সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদের জন্য ইসলাম ধর্মকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। দরূদ ও শান্তির অবিরাম ধারা বর্ষিত হোক নবীকুল শিরোমণী মুহাম্মাদ (সাঃ) এবং তাঁর পবিত্র বংশধর ও সম্মানিত সাথীদের উপর।
আমরা কখনও কখনও মুজার উপরমাসেহ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে থাকি। তাই ইসলামী শরীয়ত ওযু করার সময় মুজা পরিধানকারীকে পা ধৌত করার জন্য মোজা নাখুলে তার উপর মাসেহ করার অনুমতি দিয়েছে। কারণ বার বার মোজা খুলতে কষ্ট হয়। বিশেষ করে শীতের প্রচন্ডতার সময়।
মুসলমানদের জন্য উত্তম হলো প্রয়োজনের সময় আল্লাহ প্রদত্ত অনুমতি গ্রহণ করা এবং নিজের উপর কঠিন না করা। নবী (সাঃ) বলেছেন, “আল্লাহ তায়া’লা কোন বিষয়ে অনুমতি দিলে মানুষ তা গ্রহণ করুক এটা পছন্দ করেন, যেমনভাবে তিনি তাঁর নাফরমানীতে লিপ্ত হওয়াকে অপছন্দ করেন। (আহমাদ)
কাপেড়র তৈরী মোজার উপর মাসেহ করা বৈধ কি? هل يجوز المسح على الخف المصنوع من القطن
বর্তমান সময়ে লোকেরা কাপড়ের তৈরী মোজাই পরিধান করে থাকে। সুতরাং হাদীছে যেহেতু বিনা পার্থক্যে মোজার উপর মাসেহ করা বৈধ রাখা হয়েছে, তাই সকল প্রকার মোজার উপর মাসেহ করাই বৈধ। তা চামড়ার তৈরী হোক বা সুতার তৈরী হোক। পরিভাষায় যাকে মোজা বলা হয় তার উপরই মাসেহ করা বৈধ। ইসলাম মানুষের উপর সহজ করতে উৎসাহ দিয়েছে এবং কঠোরতা করতে নিষেধ করা হয়েছে। সুতরাং দলীল বিহীন কোন কঠিন মাসআলা মানুষের চাপিয়ে দেয়া ঠিক নয়।
মুজার উপর মাসেহ করারমুদ্দত বা সময়সীমাঃ مدة المسح على الخفين
للمقيم والمسافر
মুজার উপর মাসেহ করার জন্য মুক্বীমের সময় হল একদিন একরাত। আর মুসাফিরের জন্য তিন দিন তিন রাত। আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (সাঃ) মুক্বীমের জন্যএক দিন এক রাত আর মুসাফিরের জন্য তিন দিন তিন রাত মোজার উপর মাসেহ করার মুদ্দত নির্ধারণ করেছেন। (মুসলিম) এই হিসাব শুরু হবে পবিত্র অবস্থায় মোজা পরিধানের পর অযু বিনষ্ট হওয়ার পর প্রথম মাসেহ থেকে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় একজন লোক ফজরের নামায আদায় করার জন্য অযু করে মোজা পরিধান করল। মাগরিবের নামযের পূর্ব পর্যন্ত অযু বর্তমান ছিল। তার পর অযু বিনষ্ট হয়ে যাওয়ার পর মাগরিবের নামাযের জন্য অযু করল এবংমোজার উপর মাসেহ করল। এখান থেকে মুদ্দত শুরু হবে এবং পরের দিন মাগরিবের পূর্বে শেষ হবে।
মোজার উপর মাসেহ করার মুদ্দত শেষে অযু করতে চাইলে মোজা খুলে পা ধৌত করা ওয়াজিব। এভাবে অযু করে আবার মোজা পরিধান করলে অযু ভঙ্গ হওয়ার পর প্রথম মাসেহ করার পর থেকেআবার নতুন মুদ্দত শুরু হবে।
মুজার উপর মাসেহ করারশর্ত সমূহঃ شروط المسح على الخفين
মোজার উপর মাসেহ করার জন্য আলেমগণ কতিপয় শর্তারোপ করেছেন। মাসেহ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য এ সমস্ত শর্ত বর্তমান থাকা জরুরী। শর্তগুলো নিম্মরূপঃ
১ মুজা পবিত্র হওয়াঃ
সুতরাং কুকুর, শুকর বা অন্যান্য অপবিত্র জীব-জন্তুর চামড়া দিয়ে তৈরী মোজার উপর মাসেহ করাবৈধ নয়। এমনিভাবে মোজাতে পেশাপ বা মল-মূত্র লেগে গেলে তার উপর মাসেহ করাও বৈধ নয়।
২ বৈধ মুজা হতে হবেঃ
