ইনফাক ফী সাবীলিল্লাহ বা আল্লাহর রাস্তায় দান

ইনফাক ফী সাবীলিল্লাহ

ইনফাক ফী সাবীলিল্লাহ

اَلْحَمْدُ للهِ الْبِرِّ الْجَوَّادِ الْكَرِيْمِ، اَلْقَابِضِ الْبَاسِطِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْمِ، أَحْمَدُهُ تَعَالَى عَلَى فَضْلِهِ الْعَظِيْمِ، وَأَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، أَمَرَنَا بِصِلَةِ الْأَرْحَامِ، وَالصَّدَقَةِ عَلَى الْفُقَرَاءِ وَالْأَيْتَامِ، وَأَشْهَدُ أَنَّ نَبِيَّنَا مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ صَلَى اللهُ وَسَلَّمَ عَلَيْهِ وَعَلَى آلِهِ وَأَصْحَابِهِ وَالتَّابِعِيْنَ لَهُمْ بِإِحْسَانٍ إِلَى يَوْمِ الدِّيْنِ *

সম্মানিত শিক্ষার্থীবন্ধুগণ! আলোচনার প্রথমেই রইল শুভেচ্ছা ও ইসলামী সম্ভাষণ—

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ

সম্মানিত শিক্ষার্থীবন্ধুগণ! আজকের বিষয়: আল্লাহর রাস্তায় দান করার ফযীলত

বা فضل الإنفاق في سبيل الله   এই মর্মে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে এরশাদ করছেন:

مَثَلُ الَّذِينَ يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنْبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنْبُلَةٍ مِائَةُ حَبَّةٍ وَاللَّهُ يُضَاعِفُ لِمَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ  الَّذِينَ يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ لَا يُتْبِعُونَ مَا أَنْفَقُوا مَنًّا وَلَا أَذًى لَهُمْ أَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ البقرة 261 262

যারা আল্লাহর রাস্তায় স্বীয় ধন সম্পদ ব্যয় করে,তাদের উদাহরণ একটি বীজের মত,যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। প্রত্যেকটি শীষে একশ করে দানা থাকে। আল্লাহ অতি দানশীল,সর্বজ্ঞ। যারা স্বীয় ধন সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, আর  ব্যয় করার পর সে অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে না এবং কষ্টও দেয় না,তাদেরই জন্যে তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে পুরস্কার এবং তাদের কোন আশংকা নেই,তারা চিন্তিতও হবে না। (সূরা বাকারা: (২৬১-২৬২)

ইনফাক ফী সাবিলিল্লাহ শব্দটির অর্থ: আল্লাহর পথে খরচ । এখন প্রশ্ন হচ্ছে আল্লাহর পথে খরচ বলতে কি বুঝানো হচ্ছে? এক কথায় আল্লাহ খুশী হন এমন কাজে অর্থ ব্যয় করাই হচ্ছে ইনফাক ফী সাবিলিল্লাহ বা আল্লাহর পথে খরচ। আল্লাহকে খুশী করার জন্য নিজের জন্য, পরিবার পরিজন, আত্মীয় স্বজন, সমাজ ও মানবতার কল্যাণ এবং সর্বপরি আল্লাহর দ্বীন এর প্রচার, প্রসার ও প্রতিষ্ঠার কাজে যে অর্থ ব্যয় হয় সবই ইনফাক ফী সাবিলিল্লাহর অন্তর্ভুক্ত। এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে খরচ হতে হবে শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশী করার জন্য। খ্যাতিলাভ, প্রদর্শনেচ্ছা কিংবা জাগতিক কোন স্বার্থে দ্বীন প্রতিষ্ঠার কোন কাজে অর্থ খরচ হলেও তা ইনফাক ফী সাবিল্লিাহ হিসেবে আল্লাহর কাছে গৃহীত হবেনা। অপরদিকে আল্লাহকে খুশী করার জন্য নিজের বা পরিবার পরিজনের জন্য খরচ করা হলেও ইনফাক এর সওয়াব আল্লাহ দান করবেন বলে সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

