Main Menu
أكاديمية سبيلي Sabeeli Academy

লাইলা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর অর্থ ও দাবি

ঈমানের দাবি হক কথা বলা

ঈমানের দাবি হক কথা বলা

লাইলা ইলাহা ইল্লাল্লাহ   এর অর্থ হচ্ছে : সত্য এবং হক মাবুদ বলতে যে ইলাহকে বুঝায় তিনি হলেন একমাত্র আল্লাহ যার কোন শরীক নেই এবং তিনিই ইবাদতের অধিকারী। তিনি ব্যতীত যত মাবুদ আছে সব মিথ্যা ও বাতিল। তাই তারা কোন ধরনের ইবাদত পাওয়ার যোগ্য নয়। এজন্য অধিকাংশ সময় আল্লাহ তাআলার ইবাদতের আদেশের সাথে সাথে তিনি ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করতে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা আল্লাহর ইবাদতের সাথে অন্য কাউকে অংশীদার করা হলে ঐ ইবাদত গ্রহণযোগ্য হবে না।
আল্লাহ তাআলা বলেন, {وَاعْبُدُواْ اللّهَ وَلاَ تُشْرِكُواْ بِهِ شَيْئًا} অর্থাৎ‘‘এবং তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত কর আর তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরীক করো না’’। (আন নিসা-৩৬) আল্লাহ আরো বলেন,
فَمَنْ يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِن بِاللّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَىَ لاَ انفِصَامَ لَهَا وَاللّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
‘‘অতঃপর যে তাগুতকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহর উপর ঈমান আনবে সে ব্যক্তি সুদৃঢ় হাতল ধারণ করল যা ছিন্ন হবার নয়। আর আল্লাহ সবই শুনেন এবং জানেন।’’(সূরা আল বাকারাহ-২৫৬)তিনি আরো বলেন,
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ اعْبُدُواْ اللّهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوتَ
‘‘আর নিশ্চয়ই আমরা প্রত্যেক জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি এজন্য যে,তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুতকে পরিহার কর।’’(আন্ নাহাল-৩৬)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি বলল,আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই এবং সে আল্লাহ ব্যতীত অন্য সব কিছুর ইবাদতকে অস্বীকার করল ঐ ব্যক্তি আমার নিকট থেকে তার জীবন ও সম্পদের সুরক্ষা লাভ করল।’(সহীহ্ মুসলিম,কিতাবুল ঈমাম হাদীস-নং ২৩)
প্রত্যেক রাসূলই তাঁর জাতিকে বলেছেন, اعْبُدُواْ اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ
‘তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত কর এবং আল্লাহ ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই।’’(সূরা আল আয়রাফ, ৫৯) এতদ ব্যতীত এ সম্পর্কে আরো প্রমানাদি রয়েছে।
ইবনে রজব বলেন, কালেমার এই অর্থ বাস্তবায়িত হবে তখন, যখন বান্দাহ ” لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ ” এর স্বীকৃতি দান করার পর এটা প্রমাণ করবে যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্য ইলাহ নেই এবং মাবুদ হওয়ার একমাত্র যোগ্য ঐ সত্তা যাকে ভয়-ভীতি, বিনয়, ভালোবাসা, আশা-ভরসা সহকারে আনুগত্য করা হয়। যার নিকট প্রার্থনা করা হয়, যার সমীপে দু‘আ করা হয় এবং যার অবাধ্যতা থেকে বিরত থাকা হয় এবং এ সমস্ত কাজ আল্লাহ ছাড়া আর কারো জন্য নিবেদন করা বৈধ নয়। এ জন্য রাসূল সা. যখন মক্কার কাফেরদেরকে বললেন, তোমরা বলো, ” لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ ” উত্তরে তারা বলল,
