Main Menu

আমি কেন ইসলাম গ্রহণ করলাম?

আমি কেন ইসলাম গ্রহণ করলাম?

আমি কেন ইসলাম গ্রহণ করলাম?

১৮তম পর্ব

নতুন যুগের সূচনা
প্রিয় পাঠকবর্গ! এতক্ষণ একটা নানাভাবে শুধু হতাশা এবং দুঃখ বেদনার কথাই বলে চলেছি। এবারে আসুন কিছু আশা ও আশ্বাসের কথা আপনাদের কাছে তুলে ধরিঃ
‘আল্লাহ তাঁর দ্বীনকে হেফাজত করবেন’ আল্লাহর এই ওয়াদা যে কত সত্য এবং কত নির্ভুল আবার নতুন করে এই বাংলাদেশের মাটিতে সে কথা প্রমাণ করার জন্যে একটা বিরাট ও আকস্মিক পরিবর্তন সাধিত হওয়ার হয়তো কথা আপনাদের সকলেরই জানা রয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং তার অব্যবহিত পরবর্তী সময়ের সেই শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা এখন আর নেই। বর্তমান সরকারের সুযোগ্য পরিচালনায় অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মতো বিপুলভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানেরা ও আজ স্বচ্ছন্দে এবং স্বাধীনভাবে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন করার সুযোগ পেয়েছে।
ইসলামের কথা বললে এখন আর ওরা আগের মতো প্রকাশ্যে দম্ভের সাথে নির্যাতন চালাতে সাহস পায় না এর একটা বড় কারণ হলো প্রেসিডেন্ট এবং তাঁর সহকর্মীদের কঠোর মনোভাব। বলাবাহুল্য সুবিধাবাদীদের কোন দিনই নিজস্ব কোন মত বা ইচ্ছা থাকে না। প্রভুর ইচ্ছায়ই ওরা কীর্তন গায়।
সে যা হোক আল্লাহর অসীম করুণায় এখন ইসলামকে তার যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার একটা বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। মনে রাখা প্রয়োজন যে, সুযোগ সব সময় আসে না। অতএব বর্তমন সুযোগের সদ্ব্যবহার না করা হলে চরম বিপর্যয় ঘনিয়ে আসতে পারে। কেননা, যারা ইসলামের ধ্বংস চায় তারা পূর্বের চেয়ে অনেক বেশি সজাগ, অনেক বেশি সংঘবদ্ধ এবং অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে সুযোগ ও সময়েল প্রতীক্ষায় রয়েছে।
প্রিয় পাঠকবর্গ! আপনারা অবশ্যই জানেন যে, মানুষকে অবস্থা বা পরিবেশের দাস বলা হয়ে থাকে। (মুসলমান কখনো পরিবেশের দাস হয় না। বরং পরিবেশকে নিজেদের দাস বানায়। আর নিজেরা হয় একমাত্র আল্লাহর দাস -সম্পাদক) কেননা সাধারণসভাবে পরিবেশের ঊর্ধ্বে উঠা কোন মানুষের পক্ষেই সম্ভব হয়ে উঠে না। অবস্থার পরিবর্তনে মনের পরিবর্তন হওয়া যে খুবই স্বাভাবিক এ থেকে সে কথা অনায়াসেই বুঝতে পারা যাচ্ছে।
তাই হতাশা ও অবসাদে ভেঙ্গে পড়া আমার এই মনটা অবস্থার পরিবর্তন আবার নতুন করে জেগে উঠেছে। এই পরিবর্তন শুধু বাংলাদেশেই আমি লক্ষ্য করিনি- অন্যত্রও করেছি। কোথায় এবং কিভাবে এই পরিবর্তন আমি লক্ষ্য করেছি অতঃপর সেই কথাটুকু বলেই নিবন্ধের ইতি টানছি।
