কৃতজ্ঞতার সহজ বাংলা হলো শুকরিয়া প্রকাশ করা। আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি তুষ্ট হওয়া। তুষ্টি প্রকাশ করা মানুষের মানবীয় গুণগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উত্তম গুণ। আর যে বা যারা অল্পে নিজের প্রতি তুষ্ট থাকেন জগতে তারাই সবচেয়ে সুখী। মুমিন বান্দারা সব সময় অল্পে তুষ্ট থাকেন। মুনাফেক সব সময় নাই নাই খাই খাই পাই নাই করে। মুমিন বান্দারা সুখে-দুঃখে বিপদ-আপদে আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন। তারা বিপদ-আপদকে আল্লাহর পক্ষ থেকে নেয়ামত হিসেবে বিবেচনা করেন। কারণ সৃষ্টিজগতের প্রতি আল্লাহর চেয়ে দয়াবান আর দ্বিতীয় কেউ নেই। সন্তানের প্রতি যেমন মায়ের ভালোবাসার তুলনা নেই। তদ্রুপ বান্দার প্রতি আল্লাহর দয়া পরিমাপ করার মতো কোনো যন্ত্র নেই। মানুষ সৃষ্টির আগে আল্লাহ সুবহানুতায়ালা তাঁর বান্দার জন্য রিজিক বরাদ্দ করে রেখেছেন। সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় রাখার জন্য প্রত্যেক নবীর উম্মতকে একটি জীবন বিধান দিয়েছেন। চন্দ্র-সূর্য-আকাশ-বাতাস পানি নদ-নদী প্রভৃতির নেয়ামতের জন্য আমরা কেউ আল্লাহর কাছে দরখাস্ত করিনি। আল্লাহ আপন মহিমায় তাঁর বান্দাদের এসব দান করেছেন। আল্লাহ সুবহানুতায়ালা দুনিয়ার জমিনে তাঁর বান্দাদের অনেক নেয়ামত দিয়েছেন। এবং আল্লাহ তাঁর নেক বান্দাদের পরকালে অনেক নেয়ামত দান করবেন। মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। মানুষ দুনিয়ার জমিনে আল্লাহর প্রতিনিধি। দুনিয়ার জমিনে মানুষকে আল্লাহ তাঁর ইবাদতের জন্য পাঠিয়েছেন। যেন তাঁর বান্দা আখিরাতে সুখে শান্তিতে কাটাতে পারে। দুনিয়ার জমিন হলো আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া প্রকাশের উত্তম স্থান।
বান্দা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে আল্লাহ খুশি হন। বান্দার প্রতি আল্লাহর নেয়ামত বহু গুণ বেড়ে যায়। বাস্তব চিত্র হলো- আল্লাহ যত নেয়ামতই দেননা কেন। আমরা আরো চাই। আমাদের চাওয়া-পাওয়ার শেষ নেই। আমাদের মধ্যে শুকরিয়া নেই। কুরআন পাকে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, ‘অধিক (সম্পদ) লাভের প্রতিযোগিতা তোমাদের গাফেল করে রেখেছে। যে পর্যন্ত না তোমরা কবরের কাছে গিয়ে উপস্থিত হবে।’ (সূরা তাকাসুর : ১-২)। দুনিয়ার অর্থবিত্ত লোভ মানুষকে মোহগ্রস্ত করে রেখেছে। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা সম্পর্কে পবিত্র কালামুল্লাহ শরিফে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আমার নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় কর, অকৃতজ্ঞ হয়ো না।’ (সূরা বাকারা : ১৫)। ‘অতএব, আল্লাহরই ইবাদত কর ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হও।’ (সূরা যুমার : ৬৬)। ‘(হে বান্দা) যদি তোমরা আমার শোকরগোজারি হও, তবে আমি তোমাদের জন্য আমার নেয়ামতকে আরো বাড়িয়ে দেবো। আর যদি তোমরা আমার নেয়ামত অস্বীকার কর (অর্থাৎ অকৃতজ্ঞ হও) তবে নিশ্চয় জেনে রেখো আমার আজাব বড় কঠিন।’ (সূরা ইব্রাহিম : ৭)।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা সম্পর্কে আবু দাউদ শরিফে হজরত ইবনে ওমর (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে হজরত রাসূল সা: বলেছেন, ‘আল্লাহর শোকর যিনি আমার প্রয়োজন মিটিয়ে দিলেন, আমাকে রাত্রে আশ্রয় দিলেন, আমাকে পানাহার করালেন, যিনি আমার প্রতি অনুগ্রহ করলেন এবং বিশেষ অনুগ্রহ করলেন, অধিক পরিমাণে দান করলেন, সুতরাং সেই আল্লাহর শোকর সর্বাবস্থায়।’ কুরআন ও হাদিস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে মানুষের বিনয় প্রকাশ পায়। কৃতজ্ঞত বোধ শোকরগোজারি মানুষের মনের প্রশান্তি বাড়িয়ে দেয়। কৃতজ্ঞতা বোধ মানুষকে তার অতীত জীবন স্মরণ করিয়ে দেয়। এই গুণে মানুষের পারস্পরিক, পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় হয়। বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা যায়, কেউ একটি উপকার আমার করল তা স্মরণ রাখি না। আমরা সহজে অতীত ভুলে যাই। মাঝে মধ্যে এমন আচরণ প্রদর্শন করি যেন উপকারী ব্যক্তির সাথে কোনো পরিচয় সম্পর্ক নেই। অথচ আল্লাহ কুরআনে স্পষ্টভাবে তাঁর বান্দাদের জানিয়ে দিয়েছেন যে, অকৃতজ্ঞ বান্দার প্রতি তিনি নেয়ামত কমিয়ে দেন। অকৃতজ্ঞ বান্দাদের তিনি পছন্দ করেন না। আর আল্লাহ যদি তাঁর বান্দার প্রতি অসন্তুষ্ট হন। তাহলে হাশরের ময়দানে বান্দার পার হওয়ার কোনো উপায় থাকবে না। আর আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সতর্ক করে দিয়েছেন যে, অকৃতজ্ঞ বান্দাদের তিনি কঠিন শাস্তি দেবেন। আমরা যদি আখিরাতে নাজাত পেতে চাই এবং আরো বেশি নেয়ামত চাই তাহলে আল্লাহ সুবহানুতায়ালা অসন্তুষ্ট হন কিংবা হবেন। এ জাতীয় কাজকর্ম থেকে আমাদের সবাইকে দূরে থাকতে হবে।