আমার ইসলাম পূর্ব নাম; অরুন কুমার চক্রবর্তী, বর্তমান নাম: মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম, পিতার নাম: ডা. ফনিভূষণ চক্রবর্তী, গ্রাম: মাস্টার পাড়া (লাকসাম রোড), পোস্ট: কান্দির পাড়, থানা: কোতয়ালী, জেলা: কুমিল্লা, বাংলাদেশ।
যখন কেউ আমার ইসলাম গ্রহণের কথা শুনে, তখন তাদের অনেকেই আমার কাছে আমার ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে জানতে চান। আমি তাদেরকে খুব সংক্ষেপে আমার ইসলাম গ্রহণের কারণ বলি। অনেক দিন ধরেই আমার ইসলাম গ্রহণের পূর্ণ কাহিনী লিখবো বলে ভাবতে ছিলাম। আমি ভীষণ অলস প্রকৃতির লোক, তাই লিখা হয়ে উঠছে না। আই পি সির সম্মানিত দাঈ মুহতারম মাওলানা মামুনুর রশীদ ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় এবং ভিন্ন আরো একটি কারণে লিখতে শুরু করলাম। কারণটি হলো; কোন অমুসলিম যদি আমার জীবনের আত্মকাহিনী পাঠ করে সঠিক পথের সন্ধান পায় কিংবা কোন মুসলমান সঠিকভাবে ইসলাম পালন করে, তাহলে আমার ইসলাম গ্রহণের স্বার্থকতা আরো বৃদ্ধি পাবে।
আমার জন্ম হয়েছে এক বিশিষ্ট ব্রাহ্মণ পরিবারে। ব্রাহ্মণদের মধ্যেও উঁচু নিচু শ্রেণীভাগ আছে। আমার পিতার বংশ ছিল ব্রাহ্মণদের মধ্যেও শ্রেষ্ঠ। হিন্দু শাস্ত্রে যাকে কুলিন বংশ বলে। আমার পিতা ছিলেন খুবই ধার্মিক ও সৎ। আমি ৯ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে ছিলাম দশম। আমার যখন জন্ম হয় তখন আমার গলায় ব্রাহ্মণ মতে পৈতা ছিল- হিন্দুরা যেহেতু পুনজনমে বিশ্বাসী তাই তাদের ধারণা আমি আগের জনমেও ব্রাহ্মণ ছিলাম। দ্বিতীয় বার যদি কেউ ব্রাহ্মণ হিসেবে জন্ম নেয়, তবে সে পরোলোকে চলে গেলে তার স্বর্গবাস। তাছাড়া আমার আগমন কালে আমার পরিবারে অনেক মঙ্গলবার্তা বয়ে আনে। (আলহামদুলিল্লাহ বর্তমানে আমি একজন মুসলমান, আমি বিশ্বাস করি যদি আমার মৃত্যু ঈমানের সাথে হয় তাহলে অবশ্যই আমি জান্নাতে যাবো। আমি আল-হুদার সকল পাঠক-পাঠিকাদের নিকট দোয়া প্রার্থী, সকলে আমার জন্য দোয়া করবে। আল্লাহ যেন আমাকে ঈমানের সাথে মৃত্যু দান করেন। আমীন)
আশ্চর্যের বিষয় এমন এক পরিবারে জন্ম নিয়ে মুসলমান হয়ে মৃত্যুবরণ করবো তা এক অসম্ভব ব্যাপার ছিলো। কিন্তু রাব্বুল আলামীন যা চান তাই হয়, আমি তার জ্বলন্ত প্রমাণ। (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ যার মঙ্গল কামনা করেন, তাকেই তিনি দ্বীনের বোঝ দান করেন। (বুখারী…)
