اَلْحَمْدُ للهِ الَّذِيْ جَعَلَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ مِنْ أَشْرَفِ الْأَيَّامِ * وَجَعَلَهُ عِيْدَ الْأُسْبُوْعِ لِأَهْلِ الْإِسْلَامِ * وَأَمَرَنَا فِيْهِ بِذِكْرِ ذِيْ الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ * وَكَثْرَةِ الصَّلَاةِ وَالسَّلَامِ عَلَى سَيِّدِ الْأَنَامِ* وَ بَدْرِ التَّمَامِ وَأَشْرَفِ نَاطِقٍ بِأَصْدَقِ الْكَلَامِ * كَلَامِ اللهِ الْعَزِيْزِ الْعَلَّامِ * نَحْمَدُكَ اللهم عَلَى نِعْمَةِ الْإِسْلَامِ وَهِيَ النَّعْمَةُ الْكُبْرَى * وَنَشْهَدُ أَنْ لَّآ إلهَ إِلَّا أَنْتَ رَبُّ الشِّعْرَى، وَلَكَ الْأَمْرُ فِيْ الْأُوْلَى وَالْأُخْرَى * وَنَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُكَ وَرَسُوْلُكَ * الَّذِيْ قُلْتَ لَهُ: فَذَكِّرْ إِنْ نَّفَعَتِ الذِّكْرَى * اللهم صَلِّ وَسَلِّمْ عَلَى عَبْدِكَ وَرَسُوْلِكَ مُحَمَّدٍ * وَعَلَى آلِهِ الطَّاِهِرِيْنَ * وَجَمِيْعِ الصَّحَابَةِ وَالتَّابِعِيْنَ * وَالْمُتَمَسِّكِيْنَ بِشَرَائِعِ الْإِسْلَامِ وَالْقَائِمِيْنَ بِشَعَائِرِ الدِّيْنِ*
أَمَّا بَعْدُ : فَأُوْصِيْكُمْ عِبَادَ اللهِ وَنَفْسِيْ بِتَقْوَى اللهِ تَعَالَى كما قال سبحانه: يَا أَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا اتَّقُوا اللهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ” وقال جَلَّ شَاْنُهُ ” يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ * وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا* وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالاً كَثِيرًا وَنِسَاءً * وَاتَّقُوا اللهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالأرْحَامَ* إِنَّ اللهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا و قال جل و علا” يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَقُولُوا قَوْلاً سَدِيدًا* يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ * وَمَنْ يُطِعِ اللهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيمًا *
সম্মানিত মুসাল্লিয়ানে কেরাম! আল্লাহ রাব্বুল আলামীন,মুসলমানদের জন্য তিনটি দিনকে ঈদ হিসেবে উপহার দিয়েছেন, দুটি ঈদ বছর পর ঘুরে আসে,ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। আর একটি ঈদ প্রতি সাপ্তায় বার বার আসে। আর সেটি হলো জুমু‘আর দিন। এই বিষয়ে রাসূল (সা.) বলেছেন:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ يَقُولُ : إِنَّ يَوْمَ الْجُمُعَةِ يَوْمُ عِيدٍ ، فَلاَ تَجْعَلُوا يَوْمَ عِيدِكُمْ يَوْمَ صِيَامِكُمْ ، إِلاَّ أَنْ تَصُومُوا قَبْلَهُ أَوْ بَعْدَهُ أخرجه أحمد 2/303(8012(.
