সন্তানের ইসলাম গ্রহণ করার পরও যদি মাতা-পিতা কুফর ও শিরকের পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত থাকে এবং তাকে কুফরিতে ফিরে আসতে বাধ্য করে, তবে কোনোক্রমেই তাদের কথা মানা ও তাদের আনুগত্য করা যাবে না। কেননা আল্লাহর নাফরামানিমূলক কাজে কোনো মানুষের আনুগত্য করা হালাল নয়। তবে অবশ্যই মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার ও সদাচারণ করে যেতে হবে। এ সম্পর্কে আল্লাহতাআলা বলেন,
﴿وَإِن جَاهَدَاكَ عَلَىٰ أَن تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا ۖ وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا ۖ وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ ۚ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ ﴾
মাতা-পিতা যদি আমার কাউকে শরিক করার জন্য তোমার ওপর চাপ প্রয়োগ করে যে সম্পর্কে তোমার জ্ঞান নেই_ তাহলে অবশ্যই তাদের আনুগত্য করবে না এবং দুনিয়ার জীবনে তাদের সঙ্গে সদ্ভাবে সহবস্থান করবে। আর তাদের আনুগত্য করবে যারা আমার দিক প্রত্যাবর্তনকারী। সূরা লুকমান : ১৫।
মাতা-পিতা সন্তানকে কুফরি করার জন্য যত কঠিন চাপ প্রয়োগ করুক না কেন, তাদের কথা মানা ও তাদের আনুগত্য করা যাবে না। তবে তাদের সঙ্গে অবশ্যই সদ্ব্যবহার ও সুন্দর আচরণ করে যেতে হবে।
আবু বকরের (রা.) কন্যা আসমা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহের যুগে আমার মা মুশরিক অবস্থায় আমার নিকট এসেছিলেন। আমি রাসুল রাসুলুল্লাহের নিকট আরজ করলাম, আমার নিকট আমার মা এসেছেন, তিনি ইসলাম থেকে বিমুখ রয়েছেন। আমি কি তাঁর সঙ্গে সদ্ব্যবহার করব? তিনি বললেন, হ্যাঁ মায়ের সঙ্গে সদ্ব্যবহার কর। সহীহ আল বুখারি, ২খ পৃ. ৮৮৪; সহীহ মুসলিম, কিতাবুল যাকাত ২ খ. পৃ. ৬৯৬।
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) মুসলমান হওয়ার পরও দীর্ঘদিন যাবৎ তাঁর মা শিরকে নিমজ্জিত ছিলেন। তিনি মাকে সর্বদা শিরকের পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করতেন এবং ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দিতেন। আর তাঁর মাও সর্বদা অস্বীকৃতি জানাতে থাকেন। হযরত আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, একদিন আমি তাঁকে ইসলামের দাওয়াত দিলে তিনি রাসুলুল্লাহের সম্পর্কে আমাকে এমন কিছু কথা শুনালেন, যাতে আমার অন্তর বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। আমি ক্রন্দনরত অবস্থায় রাসুলের খেদমতে হাজির হয়ে আরজ করলাম, হে আল্লাহ রাসুল! আমি সব সময় আমার মাকে ইসলামের দাওয়াত দিতে থাকি, তিনি সব সময় তা অস্বীকার করতে থাকেন। আজ আমি তাঁকে ইসলামের দাওয়াত দিলে তিনি রাগান্বিত হয়ে আপনার শানে বেয়াদবি করে বসেন এবং আপনাকে গালমন্দ করেন। আমি তা সহ্য করতে পারিনি। আপনি আল্লাহর দরবারে দুআ করুন, যেন তিনি আবু হুরাইরার মাকে হেদায়াত নসীব করেন। রাসুলুল্লাহ দুআ করলেন : হে আল্লাহ! আপনি আবু হুরাইরার মাকে হেদায়াত করুন। আমি নবী রাসুলুল্লাহের দুআর সুসংবাদ নিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে পড়লাম। আমি বাড়ি পেঁঁৗছে দেখি ঘরের দরজা বন্ধ। তিনি আমার পায়ের শব্দ শুনে ভেতর থেকে বললেন, আবু হুরাইরা অপেক্ষা কর।
তিনি তাড়াতাড়ি গোসল শেষ করে দোপাট্টা পরিধান করে ওড়না পরা ছাড়াই দরজা খুলে দিলেন। অতঃপর বললেন, আবু হুরাইরা! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ আল্লাহর বান্দা ও আল্লাহর রাসুল। আমি আনন্দে ক্রন্দনরত অবস্থায় রাসুলুল্লাহের খেদমতে হাজির হয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল আমি আপনাকে সুসংবাদ শুনাতে এসেছি। আল্লাহতাআলা আপনার দুআ কবুল করেছেন। তিনি আবু হুরাইরার মাকে হেদায়াত নসীব করেছেন। একথা শুনে তিনি খুশি হলেন এবং আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করলেন এবং আমাকে নসীহত করলেন।
এরপর আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি দুআ করুন যেন আল্লাহ আমাকে ও আমার মাকে সকল মুমিনের প্রিয় বানিয়ে দেন। রাসুলুল্লাহ দুআ করলেন : ইয়া আল্লাহ! আবু হুরাইরা ও তার মায়ের প্রতি ভালোবাসা সকল মুমিনের অন্তরে সৃষ্টি করে দিন। এ দুআর পর সে মুসলমানই আমাকে দেখেছে অথবা আমার কথা শুনেছে সেই আমাকে ভালোবেসেছ। : সহীহ মুসলিম,
দুধ মায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন: হজরত আবু তুফায়েল (রা.) বলেন, আমি দেখলাম, নবী জিয়রানা নামক স্থানে গোশত বণ্টন করেছিলেন। এমন সময় একজন মহিলা এসে সরাসরি নবীর নিকটে চলে গেলেন।
তিনি তাঁর জন্য নিজের চাদর বিছিয়ে দিলেন। অতঃপর ভদ্র মহিলাটি তার ওপর আসন গ্রহণ করলেন। (বর্ণনাকারী বলেন) আমি লোকদের কাছে জানতে চাইলাম, ইনি কে? তারা বললেন, ইনি হচ্ছেন রাসুলুল্লাহের দুধ মা_ হযরত হালীমা সাদিয়া । তিনি তাঁকে দুধ পান করিয়েছিলেন।
==0=