ছোট বেলা থেকেই আমি খুব ধার্মিক ছিলাম। হিন্দুদের পূজা-পালিতে আমি নিয়মিত অংশ নিতাম, এবং ব্রাহ্মণের কার্যাদি ভালোভাবেই পালন করতাম। এভাবে আমি চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত উত্তীর্ণ হই। তারপর থেকেই আমার মধ্যে বিভিন্ন নেশার আগ্রহ জন্ম নেয়া শুরু হলো। হিন্দু ধর্মে যেহেতু মদ-গাজা স্বাভাবিক ব্যাপার ছিলো, তাই অবাধে তাতে আকৃষ্ট হয়ে গেলাম. ক্রমশ আমার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে যাচ্ছিলাম। পড়াশুনায় ভাল ছিলাম বলে পরীক্ষায় ভালোভাবেই পাস করতাম। সারা দিন ঘুড়ি উড়ানো, গুল্লি ইত্যাদি খেলায় মগ্ন থাকতাম। এভাবেই পার করছিলাম কৈশোরের দিনগুলো। যখন অষ্টম শ্রেণীতে উঠি তখন থেকেই বাহিরে থাকার অভ্যাসটা প্রবল হয়ে গেল। ঘরে ভালো লাগতো না। কোন হোটেলের সামনে দাঁড়াতাম, কেউ হয়ত একটা সিঙ্গারা দিলে বা একটা লুচি দিলে তা খেতাম। একবার ঘর থেকে চলে গিয়ে তিন দিন অন্য বাড়িতে ছিলাম। এই তিন দিন যে কোথায় ছিলাম, আজও তার হদিস খোঁজে বের করতে পারি নাই। এভাবে (SSC) পাস করার পর চলে যাই চট্টগ্রামে। সেখানে কলেজে ভর্তি হই। সেখানে গিয়ে পুরোপুরি নেশায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ি। এভাবে একসময় জীবনের প্রতি কেমন যেন বিতৃষ্ণা এসে যায়। কোথাও ৫/৬ মাসের বেশি থাকতে পারতাম না। তার মধ্যে বিভিন্ন বন্ধুদের পাল্লায় পরে বিভিন্ন নেশা জাতীয় টেবলেট, ফেনসিডিল তার সাথে জুয়া খেলায় অভ্যস্ত হয়ে পড়লাম। তবে আমার একটা অভ্যাস ছিলো যে কোন কিছুতেই আমাকে গ্রাস করতে পারতো না। কোন না কোন সময় বিরক্ত লাগতো, মনে হতো কেউ যেন আমাকে ব্যবহার করছে। যখন দেখছে অতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছে, তখনই আমাকে এটার প্রতি বিমুখ করে রাখতো। এভাবে আমার জীবন হ য ব র ল -এর মতো চলছিল। এই হ য ব র ল জীবনের মাঝেই আই এ. ও বি এ. পাস করি। তখন আমি ঢাকায় ছিলাম।
ভারতের বাবরী মসজিদে নিয়ে বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে ঢাকায় ছোট খাট একটা দাঙ্গা হয়। আমি থাকতাম পুরান ঢাকার শাখারী বাজার ওয়াইজ ঘাট এলাকায়। যখন দাঙ্গা শুরু হয়, তখন আমি বাইরে ছিলাম, বাসায় ঢুকার মত পরিবেশ ছিল না। এভাবে তিন দিন শাখারী বাজারে রাস্তায় পার করে দিয়েছি। যখন এই দাঙ্গা ঠাণ্ডা হলো তখন ভাবলাম, মানবতার এমন অবক্ষয় কি করে হয়! মানুষ মানুষের প্রতি মুহূর্তের মধ্যে এমন ভয়ানক রূপ ধারণ করতে পারে, জীবনে এটাই মানুষের রূপ প্রথম দেখা। তাই বাংলাদেশ ছেড়ে কলিকাতা চলে চাই। সেখানে বাসা ভাড়া করে থাকতাম। একটি ভালো চাকরী ব্যবস্থাও হয়ে গেল। কিছু দিনের মধ্যে অনেক বন্ধু-বান্ধব জুটে গেল। সেখান বন্ধুরা বাংলাদেশী বন্ধু পেয়ে খুব খুশি। সেখানে প্রতি পাড়া মহল্লায় বাংলা মদের আসর বসতো, বন্ধুদের সাথে প্রতি দিন সন্ধ্যায় মদের আসরে গিয়ে মদ্যপানে অভ্যস্ত হয়ে পরলাম। সেখানে একটি মেয়ের প্রেমে পড়লাম। মেয়েটি আমার প্রতি এতই আকৃষ্ট হলো যে সব লোক লজ্জা ভয় উপেক্ষা করে প্রতি রাতে আমার সাথে থাকতো। এভাবে সেখানে প্রায় আড়াই বছর গত হয়ে যায়। তিন মাস পার হওয়ার পর এক দিন সন্ধ্যায় বন্ধুরা মদের আড্ডায় যাওয়ার জন্য নিতে আসলো। ঘর থেকে বের হয়ে কিছু দূর যাওয়ার পর থমকে দাঁড়ালাম। আমার বিবেক আমাকে প্রশ্ন করছে: কে তুমি, কি তোমার পরিচয়, পৃথিবীতে কেন এসেছ, তোমার কি করা উচিত? কেমন যেন ঘোরের মধ্যে কিছু সময় কাটলো। তারপর দেখলাম বন্ধুরা সবাই চলে গেছে, আমি একা দাঁড়িয়ে আছি। এরপর থেকেই কিছু ভাল লাগতো না। কেমন যেন মনে শুধু অস্থিরতা বিরাজ করতো, হৃদয় শুধু আঞ্চান আঞ্চান করতো। এক মাস পর কলিকাতা থেকে নানা বাড়ি ত্রিপুরা রাজ্যের খোয়াই নামক জেলায় চলে আসি। এখানে আসার পর মন আরো ব্যাকুল হয়ে গেল, কেন যে এমন হচ্ছে, বুঝতে পারছি না। সকালে চলে যেতাম গভীর জঙ্গলে বিকালে ফিরতাম ঘরে। সারা দিন জঙ্গলে বসে শুধু কাঁদতাম। জ্জ মাস থাকার পর বাংলাদেশে চলে আসি। কিন্তু ব্যাকুলতা দূর হলো না, আমি ভেবে শেষ করতে পারছি না কেন যে এমন হচ্ছে। কি যেন খুঁজছি কিন্তু তার সন্ধান পাচ্ছি না। বাংলাদেশে আসার পর আমার পরিবার খুব বিরক্ত বোধ করছিল। কিছু দিন ঘুরাঘুরি করার পর কয়েকটি টিউশনি করে নিজের খরচ চালাতে লাগলাম। এবং কুমিল্লা আইন কলেজে এল এল বিতে ভর্তি হলাম। প্রথম বর্ষে হিন্দু আইন ও মুসলিম আইন দুইটি বই ছিল। হিন্দু আইন পড়তে গিয়ে দেখলাম: হিন্দু আইনটা হলো; কোন কর্তা ব্যক্তি যদি বলতো: “এই রাস্তা দিয়ে কেউ চলাচল করতে পারবে না” তার এই উক্তি যদি সকলে ১০০ বছর মেনে চলে সেটা হিন্দু আইনে পরিণত হয়ে যেত। হিন্দু আইনটা পুরোপুরি মানুষের তৈরী। যার মধ্যে ধর্মের কোন প্রাধান্য ছিল না। পক্ষান্তরে মুসলিম আইন পড়তে গিয়ে আমি আভিভূত হয়ে গেলাম। জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ, সম্পত্তি বণ্টন বিচার ব্যবস্থা, ব্যবসা বাণিজ্য, সামাজিক বন্ধন সবটাতেই আল্লাহর হুকুম ও নির্দেশনা রয়েছে। এত সুন্দরভাবে মহান আল্লাহ ব্যাখ্যাসহকারে বিষয়গুলি উপস্থাপন করেছেন, যা কোন ইনসানের পক্ষে কস্মিনকালেও সম্ভব হবে না। যা পরে কুরআনের তাফসীর পড়ে আরো বিস্তারিতভাবে অনুধাবন করতে পারি। তখন থেকেই ইসলাম ধর্ম জানার জন্য মন ব্যাকুল হয়ে গেল। তখন নামাজ শিক্ষা বই কিনে রাত ভর গোপনে গোপনে পড়তাম, এবং কুরআনের বাংলা তাফসীরও অধ্যয়ন করতে থাকি। এই সুবাদের কারণে আমি যাদের প্রাইভেট পড়াতাম, তারা অধিকাংশই মুসলমান ছিলো তাদেরকে ছোট ছোট সূরা যেমন, ফাতেহা ইখলাস ইত্যাদি পড়াতে আমাকে ব্যাক পেতে হয়নি। যখনই আমি তাদেরকে সূরা পড়াতাম