হযরত আবু হুরায়রা হতে বর্ণিত;তিনি বলেন আমি রাসূল (সা.)কে বলতে শুনেছি;নিশ্চয়ই জুমু‘আর দিন হলো ঈদের দিন। সুতরাং তোমরা ঈদের দিন রোযা রেখ না।তবে পূর্বে অথবা পরের সঙ্গে মিলিয়ে রোযা রাখা যাবে। (আহমদ )
জুমু‘আর নাম করণ:
হাফেজ ইবনে কাসীর (রাহ.)বলেন: জুমু‘আহ শব্দটি জাম‘ শব্দ হতে নির্গত তাই জুমু‘আহ বলা হয় ঐ দিনকে, সাপ্তায় যেদিন মুসলিম সম্প্রদায় ব্যাপকভাবে সমবেত হয়ে থাকে।আর আল্লাহ রাব্বুল আলামীনও একত্রিত হয়ে এই দিন ইবাদত করতে বলেছেন। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন।
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ﴾ الجمعة : 9
হে ঐ সব লোক! যারা ঈমান এনেছো, জুমু‘আর দিন যখন নামাযের জন্য তোমাদের ডাকা হয় তখন আল্লাহর যিকরের দিকে ধাবিত হও এবং বেচাকেনা ছেড়ে দাও৷ এটাই তোমাদের জন্য বেশী ভাল যদি তোমাদের জ্ঞান থাকে৷(সূরা জুমু‘আ: ৯)
জুমু‘আ মুসলমানদের জন্যই নির্দিষ্ট করা হয়েছে:
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ وَحُذَيْفَةَ رضي الله عنهما قَالَا : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : أَضَلَّ اللهُ عَنِ الْجُمُعَةِ مَنْ كَانَ قَبْلَنَا ، فَكَانَ لِلْيَهُودِ يَوْمُ السَّبْتِ ، وَكَانَ لِلنَّصَارَى يَوْمُ الأَحَدِ ، فَجَاءَ اللهُ بِنَا فَهَدَانَا اللهُ لِيَوْمِ الْجُمُعَةِ ، فَجَعَلَ الْجُمُعَةَ وَالسَّبْتَ وَالأَحَدَ ، وَكَذَلِكَ هُمْ تَبَعٌ لَنَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ ، نَحْنُ الآخِرُونَ مِنْ أَهْلِ الدُّنْيَا ، وَالأَوَّلُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ، الْمَقْضِيُّ لَهُمْ قَبْلَ الْخَلائِقِ ) . رواه مسلم (856(
জুমু‘আর দিন মুহাম্মদ (সাঃ) এর উম্মত এর জন্য একটি মহান দিন। এ জুমু‘আর দিনটিকে সম্মান করার জন্য ইহুদী-নাসারাদের উপর ফরজ করা হয়েছিল;কিন্তু তারা মতবিরোধ করে এই দিনটিকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। অতঃপর ইহুদীরা শনিবারকে আর খ্রিস্টানরা রবিবারকে তাদের ইবাদতের দিন বানিয়েছিল। অবশেষে আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মদ (সাঃ) এর উম্মতের জন্য শুক্রবারকে মহান দিবস ও ফযীলতের দিন হিসেবে দান করেছেন। আর উম্মতে মুহাম্মদী তা গ্রহণ করে নিল। আর দিবস হিসেবে প্রথমে জুমু‘আ, তারপর শনিবার, অতঃপর রবিবার। তেমনিভাবে তারা কিয়ামতের দিন আমার পেছনে থাকবে। আমরা পৃথিবীতে আগমনের দিক থেকে পরে কিন্তু কিয়ামতের দিন আমরা প্রথমে থাকবো অর্থাৎ সকল প্রকার মাখলুকাতের পূর্বে জান্নাতে যাবো। [বুখারী ৮৭৬; মুসলিমঃ ৮৫৫]
জুমু‘আর দিনের ফযীলত
১) জুমা‘আর দিন উত্তম দিন:
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ ] أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ: خَيْرُ يَوْمٍ طَلَعَتْ عَلَيْهِ الشَّمْسُ يَوْمُ الْجُمُعَةِ فِيهِ خُلِقَ آدَمُ وَفِيهِ أُدْخِلَ الْجَنَّةَ وَفِيهِ أُخْرِجَ مِنْهاَ )مسلم)
