একত্ববাদে বিশ্বাস ঈমানের শর্ত

images[1]

মুসলমান হওয়ার অর্থ হলো আত্মসমর্পণ করা, সব কথা-কাজ, চিন্তা -চেতনায় আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্হাস্হাপন করা। এমন কোনো কিছু করা যাবে না, যাতে আল্লাহ তথা ইসলামের সমর্থন নেই। মুসলিমরা আল্লাহ ব্যতীত কারো ওপর কোনো প্রকার মনোবাঞ্ছা পূরণের কামনা করতে পারে না। আল্লাহর ক্ষমতাকে ভাগ করে অন্য কাউকে তদস্হানে   সমাসীন করতে পারে না। এসব করা হলে শিরক করা হবে, ঈমান ধ্বংস হয়ে যাবে এবং নেক আমল নষ্ট হয়ে যাবে ও নিজেকে জাহান্নামে প্রবিষ্ট করানোর উপযোগী করা হবে।
পবিত্র কুরআনে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘আর তাঁকে ছেড়ে এমন কাউকে ডেকো না, যে তোমার উপকার করতে না পারে, আর না কোনো ক্ষতি করতে পারে। আর যদি তা কর, তবে অবশ্যই তুমি জালেমদের (মুশরিকদের) অন-র্ভুক্ত হয়ে যাবে’ (সূরা ইউনুস-১০৬)। পবিত্র কুরআনের অন্যত্র আছে, ‘আহলে কিতাব ও মুশরিকদের মধ্যে যারা কুফরি করেছে, তারা নিঃসন্দেহ জাহান্নামের আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে এবং চিরকাল তাতে থাকবে। এ লোকেরা নিকৃষ্টতম সৃষ্টি’ (সূরা আল-বাইয়্যেনা-৬)।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত করে সৃষ্টি করেছেন। মানুষকে দিয়েছেন সব কিছু বোঝার ও জ্ঞান লাভ করার শক্তি। মুসলমানদের জন্য অবশ্য কর্তব্য জ্ঞান অর্জন করা, দ্বীন সম্পর্কে বোধগম্যতা বৃদ্ধি করা। আল্লাহর আনুগত্য লাভ ও নৈকট্য হাসিলের জন্য করণীয় সম্পর্কে অনুধাবন করা। কেবল নামকাওয়াসে- মুসলমান হয়ে মুসলমানিত্ব বজায় রাখার জন্য কিছু না করে, তাগুতের পথে থেকে সফলতা অর্জনের জন্য কর্ম করার মধ্যে কোনো কৃতিত্ব নেই। হয়তো বা অনেক কিছু করে কেউ নিজেকে উচ্চ স্হানে’অধিষ্ঠিত করতে পারে, কিন্তু’ সে কর্মের মধ্যে যদি স্রষ্টার দাসত্ব ও আনুগত্য স্বীকারের লেশ না থাকে, ইসলামী অনুশাসনের গণ্ডি লঙ্ঘিত হয়ে থাকে, তবে সে কৃতিত্ব ইসলামের জন্য নয় বরং শয়তানের সন’ষ্টির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। তখন মানুষকে শ্রেষ্ঠত্বদানের মর্যাদা রক্ষিত হবে না, বরং মূর্খতার পরিচয় বহন করবে। পবিত্র কুরআনে আছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট পশু হচ্ছে সেই সব বধির ও বোবা লোক, যারা জ্ঞান বুদ্ধিকে কাজে লাগায় না’ (সূরা আনফাল-২২)।
আল্লাহ মানুষকে বিবেকশক্তি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। বিবেক ও জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ইসলামের পথে পরিচালিত করতে হবে। এ জন্য শয়তানের অনুসরণ না করতে বারবার সতর্ক করা হয়েছে। ইসলাম থেকে পদস্খলিত হলে তার পরিণাম সম্পর্কে বর্ণনা দেয়া হয়েছে। নবী-রাসূলগণ মানুষের কাছে সে দাওয়াত নিয়ে