ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন-পদ্ধতি ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থার সুফল জনগণের দৌড় গোড়ায় পৌঁছে দিতে এবং তা অব্যাহত রাখতে কেবল বাতিলের আক্রমণ প্রতিরোধের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সম্ভব হবে না। শত্রুরা যে সকল পদ্ধতিতে ইসলামী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে সে পদ্ধতিসমূহ নির্মূলে সময় মত ব্যবস্থাও করতে হবে। প্রয়োজন হলে শত্রুদের ক্রমাগত আক্রমণের শক্তি নির্মূলে আক্রমণাত্বক যুদ্ধ করতে হবে। নির্মূল করতে হবে ভিতরের ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠিকে। এটা হবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। ইসলামের শত্রুরা চতুর্মুখী ষড়যন্ত্র ও আক্রমণ করেই যাবে আর মুসলমানরা নিশ্চিন্তে বসে থাকবে এটা হতে পারেনা। শত্রুরা ষড়যন্ত্র করবে আর মুসলমানরা আরাম-আয়শে পড়ে থাকবে, তাহলেতো তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে বাধ্য। (যার বাস্তবতা বর্তমান বিশ্বে মুসলমানদের অবস্থা। আজ শত্রুদের চতুর্মুখী ষড়যন্ত্র ও আক্রমণে মুসলমানদের জীবন শুধু লাঞ্চনা-গঞ্জনা,বে ইজ্জতির মধ্যেই সীমাদ্ধ নয়, প্রতিনিয়ত সারা বিশ্বে তাদের রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে এ জমিন। শত্রুদের ষড়যন্ত্র সহসা বন্ধ হবার নয়। এ ব্যাপারে আল্লাহ সুবহানাহু তা‘য়ালা সূরা বাকারায় ২১৭ নং আয়াতে স্পষ্ট সতর্ক করেছেন যে, কিয়ামতের আগপর্যন্ত শত্রুরা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাবে যে পর্যন্ত না তোমরা তাদের ধর্মে ফিরে যাবে। আল্লাহ তা‘য়ালার এ ঘোষণা অনুযায়ী প্রতিটি মুসলিমের বিশেষ করে মুসলিম শাসকদের উচিত ছিল ইসলাম ও মুসলিমদের নিরাপত্তায় কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া। মুসলিমদের স্বার্থ রক্ষায় সে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং অধিকাংশ মুসলিম শাসকরা আল্লাহ তা‘য়ালার সে সতর্কবাণী শুধু উপেক্ষাই করেননি,বরং তারা শত্রুর হাতে হাত মিলিয়ে কুরআনী রাষ্ট্রের নাম নিশানা মুছে দিয়ে আল্লাহ ও রাসূল প্রেমিক তাওহীদি জনতাকে নির্মূলে শত্রুর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে চলেছেন। নামে মাত্র মুসলিম দেশ কাজে কর্মে শত্রুর নির্দেশ)। মদীনার ইসলামী রাষ্ট্রকে ধ্বংস করতে ভিতরের ষড়যন্ত্র আর বাহিরের আক্রমণ প্রতিহত করতে রাসূল সা: কে সর্বদা ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। খন্দকের যুদ্ধ এবং হুদায়াবিয়ার সন্ধির পর রাসূল সা:আভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রকারী ইহুদী গোষ্ঠি বনু কাইনুকা ও বনু নযীর গোত্রকে মদীনা থেকে বহিষ্কার করলেন। তারা মদীনা থেকে দু‘শ মাইল উত্তর-পশ্চিমে খায়বর এলাকায় বসতি স্থাপন করে। সিরিয়ার সীমান্ত