আংকেল/আ্যান্টি
আংকেল-আ্যান্টি সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যার কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। ব্যাপারটা এখন এমন এক পর্যায়ে এসেছে, যা সমাজ থেকে অপসারণ করা প্রায় অসম্ভব। আমি নিজেও দিনে কয়েকবার এ সম্বোধন শুনি।
এই দু’টি সম্বোধনী শব্দ ভিন্ কোন জাতি আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়নি। এ জন্য পশ্চিমা সংস্কৃতির রফতানিকারকদের দোষারোপ করা যায়না। আমরাই আধুনিক হওয়ার জন্য যেমন চাল চলন, বুলিবচনে ও পোশাক-পরিচ্ছদে পরিবর্তন এনেছি, নতুন নাম ধারণ করছি, তেমনি চাচা-চাচী, মামা-মামী, খালা-খালু, ফুফু-ফুফী সম্বোধন ছেড়ে দিয়ে আংকেল-আ্যান্টি গ্রহণ করেছি। এ ক্ষেত্রে ‘বিশেষ অবদান’ রেখেছে আমাদের বিটিভি, রেডিও, সিনেমা, নাটক ইত্যাদি। এ সব মাধ্যমের ভূমিকা মা-বাবা সম্বোধন পর্যন্ত ভুলিয়ে দিয়েছে। মা-বাব বা আম্মা-আব্বার পরিবর্তে মাম্মী, মাম্, ড্যাড-ড্যাডি বহু মুসলিম পরিবারে চালু হয়ে গেছে। আমরা যে অর্থে চাচা-চাচী, মামা-মামী, খালা-খালু, ফুফু-ফুফী সম্বোধন করে থাকি, ইংরেজী যাদের মাতৃভাষা তারাও এই অর্থে নিজেদের চাচা-চাচী, মামা-মামীকে আংকেল-আ্যান্টি সম্বোধন করে থাকেন। এ দিক দিয়ে আমাদের আর তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। লক্ষ্যণীয় দিকটি হচ্ছে এই, আমরা ওদের সম্বোধন-সংস্কৃতি গ্রহণ করলেও ওরা কিন্তু আমাদের সম্বোধন-সংস্কৃতি গ্রহণ করেনি। ইংল্যান্ড, আমেরিকা এবং ফ্রান্সে যারা ফেরি করে জামা কাপড় বিক্রি করতো (Fawnbroker), ক্রেতারা তাদের আংকেল বলতো। আমেরিকার কোন কোন এলাকার অধিবাসীদের আংকেল শ্যাম (Uncle sam) সম্বোধন করা হয়। আ্যন্ট ও আ্যন্টি একই অর্থবোধক। Aunt ইংরেজদের শব্দ আর Aunty আমেরিকায় উচ্চারিত শব্দ। Aunt Sallyr তিরস্কারের ভাবার্থেও ব্যবহার হয়। বাংলাদেশে আংকেল-আ্যান্টি বাজারী সম্বোধন হয়ে গেছে। সমবয়সীরাও এক অন্যকে তা সম্বোধন করে থাকেন।
যে ব্যক্তি অন্য জাতির সভ্যতা, সংস্কৃতি ও কৃষ্টির অনুসরণ করে সে ঐ জাতির অন্তরর্ভুক্ত হয়ে যায়, এতো শাস্ত্রীয় কথা (হাসীসেও এমন কথা রয়েছে)। যদি আমরা এ অভ্যাস ত্যাগ না করি, তা হলে সম্বোধন ও কৃষ্টিতে আমরা অলক্ষ্যে খ্রীষ্টান চরিত্র ধারণ করবো, তাতে কোন সন্দেহ নেই। মুসলিম লেখকদের এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত মনে করি। শুধু লেখালেখির বেলায়ই নয়, পারিবারিক অঙ্গনে পাস্পরিক সম্বোধনেও প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থানে সতর্ক হওয়া উচত। অনেকে তাদের মা-বাবা সম্বোধনকে ড্যাডি-মাম্মী যপোকাষ্ঠে ‘বলি’ দিয়েছেন। যে সব পরিবারে আংকেল-আ্যান্টি, ড্যাডি-মাম্মী চালু রয়েছে সে সব