অর্থ: সূর্য উদিত হয় এমন দিবসের মধ্যে উত্তম দিবস হলো জুমু‘আর দিন। এদিন হযরত আদম (আ.)কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এবং এ দিনই জান্নাতে প্রবেশ করা হয়েছে, এবং এদিনই সেখান থেকে বের করা হয়েছে। (মুসলিম)
২) জুমা‘আর দিনে কোন এক সময় দোয়া কবুল হয়:
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ ] قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ فِي الْجُمُعَةِ سَاعَةٌ لَا يُوَافِقُهَا عَبْدٌ مُسْلِمٌ قَائِمٌ يُصَلِّي فَسَأَلَ اللهَ خَيْرًا إِلَّا أَعْطَاهُ- البخاري
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত: রাসূল (সা.) বলেছেন: জুমু‘আর দিনে একটি সময় রয়েছে, বান্দা যে দোয়াই করুক তা আল্লাহ কবুল করেন। কোন সময়ে দোয়া কবুল হয়,এই বিষয়ে মুমিন বান্দারা একমত হতে পারেন নি। কিন্তু ঐসময় নামায পড়লে আর আল্লাহর নিকট কিছু চাইলে আল্লাহ অবশ্যই তাকে দেন। (বুখারী)
জ্ঞাতব্য: ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন: এই মতভেদের পর আমার নিকট দুটি সময় খুবই শক্তিশালী মনে হয়, ১) ইমাম সাহেবের খুৎবা দেওয়া আরম্ভ হতে নামায শেষ করা পর্যন্ত। আর ২) আসরের নামাযের পর।
৩) জুমা‘আর দিন দান করা উত্তম
أَنَّ الصَّدَقَةَ فِيْهِ خَيْرٌ مِنَ الصَّدَقَةِ فِيْ غَيْرِهِ مِنَ الْأَيَّامِ. قَالَ ابْنُ الْقَيِّمُ: (وَالصَّدَقَةُ فِيْهِ بِالنِّسْبَةِ إِلَى سَائِرِ أَيَّامِ الْأُسْبُوْعِ كَالصَّدَقَةِ فِيْ شَهْرِ رَمَضَانَ بِالنِّسْبَةِ إِلَى سَائِرِ الشُّهُوْرِ )
وفي حديث كعب: (وَالصَّدَقَةُ فِيْهِ أَعْظَمُ مِنَ الصَّدَقَةُ فِيْ سَائِرِ الْأَيَّامِ)
জুমু‘আর দিন দান করা অন্যান্য দিন দান করা অপেক্ষা উত্তম। যেভাবে রমযান মাসে দান করা অন্যান্য মাসের দানের অপেক্ষা উত্তম। কা‘ব (রা.) সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, জুমু‘আর দিন দান করা অন্যান্য দিন দান করা অপেক্ষা উত্তম।
৪) জুমা‘আর দিন জান্নাতকে সাজানো হয়
أنه يوم يتجلى الله عز وجل فيه لأوليائه المؤمنين في الجنة، فَعَنْ أَنَسٍ بْنِ مَالِكٍ ] في قوله عز وجل: وَلَدَيْنَا مَزِيْدٌ
হযরত আনাস বিন মালিক (রা.) সূত্রে বর্ণিত: সূরা ক্বাফ এর ৩৫ নম্বর আয়াতে বলেছেন, وَلَدَيْنَا مَزِيدٌ আমাদের নিকট আরো বেশি রয়েছে: এর অর্থ হলো: জান্নাতকে প্রতি শুক্রবার সাজানো হয়।
৫) জুমা‘আর দিন সাপ্তাহিক ঈদের দিন
أنه يوم عيد متكرر كل أسبوع، فَعَنْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : إِنَّ هَذَا يَوْمُ عِيدٍ جَعَلَهُ اللهُ لِلْمُسْلِمِينَ ، فَمَنْ جَاءَ إِلَى الْجُمُعَةِ فَلْيَغْتَسِلْ ، وَإِنْ كَانَ طِيبٌ فَلْيَمَسَّ مِنْهُ ، وَعَلَيْكُمْ بِالسِّوَاكِ) رواه ابن ماجه (1098) وحسَّنه الألباني في “صحيح ابن ماجه“