এখন ইনফাক ফী সাবিলিল্লাহ শব্দটির সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা: ইনফাক শব্দটির মূল ধাতু নাফাক (نفق)  যার অর্থ সুড়ঙ্গ। সাধারণত সুড়ঙ্গের এক দিক দিয়ে প্রবেশ করে আরেক দিক দিয়ে বের হওয়া যায়। আর এই নাফাক শব্দটির সাথে মাল শব্দটি যোগ হলে এর অর্থ হয় সম্পদ খরচ করা, শেষ করা (আল মুনযেদ-আরবী উর্দু,১২তম সংস্করণ,১৯৯৪) । এর মানে হচ্ছে সম্পদ কারো হাতে কুক্ষিগত থাকার বস্তু নয়। সম্পদ এক দিক দিয়ে আসবে আবার আরেক দিক দিয়ে খরচ হবে। তবে কুরআনে যে ইনফাক এর কথা বলা হয়েছে এই ইনফাক এর সাথে আয় ও ব্যয়ে বৈধতার প্রশ্ন রয়েছে। অবৈধ উপায়ে আয় করে অবৈধ খাতে খরচ করলে কুরআনে বর্ণিত ইনফাক হবেনা। ইনফাক হতে হলে সম্পদ বৈধভাবে আয় করতে হবে এবং আল্লাহকে খুশী করার জন্য বৈধ খাতেই ব্যয় করতে হবে।

সুতরাং এই দান করতে হবে সচ্ছল অসচ্ছল সর্বাবস্থায়: আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন:

وَسَارِعُوا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَوَاتُ وَالأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ* الَّذِينَ يُنْفِقُونَ فِي السَّرَّاءِ وَالضَّرَّاءِ وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ [آل عمران:133، 134

তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও যার সীমানা হচ্ছে আসমান ও যমীন,যা তৈরী করা হয়েছে পরহেযগারদের জন্য।যারা স্বচ্ছলতায় ও অভাবের সময় ব্যয় করে,যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে, বস্তুতঃ আল্লাহ সৎকর্মশীলদিগকেই ভালবাসেন। (সূরা আলে ইমরান: ১৩৩-১৩৪)

দুঃখ-কষ্টের সময় ধৈর্যধারণ করে সাধ্যানুযায়ী দান করলে অগণিত সাওয়াব অর্জন হয়:

 আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন: إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُ‌ونَ أَجْرَ‌هُم بِغَيْرِ‌ حِسَابٍ   যারা সবরকারী, তারাই তাদের পুরস্কার পায় অগণিত।

আল কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন মুমিনদেরকে ইনফাক ফী সাবীলিল্লাহর তাকিদ করেছেন। সূরা আল হাদীদের ১১ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন,

 مَنْ ذَا الَّذِىْ يُقْرِضُ اللهَ قَرْضًا حَسَنًا فَيُضعِفَه لَه وَلَه اَجْرٌ كَرِيْمٌ

‘কে আছে আল্লাহকে করযে হাসানা দেবে যা তিনি বহু গুণ বাড়িয়ে তাকে ফেরত দেবেন? আর তার জন্য রয়েছে সর্বোত্তম প্রতিদান।’

দান করতে হবে আল্লাহর রাস্তায় প্রিয়বস্তুকে

সূরা আলে ইমরানের ৯২ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন,

 لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتّى تُنْفِقُوْا مِمَّا تُحِبُّوْنَ

‘তোমরা প্রকৃত পুণ্য লাভ করতে পারবে না যেই পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্তুগুলো আল্লাহর পথে ব্যয় না করবে।’

এই সব আয়াতের দাবি পূরণের জন্য খাঁটি মুমিনগণ অত্যুজ্জ্বল উদাহরণ স্থাপন করে থাকেন। সূরা আল আহযাবের ৩৫ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন তাঁদেরকে,اَلْمُصَدِّقِيْنَ وَالْمُصَدِّقَاتِ (ইনফাককারী পুরুষ ও ইনফাককারী মহিলা) বলে উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ তাঁরা আল্লাহর পথে অকাতরে অর্থ-সম্পদ ব্যয় করেন। সমাজের অভাবী ব্যক্তিদের প্রতি তাঁদের সহযোগিতার হাত প্রসারিত হয়। আর আল্লাহর দ্বিনের আওয়াজ বুলন্দ করার কাজে তাঁরা উদারভাবে অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে থাকেন।

সূরা আলে ইমরানের ১৩৪ নাম্বার আয়াতে এই ধরনের ব্যক্তিদের পরিচয় তুলে ধরে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন,

 اَلَّذِيْنَ يُنْفِقُوْنَ فِى السَّرَّاءِ وَالضَّرَّاءِ وَالْكظِمِيْنَ الْغَيْظَ وَالْعَافِيْنَ عَنِ النَّاسِط

‘যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় (আল্লাহর পথে) অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে, যারা ক্রোধ দমন করে এবং যারা লোকদের দোষ-ত্রুটি মাফ করে দেয়।’

 

দান সদকা গুনাহ মিটিয়ে দেয়:  রাসূল (সা.) বলেন: وَالصَّدَقَةُ تُطْفِئُ الْخَطِيئَةَ كَمَا يُطْفِئُ الْمَاءُ النَّارَ