সুতরাং চুরী করা বা ছিন্তাই করা মোজার উপর মাসেহ করা অথবা রেশমী কাপড়ের তৈরী মোজার উপর মাসেহ করা বৈধ নয়। কেননা পুরুষের জন্য রেশমের তৈরী পোষাক পরিধান করা বৈধ নয়।
৩ পূর্ণ পবিত্র অবস্থায় মুজা পরিধান করাঃ
মুগীরা বিন শু‘বা (রাঃ) রাসূল (সাঃ) এর মোজা খুলতে চাইলে তিনি বলেন “তুমি মোজা দু’টিকে আপন অবস্থায় রেখে দাও। কারণ আমি এ দু’টিকে পবিত্র অবস্থায় পরিধান করেছি। (বুখারী ও মুসলিম)
৪ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মাসেহ করাঃ
আর তা হল মুক্বীম অর্থাৎ স্বদেশে বা আপন বাড়ীতে অবস্থানকারীর জন্য একদিনএক রাত। এবং মুসাফির তথা ভ্রমণরত ব্যক্তির জন্য তিন দিন তিন রাত।
৫ মাসেহ ছোট নাপাকি থেকে পবিত্রতা অর্জনের ক্ষেত্রে হতে হবেঃ
যেমন প্রস্রাব, পায়খানা, বায়ু বের হওয়া, ঘুমানো ও অন্যান্য ছোট নাপাকি থেকে পবিত্রতা অর্জনের সময় হতে হবে। বড় নাপাকি যেমন স্ত্রী সহবাস থেকে পবিত্রতা অর্জনের সময় মোজার উপর মাসেহ করা বৈধ নয়। কাজেই বড় নাপাকির গোসল করার সময় অবশ্যই মোজা খুলতে হবে।
পট্রির উপর মাসেহ করাঃ المسح على الضماد
ক্ষতস্থানে পট্রির উপর মাসেহ করাও বৈধ আছে। তবে মোজার উপর মাসেহ করা এবং পট্রির উপর মাসেহ করার মাঝে পার্থক্য রয়েছে
উভয়ের মধ্যে পার্থক্যঃ الفرق بين المسح على الخفين والضماد
১) মোজার উপর মাসেহ করা নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সীমা বদ্ধ। পট্রির ক্ষেত্রে এমন কোন সময় নির্দিষ্ট নেই।
২) শুধুমাত্র পায়ের মোজার উপর মাসেহ বৈধ। কিন্তু শরীরের যে কোন স্থানে পট্রির উপর মাসেহ করা যাবে।
৩) মোজার উপর মাসেহ করা বৈধ হওয়ার জন্য শর্ত হল উহা পূর্ণ পবিত্র অবস্থায় পরিধান করতে হবে। কিন্তু পট্রির ক্ষেত্রে এমন কোন শর্ত নেই।
৪) ছোট নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জনের ক্ষেত্রে শুধু মোজার উপর মাসেহ করা বৈধ। কিন্তু পট্রির উপর মাসেহ করা সকলপ্রকার নাপাকীর ক্ষেত্রেবৈধ।
মুজার উপর মাসেহ করারপদ্ধতিঃ كيفية المسح على الخفين
প্রথমে উভয় হাত পানি দ্বারা ভিজাবে। অতঃপর মোজার উপরের অংশের সামনের দিক দিয়ে ভিজা হাতটেনে নিয়ে গোড়ালীতে এনে শেষ করবে। মোজার নিচের দিকে মাসেহ করবেনা। এব্যাপারে আলী (রাঃ) এর উক্তিটি বিশেষভাবে উল্লেখ যোগ্য। তিনি বলেন,দ্বীন ইসলাম যদি মানুষের রায়ের (ব্যক্তিগত মত) দ্বারা সাব্যস্ত হত, তাহলে মোজার উপরের দিকের চেয়ে নিচের দিকে মাসেহ করা অধিক যুক্তিসঙ্গত হত। আর আমি রাসূল (সাঃ) কে তাঁর মোজাদ্বয়ের উপরের দিকে মাসেহ করতে দেখেছি। (আবু দাউদঃ১৬২) উভয় হাত দিয়েই মাসেহ করবে। ডান হাত দিয়ে ডান পায়ের মোজার উপর দিয়ে মাসেহ করবে। বাম হাত দিয়েবাম পায়ের মোজার উপর মাসেহ করবে। এক হাত দিয়ে উভয় পায়ের উভয় মোজার উপর মাসেহ করাও যায়েজ আছে। ইমাম আহমাদ বিন হান্বাল (রাঃ) বলেন, এক হাত দিয়ে বা দু’হাত দিয়ে যেভাবেই মাসেহ করনা কেন, কোন অসুবিধা’নেই।
পাগড়ীর উপর মাসেহ করাঃ المسح على العمامة
মাথায় পাগড়ী থাকলে পাগড়ীর উপর মাসেহ করা বৈধআছে। সম্পূর্ণ পাগড়ী উপর অথবা পাগড়ীর অধিকাংশ অংশের উপর দিয়ে মাসেহ করাযায়েজ। তবে কপালের দিক দিয়ে কিছু অংশ খালী থাকলেখালী অংশে মাসেহ করার পর পাগড়ীর উপর মাসেহ করতে হবে।