Main Menu

ইসলামে ইখলসের গুরুত্ব

index

ইসলামে ইখলাসের গুরুত্ব

ইখলাস মুসলিমজীবনের অপরিহার্য একটি বিষয়। ইখলাস ছাড়া কোনো মানুষ পূর্ণাঙ্গ ঈমানের অধিকারী হতে পারে না। ইখলাস ঈমানেরই সৌন্দর্য। ঈমানের মূল কাঠামো দাঁড়িয়ে আছে ইখলাসের ওপর। মুমিনের ইবাদতের বিশুদ্ধতায় ইখলাসের ভূমিকা অনন্য। শুধু তাই নয়, ইবাদত কবুলের জন্যও ইখলাস অপরিহার্য। রাসুলুল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ঈমান কী? জবাবে তিনি বলেছিলেন—‘ইখলাস’। ইখলাস মানে আন্তরিকতা ও একনিষ্ঠার সঙ্গে আল্লাহর সামনে নিজের সমগ্র অস্তিত্ব সমর্পণ করে দেয়া। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ ফরমান, যে ব্যক্তি ইখলাসের সঙ্গে আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস রেখে, আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক না করে, নামাজ কায়েম এবং জাকাত আদায় করতে থাকাবস্থায় দুনিয়া ছেড়ে যায়, সে আল্লাহর সন্তুষ্টি নিয়ে দুনিয়া থেকে চলে যায়।
পবিত্র কোরআনে প্রকৃত ঈমানের তাত্পর্য ও সারনির্যাস হিসেবে ইখলাসের ওপর অত্যধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে ‘আর তাদের এটা ছাড়া অন্য কোনো নির্দেশই দেয়া হয়নি যে, তারা আল্লাহর বন্দেগি করবে—নিজেদের দ্বীনকে তারই জন্য খালেস করে, সম্পূর্ণরূপে একনিষ্ঠ ও একমুখী হয়ে। আর নামাজ কায়েম করবে, জাকাত দেবে। মূলত এটিই অতীব সত্য, সঠিক ও সুদৃঢ় দ্বীন। (বাইয়্যিনাত : ৫)
ইখলাসই হচ্ছে মুমিনের জন্য ইসলাম, ঈমান, তাকওয়া ও কল্যাণের প্রবেশদ্বার। ত্রুটি-বিচ্যুতি, পদস্খলন, পথভ্রষ্টতা ও বিভ্রান্তি থেকে একমাত্র ইখলাসই মুমিনের রক্ষাকবচ। এ কারণেই আল্লাহ তায়ালা শুধু দ্বীনের সব ব্যাপারেই নয়,জীবনের প্রত্যেকটি কাজে, প্রতি মুহূর্তে ইখলাসের সঙ্গে আল্লাহ তায়ালাকে ডাকার নির্দেশ দিয়েছেন। ‘তিনিই চিরঞ্জীব, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তোমরা একমাত্র তাঁকেই ডাক, নিজেদের দ্বীনকে তাঁরই জন্য খালেস ও নিষ্ঠাপূর্ণ করে দিয়ে।(মুমিন : ৬৫)হজরত মাআজ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তুমি তোমার দ্বীনকে খাঁটি করে নাও, তাহলে অল্প আমলই তোমার জন্য যথেষ্ট হবে। মুমিন বান্দার ঈমান, ইবাদত এবং আল্লাহর দ্বীনের বিধি-বিধান পালনে স্থিরতা ও দৃঢ়তা অর্জিত হওয়া মহান আল্লাহ তায়ালার একত্ব এবং রুবুবিয়াত তথা সার্বভৌমত্বের ওপর তার পরিপূর্ণ আন্তরিক বিশ্বাসেরই ফল। আল্লাহর প্রতি ভয় ও বিনয়, আল্লাহর সন্তুষ্টি ও প্রতিদানের আকাঙ্ক্ষা, আল্লাহই একমাত্র মাবুদ, আল্লাহই হচ্ছেন সব দয়া-অনুগ্রহ, কল্যাণ ও নিয়ামতের মালিক—এই দৃঢ়বিশ্বাস ও হৃদয় অনুভূতির পথে বান্দাকে চালিত করার জন্য নিয়তে বিশুদ্ধতা ও ইখলাস একান্তই প্রয়োজন। মুমিন ঈমানকে খাঁটি করে নিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উত্সাহ-উদ্দীপনা এবং আশা-প্রত্যাশা সহকারে নিজের আমলের সত্যতা প্রমাণ করবে, সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে নিবেদিত হবে—এটাই প্রত্যাশিত। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মানুষের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছে যারা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নিজেদের জীবন-প্রাণ উত্সর্গ করে। বস্তুত আল্লাহ তায়ালা এসব বান্দার প্রতি অনুগ্রহশীল।’ (বাকারা)
মুমিন তার বিচারবুদ্ধি, হৃদয় ও আবেগ-অনুভূতি দিয়ে বুঝতে পারে যে, আল্লাহ তায়ালাই হচ্ছেন সব কল্যাণ, দয়া-অনুগ্রহ ও নিয়ামতের দাতা। এই অনুভূতি তাকে ঈমান ও আমলের ইখলাস তথা একনিষ্ঠা ও একাগ্রতার পথে চালিত করে। আল্লাহ তায়ালা বলেন ‘(হে নবী!) বলুন, প্রশংসা আল্লাহর জন্য, সালাম তাঁর সেসব বান্দার প্রতি যাদের এই লোকেরা তার শরিক বানিয়েছে। তিনি কে, যিনি আসমান-জমিন সৃষ্টি করেছেন, তোমাদের জন্য আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন, পরে এর সাহায্যে শ্যামল শোভামণ্ডিত বাগ-বাগিচা রচনা করেছেন, যার গাছপালাগুলো উদ্ভূত করা তোমাদের সাধ্য ছিল না। আল্লাহর সঙ্গে অপর কোনো ইলাহ আছে কি? (নামল : ৫৯-৬০)
আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের এসব সুস্পষ্ট ঘোষণার পর এটা অস্বাভাবিক নয় যে, কল্যাণের দ্বারপথে ঈমান ও ইবাদতে ইখলাস ওএকাগ্রতাই হবে ঈমানদারের মূল পাথেয়। সব অকল্যাণ ও বিপর্যয় থেকে রক্ষাকবচ এবং নিরাপত্তা ব্যূহ হিসেবে ইখলাস ঈমানদারকে হিফাজত করবে। এজন্য অভিশপ্ত ইবলিস নিজেই ঘোষণা করেছে যে, আল্লাহর মুখলিস বান্দাদের ওপর তার কোনো কর্তৃত্ব ও ইখতিয়ার চলে না। ইরশাদ হয়েছে,‘সে (ইবলিস) বলল, তোমার ইজ্জতের কসম, আমি এসব লোকদেরই বিভ্রান্ত করব। তবে তোমার সেসব বান্দা ছাড়া যাদের তুমি খাঁটি করে নিয়েছ।’ (ছোয়াদ : ৮২-৮৩)
নিষ্ঠার সঙ্গে আল্লাহর ইবাদত করা, সত্ গুণাবলীর নিয়মিত চর্চা এবং অন্তরকে মিশ্রিত দোষত্রুটি থেকে মুক্ত করার মাধ্যমে ইখলাস তৈরি করা সম্ভব। নিজের বলতে কিছুই নেই—এই বদ্ধমূল মানসিকতার পাশাপাশি আল্লাহর প্রতি যে যতটুকু বিশ্বাস রাখে, তার মধ্যে ততটুকু ইখলাস সৃষ্টি হয়। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা এবং পরকালীন জীবনের জ্ঞান ও ভয় যার যত বেশি এবং যে যত বেশি পরকালীন জীবনের হিসাব-নিকাশের ব্যাপারে চিন্তা মনে স্থান দেবে, তার মধ্যে তত বেশি ইখলাস সৃষ্টি হবে। সমাপ্ত

Related Post