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত: রাসূল (সা.) বলেছেন: নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা মুসলিমদের জন্য জুমু‘আর দিনকে ঈদের দিন হিসেবে নির্বাচিত করেছেন। সুতরাং জুমু‘আয় শরীক হওয়ার পূর্বে গোসল করে নিবে। আর সুগন্ধি থাকলে, ব্যবহার করবে। আর অবশ্যই মেসওয়াক করবে। (ইবনে মাজাহ: ১০৯৮)
৬) জুমা‘আর দিন গুনাহ মাফের দিন
أنه يوم تكفر فيه السيئات عَنْ سَلْمَانَ الْفَارِسِيِّ رضي الله عنه قَالَ : قَالَ النَّبِيُّ ﷺ : لَا يَغْتَسِلُ رَجُلٌ يَوْمَ الْجُمُعَةِ ، وَيَتَطَهَّرُ مَا اسْتَطَاعَ مِنْ طُهْرٍ ، وَيَدَّهِنُ مِنْ دُهْنِهِ ، أَوْ يَمَسُّ مِنْ طِيبِ بَيْتِهِ ، ثُمَّ يَخْرُجُ ، فَلا يُفَرِّقُ بَيْنَ اثْنَيْنِ ، ثُمَّ يُصَلِّي مَا كُتِبَ لَهُ ، ثُمَّ يَنْصِتُ إِذَا تَكَلَّمَ الإِمَامُ ، إِلا غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ ، وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ الأُخْرَى (البخاري)
হযরত সালমান ফারসী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন গোসল করে এবং যথাসাধ্য ভালরূপে পবিত্রতা অর্জন করে ও নিজের তেল থেকে ব্যবহার করে বা নিজ ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে এরপর বের হয় এবং দু’জন লোকের মাঝে ফাঁক না করে,(ঘাড় টপকিয়ে সামনের কাতারে যায়নি) তারপর তার নির্ধারিত সালাত আদায় করে এবং ইমামের খুতবা দেওয়ার সময় চুপ থাকে, তা হলে তার সে জুমু‘আহ থেকে আরেক জুমু‘আহ পর্যন্ত সময়ের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (বুখারী)
৭) জুমা‘আর নামায হেঁটে আদায় করলে প্রতি কদমে সাওয়াব রয়েছে:
– 7 أن للماشي إلى الجمعة بكل خطوة أجر سنة صيامها وقيامها لحديث
عَنْ أَوْسِ بْنِ أَوْسٍ رضي الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: مَنِ اغْتَسَلَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَغَسَّلَ وَبَكَّرَ وَابْتَكَرَ وَدَنَا وَاسْتَمَعَ وَأَنْصَتَ كَانَ لَهُ بِكُلِّ خُطْوَةٍ يَخْطُوهَا أَجْرُ سَنَةٍ صِيَامُهَا وَقِيَامُهَا ) وصححه الشيخ الألباني رحمه الله في صحيح الترمذي .
হযরত আউস বিন আউস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত: রাসূল (সা.) বলেছেন: যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন ভালোভাবে গোসল করে এবং সকালে সকালে (প্রথম প্রহরে) মসজিদে যাবে, এবং ইমামের কাছাকাছি চুপ করে বসবে। তার জন্য প্রতি কদমে এক বছর রোযা রাখা ও কিয়াম করার সাওয়াব লিখা হয়। (তিরমিযী )
৮) জুমা‘আর দিন জাহান্নাম উত্তপ্ত করা হয় না:
জাহান্নামকে প্রতি দিনই উত্তপ্ত করা হয়, শুধু জুমু‘আর দিন ছাড়া। আর এমনটি করা হয় জুমু‘আর দিনের সম্মানার্থে। (যাদুল মায়াদ : ১/৩৮৭)
৯) জুমা‘আর দিন বা রাতে মৃত্যবরণ করা ভালো মৃত্যুর লক্ষণ:
أَنَّ الْوَفَاةَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ أَوْ لَيْلَتَهَا مِنْ عَلَامَاتِ حُسْنِ الْخَاتِمَةِ حَيْثُ يَأْمَنُ الْمُتَوَفِّيْ فِيْهَا مِنْ فِتْنَةِ الْقَبْرِ،
