আল্লাহর দুই হাত

আল্লাহর দুই হাত

পবিত্র কুরআনের একাধিক স্থানে আল্লাহর হাতের কথা উল্লেখ হয়েছে। বাস্তবেই আল্লাহর হাত আছে। আমরা তাতে বিশ্বাস করি।

পবিত্র কুরআনের একাধিক স্থানে আল্লাহর হাতের কথা উল্লেখ হয়েছে। বাস্তবেই আল্লাহর হাত আছে। আমরা তাতে বিশ্বাস করি। তাঁর জন্যে যেমন হাত প্রযোজ্য তেমনই তাঁর হাত। মাখলুকের হাতের সাথে তাঁর হাতের কোন তুলনা নেই। আল্লাহ তা’আলা আদম (আঃ)-কে নিজ হাত দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। তিনি বলেনঃ
قَالَ يَاإِبْلِيسُ مَا مَنَعَكَ أَنْ تَسْجُدَ لِمَا خَلَقْتُ بِيَدَيَّ أَاسْتَكْبَرْتَ أَمْ كُنتَ مِنْ الْعَالِينَ
“আল্লাহ বললেনঃ হে ইবলীস! আমি নিজ হাতে যাকে সৃষ্টি করেছি তাঁর সম্মুখে সেজদা করতে তোমাকে কিসে বাধা দিল? তুমি অহংকার করলে? না তুমি তাঁর চেয়ে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন? (সূরা সোয়াদঃ ৭৫) আল্লাহ আরো বলেনঃ
وَقَالَتْ الْيَهُودُ يَدُ اللَّهِ مَغْلُولَةٌ غُلَّتْ أَيْدِيهِمْ وَلُعِنُوا بِمَا قَالُوا بَلْ يَدَاهُ مَبْسُوطَتَانِ يُنفِقُ كَيْفَ يَشَاءُ
“আর ইহুদীরা বলেঃ আল্লাহর হাত বন্ধ হয়ে গেছে। তাদেরই হাত বন্ধ হোক! একথা বলার কারণে তাদের প্রতি অভিসম্পাত। বরং তাঁর উভয় হস্ত উন্মুক্ত। তিনি যেরূপ ইচ্ছা ব্যয় করেন।” (সূরা মায়িদাঃ ৬৪)
উপর্যুক্ত দু’টি আয়াতে মহান আল্লাহর দু’টি হাত থাকার কথা প্রমাণিত হলো। প্রকৃতপক্ষেই আল্লাহর দু’টি হাত রয়েছে। তা কোন মাখলুকের হাতের মত নয়। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ অর্থাৎ কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। (সূরা শুরাঃ ১১)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
إِنَّ يَمِينَ اللَّهِ مَلأَى لاَ يَغِيضُهَا نَفَقَةٌ سَحَّاءُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ أَرَأَيْتُمْ مَا أَنْفَقَ مُنْذُ خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ فَإِنَّهُ لَمْ يَنْقُصْ مَا فِي يَمِينِهِ وَعَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ وَبِيَدِهِ الأُخْرَى الْفَيْضُ أَوِ الْقَبْضُ يَرْفَعُ وَيَخْفِضُ
“আল্লাহর ডান হাত পরিপূর্ণ। রাতদিন খরচ করার পরও তাতে কোন কমতি হয় না। তোমরা কি বলতে পারবে আসমান-যমীন সৃষ্টি করার সময় হতে এ পর্যন্ত কত খরচ করেছেন? তাঁর ডান হাতে যা আছে, তা হতে কিছুই কমেনি। তাঁর আরশ ছিল পানির উপর। তাঁর অপর হাতে রয়েছে দাড়িপাল্লা। তিনি উহা উঠান এবং নামান”।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
إن اللَّهَ يَقْبِضُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الأرْضَ وَتَكُوْنُ السَّموَاتُ بِيَمِينِهِ ثُمَّ يَقُوْلُ أَنَا المَلِك
“কিয়ামতের দিন গোটা পৃথিবী থাকবে তাঁর মুঠোতে এবং আসমানসমূহ থাকবে তাঁর ডান হাতে। অতঃপর তিনি বলবেনঃ আমিই বাদশা”। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
لَمَّا خَلَقَ اللَّهُ الْخَلْقَ كَتَبَ بِيَدِهِ عَلَى نَفْسِهِ إِنَّ رَحْمَتِي تَغْلِبُ غَضَبِي
“আল্লাহ তা’আলা যখন সৃষ্টিজীব সৃষ্টি করলেন তখন নিজ হাতে লিখে দিলেন যে, আমার রহমত আমার ক্রোধের উপর জয়লাভ করেছে”। আদম ও মুসা (আঃ) এর পরস্পর ঝগড়ার হাদীছে এসেছেঃ
فَقَالَ آدَمُ أَنْتَ مُوسَى اصْطَفَاكَ اللَّهُ بِكَلاَمِهِ وَخَطَّ لَكَ التَّوْرَاةَ بِيَدِهِ
“আদম (আঃ) বললেনঃ আপনি মুসা। আপনাকে বাক্যালাপের জন্য লোকদের মধ্যে হতে মনোনীত করেছেন এবং নিজ হাতে তিনি আপনার জন্য তাওরাত কিতাব লিপিবদ্ধ করেছেন”।
এখানে আল্লাহর বাক্যালাপ ও তাঁর হাত- এটি সিফাতে জাতিয়া তথা সত্ত্বাগত গুণ। কথা বলা একই সাথে সিফাতে যাতিয়া তথা সত্ত্বাগত গুণ ও সিফাতে ফে’লীয়া তথা কর্মগত গুণ। তাওরাত লিখা এটি হচ্ছে আল্লাহর কর্মগত গুণ।
যারা আল্লাহর হাতকে কুদরতী হাত দ্বারা ব্যাখ্যা করে তাদের উত্তরঃ