ঘেঁষা সুজলা-সুফলা বিশাল শ্যামল ভূখন্ডের নাম ছিল খায়বার। ছোট-বড় বহু দুর্গ দ্বারা এ স্থানটি সুরক্ষিত ছিল। পূর্ব হতেই এ এলাকা ছিল ইহুদী বেষ্টিত। তাদের সাথে যোগ দিল মদীনা থেকে বিতাড়িত বনু কাইনুকা ও বনু নযীর। ফলে খায়বর পরিণত হলো ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য এক স্থায়ী বিপদের কারণ। ইতি পূর্বে খন্দকের যুদ্ধের সময় মদীনার উপর যে প্রচন্ড হামলা চালানো হয়েছিল,তার মূল কারণ ছিলো এই খায়বারের ইহুদীরা। এখন তারা সবাই মিলে মদীনার ইসলামী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র ও দুরভিসন্ধি আঁটতে লাগলো। প্রথমে তারা রাজনৈতিক কুট- কৌশলের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিলো যে,মুসলমান ও কুরাইশদের মধ্যে যুদ্ধ লাগিয়ে উভয়কে দুর্বল করার মাধ্যমে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করা হবে। এ লক্ষ্যে তারা আরবের বিভিন্ন গোত্র, বিশেষ করে কুরাইশদের সাথে আঁতাত করলো। অন্য দিকে মদীনার মুনাফিকদেরকে উস্কে দিতে লাগলো যেন তারা মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টিতে সহায়তা করে। এসব কাজে যারা সহায়তা করবে তাদের জন্য আর্থিক সুযোগ-সুবিধায় অংশীদার করা হবে মর্মে ঘোষণাও দেয়া হলো। তাদের এখন একটাই লক্ষ্য আর তা হলো মদীনার ইসলামী রাষ্ট্রের পতন। কুরাইদের আক্রমণ,মুনাফিকদের ষড়যন্ত্র ও ইহুদীদের আক্রমণের ফলে মদীনার ইসলামী রাষ্ট্রের পতন হবেই। রাসূল সা: ছিলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ রাজনীতিবীদ ও আদর্শ রাষ্ট্রনায়ক। তাঁর কাছে এসব গোপন চক্রান্তের খবর গোয়েন্দা মারফত যথারীতি পৌঁছাতে লাগলো। প্রাথমিক পর্যায় তিনি ইহুদীদিদের সাথে একটা যৌক্তিক চুক্তি সম্পাদনের চেষ্টা করলেন। কিন্তু তারা তাঁর কথায় কর্ণপাত করলোনা। বরং ইসলামী রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা বিনষ্টে ছোট-খাটো আক্রমণ দ্বারা মুসলমানদের উত্তেজিত করতে লাগলো। এ সকল আক্রমণের মাধ্যমে তারা মুসলমানদেরকে গুম, হত্যা ও তাদের সম্পদ লুন্ঠন করতে লাগলো। (বর্তমানে অধিকাংশ মুসলিম শাসকদের দিয়ে ঠিক একই কাজ করানো হচ্ছে। আর নামধারী কতিপয় মুসলিম শাসকেরা দুনিয়ার সাময়িক ক্ষমতা ও স্বার্থের লোভে ইহুদীদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তা করছে। যারা ইহুদীদের কথায় কাজ করেনা তাদেরকে তারা ক্ষমতায় থাকতে দিচ্ছে না। ইহুদীদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে যে যত পারদর্শী তাকে তারা বিভিন্ন ধরনের পুরস্কারে ভূষিত করে জনগণের মাঝে গ্রহণ যোগ্যতা বাড়ানোর কাজটি করে যাচ্ছে কৌশলে। কিন্তু তারা সাধারন জনগণকে ধোকা দিতে পারলেও ইসলামের সঠিক অনুসারীদেরকে বসে আনতে পারছে না। যার কারণেই এসকল তাওহীদি জনতা আজ তাদের লক্ষ্যে পরিণত হয়ে জেল-যুলুম ও নির্যাতনে অনেকেই শাহাদাত বরণ করছেন। এ সকল পৈশাচিক নির্যাতন থেকে মুসলিম নারী ও শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না। তাদের বেঁচে থাকার নূন্নতম অধিকার টুকু হরণ করছে মানুষরূপী এসকল হায়েনার দল। মনে রাখতে হবে যে, এ সকল পরিকল্পনা তারা রাসূল সা; এর যুগেই করে রেখেছে। এখন তারা সময় ও সুযোগ বুঝে বাস্তবায়নের ধারা অব্যাহত রেখেছে। পরিতাপের বিষয় হলো, ইহুদীরা তাদের পূর্বসূরীদের নীতি অনুসরণ করছে। আর রাসূল সা:প্রতিটি ষড়যন্ত্র ও যুদ্ধের মোকাবেলায় যে সকল পদক্ষেপসমূহ নিয়েছিলেন, আজকের মুসলমানরা সেই নীতিসমূহ অনুসরনে ব্যর্থ হচ্ছে। যার কারণেই মুসলিম বিশ্ব আজ মহা বিপদের সম্মুখীন। আর যতদিন না মুসলমানরা রাসূল সা: এর রেখে যাওয়া কুরআন-সুন্নাহর পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ করবে ততদিন না তাদের দুর্দিন লাঘব হবে)
মুসলমানদের জান-মাল রক্ষায় রাসূল সা: ছোট-খাট অভিযান প্রেরণ করলেন, কিন্তু তাতে ইহুদীদের শিক্ষা হলোনা। বরং উল্টো তারা মদীনা আক্রমণেরই ঘোষণা করলো। এ অবস্থায় পাল্টা আক্রমণ করা ছাড়া আর কোন বিকল্প ছিলনা। কাজেই রাসূল সা: খায়বার আক্রমণের প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন।
খায়বার আক্রমণ
সপ্তম হিজরীর মহররম মাস। খায়বারের ইহুদীদের সম্মিলিত ষড়যন্ত্র ও আক্রমণকে কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করার জন্য রাসূল সা: প্রস্তুত হলেন। দু‘শ অশ্ব ও উষ্ট্রারোহী বাকী সব পদাতিক বাহিনীর সমন্বয় ষোল শ‘ সৈন্য নিয়ে খায়বার অভিমুখে যাত্রা করলেন। সাথে বিশজনের মত নারী ও অংশ গ্রহণ করেন। যারা ছিলেন যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবীদের স্ত্রী। তারা যুদ্ধকালীন সময় অসুস্থ ও আহত সাহাবীদের সেবা সহ খাদ্য ও পানীয় সরবরাহের কাজে নিযুক্ত ছিলেন। খায়বারের ছটি দুর্গ এবং সেখানে বিশ হাজার ইহুদী সৈন্য মোতায়েন ছিল। মদীনা হতে খায়বারের দুরত্ব মতান্তরে প্রায় এক‘শ মাইলের মত হবে। রাসূল সা: এত ত্বরিত গতিতে সৈন্য পরিচালনা করলেন যে, ইহুদীরা এটা বুঝতেই পারেনি। হঠাৎ একদিন সকাল বেলা ইহুদীরা মাঠে কাজ করতে এসে দেখে তাদের সামনে মুসলিম সৈন্য উপস্থিত। ইহুদীরা হতভম্ব হয়ে পড়লো। গাতফান গোত্র ছিলো ইহুদীদের মিত্র। রাসূল সা:এর যুদ্ধ কৌশলে তারাও ভয়ে ইহুদীদের সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসলোনা। কোন উপায় না দেখে ইহুদীরা দুর্গে আশ্রয় নিলো। রাসূল সা: প্রথমে তাদের সাথে সন্ধির চেষ্টা করলেন। কিন্তু তারা সে প্রস্তাব প্রত্যাখান করল। এর পর রাসূল সা: ইহুদীদের দুর্গগুলো অবরোধ করলেন। অবরোধকালে কয়েকটি খন্ডযুদ্ধ সংঘটিত হলো। এসকল যুদ্ধে প্রথমেই নায়েন দুর্গ মুসলিমদের দখলে আসে। এখানে সাহাবী মাহমুদ বিন মাসলামা শহীদ হন। এরপর কামূস দুর্গ জয় করেন। এখানে কিছু সংখ্যক ইহুদী বন্ধি হয়। এক এক করে খায়বারের সব দুর্গগুলো