فَعَنْ اِبْنِ عَمْرٍو رضي الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مَا مِنْ مُسْلِمٍ أَوْ مُسْلِمَةٍ يَمُوتُ فِي يَوْمِ الْجُمْعَةِ أَوْ لَيْلَةِ الْجُمْعَةِ إِلَّا وُقِيَ عَذَابَ الْقَبْرِ، أحمد والترمذي وصححه الألباني
ইবনে আমর হতে বর্ণিত: রাসূল (সা.) বলেছেন: যদি কোন মুসলিম জুমু‘আর দিন বা রাতে মারা যায়, আল্লাহ তাকে কবরের ফিতনা বা পরীক্ষা হতে বাঁচাবেন। (আহমদ ও তিরমিযী)
জুমু‘আর দিনের বিধি-বিধান
১। জুম‘আর দিন গোসল করা: যাদের উপর জুম‘আ ফরজ তাদের জন্য এ দিনে গোসল করাকে রাসুল (সাঃ) ওয়াজিব করেছেন;
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ رضي الله عنه عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ الْغُسْلُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَاجِبٌ عَلَى كُلِّ مُحْتَلِمٍ- صحيح البخاري
عن عبد الله ابنِ عُمَرَ رضي الله عنهما قال: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ يَقُولُ مَنْ جَاءَ مِنْكُمُ الجُمُعَةَ فَلْيَغْتَسِلْ
হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা.) বলেন, আমি রাসূলে কারীম (সা.)কে বলতে শুনেছি; যে ব্যক্তি জুমুয়ায় আসবে, সে যেনো গোসল করে আসে। বুখারীঃ ৮৭৭ ।
পরিচ্ছন্নতার অংশ হিসাবে সেদিন নখ ও চুল কাটা একটি ভাল কাজ।
২। আগে আগে মসজিদে আসা:
مَا رَوَاهُ أَبُوْ هُرَيْرَةَ رضي الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ :مَنِ اغْتَسَلَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ , ثُمَّ رَاحَ فَكَأَنَّمَا قَرَّبَ بَدَنَةً ، وَمَنْ رَاحَ فِي السَّاعَةِ الثَّانِيَةِ فَكَأَنَّمَا قَرَّبَ بَقَرَةً ، وَمَنْ رَاحَ فِي السَّاعَةِ الثَّالِثَةِ فَكَأَنَّمَا قَرَّبَ كَبْشًا أَقْرَنَ، وَمَنْ رَاحَ فِي السَّاعَةِ الرَّابِعَةِ فَكَأَنَّمَا قَرَّبَ دَجَاجَةً، وَمَنْ رَاحَ فِي السَّاعَةِ الْخَامِسَةِ فَكَأَنَّمَا قَرَّبَ بَيْضَةً ، فَإِذَا خَرَجَ الإِمَامُ حَضَرَتِ الْمَلائِكَةُ يَسْمَعُونَ الذِّكْرَ– البخاري
আবু হুরায়রা [রা.] থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জুমুআর দিন মসজিদের দরজায় ফিরিশতারা অবস্থান করেন এবং ক্রমানুসারে আগে আগমনকারীদের নাম লিখতে থাকেন। যে সবার আগে আসে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে একটি মোটাতাজা উট কুরবানী করে। এরপর যে আসে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে একটি গাভী কুরবানী করে। এরপর যে আসে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে একটি দুম্বা কুরবানী করে তারপর আগমনকারী ব্যক্তি মুরগী দানকারীর ন্যায়। এরপর আগমনকারী ব্যক্তি ডিম দানকারীর ন্যায়। তারপর ইমাম যখন [খুৎবার প্রদানের জন্য] বের হন তখন ফিরিশিতা তাঁদের দফতর বন্ধ করে দেন এবং মনোযোগ সহকারে খুৎবা শুনতে থাকেন। {বুখারি শরীফ নং-৮৮২}
৩। সূরা কাহাফের প্রথম ১০ আয়াত তেলাওয়াত করার ফযীলত:
عن أبي سَعيدٍ الخُدريِّ رضي الله عنه عنِ النبيِّ ﷺ أنَّه قال مَن قَرَأَ سورةَ الكَهفِ يومَ الجُمُعةِ أضاءَ له من النورِ ما بَينَ الجُمُعتينِ
যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন সূরা কাহাফ তেলাওয়াত করবে, আল্লাহ তায়ালা দুই জুমু‘আর মধ্যবর্তী সময়কে আলোকিত করে দেন। (হাকেমঃ ২/৩৬৮, বায়হাকীঃ ৩/২৪৯)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, জুম‘আতে তিন ধরনের লোক আসে
(ক) যে ব্যক্তি অনর্থক আসে, সে তাই পায়।
(খ) যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনার জন্য আসে। আল্লাহ চাইলে তাকে দেন, অথবা দেন না।
(গ) যে ব্যক্তি নীরবে আসে এবং কারো ঘাড় মটকায় না ও কাউকে কষ্ট দেয় না, তার জন্য এই জুম‘আ তার পরবর্তী জুম‘আ এমনকি তার পরের তিনদিনের (সগীরা) গোনাহসমূহের কাফফারা হয়ে থাকে। এ কারণেই আল্লাহ বলেছেন,‘যে ব্যক্তি একটি নেকীর কাজ করে, তার জন্য দশগুণ প্রতিদান রয়েছে’ (আন‘আম ৬/১৬০)। আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১৩৯৬, অনুচ্ছেদ-৪৪।
জুমু‘আর দিনের প্রয়োজনীয় কিছু আমল:
১। জুম‘আর দিন গোসল করা। যাদের উপর জুমু‘আ ফরজ তাদের জন্য এ দিনে গোসল করাকে রাসুল (সাঃ) ওয়াজিব করেছেন।(বুখারীঃ ৮৭৭, ৮৭৮, ৮৮০, ৮৯৭, ৮৯৮)। পরিচ্ছন্নতার অংশ হিসাবে সেদিন নখ ও চুল কাটা একটি ভাল কাজ।
২। জুম‘আর সালাতের জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা। (বুখারীঃ ৮৮০)
৩। মিস্ওয়াক করা। (ইবনে মাজাহঃ ১০৯৮, বুখারীঃ৮৮৭, ইঃ ফাঃ ৮৪৩)
৪। গায়ে তেল ব্যবহার করা। (বুখারীঃ ৮৮৩)
৫। উত্তম পোশাক পরিধান করে জুমু‘আ আদায় করা। (ইবনে মাজাহঃ ১০৯৭)
৬। মুসুল্লীদের ইমামের দিকে মুখ করে বসা। (তিরমিযীঃ৫০৯, ইবনে মাজাহঃ১১৩৬)
৭। মনোযোগসহ খুৎবা শোনা ও চুপ থাকা- এটা ওয়াজিব। (বুখারীঃ ৯৩৪, মুসলিমঃ৮৫৭, আবু দাউদঃ১১১৩, আহমাদঃ১/২৩০)
৮। আগে ভাগে মসজিদে যাওয়া। (বুখারীঃ৮৮১, মুসলিমঃ৮৫০)
৯। পায়ে হেঁটে মসজিদে গমন। (আবু দাউদঃ ৩৪৫)
১০। জুমু‘আর দিন ফজরের নামাজে ১ম রাক‘আতে সূরা সাজদা (সূরা নং-৩২) আর ২য় রাকা‘আতে সূরা ইনসান (দাহর) (সূরা নং-৭৬) পড়া। (বুখারীঃ৮৯১, মুসলিমঃ৮৭৯)
১১। সূরা জুমু‘আ ও সূরা মুনাফিকুন দিয়ে জুমু‘আর সালাত আদায় করা। অথবা সূরা আলা ও সূরা গাশিয়া দিয়ে জুমু‘আ আদায় করা। (মুসলিমঃ ৮৭৭, ৮৭৮)
১২। জুমু‘আর দিন ও জুমু‘আর রাতে বেশী বেশী দুরুদ পাঠ করা। (আবু দাউদঃ ১০৪৭)
১৩। এ দিন বেশী বেশী দোয়া করা।। (বুখারীঃ ৯৩৫)
১৪। মুসুল্লীদের ফাঁক করে মসজিদে সামনের দিকে এগিয়ে না যাওয়া। (বুখারীঃ৯১০, ৮৮৩)
১৫। মুসুল্লীদের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনের কাতারে আগানোর চেষ্টা না করা। (আবু দাউদঃ ৩৪৩, ৩৪৭)
১৬। কাউকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে বসার চেষ্টা না করা। (বুখারীঃ৯১১, মুসলিমঃ২১৭৭, ২১৭৮)
১৭। খুৎবা চলাকালীন সময়ে মসজিদে প্রবেশ করলে তখনও দু‘রাকা‘আত ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ সালাত আদায় করা ছাড়া না বসা। (বুখারীঃ ৯৩০)