এসেছেন। সত্য-সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছেন। সে পথ থেকে বিচ্যুত হলে গোমরাহির পথে ধাবিত হতে হবে। আর গোমরাহি হলো জাহান্নামের ঠিকানা। বিপথগামীদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হয়ে থাকে। আল্লাহর অভিশাপপ্রাপ্তরা কখনোই মুসলমান থাকতে এবং উৎকৃষ্ট হতে পারে না। সৃষ্টির সেরা জাত হিসেবে আল্লাহর রহমত নিয়ে উৎকৃষ্ট জীবনযাপনের জন্য মুসলমানের প্রচেষ্টা ও প্রত্যাশা থাকা উচিত। আর তার জন্য মূর্খতা ও অন্ধত্ব থেকে মুক্ত হয়ে দ্বীনের জ্ঞান খুঁজতে হবে। স্রষ্টার সন’ষ্টির পথের সন্ধান করতে হবে। দ্বীন সম্পর্কে মূর্খ ও অন্ধ হয়ে যারা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলে, তাদের সম্পর্কে আল্লাহর হুঁশিয়ার বাণী-‘ওরা সেই সব লোক, যাদের প্রতি আল্লাহ অভিশাপ করেছেন। তাদের বধির করেছেন, অন্ধ করেছেন’ (সূরা মুহাম্মাদ-২৩)।
বিবেক থাকা সত্ত্বেও বিবেকহীন হয়ে চলার পরিণতি ভালো হয় না। জানাশোনার পরও অজ্ঞানতার পথ অনুসরণ করার পরিণতি ভয়াবহ হয়ে থাকে। জ্ঞানদৃষ্টিসম্পন্ন হয়েও অন্ধত্বকে আলিঙ্গনের পরিণাম লোমহর্ষক হয়ে থাকে। আর গর্হিত এই পথের পথিক মানুষ দ্বীনের কথায় তাচ্ছিল্যতা ভাব প্রকাশ করে, মহাপ্রভুর আনুগত্য করা ও তাঁর সর্বময় ক্ষমতার কথায় দাম্ভিকতা প্রকাশ করে, অন্যায় ও অপকর্ম করতে করতে ন্যায় ও সততা সম্পর্কে তাদের অনুভূতি বিনষ্ট হয়ে যায়। শয়তানের কাছে তারা ‘কলুর বলদে’র মতো অনুগত হয়ে যায়। কল্যাণকর কিছুই তারা বুঝতে চায় না। তথাকথিত বুদ্ধিজীবী-জ্ঞানপাপী আহমদ শরীফ, তসলিমা নাসরিন, শামসুর রাহমান এবং তাদের মতো আরো বহু মুসলমান নামধারী আল্লাহদ্রোহীর মতো তাদের অন্তর মুরদা হয়ে যায়। ইসলামের কথা তাদের কর্ণে প্রবিষ্ট হয় না, চোখ কল্যাণকর কিছু দেখতে চায় না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ জাতীয় লোকদের সম্পর্কে বলেন-
‘আপনি কি বধিরকে শোনাতে পারেন? আপনি কি অন্ধকে পথ দেখাতে পারেন? আর যে স্পষ্ট ভ্রান- পথে রয়েছে অথবা জেনেশুনে ভ্রান- পথে রয়েছে, তাকে কি পথ দেখাতে পারেন?’ (সূরা জুখরুফ- ৪০)।
আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল সা:-এর ওপর বিশ্বাস অটুট রেখে কথা-কাজ ও চালচলন ঠিক রেখে আমাদের দৈনন্দিন জীবন পরিচালনা করতে হবে। দুনিয়ার কাজ আর আখিরাতের বা ধর্মীয় কাজ পৃথক করে নয়, বরং ধর্মীয় বিধিবিধান মতে সব কাজ করতে হবে। ইসলামী জীবনবিধানই মুসলমানদের জীবনবিধান। সব ক্ষেত্রে আল কুরআন ও সহিহ হাদিসের ফায়সালাকে মাথায় রাখতে হবে। তাওহিদে বা একত্ববাদে অটুট ও অকৃত্রিম বিশ্বাস রাখতে হবে। সব ক্ষেত্রে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা ও দ্বীনি ফায়সালা মেনে নিতে হবে। এই আকিদা ও বিশ্বাস না থাকলে মুশরিক হয়ে মরতে হবে। এ সম্পর্কে আল্লাহর বাণী, ‘যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না, এক আল্লাহর কথা বলা হলে তাদের অন্তর সঙ্কুচিত হয়ে যায়। আর আল্লাহ ছাড়া অন্য উপাস্যগুলোর কথা বলা হলে তখনই তারা আনন্দে উৎফুল্ল হয়’ (সূরা জুমার-৪৫)।