মুসলমানদের হস্তগত হতে থাকে। সর্বশেষে ইহুদীদের শেষ আশ্রয় স্থল ওয়াতীহ ও সুলালিম দুর্গ দুটি দখলের পালা। দশদিনের মত অবরোধের পর আল্লাহ তা‘য়ালা মুসলমানদেরকে এ দুর্গ দু‘টি বিজয় দান করলেন। সর্বমোট প্রায় বিশ দিন অবরোধের পর ইহুদীদের সমস্ত দুর্গগুলো মুসলমানদের দখলে আসে। তখন ইহুদীরা নিরুপায় হয়ে রাসূল সা:এর নিকট আত্মসমর্পণ করে। এ সকল দুর্গ দখলে আলী রা:এর অসামান্য অবদান ছিল। এই যুদ্ধে তেরানব্বই জন ইহুদী নিহত এবং পনের থেকে ঊনিশ জনের মত মুসলমান শহীদ হন।
এমন বিশ্বাসঘাতক চরম শত্রুকে পরাজিত করেও রাসূল সা:তাদেরকে শাস্তি দেন নি। তাদেরকে সমূলে নির্মূলে ব্যবস্থাও নেন নি। অথবা জোর পূর্বক মুসলমান ও বানান নি। বরং তাদের সাথে নি¤œলিখিত শর্তপালনের মাধ্যমে শান্তি স্থাপনের জন্য হাত বাড়িয়ে দিলেন।
ক. ইহুদীরা পূর্বের ন্যায় সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে তাদের ধর্ম পালন করতে পারবে, কেউ বাধা দিবেনা। খ.মুসলমানদের মত শত্রুর মোকাবেলায় তাদেরকে বাধ্য করা হবে না। গ. তাদের বাড়ি-ঘরের মালিকানা তাদেরই থাকবে,তবে ভূমির মালিকানা ইসলামী সরকারের অধিনে থাকবে। ঘ.চাষাবাদ ইহুদীরাই করবে,তবে উৎপন্ন ফসলের অর্ধেক রাজস্ব হিসেবে মদীনায় পাঠাতে হবে। অন্য কোন কর তাদের দিতে হবে না।
কিন্তু এত কিছু করা সত্বেও তাদের চরিত্র বদলায়নি। বিশ্বাসঘাতকতা যাদের রক্তমাংসে জড়িয়ে আছে,তাদেরকে সুপথে আনবে কে? তাদেরকে এত সুযোগ সুবিধা দেয়ার পরেও তারা এর বিন্দুমাত্র সৌজন্যবোধ দেখায়নি। বরংএবার তারা স্বয়ং রাসূল সা:কেই হত্যা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করলো। (সেই যুগ থেকে আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে মানব সৃষ্ট যত বিপর্যয় ও অশান্তির সৃষ্টি হচ্ছে তার মূল ভূমিকায় রয়েছে ইহুদীরা। আর তাদের সাথে সহায়তা করে যাচ্ছে এক শ্রেণীর মুনাফিকরা। বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের রক্তপাত, মুসলিম দেশ দখল,মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ,গোত্রগত হিংসা-বিদ্বেষ উষ্কে দেয়া,রাজনৈতিক বিশৃংখলা ইত্যাদির কারণে বিশ্বে আজ অশান্তির আগুণ জ্বলছে। আর মিডিয়ার মাধ্যমে এসকল অপকর্মের যাবতীয় দোষ চাপানো হচ্ছে সঠিক পথের অনুসারী মুসলমানদের ওপরে। এই চরিত্রের মানুষের সাথে বিবেক সম্মত কোন মানুষ কি সম্পর্ক তৈরী করতে পারে? এ জন্যেই আল্লাহ সুবহানু অুা‘য়ালা মুসলমানদেরকে ইহুদীদেন সাথে যে কোন ধরনের অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন)।
বিষ প্রয়োগে রাসূল সা: কে হত্যার ষড়যন্ত্র