 দান-ছাদকা গুনাহ মিটিয়ে ফেলে যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে ফেলে। (সহীহুল জামে/৫১৩৬)

আল্লাহর রাস্তায় খরচ করতে হবে বিশুদ্ধ নিয়তে:

খালেস নিয়তে, দায়িত্ব মনে করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে যদি দান করা হয়, তাহলে তার ব্যাপক ফযীলত রয়েছে। এসব ফযীলতের কিছুটা পার্থিব এই পৃথিবীতেও লক্ষ্য করা যায়, তবে বেশিরভাগ ফযীলতই পরবর্তী জীবনের পাথেয় হিসেবে জমা থাকে। এছাড়াও এ জন্য আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কারও পাবেন দানকারীরা। এ কারণেই দয়াময় আল্লাহ কুরআনে কারিমে দান-খয়রাতের ওপর ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছেন এবং সেই সঙ্গে দানের ব্যাপারে নিয়তের স্বচ্ছতার কথা বলেছেন।

দান করার নীতিমালা:

দান করার কিছু নীতিমালা আল্লাহ তায়ালা কুরআনে কারিমে ঘোষণা করেছেন। যেমন, দান করতে হবে শুধু আল্লাহ তায়ালার জন্য। কাউকে দেখানোর জন্য নয়। দান-খয়রাত করে ভবিষ্যতে কোনো স্বার্থ হাসিলের নিয়ত করা যাবে না। আত্মপ্রদর্শনের উদ্দেশ্য কৃত দানকে নিকৃষ্টতম দান বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে ইসলামে। এছাড়া যাকে দান করা হলো তার কাছ থেকে এর বিনিময়ে কোনো সুযোগ-সুবিধাও গ্রহণ করা যাবে না।

ইসলামী প্রতিষ্ঠার জন্য দান করা:

আর ইসলামের ইতিহাসের শুরু থেকেই দাওয়াতী কাজকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ইসলামের হেফাজতের জন্য আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজন দেখা দিয়ে আসছে। এই জন্য স্বয়ং রাসূল (সা.) তাবুকের যুদ্ধের জন্য সাহাবীদের কাছ থেকে দান নিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় রাসুল (সা.) সাহাবিদেরকে দান করতে উৎসাহিত করেছেন। এমনকি খেজুরের এক টুকরা দান করে হলেও জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেকে বাঁচাতে বলেছেন। ধন-সম্পদের প্রকৃত মালিক আল্লাহ তাআলা। তিনি যাকে ইচ্ছা উহা প্রদান করে থাকেন। এজন্য এ সম্পদ অর্জন ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে তাঁর বিধি-নিষেধ মেনে চলা আবশ্যক। সৎ পন্থায় সম্পদ উপার্জন ও সৎ পথে উহা ব্যয় করা হলেই তার হিসাব প্রদান করা সহজ হবে।

 কিয়ামতের দিন যে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কোন মানুষ সামনে যেতে পারবে না, তন্মধ্যে দুটি প্রশ্নই ধন-সম্পদ বিষয়ক। প্রশ্ন করা হবে, কোন পথে সম্পদ উপার্জন করেছ এবং কোন পথে উহা ব্যয় করেছ।

দানে ধন কমে না:

অধিকাংশ মানুষ দান-খয়রাত করতে চায় না। মনে করে এতে সম্পদ কমে যাবে। তাই সম্পদ সঞ্চিত করে রাখতেই সর্বদা সচেষ্ট থাকে, এমনকি নিজের প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রেও খরচ করতে কৃপণতা করে। প্রকৃত পক্ষে দান-ছাদকা করলে সম্পদ কমে না। আবু কাবশা আল আনমারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সা.)কে বলতে শুনেছেনঃ مَا نَقَصَ مَالُ عَبْدٍ مِنْ صَدَقَةٍ  ছাদকা করলে কোন মানুষের সম্পদ কমে না। (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)

বরং দান সম্পদকে বৃদ্ধি করেঃ পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক এরশাদ করেন

مَثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنْبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنْبُلَةٍ مِائَةُ حَبَّةٍ وَاللهُ يُضَاعِفُ لِمَنْ يَشَاءُ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ

যারা আল্লাহর রাস্তায় সম্পদ ব্যয় করে তার উদাহরণ হচ্ছে সেই বীজের মত যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। আর প্রতিটি শীষে একশতটি করে দানা থাকে। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অতিরিক্ত দান করেন। আল্লাহ সুপ্রশস্ত সুবিজ্ঞ। (সূরা বাকারা-২৬১)

