আল্লাহ তায়ালা বিচার ফয়সালার ব্যাপারে তাঁর রাসূল সা: কে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘আর আমি নির্দেশ দিই যে, আপনি তাদের পারস্পরিক বিষয়াদিতে আল্লাহ তায়ালা যা নাজিল করেছেন, তদনুযায়ী বিচার ফয়সালা করুন, তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না ও তাদের থেকে সতর্ক থাকুন যেন তারা আপনাকে এমন কোনো নির্দেশ থেকে বিচ্যুত না করে যা আল্লাহ তায়ালা আপনার প্রতি নাজিল করেছেন, অনন্তর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে জেনে নিন, আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে তাদের পাপের জন্য আংশিক শাস্তি দিতে চেয়েছেন, মানুষের মধ্যে অনেকেই নাফরমান।’ (সূরা মায়েদা ৪৯)।
এখানে আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসূল সা:কে তাঁর মনোনীত ‘ইন্নাদদ্বীনা ইনদাল্লাহিল ইসলাম’ অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার মনোনীত একমাত্র জীবনব্যবস্থা ‘ইসলাম’ (সূরা আল ইমরান-১৯) এর জন্য নাজিলকৃত কুরআনের আইন বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে এসব যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি হলেন আল্লাহ বা আমাদের সৃষ্টিকর্তা। তিনি আরো ঘোষণা করেন,‘সৃষ্টি যেহেতু আমার অতএব হুকুমও চলবে শুধু আমার, সৃষ্টিকুলের মালিক আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত দয়ালু ও বরকতময়’ (সূরা আরাফ ৫৪)।
আল্লাহ তায়ালার কোনো একটা আইন অমান্য করলে বা আল্লাহ তায়ালার আইনে বিচার ফয়সালা না করলে, আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে কাফের, জালেম ও ফাসেক বলে অভিহিত করেছেন, যা সূরা আল মায়েদার ৪৪, ৪৫ ও ৪৭ নম্বর আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে।আমরা যারা নিজেদের মুসলমান বা ঈমানদার বলে দাবি করি, সে দাবি নেহাত আল্লাহ তায়ালার সাথে তামাশা বা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়, কারণ আমরা আল্লাহ তায়ালার আইনে বিচার ফয়সালা করি না। আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করছেন, ‘অতএব তোমার প্রতিপালকের শপথ, এরা কিছুতেই ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না তারা তাদের যাবতীয় মতবিরোধের ব্যাপারে আপনাকে শর্তহীনভাবে বিচারক মেনে নেবে, অতঃপর আপনি যা ফয়সালা করে দেবেন সে ব্যাপারে তাদের মনে আর কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকবে না, বরং তারা আপনার সিদ্ধান্ত সর্বান্তকরণে মেনে নেবে’ (সূরা আন নিসা ৬৫)।
এ হলো বিচারক ও বিচার সংক্রান্ত আইনের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশনা। আমাদের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে, ‘সব বিচারকের বড় বিচারক আল্লাহ, দুনিয়ার বিচারকেরা তাঁর প্রতিনিধি’। আল্লাহ তায়ালা মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে ঘোষণা করেছিলেন, 0‘আর স্মরণ করো যখন তোমার ‘রব’ ফেরেশতাদের ডেকে বলেছিলেন, আমি পৃথিবীতে আমার ‘খালিফা’ পাঠাতে চাই’ (সূরা বাকারা ২/৩০)। ‘খলিফা’ শব্দের অর্থ হচ্ছে প্রতিনিধি বা স্থলাভিষিক্ত হওয়া বা