গত বছর ১৯৭৯ আগস্ট মাসে রাবেতা- এ আলমে আল ইসলামী (গঁংষরস ড়িৎষফ খবধমঁব)-র উদ্যোগে করাচীতে যে ঞযব ঋরৎংঃ অংরধহ ওংষধসরপ পড়হভবৎহবপহপপব অনুষ্ঠিত হয়, ইসলাম প্রচার সমিতির চেয়ারম্যান হিসাবে রাবেতা এ আলমে আল ইসলামী কর্তৃক বিশেষভাবে আমন্ত্রিত হয়ে উক্ত কনফারেন্সে যোগ দেয়ার সুযোগ আমার হয়েছিল।
এখানে ‘ইসলাম প্রচার সমিতি’ সম্পর্কে দু’কথা বলা প্রয়োজন। অন্যথায় বিষয়টি বুঝতে পারা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয়ে উঠবে না।
প্রিয় পাঠকবর্গের অবশ্যই মনে রয়েছে যে, সার্থকভাবে ইসলাম প্রচার এবং নও-মুসলিমদের আশ্রয়, প্রশিক্ষণ এবং পুনর্বাসনের জন্যে একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সংকল্প নিয়ে ১৯৪৬ সালে আমি সরকারী চাকুরী গ্রহণ করি।
চাকুরী জীবনের সুদীর্ঘ দুই যুগ ধরে একাজের জন্যে আমাকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়েছে। অবশেষে ১৯৬৮ সালে সহকর্মী জনাব বদরে আলম এবং আরো কতিপয় নিবেদিত প্রাণ মুসলমানের সহযোগিতায় ‘ইসলাম প্রচার সমিতি’ নাম দিয়ে এই প্রতিষ্ঠানটির গোড়াপত্তন করা হয়।
চাকুরীর ফাঁকে ফাঁকে প্রচারমূলক বই-পুস্তক লেখা, সভা, সমিতির অনুষ্ঠান, ব্যক্তিগত যোগাযোগ স্থাপন প্রভৃতির মাধ্যমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু ১৯৭০ এর রাজনৈতিক গোলাযোগ কাজ চালানোর সম্পূর্ণ অসম্ভব হয়ে পড়ে।
আল্লাহর অপার অনুগ্রহে বর্তমান সরকার আমল থেকে পূর্ণোদ্যামে উক্ত সমিতির কাজ শুরু করা সম্ভব হয়েছে এবং এই অল্প সময়ের মধ্যে সমিতির সদস্যবৃন্দ ও ইসলাম প্রিয় ভ্রাতা-ভগ্নিদের নিষ্ঠা, কর্ম-কুশলতা এবং অকুন্ঠ সহযোগিতার ফলে আশাতিরিক্ত অগ্রগতিও সম্ভব হয়েছে।
বর্তমানে ঢাকা শহরের কলাবাগানস্থ ১২৯ দ্বিতল ভবনটিতে সমিতির কেন্দ্রীয় কার্যালয় স্থাপন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহের পনরটি স্থানে সমিতির শখা কার্যালয় প্রতিষ্ঠা, দুঃস্থ নও-মুসলিম এবং অমুসলমানদের বিনামূল্যে চিকিৎসার সুযোগ দানের জন্যে বিভিন্ন স্থানে সতরটি চিকিৎসা কেন্দ্রের উদ্বোধন, দুঃস্থ দরিদ্র অথচ মেধাবী উপ-জাতীয় কতিয় ছাত্রকে শিক্ষা ভাতা প্রদান প্রভৃতি এই অগ্রগতির সাক্ষ্য বহন করছে। বর্তমন কাটাবন মসজিদ ক্যাম্পাসে কেন্দ্রীয় অফিস অবস্থিত এবং সারা দেশে এর ৩৩টি শাখা রয়েছে।