সন্দেহ নেই ধন-সম্পদ নিজের আরাম-আয়েশ এবং পরিবারের ভরণ-পোষণের ক্ষেত্রে ব্যয় করার অনুমতি ইসলামে আছে এবং অনাগত সন্তানদের জন্য সঞ্চিত করে রাখাও পাপের কিছু নয়। কিন্তু পাপ ও অন্যায় হচ্ছে, সম্পদে আল্লাহর দ্বীন বিজয়ের ক্ষেত্রে ব্যয় না করা ও গরীব-দুঃখীর হক আদায় না করা। অভাবী মানুষের দুঃখ দূর করার প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করা। অথচ আল্লাহ বলেনঃ وَالَّذِينَ فِي أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ مَعْلُومٌ، لِلسَّائِلِ وَالْمَحْرُومِ এবং তাদের সম্পদে নির্দিষ্ট হক রয়েছে। ভিক্ষুক এবং বঞ্চিত (অভাবী অথচ লজ্জায় কারো কাছে হাত পাতে না) সকলের হক রয়েছে। (মাআরেজ- ২৪-২৫)

রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেনঃ মানুষ বলে আমার সম্পদ! আমার সম্পদ!! অথচ তিনটি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত সম্পদই শুধু তার। ) যা খেয়ে শেষ করেছে, )যা পরিধান করে নষ্ট করেছে এবং )যা দান করে জমা করেছে- তাই শুধু তার। আর অবশিষ্ট সম্পদ সে ছেড়ে যাবে, মানুষ তা নিয়ে যাবে। (মুসলিম)

আল্লাহর রাস্তায় দান খয়রাত করলে ৭০০ গুণ সাওয়াব বৃদ্ধি করা হয়: এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেনঃ مَنْ أَنْفَقَ نَفَقَةً فِي سَبِيلِ اللهِ كَانَتْ لَهُ بِسَبْعِ مِائَةِ ضِعْفٍ যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে কোন কিছু ব্যয় করবে তাকে সাতশত গুণ ছওয়াব প্রদান করা হবে। (আহমাদ,সনদ ছহীহ)

সম্মানিত উপস্থিতি

 সহানুভূতি ও দান খয়রাত করা উত্তম চরিত্রে বহিঃপ্রকাশ: স্বাভাবিকভাবে এটি উত্তম গুণ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আম্বিয়াকেরামদেরকে এই বিষয়ে অসিয়ত করেছেন। এবং আমাদেরকেও পবিত্র কুরআন উদ্ভুদ্ধ করেছেন। এবং এটি ঈমানদার হওয়ার একটি প্রমাণও। দান ও সহানুভূমি সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنْفِقُوا مِمَّا رَزَقْنَاكُمْ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَ يَوْمٌ لا بَيْعٌ فِيهِ وَلا خُلَّةٌ وَلا شَفَاعَةٌ وَالْكَافِرُونَ هُمُ الظَّالِمُونَ

হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যে রুযী দিয়েছি,সেদিন আসার পূর্বেই তোমরা তা থেকে ব্যয় কর, যাতে না আছে বেচা-কেনা, না আছে সুপারিশ কিংবা বন্ধুত্ব। আর কাফেররাই হলো প্রকৃত যালেম। (সূরা বাকারা: ২৫৪)

 দান ও সহানুভূতি গরীবকে ধনী লোকের বন্ধু বানিয়ে দেয়: এবং দানবীরকে মহান আল্লাহ ভালোবাসেন: রাসূলে কারীম (সা.) বলেন:

: إنَّ اللهَ تعالى جَوَّادٌ يُحِبُّ الْجُوْدَ، ويُحِبُّ مَعَالِيْ الْأَخْلَاقِ وَيَكْرَهُ سِفْسَافَهَا

 নিশ্চয় আল্লাহ দাতা,তিনি দাতাকে ভালোবাসেন। এবং উন্নত চরিত্রকে ভালোবাসেন। এবং মন্দ চরিত্রকে ঘৃণা করেন।

 কতটুকু আপনার সম্পদ

قِيْلَ: مَا جَمَعْتَ مِنَ الْمَالِ فَوْقَ قُوتِكَ فَإنَّمَا أَنْتَ فِيْهِ خَازِنٌ لِغَيْرِكَ،

 তোমার কাছে সংসারের অতিরিক্ত সম্পদ রয়েছে,সেগুলো অন্যের তুমি পাহারাদার মাত্র।

  দান বা সহানুভূতি জাহান্নামের পর্দা হবে:  হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

, عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِي اللَّه عَنْه ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قَالَ : يَا عَائِشَةُ تَصَدَّقِي وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ ، فَإِنَّهَا تَحْجُبُ قَدْرَهَا مِنَ النَّارِ ”