স্থলাভিষিক্ত করা। ‘খিলাফত’ প্রতিষ্ঠাই হচ্ছে মানুষ সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য : প্রতিনিধির কাজ হচ্ছে যিনি পাঠিয়েছেন, ‘রব’ বা মালিকের ইচ্ছামাফিক কাজ করা বা চলা। ‘রব’ এর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁর বিধিবিধান অনুযায়ী কর্মসম্পাদন করা। ‘রব’ এর সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগ করা, ‘দ্বীন’ বা আইন, শাসন, বিচার ফয়সালা করা বা প্রতিষ্ঠা করা। অর্থাৎ খালিফার কাজ হচ্ছে ‘রব’ এর খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা। যেমন আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ করছেন, ﴿
(আমিতাকে বললাম) “ হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি, কাজেই তুমি জনগণের মধ্যে সত্য সহকারে শাসন কর্তৃত্ব পরিচালনা করো এবং প্রবৃত্তির কামনার অনুসরণ করো না, কারণ তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিপরথগামী করবে৷ যারা আল্লাহর পথ থেকে বিপথগামী হয় অবশ্যই তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি, যেহেতু তারা বিচার দিবসকে ভুলে গেছে৷’ (সূরা ছোয়াদ ২৬)।
আমাদের সমাজে বা দেশে বিচারককে আমরা ‘হাকিম’ বলে জানি। যিনি হুকুম করার অধিকারী তিনি হচ্ছেন ‘হাকিম’। যেমন মুখ্য মহানগর হাকিম। এ ‘হাকিম’ শব্দটি কুরআনেরই একটি পরিভাষা। ‘হাকিম’ আরবি শব্দ, যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বিচারপতি বা শাসক। সূরা আন নিসার ৬৫ নম্বর আয়াতসহ আরো অনেক জায়গায় ‘হাকিম’ শব্দের উল্লেখ আছে।
বিচারপতি বা বিচারক হবেন গভীর জ্ঞানের অধিকারী, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সৎ সাহসী ও বিচক্ষণ। কারণ আগেই বলা হয়েছে বিচারকরা হচ্ছেন আল্লাহ তায়ালার প্রতিনিধি, আর আল্লাহ তায়ালা হচ্ছেন, ‘ওয়াল্লাহু আলিমুন হাকিম’ অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা হচ্ছেন হিকমতওয়ালা মহাজ্ঞানী (সূরা আন নূর ২৪/১৮)। অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘তিনি পরাক্রমশালী মহাজ্ঞানী (সূরা হাশর ৫৯/২৪)। আরো বলা হয়েছে, ‘তিনি হচ্ছে আসমানের ইলাহ (মালিক) ও জমিনেরও ইলাহ (মালিক), তিনি বিজ্ঞ হিকমতওয়ালা ও সর্বজ্ঞ’ (সূরা আজ জোখরুক ৪৩/৮৪)।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমানসমূহ ও জমিনের সর্বত্র তিনিই তো হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ, তিনি যেমনি তোমাদের গোপন ও প্রকাশ্য বিষয়গুলো জানেন, তেমনি তিনি জানেন তোমরা কে পাপ-পুণ্যের কতটুকু উপার্জন করেছ তাও’ (সূরা আনয়াম ৬/৩)।
বিচারকের যোগ্যতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, (১) বিচারক জ্ঞানে মজবুত ও শক্তিশালী তার কাজ বাস্তবায়নে আমানতদার হতে হবে (২) মুসলিম ও পুরুষ হতে হবে (৩) সাবালক ও বিবেকবান হতে হবে (৪) ন্যায়পরায়ণ ও ফাসেকিমুক্ত হতে হবে (৫) শ্রবণকারী হতে হবে (৬) বাদি বিবাদির সাথে কথা বলার যোগ্যতা থাকতে হবে (৭) মুজতাহিদ বা গবেষণা ও আহকাম সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে (৮) ধৈর্যশীল হতে হবে (৯) ধীরতার অধিকারী হতে হবে (১০) বিচারালয়ে ফিকাহবিদ (আইনজ্ঞ) ও জ্ঞানীলোকদের হাজির রাখতে হবে (উকিল) (১১) বাদি-বিবাদিকে সমান সুযোগ দিতে হবে (১২) রাগান্বিত বা বিুব্ধ হয়ে বিচার করা যাবে না (১৩) বিচারকের একজন সৎ ও ন্যায়বান সহকারী (লেখক) থাকতে হবে। (১৪) কোনো প্রকার হাদিয়া বা তোহফা লেনদেন করা যাবে না।
