعَمَ أَنَّهُ مُسْلِمٌ, فَادْعُوا الْمُسْلِمِينَ بِمَا سَمَّاهُمْ: الْمُسْلِمِينَ, الْمُؤْمِنِينَ, عِبَادَ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ
নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আমিও তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের আদেশ দিচ্ছি। আল্লাহ্ আমাকে সেগুলোর নির্দেশ দিয়েছেনঃ
(১) নেতা বা শাসকের কথা শোনা,
(২) নেতা বা শাসকের কথার আনুগত্য করা (মুসলিম শাসক বা শাসকের প্রতিনিধির আদেশ-নিষেধ মান্য করা),
(৩) জিহাদ করা,
(৪) হিজরত করা এবং
(৫) জামাআতবদ্ধ থাকা। কেননা যে লোক মুসলমানদের জামাআত থেকে এক বিঘত দূরে চলে যাবে, তার কাঁধ থেকে ইসলামের বন্ধন খুলে যাবে- যতক্ষণ সে তওবা করে তাতে ফিরে না আসে। আর যে ব্যক্তি জাহেলীয়াতের দিকে আহবান করবে (মুসলিমদের বৃহৎ ঐক্য পরিত্যাগ করতে আহবান করবে) সে জাহান্নামের অধিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করল: হে আল্লাহর রাসূল! যদিও সে নামায পড়ে ও রোযা রাখে?
তিনি বললেনঃ
“যদিও সে নামায পড়ে, রোযা রাখে। তোমরা আল্লাহর কথা বলে আহবান করবে। তিনি তোমাদের নাম রেখেছেন মুসলমান, মুমিন- আল্লাহর বান্দা।
তিরমিযী, নাসাঈ হাদীসটির কিছু বর্ণনা করেছেন। আরও বর্ণনা করেছেন ইবনে খুযাইমা, ইবনে হিব্বান ও হাকেম। এই হাদীসের বাক্য তিরমিযীর; হাকেম বলেনঃ বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী হাদীসটি সহীহ্। দ্রঃ সহীহ তারগীব ও তারহীব ১ম খণ্ড ৫৫২ নং হাদীস।
৫। ইমামতিতে মুহাজিরের প্রাধান্য রয়েছে:
عن أَوْسٍ بن ضَمْعَجٍ، يَقُولُ: سَمِعْتُ أبا مسعود، يقول: قال لَنَا رَسُوْلُ الله صلى الله عليه و سلم: يَؤُمُّ الْقَوْمَ أَقْرَؤُهُمْ لِكِتَابِ اللَّهِ وَأَقْدَمُهُمْ قِرَاءةً فَإِنْ كَانَتْ قِرَاءَتُهُمْ سَوَاءً فَلْيَؤُمَّهُمْ أَقْدَمُهُمْ هِجْرَةً فَإِنْ كَانُوا فِي الْهِجْرَةِ سَوَاءً فَلْيَؤُمَّهُمْ أَكْبَرُهُمْ سِنًّا ..” . رواه مسلم 1079
অর্থাৎ ইমামতির যোগ্যতম ব্যক্তি হলেন যিনি কুরআনের বিজ্ঞ আলেম তারপর মুহাজির অতঃপর বয়সের দিক যে বড় তিনি। মুসলিম: ১০৭৯)
৬। মুহাজিরগণ জান্নাতে প্রথমে প্রবেশ করবেন:
عن عبدالله بن عمرو رضي الله عنه قال: قال لي رسول الله صلى الله عليه و سلم أَتَعْلَمُ أَوَّلَ زُمْرَةٍ تَدْخُلُ الْجَنَّةَ مِنْ أُمَّتِي ؟ قُلْنَا : اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ ، قَالَ : فُقَرَاءُ الْمُهَاجِرِينَ يَأْتُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِلَى بَابِ الْجَنَّةِ وَيَسْتَفْتِحُونَ ، فَتَقُولُ لَهُمُ الْخَزَنَةُ : أَوَ قَدْ حُوسِبْتُمْ ؟ قَالُوا : بِأَيِّ شَيْءٍ تُحَاسِبُونَا ؟ وَإِنَّمَا كَانَتْ أَسْيَافُنَا عَلَى عَوَاتِقِنَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ حَتَّى مِتْنَا عَلَى ذَلِكَ ، قَالَ : فَيُفْتَحُ لَهُمْ فَيَقِيلُونَ فِيهَا أَرْبَعِينَ عَامًا قَبْلَ أَنْ يَدْخلَهَا النَّاسُ ” .
আব্দুল্লাহ বিন আমর বলেন; রাসূল (সা.) আমাকে বললেন তুমি কি জানো আমার উম্মত হতে প্রথমে জান্নাতে কে প্রবেশ করবে? আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রাসূল বালো জানেন। রাসূল (সা.) বললেন, নিঃস্ব মুহাজিরগণ, তারা জান্নাতের দরজার কাছে আসলে তা খুলা হবে। তখন জান্নাতের প্রহরীগণ বলবেন, তোমাদের হিসাব শেষ হয়েছে? মুহাজিরগণ বললেন, আমাদের কোন বিষয়ে হিসাব নেওয়া হবে? অথচ আল্লাহর রাস্তায় মৃত্যু পর্যন্ত তরবারী কাঁধে রাখতাম। সতরাং তাদের জন্য দরজা খুলা হবে। বলা হয় যে তারা অন্যান্য জান্নাতী হতে চল্লিশ বছর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুস্তাদরাক হাকেম)
সামর্থবান ও সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও যারা এই হিজরত থেকে বিরত থেকেছে তাদের জন্য ঘোষণা করা হয়েছে প্রচণ্ড ‘ধিক্কার’। আল্লাহা তাআলা বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ تَوَفَّاهُمُ الْمَلَائِكَةُ ظَالِمِي أَنفُسِهِمْ قَالُوا فِيمَ كُنتُمْ ۖ قَالُوا كُنَّا مُسْتَضْعَفِينَ فِي الْأَرْضِ ۚ قَالُوا أَلَمْ تَكُنْ أَرْضُ اللَّـهِ وَاسِعَةً فَتُهَاجِرُوا فِيهَا ۚ فَأُولَـٰئِكَ مَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ ۖ وَسَاءَتْ مَصِيرًا ﴿٩٧﴾
নিশ্চয়ই ফেরেশতাগণ যখন এমন লোকদের ‘রুহ’ কবজ করবে (যারা সামর্থ থাকা সত্ত্বেও) নিজেদেরকে পাপী করে রেখেছিল, তখন ফেরেশতারা তাদের বলবেন, তোমরা কোন কর্মে ছিলে? তারা বলবে দুনিয়ায় আমরা অসহায় ছিলাম। ফেরেশতাগণ বলবেন, খোদার যমীন কি প্রশস্ত ছিল না যে, তোমরা সেখানে হিজরত করতে? তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম আর তা নিকৃষ্ট গন্তব্যস্থান।’ (সূরা নিসা : ৯৭)
মূলকথা হল,কুরআন ও হাদীসে হিজরতের ব্যাপারে যে বড় বড় ফযীলতের কথা কথা বলা হয়েছে, মুহাজির ও আনসারদের যে বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার কথা বারবার উল্লেখ করা হয়েছে, এখানে মুহাজির ও হিজরত থেকে এই শরয়ী অর্থই উদ্দেশ্য। ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হিজরতের প্রথমোক্ত সাধারণ অর্থ নয়।