أَجَعَلَ الْآلِهَةَ إِلَهًا وَاحِدًا إِنَّ هَذَا لَشَيْءٌ عُجَابٌ
সে কি সমস্ত ইলাহকে এক ইলাথেকে পরিণত করেছে? নিশ্চয় এ তো অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয়’’। (সূরা সাদ -৫
এর অর্থ হলো তারা বুঝতে পারল যে, এ কালেমার স্বীকৃতি মানেই এখন থেকে মূর্তি পূজা বাতিল করা হলো এবং ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারণ করা হলো। আর তারা কখনও এমনটি কামনা করে না। তাই এখানেই প্রমাণিত হলো যে, ” لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ ” এর অর্থ এবং এর দাবি হচ্ছে ইবাদতকে একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট করা এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য সব কিছুর ইবাদত পরিহার করা।
এজন্য কোন ব্যক্তি যখন বলে ” لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ ” তখন সে এ ঘোষণাই প্রদান করে যে, ইবাদতের একমাত্র অধিকারী আল্লাহ তা‘আলাই এবং তিনি ব্যতীত অন্য কিছুর ইবাদত যেমন, কবর পূজা, পীর পূজা ইত্যাদি সমস্ত কিছু বাতিল। এর মাধ্যমে গোর পূজারি ও অন্যান্যরা, যারা মনে করে যে, ” لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ ” এর অর্থ হচ্ছে এই বলে স্বীকৃতি দেয়া যে, ‘আল্লাহ আছেন, অথবা তিনি সৃষ্টিকর্তা এবং তিনি কোন কিছু উদ্ভাবন করতে সক্ষম’, তাদের এই সমস্ত মতবাদ ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত হলো।
আবার অনেকে মনে করে যে, ” لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ ” এর অর্থ হলো সার্বভৌমত্ব শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য এবং এটাই এর একমাত্র অর্থ। যে ব্যক্তি এতটুকু ধারণা পোষণ করবে, সে সত্যিকার অর্থে তার জীবনে তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করল। এরপর যদি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো পূজা-অর্চনা করা হয় বা মৃত ব্যক্তিদের বিষয়ে বিশ্বাস করা হয় যে, তাদের নামে মান্নত, কোরবানী ও ভেট প্রধান করার মাধ্যমে তাদের নৈকট্য লাভ করা সম্ভব বা তাদের কবরের চার পাশে ঘুরে তাওয়াফ করাতে কিংবা তাদের কবরের মাটিকে বরকতময় মনে করাতে কোন অসুবিধা নেই এবং এতে কিছু আসে যায় না। এ লোকেরা অনুধাবন করতে পারেনি যে এদের মত এ ধরনের আক্বীদাহ বিশ্বাস তৎকালীন মক্কার কাফেরগণও পোষণ করত। তারা বিশ্বাস করত যে, আল্লাহই সৃষ্টিকর্তা, একমাত্র উদ্ভাবক। এবং তারা অন্যান্য দেব- দেবীর ইবাদত শুধুমাত্র এজন্যই করত যে, তারাই তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার খুব নিকটবর্তী করে দেবে।