মানুষ সৃষ্টির সাথে সাথে আল্লাহ মানুষকে হেদায়েত দানের জন্য নবী-রাসূল সা: প্রেরণ করেন। মানুষকে কোনটি ভালো আর কোনটি মন্দ তার সুবিসতৃত বর্ণনা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নাফরমানদেরকে শাস্হির- মুখে ফেলে এবং আল্লাহর প্রেরিত নবী-রাসূলদের বিরুদ্ধাচারীদের উপযুক্ত গজবে মানুষকে উপলব্ধি করার জন্য দৃষ্টান- দেখানো হয়েছে। এরপরও মানুষ যখন সত্য কথা ও কর্ম শুনেও শোনে না এবং বুঝেও বোঝে না, তারা পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট হয়ে থাকে। পশুর যেমন বিবেক-বুদ্ধি নেই, নেই কর্মের স্বাধীনতা। তারা সুযোগ পেলে ‘হয় কাজ নয়’ করে থাকে। তেমনি এ জাতীয় মানুষও জ্ঞান-বুদ্ধি ও স্বাধীনতার অধিকারী হয়েও দ্বীনকে অমান্য করে আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস না রেখে নিকৃষ্ট হয়ে পড়ে। ইসলামী আকিদা থেকে বিমুক্ত হয়ে প্রবৃত্তির দাসে পরিণত হয়। তখন সালাত, সিয়াম, হজ, জাকাত আদায় এবং দৈনন্দিন কর্ম সম্পাদনে আল্লাহর ওপর তায়াক্কুল থাকে না। ধর্মানুভূতি লোপ পায়। ধর্মীয় অনুশাসন মান্য করে পৃথিবীতে সব কিছু করা সম্ভব এমন চিন্তা মাথায় কাজ করে না। একপর্যায়ে তারা ধর্মের বিরুদ্ধাচার করে অন্য কিছু পাওয়ার বাসনায় মত্ত হয়ে ওঠে।এদের থেকে যোজন যোজন দূরে অবস্হান নিয়ে আমাদেরকে ঈমান রক্ষা করতে হবে। আল্লাহর বাণী ‘এরাই নিকৃষ্টতম সৃষ্টি’ এহেন নিকৃষ্টরা সমাজের নানা পর্যায়ে অবস্হান করে থাকে। এদের থেকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। নিকৃষ্টদের স্পর্শে বা সাহচর্যে মানুষের উৎকৃষ্টতা বিনষ্ট হয়ে থাকে। আমরা অনেকে নিকৃষ্ট ও বেঈমানদের লেখা বই ও পত্রপত্রিকা পড়ার জন্য কিনে থাকি। সরকার যখন নাস্তিক- তসলিমার বই নিষিদ্ধ করেছিল, তখন অনেকে সে বই পড়তে হন্যে হয়ে খুঁজেছে, অনেক ব্যবসায়ী বেশি মূল্যে গোপনে বিক্রি করে ব্যবসায় ফলিয়েছে। এগুলো ঠিক নয়। বই কিনে তসলিমার হাত অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করা হয়েছে। এটাও পাপের শামিল। আমাদের অন্যায় করা থেকে এবং অন্যায়কে সমর্থন ও সহযোগিতা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। ‘যারা ঈমান এনেছে ও নেক আমল করেছে, তারা নিঃসন্দেহে অতীব উত্তম সৃষ্টি’ (সূরা আল্ বাইয়্যেনা-৭)। যদি উত্তম সৃষ্টির অধিকারী হতে চাই, তবে আমাদের আমলকে অন্যায়মুক্ত ও অন্যায়ের সহযোগিতামুক্ত করতে হবে। দুষ্ট প্রবৃত্তি থেকে আত্মাকে রক্ষা করতে হবে। সর্বাবস্হায় আল্লাহর একত্ববাদের ওপর দৃঢ় থাকতে হবে।(সমাপ্ত)

Related Post