হে আয়েশা! অভাবীদের কিছু না দিয়ে ফিরিয়ে দিয়ো না,যদিও তা কেবল খেজুরের একটি টুকরা হয়। হে আয়েশা! গরীবদের ভালবাস এবং তাদেরকে তোমার কাছে সাহায্যের জন্য আসতে দাও। তখন আল্লাহ তাআলা অবশ্যই কিয়ামতের দিন তাঁর কাছে স্থান দিবেন। (ইবনে মাজাহ, তিরমিযি)

   উত্তম দান হলো প্রয়োজন পুরো করে দেওয়া:  হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

عَنْ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ، يقول : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَفْضَلُ الصَّدَقَةِ أَنْ تُشْبِعَ كَبِدًا جَائِعًا

সর্বোত্তম দান হল প্রয়োজন মিটিয়ে পরিতৃপ্ত করা। (বায়হাকি)

প্রয়োজনের সময় খরচ  করা জান্নাতে প্রবেশের কারণ হবে:

عن عبد الله بن سلام رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال : أَفْشُوا السَّلَامَ ، وَأَطْعِمُوا الطَّعَامَ، وَصِلُوا الأَرْحَامَ ، وَصَلُّوا بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ ، تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ بِسَلامٍ (رواه الترمذي)

আবদুল্লাহ ইবন সালাম থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘হে লোকসকল! তোমরা সালামের প্রসার ঘটাও,অভাবীদের খাবারের ব্যবস্থা করো। আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা কর এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামায পড়। (এগুলো করে) তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ কর।’ (তিরমিযী)

 জীবনের লক্ষ্যই কি শুধু সম্পদ উপার্যন?

অনেক লোক আছে যারা সম্পদ বৃদ্ধির পিছনে এতটাই ব্যস্ত যে, এদের জীবনের লক্ষ্যই যেন অর্থোপার্জন। রাসূল (ছাঃ) তাই আক্ষেপ করে বলেছেন:

تَعِسَ عَبْدُ الدِّينَارِ وَالدِّرْهَمِ وَالْقَطِيفَةِ وَالْخَمِيصَةِ إِنْ أُعْطِىَ رَضِىَ وَإِنْ لَمْ يُعْطَ لَمْ يَرْضَ

 ‘লাঞ্ছিত হোক দীনার ও দিরহামের গোলাম এবং চাদর ও শালের গোলাম। তাকে দেয়া হলে সন্তুষ্ট হয়, না দেয়া হ’লে অসন্তুষ্ট হয়’। বুখারী হা/১৮৮৬; মিশকাত হা/৫১৬১

রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন, لَيْسَ الْغِنَى عَنْ كَثْرَةِ الْعَرَضِ، وَلَكِنَّ الْغِنَىْ غِنَى النَّفْسِ

ধনের আধিক্য হলেই ধনী হয় না, বরং অন্তরের ধনীই হল প্রকৃত ধনী’। মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫১৭০

  • দান-ছাদকা করার ফযীলতঃ
    দান-ছাদকা করলে সম্পদ কমে না: আবু কাবশা আল আনমারী (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি শুনেছেন রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: مَا نَقَصَ مَالُ عَبْدٍ مِنْ صَدَقَةٍ
    “ছাদকা করলে কোন মানুষের সম্পদ কমে না। (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)

ক) দান সম্পদকে বৃদ্ধি করে: পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক এরশাদ করেন:

مَثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنْبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنْبُلَةٍ مِائَةُ حَبَّةٍ وَاللهُ يُضَاعِفُ لِمَنْ يَشَاءُ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ

 “যারা আল্লাহর রাস্তায় সম্পদ ব্যয় করে তার উদাহরণ হচ্ছে সেই বীজের মত যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। আর প্রতিটি শীষে একশতটি করে দানা থাকে। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অতিরিক্ত দান করেন। আল্লাহ সুপ্রশস্ত সুবিজ্ঞ।” (সূরা বাকারা-২৬১)

রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: مَنْ أَنْفَقَ نَفَقَةً فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَانَتْ لَهُ بِسَبْعِ مِائَةِ ضِعْفٍ
“যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে কোন কিছু ব্যয় করবে তাকে সাতশত গুণ ছওয়াব প্রদান করা হবে।” (আহমাদ, সনদ ছহীহ)