খায়বারের যুদ্ধ শেষে ইহুদীদের সাথে শর্তসাপেক্ষে শান্তি চুক্তি হলে জয়নব নামে এক ইহুদী মহিলা কতিপয় সাহাবী সহ রাসূল সা:কে দাওয়াত দিলেন। রাসূল সা: দাওয়াত গ্রহণ করলে ঐ মহিলা জানতে চান যে, রাসূল সা:ছাগলের কোন অংশ খেতে বেশী পছন্দ করেন। তাকে জানানো হলো যে, তিনি রানের গোশত বেশী পছন্দ করেন। তখন সে রানের দিকে বেশী করে বিষ মিশিয়ে দেয়। বিষ মিশ্রিত ভূণা ছাগলের এক টুকরা গোশত রাসুল সা:মুখে নিলেন কিন্তু গিললেন না। তিনি বুঝতে পারলেন এ ভূণা ছাগলে বিষ মিশানো হয়েছে। তাই তিনি সবাইকে এর গোশত খেতে নিষেধ করলেন। কিন্তু ততক্ষণে বিশর নামে এক সাহাবী এক টুকরা গোশত খেয়েছেন। তিনি শহীদ হলেন। পরবর্তীতে এ গোশত আর কেউ মুখে দেননি। মহিলাকে ডেকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করা হলো। তিনি নিজের দোষ স্বীকার করে বললেন, আমি ইচ্ছা করেই এ কাজ করেছি। কারণ, (হে মুহাম্মাদ সা:!) আপনার কারণেই আমাদের সর্বনাশ হয়েছে। যুদ্ধে আমার পিতা ও স্বামী নিহত হয়েছেন। কাজেই আমি এই উদ্দেশ্যে কাজ করেছি যে,আপনি যদি সত্যিই নবী হন তাহলে আপনার কোন ক্ষতি হবে না। আর যদি মিথ্যাবাদী হন তাহলে আপনার মৃত্যু হলে আমার মনের জ্বালা মিটবে, আর আমরা সবাই শান্তিতে বসবাস করতে পারবো। রাসূল সা: এ কথা শুনে তাকে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা করে দিলেন। কিন্তু রাষ্ট্রের একজন নাগরিককে ইচ্ছাকৃত হত্যা করা হয়েছে,তাতো আর তিনি ক্ষমা করতে পারেন না। (আধুনিক তথাকথিত গণতন্ত্র রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ডগণ বর্তমানে রাষ্ট্রের যে কোন নাগরিক হত্যার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা না করার ক্ষমতা তাদের হাতে রাখেন। এটা বিচারের নামে মানবতা বিবর্জিত এক জঘন্য অন্যায়। কারণ,এর ফলে তিনি যে কোন আসামীকে বিশেষ করে দলীয় ও সুপারিশের ভিত্তিতে ইচ্ছা হলেই যে কোন খুনীকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। যার ফলে ভুক্তভুগীর উত্তর সূরীরা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হন। এই ব্যবস্থায় রাষ্ট্রে একদিকে যেমন হত্যাকান্ড বৃদ্ধি পাবে তেমনিভাবে কিয়ামতের ময়দানে প্রতিটি ক্ষমা প্রাপ্ত খুনের জন্য আল্লাহর আদালতে তাদেরকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে)। ব্যক্তিগতভাবে অনেক কিছু করা যায়, কিন্তু একটা জাতির নেতা বা প্রতিনিধি হিসেবে যা খুশী তা করা যায় না। করলে দেশ ও জাতির শান্তি শৃংখলাই শুধু বিঘ্নিত হবে না,এর দায়ভার নিজের ওপর বর্তাবে। কাজেই তিনি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বিশর হত্যার দায়ে জয়নাবকে মৃত্যুদন্ড দিলেন। যাতে ভবিষ্যতে এমন কাজ আর কেউ না করে। খায়বার বিজয় সম্পন্ন করে রাসূল সা: কাফেলা সহ মদীনায় প্রত্যাবর্তন করেন। এরপর তিনি যুলকা‘দা মাসে উমরাতুল কাযা আদায়ের জন্য মক্কা অভিমুখে যাত্রা করেন। এতে সাহাবীদের মধ্যে এক আশ্চর্য রকমের আনন্দ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হলো। উমরা পালনকালে বায়তুল্লাহ তাওয়াফের দৃশ্য কুরাইশদের অন্তরে হিংসা-বিদ্বেষের চাপা আগুন আবার জ্বালিয়ে দিলো।