তখনই আমি অন্য জগতে চলে যেতাম। ছাত্ররা আমার এই অবস্থা দেখে স্যার বলে ডাকতো, তখন বাস্তব জগতে ফিরে আসতাম। তখনই হৃদয়ে বদ্ধমূল ধারণা হলো আমি যা খুঁজছি, ইসলাম ধর্মেই তা নিহিত আছে এবং এই পথেই আমার চলা উচিত। একদিন রাতে স্বপ্নে দেখি যে, আমি হাটছি, হাটতে হাটতে গভীর গর্তে পড়ে যাওয়ার উপক্রম, হঠাৎ কে যেন আমার বাম হাত ধরে আমাকে উদ্ধার করলো। তারপর থেকে জীবনটা কেমন যেন হয়ে গেল। দুই মাস রাতে ঘুমাতে পারিনি। চোখ বুঝলেই দেখতাম লম্বা একজন লোক, মাথায় সাদা পাগড়ী, সাদা দাড়ি, সাদা দিশদাশা (জুব্বা) পরিহিত আমার সামনে আসছে। তাঁর স্পর্শটা সহ্য করতে পারতাম না। ঘুম ভেঙ্গে যেত, পরবর্তীতে লাইট জ্বালিয়ে শুইতাম, তখনও ঘুম আসতে চাইতো না। একবার স্বপ্নে দেখলাম, আমার এক বন্ধুর সাথে রাম ঠাকুর আশ্রমে যাচ্ছি, আশ্রমের দরজায় লাল কাপড় পরিহিত এক লোক আমার বন্ধুকে ভিতরে যেতে দিলো, আমাকে বাধা দিলো, কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আমাকে কেন ভিতরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। সে আমাকে বললো, ‘তুমি মুসলমান’। এভাবে আরো একদিন স্বপ্নে দেখি শাহরাস্তি মেহের কালীবাড়িতে হিন্দুদের বিরাট উৎসব হচ্ছে, আমি সেখানে গেলাম, রাত প্রায় ২/৩ টার দিকে বাড়িতে গিয়ে যখন ঘুমিয়ে পড়ি, কে যেন বলছে এখানে কেন এসেছ? তুমি তো মুসলমান! তারপর থেকে আমি আমার পরিবার থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকতে লাগলাম। আর ভাবছি কি করে এটা সম্ভব! আমরা নয় ভাই, তিন বোন, আত্মীয়-স্বজন সামাজিকতা এতসব ছিন্ন করে কি করে ইসলাম গ্রহণ করি? একবার ভাবছি আমার তো একটা জীবন, তার জন্য সবাইকে কি করে বিপদের মধ্যে ফেলে দেই! শেষে সিদ্ধান্ত নেই, আমার জীবন নষ্ট করে ফেলবো। তবুও সবাই সুখি হোক।
আমি বিভিন্ন নেশাতে আরো বেশি করে জড়িয়ে পড়লাম। তার সাথে রাতের পর রাত জুয়া ও নেশায় নিজেকে ডুবিয়ে দিতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু আল্লাহ যাকে পছন্দ করেন, সে কি করে খারাপ হতে পারে, আমি যতই খারাপ হওয়ার চেষ্টা করেছি, আল্লাহ আমাকে ততই কাছে টেনে নিয়েছেন। আমি যখন ছাত্রদেরকে পড়াতাম তাদের (Home Work) এর খাতা দেখে নম্বর দিয়ে সই করতাম অবচেতন ভাবেই সাইফুল ইসলাম (মোঃ সাইফুল ইসলাম) লিখতে শুরু করলাম। একদিন এক ছাত্রের বাবা আমাকে বললো, অরুন তুমি এটা কি সই করেছ? আমি বললাম সাইফুল ইসলাম। তিনি তখন আমাকে বললেন, তুমি কি মুসলমান? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি তখন আমার মুখের দিকে অনেক্ষণ তাকিয়ে দেখলেন।