বিচার কেমন হবে সে সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ا‘মুমিনতো একে অপরের ভাই অতএব, তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে ঝগড়া হলে ন্যায়ভিত্তিক মীমাংসা করে দাও এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাকো যাতে করে তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ পেতে পার’ (সূরা হুজরাত ৪৯/১০)।
হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না সেও আল্লাহ তায়ালার দয়াপ্রাপ্ত হবে না’ (বুখারি ও মুসলিম)।
বিচারকের মর্যাদা অনেক। যেমন (১) আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের উত্তম পন্থা (২) মজলুমের প্রতি ইনসাফ করা (৩) জালেমকে প্রতিহত করা (৪) মানুষের মধ্যে বিবাদ মীমাংসার সুবর্ণ সুযোগ (৫) সৎকর্ম প্রতিষ্ঠা (৬) অসৎ কর্ম প্রতিহত (৭) হকদারের হক প্রতিষ্ঠা ও (৮) সঠিক দায়িত্ব পালন, যা নবী রাসূলরা করেছেন। ইনসাফপূর্ণ দায়িত্ব পালনে ভুল হলে নেকি পাওয়া যাবে। সঠিক হলে দ্বিগুণ নেকি। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তাদের বেশির ভাগ সলাপরামর্শ ভালো নয়, কিন্তু যে পরামর্শ দান খয়রাত করতে অথবা সৎকাজ করতে বা মানুষের মধ্যে সন্ধি স্থাপন করতে কাজ করে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমি তাকে বিরাট নেকি দান করি’ (সূরা নিসা১১৪)।
রাসূল সা: বলেছেন, দুইটি বিষয়ে প্রতিযোগিতা জায়েজ (১) আল্লাহ তায়ালা যাকে প্রচুর সম্পদ দিয়েছেন আর সে লোক তা সৎপথে ব্যয় করে (২) আর আল্লাহ তায়ালা যাকে প্রচুর জ্ঞান ও হিকমত দিয়েছেন, সে তার দ্বারা মানুষের মধ্যে বিচার ফয়সালা করে ও জ্ঞান শিক্ষা দেয় (বুখারি ও মুসলিম)। আবদুল্লাহ ইবনে আমর থেকে বর্ণিত, রাসূল সা: বলেছেন, নিশ্চয়ই ইনসাফকারী আল্লাহ তায়ালার ডান হাতের পাশের নূরের মিনারার কাছে থাকবে, আর আল্লাহতায়ালার দুটো হাতই ডান, যারা বিচার ফয়সালায়, পরিবারে এবং যাদের দায়িত্ব অর্পিত হয় তাদের সাথে ইনসাফ করে’ (মুসলিম)। হজরত আমর ইবনে আস রা: থেকে বর্ণিত। রাসূল সা: বলেছেন, যখন বিচারক ইজতেহাদ বা সঠিক চিন্তা ও বিবেচনা করে বিচার ফয়সালা করে, অতঃপর সঠিক রায় প্রদান করে তার জন্য দুইটি নেকি, আর এ অবস্থায় সঠিক চিন্তা ও গবেষণার পর ভুল করলে একটি নেকি (বুখারি ও মুসলিম)।
বিচার্য বিষয় হচ্ছে, মানুষের মধ্যে খুন, সন্ত্রাস, ইজ্জত-সম্মান, সম্পদ ও সব হকের বিষয়ে ফয়সালা করা। এ দায়িত্ব ভয়াবহ ও কঠিন। কারণ (১) বাদি-বিবাদি উভয়ের মধ্যে ইনসাফ করতে হবে। কারো প্রতি ন্যূনতম কোনো প্রকার দুর্বলতা প্রদর্শন করা যাবে না। আত্মীয়স্বজন, শত্রু-মিত্র, উঁচু-নিচু পার্থক্য করা যাবে না (২) বিচার আইনসিদ্ধ, শ্রমলব্ধ, সঠিক জ্ঞান ও বাস্তবসম্মত হতে হবে।