তা ছাড়া তারা মনে করত না যে, ঐ সমস্ত দেব-দেবী সৃষ্টি করতে অথবা রিজিক দান করতে পারে। অতএব সার্বভৌমত্ব আল্লাহর জন্য এবং এটাই ‘লা ইলাহা ইললাল্লাহ’এর প্রকৃত অর্থ বা একমাত্র অর্থ এমনটি নয়। বরং ‘সার্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাহর জন্য’ কথাটি এ কালেমার অর্থের একটি অংশ মাত্র। পূর্ণ অর্থ নয়। কেননা কেউ যদি এক দিকে রাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশে যেমন, আইন আদালত বা বিচার বিভাগ ইত্যাদিতে শরীয়তের হুকুম প্রতিষ্ঠা করে অন্য দিকে আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরীক করে তাহলে এর কোন মূল্যই হবে না। আর যদি ” لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ ” এর অর্থ এটাই হতো যেমনটি ঐ সমস্ত লোক ধারণা করে তাহলে মক্কার মুশরিকদের সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোন দ্বন্দ্বই থাকত না। তিনি তাদেরকে যদি শুধুমাত্র এতটুকু আহবানই করতেন যে, তোমরা এ মর্মে স্বীকৃতি প্রদান কর যে, আল্লাহ তা‘আলা উদ্ভাবন করতে সক্ষম। অথবা আল্লাহ বলতে একজন কেউ আছেন, অথবা তোমরা ধন-সম্পদ এবং অধিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে শরীয়াত অনুযায়ী ফয়সালা কর। এর সাথে সাথে তিনি যদি তাদেরকে একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করার কথা বলা থেকে বিরত থাকতেন তাহলে কালবিলম্ব না করে তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আহবানে সাড়া দিত। কিন্তু তারা আরবী ভাষী হওয়ার কারণে বুঝতে পেরেছিল যে, ” لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ ” এর স্বীকৃতি দেয়ার অর্থই হচ্ছে সমস্ত দেব-দেবীকে অস্বীকার করা। তারা আরো বুঝেছিল যে, এই কালেমা শুধু এমন কতগুলো শব্দের সমারোহ নয় যে, এর কোন অর্থ নেই বরং এসব কিছু বুঝার কারণেই তারা এর স্বীকৃতি দান থেকে বিরত থাকল এবং বলল, أَجَعَلَ الْآلِهَةَ إِلَهًا وَاحِدًا إِنَّ هَذَا لَشَيْءٌ عُجَابٌ
‘‘সে কি সমস্ত ইলাহগুলোকে এক ইলাথেকে পরিণত করল? নিশ্চয় এ তো অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয়।’’ তাদের সম্পর্কে আল্লাহ আরো বলেন,
إِنَّهُمْ كَانُوا إِذَا قِيلَ لَهُمْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ يَسْتَكْبِرُونَ
‘‘তাদেরকে যখন বলা হতো, আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য ইলাহ নেই তখন তারা ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করত এবং বলত, আমরা কি এক উন্মাদ কবির কথায় আমাদের সকল উপাস্যকে পরিত্যাগ করব?’’ (সূরা আস্সাফফাত-৩৫-৩৬)
অতএব তারা বুঝল যে, ” لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ ” এর মানেই হচ্ছে সমস্ত কিছুর ইবাদত ছেড়ে দিয়ে একমাত্র আল্লাহর জন্য ইবাদত করা। তারা যদি এক দিকে কালেমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলত অন্যদিকে দেব-দেবীর ইবাদতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকত তা হলে এটা হত স্ববিরোধিতা। অথচ এমন স্ববিরোধিতা থেকে তারা নিজদেরকে বিরত রেখেছে। কিন্তু আজকের কবর পূজারিরা এই জঘন্যতম স্ববিরোধিতা থেকে নিজদেরকে বিরত রাখছে না। তারা একদিকে বলে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ অন্য দিকে মৃত ব্যক্তি এবং মাজারভিত্তিক ইবাদতের মাধ্যমে এ কালেমার বিরোধিতা করে থাকে। অতএব ধ্বংস ঐ সকল ব্যক্তির জন্য যাদের চেয়ে আবু জাহ্ল ও আবু লাহাব ছিল কালেমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর অর্থ সম্পর্কে আরো বেশি সচেতন।