খ) দানকারীর জন্য ফেরেশতা দুআ করে: আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“প্রতিদিন সকালে দু’জন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাদের একজন দানকারীর জন্য দু’আ করে বল, اللَّهُمَّ أَعْطِ مُنْفِقًا خَلَفًا “হে আল্লাহ দানকারীর মালে বিনিময় দান কর। (বিনিময় সম্পদ বৃদ্ধি কর)” আর দ্বিতীয়জন কৃপণের জন্য বদ দু’আ করে বলেন, اللَّهُمَّ أَعْطِ مُمْسِكًا تَلَفًا “হে আল্লাহ কৃপণের মালে ধ্বংস দাও।” (বুখারী ও মুসলিম)

গ) গোপনে দান করার ফযীলতঃ গোপন-প্রকাশ্যে যে কোনভাবে দান করা যায়। সকল দানেই ছওয়াব রয়েছে। আল্লাহ বলেন:

إِنْ تُبْدُوا الصَّدَقَاتِ فَنِعِمَّا هِيَ وَإِنْ تُخْفُوهَا وَتُؤْتُوهَا الْفُقَرَاءَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ وَيُكَفِّرُ عَنْكُمْ مِنْ سَيِّئَاتِكُمْ

”যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান-খয়রাত কর, তবে তা কতই না উত্তম। আর যদি গোপনে ফকীর-মিসকিনকে দান করে দাও, তবে এটা বেশী উত্তম। আর তিনি তোমাদের পাপ সমূহ ক্ষমা করে দিবেন।” (সূরা বকারা- ২৭১)

ঘ) গোপনে দানকারী কিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের নিচে ছায়া লাভ করবে: নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “কিয়ামত দিবসে সাত শ্রেণীর মানুষ আরশের নিচে ছায়া লাভ করবে।…তন্মধ্যে এক শ্রেণী হচ্ছে:

وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّى لَا تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينُهُ

“এক ব্যক্তি এত গোপনে দান করে যে, তার ডান হাত কি দান করে বাম হাত জানতেই পারে না।” (বুখারী ও মুসলিম)

দান করতে হবে হালাল উপার্যন হতে:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ تَصَدَّقَ بِعَدْلِ تَمْرَةٍ مِنْ كَسْبٍ طَيِّبٍ، وَلاَ يَقْبَلُ اللَّهُ إِلَّا الطَّيِّبَ، وَإِنَّ اللَّهَ يَتَقَبَّلُهَا بِيَمِينِهِ، ثُمَّ يُرَبِّيهَا لِصَاحِبِهِ، كَمَا يُرَبِّي أَحَدُكُمْ فَلُوَّهُ، حَتَّى تَكُونَ مِثْلَ الجَبَلِ»

“যে ব্যক্তি হালাল কামাই থেকে একটি খেজুর সমপরিমাণ সদকা করবে (আর আল্লাহ তা‘আলা তো একমাত্র হালাল বস্তুই গ্রহণ করে থাকেন) আল্লাহ তা‘আলা তা ডান হাতে গ্রহণ করবেন। অতঃপর তা তার কল্যাণেই বর্ধিত করবেন যেমনিভাবে তোমাদের কেউ একটি ঘোড়ার বাচ্চাকে সুন্দরভাবে লালন-পালন করে বর্ধিত করে। এমনকি আল্লাহ তা‘আলা পরিশেষে সে খেজুর সমপরিমাণ বস্তুটিকে একটি পাহাড় সমপরিমাণ বানিয়ে দেন”। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪১০)

কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার পথে সর্বদা সদকা-খয়রাতকারীর কোনো ভয়-ভীতি থাকবে না:

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ ٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمۡوَٰلَهُم بِٱلَّيۡلِ وَٱلنَّهَارِ سِرّٗا وَعَلَانِيَةٗ فَلَهُمۡ أَجۡرُهُمۡ عِندَ رَبِّهِمۡ وَلَا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُونَ ﴾ البقرة:

“যারা নিজেদের ধন-সম্পদগুলো আল্লাহ তা‘আলার পথেই রাত-দিন প্রকাশ্যে এবং অপ্রকাশ্যে দান করবে তাদের প্রতিদান সমূহ তাদের প্রভুর নিকটই রক্ষিত থাকবে। কিয়ামতের দিন তাদের কোনো ভয়-ভীতি থাকবে না এবং তারা কখনো চিন্তাগ্রস্তও হবে না”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৭৪)

যারা আল্লাহ তাআলার পথে সর্বদা সদকা-খয়রাত করেন তাঁরা প্রকৃত ঈমানদার:

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٱلَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ ٱللَّهُ وَجِلَتۡ قُلُوبُهُمۡ وَإِذَا تُلِيَتۡ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتُهُۥ زَادَتۡهُمۡ إِيمَٰنٗا وَعَلَىٰ رَبِّهِمۡ يَتَوَكَّلُونَ ٢ ٱلَّذِينَ يُقِيمُونَ ٱلصَّلَوٰةَ وَمِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ يُنفِقُونَ ٣ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ حَقّٗاۚ لَّهُمۡ دَرَجَٰتٌ عِندَ رَبِّهِمۡ وَمَغۡفِرَةٞ وَرِزۡقٞ كَرِيمٞ ٤ ﴾

“সত্যিকারের মু’মিন ওরাই যাদের সামনে আল্লাহ তা‘আলার কথা স্মরণ করা হলে তাদের অন্তরগুলো ভয়ে কেঁপে উঠে, তাঁর আয়াত সমূহ পাঠ করা হলে তাদের ঈমান আরো বেড়ে যায়, উপরন্তু তারা সর্বদা নিজ প্রভুর উপর নির্ভরশীল থাকে। যারা সালাত কায়েম করে এবং তাঁর দেওয়া সম্পদ থেকে তাঁর পথে সদকা করে। তারাই হচ্ছে প্রকৃত ঈমানদার। তাদের জন্য রয়েছে তাদের প্রভুর নিকট সুউচ্চ আসন, ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা”। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ২-৪]

আল্লাহ তাআলার পথে সর্বদা সদকা-খয়রাত সদকাকারীকে সকল প্রকারের গুনাহ্ ও পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত ও পবিত্র করে:

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ خُذۡ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡ صَدَقَةٗ تُطَهِّرُهُمۡ وَتُزَكِّيهِم بِهَا وَصَلِّ عَلَيۡهِمۡۖ إِنَّ صَلَوٰتَكَ سَكَنٞ لَّهُمۡۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ١٠٣ أَلَمۡ يَعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ هُوَ يَقۡبَلُ ٱلتَّوۡبَةَ عَنۡ عِبَادِهِۦ وَيَأۡخُذُ ٱلصَّدَقَٰتِ وَأَنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلتَّوَّابُ ٱلرَّحِيمُ ١٠٤ ﴾ [التوبة: ١٠٣،  ١٠٤]

“(হে নবী!) তুমি তাদের সম্পদ থেকে সদকা-খয়রাত নিয়ে তাদেরকে পাক ও পবিত্র করো এবং তাদের জন্য দো‘আ করো। নিশ্চয় তোমার দো‘আ তাদের জন্য শান্তিস্বরূপ। আল্লাহ তা‘আলা তো সবই শোনেন এবং সবই জানেন। তারা কি এ ব্যাপারে অবগত নয় যে, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের তাওবা কবুল করেন এবং তাদের দান-খয়রাত গ্রহণ করেন। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তাওবা কবুলকারী অতীব দয়ালু”। সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ১০৩-১০৪]

মানুষ মরে গেলেও তার দান সদকার সাওয়াব পেতে থাকবে:

উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«ذُكِرَ لِيْ: أَنَّ الْأَعْمَالَ تَبَاهَى، فَتَقُوْلُ الصَّدَقَةُ: أَنَا أَفْضَلُكُمْ»

“আমাকে বলা হয়েছে যে, আমলগুলো পরস্পর গর্ব করবে। তখন সদকা বলবে, আমি তোমাদের সবার চাইতে শ্রেষ্ঠ”। (সহীহুত-তারগীবি ওয়াত-তারহীব, হাদীস নং ৮৭৮)

সদকা সম্পর্কে এতো কিছু শোনার পরও এমন হবেন না যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ هَٰٓأَنتُمۡ هَٰٓؤُلَآءِ تُدۡعَوۡنَ لِتُنفِقُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ فَمِنكُم مَّن يَبۡخَلُۖ وَمَن يَبۡخَلۡ فَإِنَّمَا يَبۡخَلُ عَن نَّفۡسِهِۦۚ وَٱللَّهُ ٱلۡغَنِيُّ وَأَنتُمُ ٱلۡفُقَرَآءُۚ وَإِن تَتَوَلَّوۡاْ يَسۡتَبۡدِلۡ قَوۡمًا غَيۡرَكُمۡ ثُمَّ لَا يَكُونُوٓاْ أَمۡثَٰلَكُم ٣٨ ﴾ [محمد: ٣٨]

“হ্যাঁ, তোমরাই তো ওরা যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার পথে সদকা করতে বলা হয়েছে; অথচ তোমাদের অনেকেই এ ব্যাপারে কৃপণতা দেখাচ্ছে। মূলতঃ যারা কার্পণ্য করে তারা তো নিজেদের ব্যাপারেই কার্পণ্য করে। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা তো ধনী-অভাবমুক্ত। তাঁর কোনো কিছুরই প্রয়োজন নেই। বরং তোমরাই গরীব। যদি তোমরা আল্লাহ তা‘আলার পথে খরচ করতে বিমুখ হও তা হলে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে বাদ দিয়ে অন্য আরেক জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন যারা কখনোই তোমাদের মতো হবে না”। [সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ৩৮]