বিচারকের জন্য সতর্ক বাণী। রাসূল সা: বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা বিচারকের সাথে থাকেন, যতক্ষণ বিচারক জুলুম থেকে বিরত থাকেন, আর যখন বিচারক জুলুম করতে শুরু করেন তখন তার ওপর ছেড়ে দেন। হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত রাসূল সা: বলেছেন, যাকে মানুষের মধ্যে মীমাংসা করার জন্য বিচারক নিয়োগ করা হলো তাকে যেন ছুরি ছাড়াই জবাই করা হলো’ (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)।
আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ হচ্ছে, ‘হে দাউদ! আমি আপনাকে জমিনে প্রতিনিধি করেছি, অতএব, আপনি মানুষের মাঝে ন্যায় ও ইনসাফপূর্ণ হুকুম চালান, আর খেয়াল-খুশির অনুসরণ করবেন না, তারা আপনাকে আল্লাহর রাস্তা থেকে বিচ্যুত করে দেবে, নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর রাস্তা থেকে বিচ্যুত হয়, তাদের জন্য কঠোর শাস্তি, কারণ তারা মহাহিসাব দিবসকে ভুলে যায়’ (সূরা ছোয়াদ ২৬)।
হজরত আবু বুরাইদা রা: থেকে বর্ণিত রাসূল সা: বলেছেন, বিচারক তিন ধরনের, দুইজন যাবে জাহান্নামে আর একজন যাবে জান্নাতে। একজন সত্য জানে অতঃপর তা দ্বারা বিচার করে, সে প্রবেশ করবে জান্নাতে। আর একজন না জেনে বিচার করে সে যাবে জাহান্নামে। আর একজন জুলুম করে বিচার করে সেও যাবে জাহান্নামে’ (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)।
বিচারের জন্য সুস্পষ্ট অভিযোগ ও সাক্ষ্য প্রমাণ থাকা চাই। অভিযোগ প্রমাণের জন্য কখনো দুইজন পুরুষ, কখনো একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলা, কখনো চারজন আবার কখনো তিনজন সাক্ষী দরকার হয়। সাক্ষীরা আল্লাহ তায়ালার প্রতিনিধি। আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন, (সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালাই যথেষ্ট’ (সূরা আল ফাতাহ ২৮)।
অতএব, সাক্ষী অবশ্যই ন্যায়পরায়ণ, সত্যবাদী, সাবালক, বিবেকবুদ্ধিসম্পন্ন নির্লোভ, অপবাদমুক্ত ও নিরপেক্ষ হতে হবে। আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ করছেন, ‘হে মুমিনরা! যদি কোনো পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ আনয়ন করে তবে তা পরীক্ষা করে নেবে, যাতে করে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধন না করো এবং পরে নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও’ (সূরা হুজরাত ৪৯/৬)। সাক্ষ্য গোপন করা বা মিথ্যা সাক্ষী দেয়া যাবে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন,‘তোমরা সাক্ষ্য গোপন করো না, যে কেউ তা গোপন করবে, তার অন্তর পাপপূর্ণ হবে (সূরা বাকারা ২৮৩)।
মিথ্যা সাক্ষী দেয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতে শাস্তির বিধান রেখেছেন- ৮০টি বেত্রাঘাত আর আখেরাতেও তার জন্য আছে আজাব। মিথ্যা সাক্ষী এটা অপবাদ। প্রত্যেক অপবাদকারীর জন্য আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে শাস্তির বিধান আছে। শপথ করে মিথ্যা সাক্ষী দেয়ার পরিণাম সম্পর্কে রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শপথ গ্রহণ করে কোনো মুসলমানের হক হরণ করল, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব করে দেন, আর জান্নাত হারাম করে দেন’ (মুসলিম)।