১৮। জুমু‘আর দিন জুমু‘আর পূর্বে মসজিদে জিকর বা কোন শিক্ষামূলক হালকা না করা। অর্থাৎ ভাগ ভাগ হয়ে, গোল গোল হয়ে না বসা, যদিও এটা কোন শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান হোক না কেন। (আবু দাউদঃ ১০৮৯) তবে অন্য কোথাও ব্যবস্থা না থাকলে শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম করা যাবে।
১৯। কেউ কথা বললে ‘চুপ করুন’ এটুকুও না বলা। (নাসায়ীঃ ৭১৪, বুখারীঃ ৯৩৪)
২০। মসজিদে যাওয়ার আগে কাঁচা পেয়াজ, রসুন না খাওয়া ও ধুমপান না করা। (বুখারীঃ ৮৫৩)
২১। ঘুমের ভাব বা তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে বসার জায়গা বদল করে বসা। (আবু দাউদঃ ১১১৯)
২২। ইমামের খুৎবা দেওয়া অবস্থায় দুই হাঁটু উঠিয়ে না বসা। (আবু দাউদঃ ১১১০,ইবনে মাজাহঃ ১১৩৪)
২৩। খুৎবার সময় ইমামের কাছাকাছি বসা। জান্নাতে প্রবেশের উপযুক্ত হলেও ইমাম থেকে দূরে উপবেশনকারীরা বিলম্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (আবু দাউদঃ ১১০৮)
২৪। জুমু‘আর দিন সূরা কাহফ পড়া। এতে পাঠকের জন্য আল্লাহ তায়ালা দুই জুমু‘আর মধ্যবর্তী সময়কে আলোকিত করে দেন। (হাকেমঃ ২/৩৬৮, বায়হাকীঃ ৩/২৪৯)
২৫। উযর ছাড়া একই গ্রাম ও মহল্লায় একাধিক জুমু‘আ চালু না করা। আর উযর হল এলাকাটি খুব বড় হওয়া, বা প্রচুর জনবসতি থাকা, বা মসজিদ দূরে হওয়া, বা মসজিদে জায়গা না পাওয়া, বা কোন ফিতনা ফাসাদের ভয় থাকা। (মুগনি লিবনি কুদামাঃ ৩/২১২, ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহঃ ২৪/২০৮)
২৬। একান্ত উযর না থাকলে দুই পিলারে মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গায় সালাত আদায় না করা। (হাকেমঃ ১/১২৮)
২৭। সালাতের জন্য কোন একটা জায়গাকে নির্দিষ্ট করে না রাখা, যেখানে যখন জায়গা পাওয়া যায় সেখানেই সালাত আদায় করা (আবু দাউদঃ৮৬২)। অর্থাৎ আগে থেকেই নামাজের বিছানা বিছিয়ে জায়গা দখল করে না রাখা বরং যে আগে আসবে সেই আগে বসবে।
২৮। কোন নামাজীর সামনে দিয়ে না হাঁটা অর্থাৎ মুসুল্লী ও সুতরার মধ্যবর্তী জায়গা দিয়ে না হাঁটা। (বুখারীঃ৫১০)
২৯। এতটুকু জোরে আওয়াজ করে কোন কিছু না পড়া, যাতে অন্যের সালাত ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা মনোযোগে বিঘ্ন ঘটে। (আবু দাউদঃ ১৩৩২)
৩০। খুৎবার সময় খতীবের কোন কথার সাড়া দেওয়া বা তার প্রশ্নের জবাব দানে শরীক হওয়া জায়েজ। (বুখারীঃ ১০২৯, মুসলিমঃ ৮৯৭)
৩১। যেখানে জুমু‘আর ফরজ আদায় করেছে, উত্তম হল ঐ একই স্থানে সুন্নাত না পড়া। অথবা কোন কথা না বলে এখান থেকে গিয়ে পরবর্তী সুন্নাত সালাত আদায় করা। (মুসলিমঃ ৭১০, বুখারীঃ ৮৪৮)
৩২। ইমাম সাহেব মিম্বরে এসে হাজির হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাসবীহ-তাহলীল, তাওবা- ইস্তিগফার ও কুরআন তিলাওয়াতে রত থাকা।
আল্লাহ আমাদের সকলকে জুমু‘আর যথাযথ হক আদায় করার তাওফীক দান করুন। এবং জুমু‘আর নামাযসহ যাবতীয় আমল কবূল করুন। আমীন