পরিবারের উঠতি বয়সের ঝি-চাকররাও এই রেওয়াজ অনুসরণ করছে। এক পরিবারে গিয়ে দেখলাম, মধ্য বয়সী এক মহিলা, যাকে আমি চিনি না এবং আর কখনো দেখিনি। ১০/১২ বছরের এক মেয়েকে জিজ্ঞাশা করলাম ‘ইনি কে? জবাবে বালিকাটি বলল চিন লেন না? ইনি আমার আ্যন্টি। আবার জিজ্ঞাসা করলাম, সে তো বুঝলাম তোমার আ্যন্টি। তোমার মামী, খালা, ফুফু না চাচী? মেয়েটি বলল, তা আমি জানি না। মা বলেছেন আ্যন্টি বলতে তাই আ্যন্টি বলি। যাই হোক মেয়েটির মা এসে সম্পর্ক পরিচিতি বলে দিলেন। আর এক বাসায় গিয়ে শুনি একই সম্বোধন। রবান সম্পর্কীয় এক কিশোরীকে বাসার একটা শিশু বার বার আ্যন্টি বলছে, মা বাধা দিচ্ছেন, কিন্তু শিশু বাধা মানে না। কারণ এই বাসায় এ সম্বোধন ছাড়া আর কোন সম্বোধনই নেই। তাই শিশু জানে আ্যন্টি, সম্বোধনও করছে তাই। আল্লাহ আমাদের এই কালচার থেকে মুক্তি দিন। আমীন
সতী সাধ্বী
আমরা বলি, তিনি একজন সতী সাধ্বী নারী। সতী হলেন দক্ষ কন্যা ও শীব পত্নী। সাধ্বী অর্থ পতিব্রতী নারী। হিন্দুদের মধ্যে যখন সহমরণ প্রথা চালু ছিল, তখন যেসব নারী স্বামীর শবের সঙ্গে একই চিতায় আরোহণ করে স্বেচ্ছায় জীবন্ত পুড়ে মরত, তাদের বলা হতো সতী সাধ্বী নারী। সাধারণত সতী বলা হয় সেই নারীকে, যে নারী বিয়ের আগে কুমারীত্ব হারায়নি। দক্ষ কন্যা বা শিব পত্নী কুমারীত্ব রক্ষা করেই স্বামী গৃহে গিয়েছিলেন। সুতরাং তিনি নামে যেমন সতী, কর্মেও সতী। সতী শাবিত্রী শব্দ প্রচলিত, অর্থাৎ সাবিত্রীর ন্যায় সাধ্বী স্ত্রী।
মুসলমান নারীদের মধ্যে সতী-অসতীর কোন প্রশ্নই উঠতে পারে না। বিবাহের পূর্ব পর্যন্ত কুমারীত্ব রক্ষা করতেই হয়। যারা রক্ষা করে না তাদের জন্য রয়েছে শরীয়াতের শাস্তি। সতী বাছাইয়ের ব্যবস্থা মুসলমানদের মধ্যে নেই। কোন কোন ধর্মে সতীত্ব হারানোর মধ্যেই পূণ্য লাভ। অতএব মুসলিম সমাজে সতী শব্দটাই গ্রহণযোগ্য নয়। সতী সাধ্বী বা সাবিত্রী মুসলমানদের কোন রূপ প্রয়োগে আনা উচিত নয়।
বিদ্যাপীঠ
অধ্যয়ন, অনুশীলন ও অধ্যবসায় দ্বারা লব্ধ জ্ঞানই বিদ্যা। পীঠ অর্থ মন্দির, বেদী ইত্যাদি। প্রাচীনকালে গুরুর পাদপীঠে অর্থাৎ পা রাখার স্থানে শিষ্যরা বসে ধর্ম শাস্ত্র চর্চা করতেন। মধ্যযুগে এমন কি আধুনিক যুগের প্রথম কয়েক শতাব্দীতেও পীঠ বলতে মন্দিরকে বুঝাতো। কারণ, সে সময় হিন্দুদের বিদ্যা চর্চা মন্দিরভিত্তিক ছিল। মন্দির থেকে বিদ্যা চর্চা যখন পৃথক স্থানে চলে যায়, তখন নাম দেয়া হয় বিদ্যালয়। আধুনিককালের অনেক মুসলমানও বিদ্যাপীঠ শব্দটি ব্যবহার করে বিদ্যালয়কে বুঝিয়ে থাকেন। সাংস্কৃতিক দাসত্ব একেই বলে। বিদ্যালয়, শিক্ষালয়, জ্ঞানালয় প্রভৃতি শব্দই তো উপযোগী শব্দ। নিজ সাংস্কৃতির সাথে সাংঘর্ষিক যে কোন ধর্মের শব্দকে এড়িয়ে চলা তাকওয়ার দাবী।