(১) যারা বলে আল্লাহর কোন হাত নেই; বরং হাত বলতে আল্লাহর কুদরতকে বুঝানো হয়েছে, তাদের কথা বাতিল এবং কুরআনের আয়াত পরিবর্তনের শামিল। কারণ কুরআনের আয়াত থেকে যে অর্থ সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায়, কোনরূপ পরিবর্তন ছাড়াই তাঁর উপর ঈমান আনয়ন করা ওয়াজিব। এটাই সাহাবী, তাবেয়ী এবং পরবর্তী যুগের সমস্ত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের আকীদাহ।
(২) হাত দ্বারা যদি কুদরত তথা ক্ষমতা উদ্দেশ্য হতো তাহলে আদমকে বিশেষভাবে দুই হাত দিয়ে সৃষ্টি করার কথা বলার কোন প্রয়োজন ছিলনা। কেননা আল্লাহ তা’আলা সমস্ত মাখলুককে এমনকি ইবলীসকেও কুদরতের মাধ্যমে সৃষ্টি করেছেন। যদি আদমকে নিজ হাতে সৃষ্টি না করে থাকেন তাহলে একথা বলায় কোন বৈশিষ্ট নেই যে, “আমি নিজ হাতে যাকে সৃষ্টি করেছি তাঁর সম্মুখে সেজদা করতে তোমাকে কিসে বাধা দিল?”
(৩) যদি হাত দ্বারা কুদরত উদ্দেশ্য হয় তাহলে আল্লাহর কুদরত তথা ক্ষমতা দু’টির মাঝে সীমিত হয়ে যাওয়া আবশ্যক হয়ে যায়। কারণ يد) ) তথা হাত শব্দটি দ্বিবচন হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে যেহেতু আল্লাহর ক্ষমতা দু’টির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় সেহেতু এখানে আল্লাহর প্রকৃত হাতকেই বুঝানো হয়েছে।
(৪) হাত বলতে ক্ষমতা কেবল তাঁর ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা যেতে পারে যার প্রকৃত পক্ষেই হাত রয়েছে। এ কথা তো কখনও বলা হয়না যে, এব্যাপারে বাতাসের হাত আছে। কারণ বাস্তবে বাতাসের কোন হাত নেই। তাই রূপকার্থে বাতাসের জন্য হাত সাব্যস্ত করা শোভা পায়না।
(৫) যারা বলে হাত অর্থ আল্লাহর কুদরত ও ক্ষমতা উদ্দেশ্য, তাদের কাছে আমাদের প্রশ্ন হলো যে হাদীছে আল্লাহর আঙ্গুলের কথা বলা হয়েছে তারা সে হাদীছের কি উত্তর দিবেন? আমরা কি কখনও এরকম ব্যবহার করি যে, এব্যাপারে আমার আঙ্গুল আছে তথা ক্ষমতা আছে?! সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছেঃ
جَاءَ حَبْرٌ مِنَ الْأَحْبَارِ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ إِنَّا نَجِدُ أَنَّ اللَّهَ يَجْعَلُ السَّمَوَاتِ عَلَى إِصْبَعٍ وَالْأَرَضِينَ عَلَى إِصْبَعٍ وَالشَّجَرَ عَلَى إِصْبَعٍ وَالْمَاءَ وَالثَّرَى عَلَى إِصْبَعٍ وَسَائِرَ الْخَلَائِقِ عَلَى إِصْبَعٍ فَيَقُولُ أَنَا الْمَلِكُ فَضَحِكَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى بَدَتْ نَوَاجِذُهُ تَصْدِيقًا لِقَوْلِ الْحَبْرِ ثُمَّ قَرَأَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : وَمَا قَدَرُوا اللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِ وَالْأَرْضُ جَمِيعًا قَبْضَتُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَالسَّمَوَاتُ مَطْوِيَّاتٌ بِيَمِينِهِ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ

“ইহুদীদের একজন পন্ডিত নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কাছে এসে বললঃ “হে মুহাম্মাদ! আমরা তাওরাতে পেয়েছি যে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন এক আঙ্গুলে রাখবেন সমস্ত যমিনকে, এক আঙ্গুলে রাখবেন সমস্ত গাছপালাকে, এক আঙ্গুলে রাখবেন সমস্ত পানি ও কাদাঁকে এবং এক আঙ্গুলে রাখবেন অবশিষ্ট সমস্ত মাখলুককে। ইহুদীর এ কথা সমর্থন করে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাসলেন। এমন কি তাঁর দাঁতগুলো প্রকাশিত হলো। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর এই বাণী তেলাওয়াত করলেনঃ
“তারা যথার্থরূপে আল্লাহর সম্মান বুঝতে পারেনি। কিয়ামতের দিন গোটা পৃথিবী থাকবে তাঁর মুঠোতে এবং আসমানসমূহ থাকবে ভাঁজকৃত অবস্থায় তাঁর ডান হাতে। তিনি পবিত্র। আর তারা যাকে শরীক করে তিনি তা থেকে অনেক উর্ধ্বে”। (সূরা যুমারঃ ৬৭)

Related Post