উকিলরা হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার প্রতিনিধি। উকিল শব্দের অর্থ হচ্ছে অভিভাবক বা জিম্মাদার। আল্লাহ তায়ালা বলছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা পূর্ব-পশ্চিমের একক মালিক, তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই, অতএব, তাকেই তোমাদের অভিভাবক ও জিম্মাদার হিসেবে গ্রহণ করো’ (সূরা মোজাম্মেল ৭৩/৯)। উকিলদের দায়িত্ব হচ্ছে বাদি-বিবাদি উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা ও সঠিক তথ্য বের করে বিচারককে সহায়তা করা। উকিলকে হতে হবে গভীর জ্ঞানের অধিকারী, ন্যায়পরায়ণ, সত্যবাদী, সাবালক, বিবেকবুদ্ধিসম্পন্ন, নির্লোভ, অপবাদমুক্ত ও নিরপেক্ষ। বাদি-বিবাদি উভয় পক্ষেরই স্বার্থ রক্ষার্থে বা হক প্রতিষ্ঠায় উকিল কাজ করবে।
বিচারক, সাক্ষী ও উকিল সবাই আল্লাহ তায়ালার প্রতিনিধি। অতএব, সবাইকে চিন্তা করতে হবে, আমরা একদিন সে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হয়ে আমাদের জীবনভর সব কর্মকাণ্ডের হিসাব দিতে হবে, আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তাঁর প্রতিনিধি করে জমিনে পাঠিয়েছেন। সে দিনটি হলো, যে দিন কোনো টাকা-পয়সা, বন্ধুত্ব, বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন কোনোই কাজে আসবে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে দিন কোনোরকম বেচা-কেনা, বন্ধুত্ব ভালোবাসা থাকবে না, থাকবে না কোনো সুপারিশ, এ দিনের অস্বীকারকারীরাই হচ্ছে জালেম’ (সূরা বাকারা ২/২৫৪। আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, ‘সে দিন (শেষ বিচারের দিন) পরাক্রমশালী আল্লাহ তায়ালার সামনে জিবরাঈল আ: ও অন্য ফেরেশতারা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে, করুণাময় আল্লাহ তায়ালা যাকে অনুমতি দেবেন তাকে ছাড়া সে দিন কেউই কথা বলতে পারবে না এবং সে অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তিও তখন সঠিক কথা বলবে ‘সূরা আন নাবা ৩৮)।﴿ পরে যখন সবাই সেখানে পৌঁছে যাবে তখন তাদের কান, তাদের চোখ এবং তাদের দেহের চামড়া তারা পৃথিবীতে কি করতো সে সম্পর্কে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে৷ (সূরা হা-মীম- আসসাজদা ২০)।
অতএব বিচার কার্যে যে যেখানে, যে পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করি না কেন আমাদের সবারই উচিত আমরা যার প্রতিনিধিত্ব করছি তাঁর হুকুম বা আইন মেনে সে মোতাবেক বিচার ফয়সালা করা। কারণ আমাদের যিনি প্রতিনিধি করেছেন তাঁর কাছে আমাদের সব কর্মকাণ্ডের হিসাব দিতে হবে। আমাদের কর্মকাণ্ডের পরিশুদ্ধতার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা: এর হুকুম মেনে চলতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,হে ঈমানদাররা তোমরা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করো এবং সদা সত্য কথা বল। তাহলে তিনি তোমাদের জীবনের কর্মকাণ্ডগুলো পরিশুদ্ধ করে দেবেন এবং তোমাদের গুণাহখাতা মাফ করে দেবেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূল সা:এর আনুগত্য করবে, সে অবশ্যই মহা সাফল্য লাভ করবে’ (সূরা আহজাব ৭০-৭১)