সংক্ষিপ্ত কথা হলো এই যে, যে ব্যক্তি কালেমার অর্থ জেনে বুঝে কালেমার দাবি অনুযায়ী আমল করার মাধ্যমে এর স্বীকৃতি দান করল এবং প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সর্বাবস্থায় নিজকে শিরক থেকে বিরত রেখে দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে একমাত্র আল্লাহর ইবাদতকে নির্ধারণ করল, সে ব্যক্তি প্রকৃত অর্থে মুসলমান। আর যে এই কালেমার মর্মার্থকে বিশ্বাস না করে এমনিতে প্রকাশ্যভাবে এর স্বীকৃতি দান করল এবং এর দাবি অনুযায়ী গতানুগতিক ভাবে কাজ করল সে ব্যক্তি মূলত: মুনাফিক। আর যে মুখে এ কালেমা বলল এবং শিরক এর মাধ্যমে এর বিপরীত কাজ করল সে প্রকৃত অর্থে স্ববিরোধী মুশরিক। এ জন্য এ কালেমা উচ্চারণের সাথে সাথে অবশ্যই এর অর্থ জানতে হবে আর তখনই এর দাবি অনুযায়ী কাজ করা সম্ভব হবে। আল্লাহ বলেন,
إِلاَّ مَن شَهِدَ بِالْحَقِّ وَهُمْ يَعْلَمُونَ
‘‘তবে যারা জেনে-বুঝে সত্যের সাক্ষ্য দিল তারা ব্যতীত (অন্যরা সুপারিশের অধিকারী হবে না)’’ (আয্যুখরুফ, ৮৬)
অতএব এ কালেমার চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো এর দাবি অনুযায়ী একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য সকল কিছুর ইবাদতকে অস্বীকার করা।
‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর আরো অন্যতম দাবি হলো ইবাদত, মো’আমালাত (লেন-দেন) হালাল-হারাম, সর্বাবস্থায় আল্লাহর বিধানকে মেনে নেয়া এবং অন্য সব কিছুকে পরিত্যাগ করা।
আল্লাহ বলেন, أَمْ لَهُمْ شُرَكَاء شَرَعُوا لَهُم مِّنَ الدِّينِ مَا لَمْ يَأْذَن بِهِ اللَّهُ
‘‘তাদের কি এমন কোন শরীক দেবতা আছে যারা তাদের জন্য বিধান রচনা করবে যার অনুমতি আল্লাহ দেননি’’। (সূরা আশ্ শুরা, ২১) এ থেকে বুঝা গেল অবশ্যই ইবাদত, লেন-দেন এবং মানুষের মধ্যে বিতর্কিত বিষয়সমূহ ফয়সালা করতে আল্লাহর বিধানকে মেনে নিতে হবে এবং এর বিপরীত মানব রচিত সকল বিধানকে ত্যাগ করতে হবে। এ অর্থ থেকে আরো বুঝা গেল যে, সমস্ত বেদ‘আত ও কুসংস্কার যা জিন ও মানব-রূপী শয়তান রচনা করে, তাও পরিত্যাগ করতে হবে। আর যে এগুলোকে গ্রহণ করবে সে মুশরিক বলে গণ্য হবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, أَمْ لَهُمْ شُرَكَاء شَرَعُوا لَهُم مِّنَ الدِّينِ مَا لَمْ يَأْذَن بِهِ اللَّهُ
‘‘তাদের কি এমন শরীক দেবতা আছে যারা তাদের জন্য বিধান রচনা করবে যার অনুমতি আল্লাহ দেননি।’’ (সূরা আশ্ শুরা, ২১) আল্লাহ আরো বলেন, وَإِنْ أَطَعْتُمُوهُمْ إِنَّكُمْ لَمُشْرِكُونَ
‘‘যদি তোমরা তাদের আনুগত্য কর তা হলে নিশ্চয়ই তোমরা মুশরিক।’’ (সূরা আল আনআম-১২১)
আল্লাহ আরো বলেন, اتَّخَذُواْ أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللّهِ
‘‘আল্লাহ ব্যতীত তারা তাদের পন্ডিত ও পুরোহিতদেরকে প্রভু রূপে গ্রহণ করেছে।’’ (সূরা আত্তাওবাহ, ৩১)
সহিহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আদী ইবনে হাতেম আত্ত্বায়ীর সামনে উল্লেখিত আয়াত পাঠ করেন তখন আদী বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমরাতো আমাদের পীর-পুরোহিতদের কখনো ইবাদত করিনি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ যে সমস্ত জিনিস হারাম করেছেন তোমাদের পীর-পুরোহিতরা তা হালাল করেছে। আর আল্লাহ যে সমস্ত জিনিস হালাল করেছেন তাকে তারা হারাম বা অবৈধ করেছে,তোমরা কি এক্ষেত্রে তাদের অনুসরণ করতে না?