অন্যান্য ধর্ম সৃষ্টি হল কি করে?
হযরত আদম (আঃ) প্রথম মানুষ ছিলেন এবং প্রথম নবীও ছিলেন তিনিই। আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন। তাদের বিবেক বুদ্ধি দিয়েছেন, সেই বিবেক বুদ্ধিকে আল্লাহ কিভাবে কাজে লাগাতে চান তা বলে দেয়ার উদ্দেশ্যেই ভিন্ন কথায়, মানুষের সঠিক জীবন-ব্যবস্থা কি হবে তা বলে দেয়া ও শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই আল্লাহ নবী-রাসূল পাঠান। আর তা পাঠানোর ধারা হলো যখন যে ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তখন সেই ধরনের সমাধান দেয়ার উদ্দেশ্যে আল্লাহ নবী রাসূল পাঠিয়েছেন। এভাবে ১ লাখ ২৪ হাজার অথবা ২ লাখ ২৪ হাজার নবী-রাসূল আল্লাহ পাঠিয়েছেন। তাহলে একথাও মানতে হবে যে, আমাদের এদেশেও কোন নবী-রাসূল এসেছিলেন; যাদের নাম আমাদের জানা নেই। হয়ত হতে পারে যে, শ্রীরাম এবং শ্রীকৃষ্ণ তাঁদের যুগের তাঁরা নবী ছিলেন। তাঁরা নবী ছিলেন একথাও যেমন আমি বলছি না, তখন তাঁরা নবী ছিলেন না একথাও বলা যায় না-কারণ আল কুরআনে সব নবীর নাম নেই, কিন্তু নবীর সংখ্যা অনেক ছিল এটা আমরা অবশ্যই বিশ্বাস করি। এ কারণেই বলেছি শ্রীরাম ও শ্রীকৃষ্ণের যুগে হয়তো তাঁরা নবী ছিলেন এবং তাঁরা তওহীদেরই প্রচারক ছিলেন। পরবর্তীকালে তাঁদের ভক্ত অনুরক্তগণ হয়তো ইতিহাস বিকৃত করে তাঁদের নামে কোন কলংক জুড়ে দিয়েছে এবং পরবর্তী নবীকে গোঁড়ামীর বশবর্তী হয়ে মানতে না পেরে তাঁরা নবীর অনুসারী থাকার নাম করে নতুন ধর্ম সৃষ্টি করে নিয়েছে। যেমন মুসা (আঃ) এর কিছু উম্মত গোঁড়ামীর কারণে পরবর্তী নবী হযরত মুসা (আঃ)কে মানতে না পেরে তারা ইয়াহুদী জাতিতে পরিণত হলো। ঠিক এ একই কারণে হযরত ঈসা (আঃ) এর কিছু উম্মত পরবর্তী ও শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)কে মানতে না পেরে খ্রিস্টান জাতিতে পরিণত হলো। এভাবেই বিভিন্ন ধর্ম সৃষ্টি হয়েছে। আমরা মুসলমান জাতি এমন একটা কথায় বিশ্বাস করি, যা অন্য কোন জাতিই বিশ্বাস করতে পারে না আর পারলে তাদের ধর্ম ও আর টেকে না; তা হচ্ছে এই যে, আমরা সব নবীকেই মানি। আর তা না মানলে আমরা মুসলমান থাকতে পারি না। কিন্তু অন্য কোন জাতিই সব নবীকে মানতে পারে না। আমরা যে সব নবীকে মানতে পারি এবং কিভাবে মানি তা একটা উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছি।
যেমন আমাদের এ উপমহাদেশের এমন একদিন ছিল যে দিন বৃটিশ সরকারের রাজত্ব ছিল। তখন আমরা প্রত্যেকেই ছিলাম বৃটিশ সরকারের নাগরিক। পরে এলো পাক সরকার। তার পর হলো বাংলাদেশষ সরকার। এখন আমরা প্রত্যেকেই বৃটিশ সরকার ও পাক সরকারকে এক কালের সরকার হিসেবে মানি ঠিকই কিন্তু আইন মেনে চলি বর্তমান সরকারের। এই সরকারের আমলে যদি কেউ দাবী করে যে, আমি বৃটিশ সরকারের আইন মেনে চলবো এবং বর্তমান সরকারের আইন মানবো না, তাহলে সে ব্যক্তি যে পর্যায়ের অপরাধী হবে ঠিক সেই একই পর্যায়ের অপরাধী হবে তারা যারা বর্তমান শেষ নবীর আমলের মানুষ হয়ে পূর্ববর্তী নবীর আইন মেনে চলতে চাইবে। আমরা মুসলমান জাতি অন্যান্য সব নবীকেই মানি যেমন- এ উপমহাদেশের প্রত্যেকেই বৃটিশ সরকাকে তদানিন্তন আমলের সরকার বলে মানে। ধর্মের বেলায়ও ঐ একই নীতি মেনে চলতে হবে। অর্থাৎ যদি শ্রীরাম বা শ্রীকৃষ্ণ সত্যই আল্লাহর পাঠানো নবী হতেন আর আমরা যদি সেই যুগের মানুষ হতাম, তাহলে তাঁদের আইন বা শরীয়তই আমাদের মেনে চলতে হতো। কিংবা যদি হযরত ঈসা (আঃ) বা মুসা (আঃ) এর যুগের মানুষ আমরা হতাম তবে তাঁদের আইন-ই আমাদের মেনে চলতে হতো। নইলে অবশ্যই আমাদের জাহান্নামী হতে হতো। এ ভাবেই যুগেযুগে মানবগোষ্ঠী মনচাহি যিন্দেগী পরিচালনা করার জন্য নিজ যুগের নবী-রাসূলকে মানতে অস্বীকার করে, আর মনে যা চায় তাই করতে আরম্ভ করে, এভাবেই একাধীক ধর্মের সুষ্টি হয়। কিন্তু যেহেতু আমাদের জন্ম হয়েছে শেষ নবীর আমলে তাই আমাদের মেনে চলতে হবে শেষ নবীকেই।
এতটুকু সহজ সরল বুঝ যাদের মস্তিষ্কে ঢুকে যায় তারা আর অমুসলমান থাকতে পারে না; যার নজীর শুধু বাংলাদেশেই নয় বরং পৃথিবীর সর্বত্রই বিদ্যমান।