আমার ছোট বেলা থেকেই অভ্যাস ছিলো অনেক রাতে বাসায় ফেরা। একদিন রাতে বাসায় ফিরছি, এমন সময় ফজরের আযান দিলো, আযানটি আমার হৃদয়ে এমনভাবে স্পর্শ করলো যে আমি নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না। রাস্তায় পড়ে গড়াগড়ি খেতে লাগলাম। একবার প্রাইভেট পড়িয়ে বাসায় ফিরছি কুমিল্লা “দারোগাবাড়ি মাজার” নামে একটা মাজার ছিলো, সেখানে প্রতি বৃহস্পতি বার আছরের নামাযের পর যিকিরের আয়োজন হয়, ঠিক সেই সময় তার পাশ দিয়ে অতিক্রম করার কালে আল্লাহু আল্লাহু যিকিরের আওয়াজটা আমার কানে আসে। তখনই আমি সেখানে দাঁড়িয়ে গেলাম, সাধ্য নেই এক পা অগ্রসর হই। যিকির যখন শেষ হয় তখন আমি বাস্তবে ফিরে আসি। আমার জীবনটা ছিলো বেপরোয়া সিরিয়াসলি বলে কোন কাজ আমি করতাম না। আমার মা আমাকে প্রায়ই বলতো অরুন! তুমি সাবধানে চলাফের করবে! তুমি কিন্তু আর ৮/১০ জনের মতো নও। এখন বুঝতে পারছি মা কেন আমাকে এভাবে বললেন। যদি মায়ের কথা শুনতাম তাহলে আরও আল্লাহর কাছে প্রেমিক হতে পারতাম। এখনও আমার এই অভ্যাসটা আছে। চলছে ঘোড়া লাগামহীন। তাতে একটা লাভ এই যে, এই অভ্যাসের কারণে আল্লাহর দয়া পাচ্ছি বেশি করে। যেমন নামায, যিকির ইত্যাদি যখন কম হয়, তখন আল্লাহ তা‘আলা আমাকে তিনি তা আদায় করে নেন। যেমন ঘুম ভাঙ্গিয়ে নামায পড়ান, ইসলাম বিষয়ে নানা ধরণের জ্ঞান আমাকে শিখান। যা আমি কলমে লিখে বুঝাতে পারছি না।
যাক তখন থেকেই রাত জেগে ইসলামী বই-পুস্তক যেমন নামায শিক্ষা, কুরআনের তাফসীরসহ বিভিন্ন কিতাবাদি পড়তাম। এবং প্রায় রাতেই আমি নিজে নিজে গোপনে তাহাজ্জুদের নামায পড়তাম। আমার পরিবর্তন লক্ষ্য করে আমার পরিবার হয়ত বুঝতে পেরেছে, তাই আমাকে বিদেশে পাঠাতে চেষ্টা করতে লাগলো। আমিও মনে মনে ভাবলাম এটাই মোক্ষম সুযোগ। কারণ একবার যদি কোন মুসলিম কান্ট্রিতে চলে যেতে পারি, তবে নিজেকে মুসলমান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবো। তা ছাড়া আল্লাহর ঘর পবিত্র কা‘বা শরীফ তাওয়াফ করতে পারবো। মদীনায় রাসূলের রাওজা মুবারক যিয়ারত করতে পারবো। আল্লাহ সুবহানাহুর নিকট অসংখ্য কৃতজ্ঞতা আদায় করছি, তিনি আমার মনের বাসনা পূরণ করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ শুকরান ইয়া রাব্ব!
পাসপোর্ট জমা দেই কিন্তু এক বৎসর পার হয়ে গেল ভিসা পাচ্ছি না। আমার যে কত অসুবিধা হচ্ছিল আল্লাহর হুকুম পালন করতে পারছি না বলে। ভিসা আসার ৩-৪ মাস আগে ইসলামকে ভালোভাবে জানার জন্য নিজেকে মুসলমান পরিচয় দিয়ে ৪০ দিনের জন্য সিলেট থেকে তাবলীগ জামাতের শরীক হয়ে ঢাকায় আসি। সেখান থেকে ময়মনসিং যাই। এই ৪০ দিন আমি ইসলামকে কাছে থেকে দেখার ও বুঝার সুযোগ পাই। সেই ৪০ দিনের স্মৃতি আমাকে এখনও আপ্লুত করে রাখে। চলবে…