আদী বললেন, ‘হাঁএতে আমরা তাদের অনুসরণ করতাম।’রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম বললেন,এটাই তাদের ইবাদত।শায়খ আবদুর রহমান বিন হাসান বলেন, অন্যায় কাজে তাদের আনুগত্য করার জন্যই এটা আল্লাহ ব্যতীত অন্যদের ইবাদত হয়ে গেল এবং এরই মাধ্যমে পীর পুরোহিতদের তারা নিজেদের রব বা প্রভু হিসাবে গ্রহণ করল। আর এ হলো আমাদের বর্তমান জাতির অবস্থা এবং এটা এক প্রকার বড় শিরক যার মাধ্যমে আল্লাহকে অস্বীকার করা হয় যে, একত্ববাদের অর্থ বহন করে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর সাক্ষ্য। অতএব এখানে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, এই কালেমার অর্থ ঐ সমস্ত বিষয়কে নিষেধ বা পরিহার করার কারণে ইখলাছের বাণীও তাকে নিষেধ করে।
এভাবে মানব রচিত আইনকে ত্যাগ করা ওয়াজিব। কেননা, বিচার ফয়সালাতে কোরআন ও হাদীসের দিকে প্রত্যাবর্তন করা ওয়াজিব। আল্লাহ বলেন, فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللّهِ وَالرَّسُولِ
‘‘তারপর তোমরা যদি কোন বিষয়ে বিবাদে লিপ্ত হয়ে পড় তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর।’’ (আন্ নিসা-৫৯) আল্লাহ আরো বলেন, وَمَا اخْتَلَفْتُمْ فِيهِ مِن شَيْءٍ فَحُكْمُهُ إِلَى اللَّهِ ذَلِكُمُ اللَّهُ رَبِّي
‘‘তোমরা যে বিষয়ই মতভেদ কর তার ফয়সালা আল্লাহর দিকেই প্রত্যাবর্তিত হবে। আর তিনি আমার রব।’’ (আশ্ শুরা, ১০) যে ব্যক্তি আল্লাহর হুকুম মোতাবেক ফয়সালা করবে না তার বিষয়ে আল্লাহর ফয়সালা হলো এই যে,সে কাফের অথবা যালেম অথবা ফাসেক এবং সে ঈমানদার থাকবে না। আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী যে ব্যক্তি ফয়সালা না করবে সে ঐ পর্যায়ের কাফের হবে যখন সে শরীয়ত বিরোধী ফায়সালা দেয়াকে জায়েয মনে করবে। অথবা মনে করবে যে, তার ফয়সালা আল্লাহ তা‘আলার ফয়সালা থেকে অধিক উত্তম বা অধিক গ্রহণীয়। এমন ধারণা পোষণ করা হবে তাওহীদ পরিপন্থী,কুফুরী ও শিরক এবং তা ” لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ এই কালেমার অর্থের একেবারে বিরোধী। আর যদি শরীয়ত বিরোধী ফয়সালা দানকে মোবাহ বা বৈধ মনে না করে, বরং এ অনুযায়ী ফয়সালা দানকে ওয়াজিব মনে করে কিন্তু পার্থিব লালসার বশবর্তী হয়ে নিজের মনগড়া আইন দিয়ে ফয়সালা করে তবে এটা ছোট শিরক ও ছোট কুফরীর পর্যায়ে পড়বে। তবে এটাও ” لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ ” এর অর্থের পরিপন্থী। অতএব ” لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ “একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান,এ কালেমাই মুসলমানদের জীবনকে সার্বিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে এবং পরিচালনা করবে তাদের সমস্ত ইবাদত-বন্দেগী এবং সমস্ত কাজ কর্মকে। এই কালেমা শুধু কতগুলো শব্দের সমারোহ নয় যে, না বুঝে একে সকাল সন্ধ্যার তাসবীহ হিসাবে শুধু বরকতের জন্য পাঠ করবে আর এর দাবি অনুযায়ী কাজ করা থেকে বিরত থাকবে অথবা এর নির্দেশিত পথে চলবে না। মূলত: অনেকেই একে শুধু গতানুগতিকভাবে মুখে উচ্চারণ করে থাকে, কিন্তু তাদের বিশ্বাস ও কর্ম এর পরিপন্থী।

Related Post