উপরন্ত সমিতির কেন্দ্রীয় কার্যালয় নও-মুসলিমদের জন্যে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলাও সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে পঁচিশজন নও-মুসলিম তথায় অবস্থান রকত ইসলামী শিক্ষা ও চরিত্র গঠনের সাথে সাথে যোগ্যতানুযায়ী কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা লাভ করছে। ধীরে ধীরে এই সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। (সমিতির কাজ অব্যাহত গতিতে এগিয়ে চলছে। সমিতির শাখা, অফিস, দাতব্য চিকিৎসা, কেন্দ্র প্রভৃতির সংখ্যাও আগের চেয়ে বেশি হয়েছে।)
এই ক্ষুদ্র পুস্তকে সমিতির কার্যাবলীর বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা সম্ভব নয়। তবে একথা দৃঢ়তার সাথেই বলা যেতে পারে যে, এতদুদ্দেশ্যে এই ধরনের এটাই একমাত্র প্রতিষ্ঠান। যাঁরা এ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে আগ্রহী তাঁদের সমিতির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সাথে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে যোগাযোগ স্থাপনের সনিবন্ধ অনুরোধ জানিয়ে অতঃপর আমার পূর্ব কথার জের টেনে এখানে বলতে হচ্ছে যে, এই ‘ইসলাম প্রচার সমিতির একজন অতিনগণ্য খাদেম হিসাবেই রাবেতা এ আলম-আল ইসলামী বা গঁংষরস ড়িৎষফ ষবধমঁব এর আমন্ত্রণে ঞযব ভরৎংঃ অংরধহ ওংষধসরপ পড়হভরবৎবহপব এ যোগদানের সুযোগ আমার হয়েছিল।
শুধু তাই নয় উক্ত বিশ্ব সংস্থার সৌজন্যে আমি এবং দু’জন নও-মুসলিমসহ এই সমিতির মোট পাঁচজন সদস্য সে বছর পবিত্র হজ্জযাত্রার সুযোগও লাভ করেছিলাম।
এই উভয় স্থানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বহু মুসলমানের সাথে দেখা সাক্ষাৎ এবং আলাপ-আলোচনার সুযোগ আমার হয়েছিল। সকলের মধ্যেই নব-জাগরণের একটা জোয়ার আমি লক্ষ্য করেছি। তাদের প্রতিটি লোকের মধ্যে যে বিপ্লবী মানসিকতা, অদম্য উৎসাহ এবং সুদৃঢ় মনোবলের পরিচয় আমি পেয়েছি তা থেকে গভীর প্রত্যয়ের সাথে আমি বলতে পারি যে প্রতিক্রিয়াশীল ব্যক্তিগুলো যত শক্তিশালী এবং যত সংঘবদ্ধই হোক ইনশা আল্লাহ ইসলামের এই নবজাগরণকে তারা ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।
বাংলাদেশী মুসলমানদের মনেও যে এই জাগরণের ঢেউ লেগেছে তার লক্ষণ ও ক্রমশঃ সুস্পষ্ট হয়ে উঠছে। তাই আজ এই বৃদ্ধ বয়সেও অবসর গ্রহণ না করে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছি এবং সর্ব প্রদাতা করুণাময় আল্লাহর দরবারে কায়মনো বাক্যে প্রার্থনা করছি, হে দয়াল প্রভু! কবরে যাওয়ার পূর্বেই স্বচক্ষে যেন  এই জাগরণ এবং তার মাধ্যমে গড়ে উঠা নতুন যুগটিকে আমি দেখে যেতে পারি এই সৌভাগ্য তুমি আমাকে দান কর। আমীন।

১ম পর্ব    ২য় পর্ব য় পর্ব  ৪র্থ পর্ব ৫ম পর্ব ৬ষ্ঠ পর্ব ৭ম পর্ব   ৮ম পর্ব  ৯ম পর্ব ১০ম পর্ব  ১১ পর্ব ১২তম পর্ব ১৩তম পর্ব ১৪তম পর্ব ১৫তম পর্ব  ১৬তম পর্ব ১৭তম পর্ব

Related Post