ওদের মতোও হবেন না যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ ٱلَّذِينَ يَبۡخَلُونَ وَيَأۡمُرُونَ ٱلنَّاسَ بِٱلۡبُخۡلِ وَيَكۡتُمُونَ مَآ ءَاتَىٰهُمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِۦۗ وَأَعۡتَدۡنَا لِلۡكَٰفِرِينَ عَذَابٗا مُّهِينٗا ٣٧ ﴾ [النساء: ٣٧]

“যারা কৃপণতা করে এবং লোকদেরকে কার্পণ্য শিক্ষা দেয়। উপরন্তু আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত সম্পদসমূহ লুকিয়ে রাখে (তারা তো বস্তুতঃ কাফির) আর আল্লাহ তা‘আলা তো এমন কাফিরদের জন্য অপমানজনক শাস্তির ব্যবস্থাই রেখেছেন”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩৭]

কখনো এমন মনে করবেন না যে, আপনি নিজেই আপনার মেধা ও বাহুবলে আপনার সম্পদগুলো কামিয়েছেন। বরং তা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার একান্ত মেহেরবানিতেই সম্ভবপর হয়েছে। অভিশপ্ত কারূন তো নিজের সম্পদের ব্যাপারে এমন ধারণাই পোষণ করতো। তার কথাই তো আল্লাহ তা‘আলা নিজ কুরআন মাজীদে উল্লেখ করেন।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ قَالَ إِنَّمَآ أُوتِيتُهُۥ عَلَىٰ عِلۡمٍ عِندِيٓۚ أَوَ لَمۡ يَعۡلَمۡ أَنَّ ٱللَّهَ قَدۡ أَهۡلَكَ مِن قَبۡلِهِۦ مِنَ ٱلۡقُرُونِ مَنۡ هُوَ أَشَدُّ مِنۡهُ قُوَّةٗ وَأَكۡثَرُ جَمۡعٗاۚ وَلَا يُسۡ‍َٔلُ عَن ذُنُوبِهِمُ ٱلۡمُجۡرِمُونَ ٧٨ ﴾ [القصص: ٧٨]

“সে বললো, এ সম্পদ তো শুধু আমি আমার মেধার বলেই লাভ করেছি। সে কি জানে না যে, আল্লাহ তা‘আলা ইতোপূর্বে বহু মানবগোষ্ঠীকেই ধ্বংস করে দিয়েছেন। যারা ছিলো তার চাইতেও অনেক বেশি শক্তিশালী এবং প্রচুর সম্পদের মালিক। অপরাধীদেরকে তাদের অপরাধ সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা করার তো কোনো প্রয়োজনই নেই। (কারণ, সবই তো আল্লাহ তা‘আলা তাদের আমলনামায় লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন”। [সূরা আল-কাসাসা, আয়াত: ৭৮]

সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে যে সম্পদ দিয়েছেন সে জন্য একমাত্র তাঁরই প্রশংসা করুন। তা নিজেও খান। অপরকেও খাওয়ান। আল্লাহর রাস্তায় যথাসাধ্য খরচ করুন। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে সদকা দেওয়ার উপযুক্ত বানিয়েছেন। খাওয়ার নয়। সর্বদা নিম্নোক্ত আয়াত স্মরণ করুন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَنفِقُواْ مِمَّا رَزَقۡنَٰكُم مِّن قَبۡلِ أَن يَأۡتِيَ يَوۡمٞ لَّا بَيۡعٞ فِيهِ وَلَا خُلَّةٞ وَلَا شَفَٰعَةٞۗ وَٱلۡكَٰفِرُونَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ ٢٥٤ ﴾ [البقرة: ٢٥٤]

“হে ঈমানদাররা! আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি তা হতে আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় খরচ করো এমন দিন আসার পূর্বে যে দিন কোনো ক্রয়-বিক্রয় চলবে না, না কোনো বন্ধুত্ব কাজে আসবে, না কারোর সুপারিশ ফায়দা দিবে। কাফিররা তো সত্যিই যালিম”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৫৪]

আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে তাঁরই দীন প্রতিষ্ঠা এবং মানবতার কল্যাণে যথাসাধ্য ব্যয় করার তাওফীক দান করুন। আমীন, সুম্মা আমীন। ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।

Related Post