Originally posted 2013-04-06 14:08:28.
নও মুসলিমের কাহিনী
তিনি একজন নও মুসলিম। তার নাম ‘আব্দুল্লাহ’ পূর্বের নাম ‘সঞ্জয়’ তার বাসস্থান পশ্চিম মেদনাপুর, ভারত। তিনি কৈবত বংশের ছেলে। তিনি ১৯৮৬ সালে এপ্রিল মাসের ২ তারিখ ভারতের মেদনাপুর জেলায় এক হিন্দু পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ১৯/০৩/২০১৩ ঈসায়ী তারিখে রোযি-রোযগারের অন্বেষায় কুয়েত আসেন। আব্দুল্লাহ যখন ভালো-মন্দ বুঝার বয়সে উপনীত হন, তখন হিন্দু সমাজের যাবতীয় রীতি-নীতি ও হিন্দুয়ানি প্রথা কোনটিই তিনি গ্রহণ করতে পারতেন না। নিজের চোখে সমাজে এমন কিছু কর্মকাণ্ড দেখতে পেলেন যা একজন সুস্থ বিবেক সম্পন্ন ব্যক্তি গ্রহণ করতে পারে না।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, কী এমন কাজ হতে দেখলেন, যা গ্রহণ করা যায় না? আব্দুল্লাহ উত্তর দিলেন: হিন্দু ধর্মে যখন কেউ মারা যায, চাই ছোট হোক কিংবা বড়, পুরুষ হোক বা মহিলা, প্রজ্জ¦লিত অগ্নিকুণ্ডে তাকে উলঙ্গ করে জ্বালানো হয়, যা একজন ভদ্র লোকের জন্য সত্যিই লজ্জার ব্যাপার! এদের এহেন ঘৃণিত কাজটি আমাকে চরমভাবে মর্মাহত করেছে। এমন ঘটনা হিন্দু সমাজে প্রতিনিয়ত ঘটছে; আপনাকে আমি একটি ঘটনা শুনাচ্ছি:
আমি হিন্দু পরিবারের ছেলে হলেও কিন্তু আমার বেশিরভাগ বন্ধু ছিল মুসলমান। হিন্দু ধর্মে গরুর মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ থাকা সাত্ত্বে আমি তাদের বাড়িতে কিংবা মুসলিম হোটেলে গিয়ে গরুর মাংস খেতাম। মুসলমানদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সুবাদে আমি তাদের অনেক অনুষ্ঠান, কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। এখন আমি স্বনয়নে অবলোকন করা একটি ঘটনা বলবো:
একদা আমি এক মুসলিম বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গেলাম, তখন দেখতে পেলাম যে, তাদের পাশের বাড়ির একজন মহিলা মারা গেছেন। মহিলাটি জীবদ্দশায় অত্যন্ত পর্দা মেনে চলত। জীবদ্দশায় বন্ধুর বাড়িতে কতবার গিয়েছি, কিন্তু মহিলাটিকে একটি বারও আমি দেখতে পাইনি। ভাবছি হয়ত মরার পর তাকে একনজর দেখবো।
কিন্তু মুর্দার খাটে করে তাকে কাফন পরায়ে এমনভাবে তার উপর আরো একটি পর্দার ব্যবস্থা করে কয়েক জনের কাঁধে করে বাড়ি থেকে বের করল। অন্য কারো অনুমান করা সম্ভব নয় যে মহিলাটি কত বড় ছিল? লম্বা ছিল, না খাটো ছিল? মোটা ছিল, না পাতলা ছিল? জানাযার নামাযের পর, সবাই তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন দোয়া পড়তে পড়তে কবরস্থানের দিকে যাচ্ছে। তাই আমি তাদের সাথে কবরস্থানের দিকে রওয়ানা হলাম। দেখবো কিভাবে একজন মুসলিম নারীকে কবরস্থ করে? আর মনে ইচ্ছা ছিল যে, কবরে নামানোর সময় একটু দেখব। কিন্তু আমার মনের আকাঙ্খা আর পূরণ হলো না। কারণ তাকে কবরের নামানোর পূর্বেই কবরের চতুর পার্শ্বে পর্দা দিয়ে ঘিরে তার পর তাকে সসম্মানে নামানোর ব্যবস্থা করল। যখন আমার আশা আকাঙ্খ পূরণ হলো না তখন ভাবলাম এটা হয়তো তাদের ধর্মীয় বিধান। যাক পরিশেষে আমার বাড়িতে ফিরে আসলাম।
আমাদের ধর্মে যা ঘটে তাও কিছু বর্ণনা দিচ্ছি:
হিন্দু ধর্মের কোন মহিলা মারা গেলে চাই সে উচ্চ পরিবারের হোক বা নিম্নে পরিবারে হোক, ছোট হোক বা বড় হোক হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী তাকে শ্মশানে নিয়ে চিতায় পুড়াতে হয়। আমার বাড়ির পাশের এক মহিলা মারা গেল, তাকে বাড়ি থেকে বের করার সময় তার উপরে এমন এটি পাতলা কাপড় ছিল যে, ভিতর থেকে তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দেখা যাচ্ছিল। তার পর তাকে নিয়ে যাওয়া হলো শ্মশানে, রাখা হলো চিতায়। আগুনে পুড়ানোর পূর্বেই পাতলা আবরণটি সরিয়ে ফেলা হলো! সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে তাকে প্রজ্জ্বলিত আগুনে রাখা হলো। শ্মশানে উলঙ্গ অবস্থায় মহিলাটি জ্বলতে লাগলো। লজ্জায় মাথা হিট হয়ে যাচ্ছে, হায় কি দেখছি, একজন মুসলিম মহিলাকে কিভাবে কবরস্থ করা হলো, আর হিন্দু মহিলাকে কিভাবে আগুনে জ্বালানো হচ্ছে। আমি কি করবো? কিন্তু উপায় নেই, এতো আমাদের ধর্মের বিধান। আগুন যখন ভালভাবে ধরেছে তখন দেখি মহিলাটি বাঁকা হতে চাচ্ছে। আবার কখনো সোজা আবার কখনো দাঁড়াতে চাচ্ছে। এদিকে আসে পাশে অনেক লোক কারো হতে লাঠি, কারো হাতে বল্লম। তারা সবাই তাকে আঘাত করে সেই আগুনেই যথাযথভাবে পুড়তে বাধ্য করছে। কি করুন দৃশ্য এ বেদনা দায়ক দৃশ্য আমাকে যেন হতবাক, অচেতন করে ফেলেছে। হঠাৎ আমার সামনে ভেসে উঠল মুসলিম মহিলার কাফন দাফনের সুন্দর দৃশ্য। কত সম্মান জনকভাবে তাকে মাটি দেয়ার পর তার চির শান্তির জন্য সবাই দোয়া করে বিদায় নিল। তিনি যখন বেঁচে ছিলেন তখন ও তার সম্মানের কিছু কমতি ছিল না। মৃত্যুর পরও তাকে যথাযথ সম্মানে কবর দেয়া হলো। মনে হয় পরগজতেরও তাদের সম্মান অক্ষুণ্য থাকবে।
অথচ হিন্দু মহিলা তার জীবদ্দশায় এমন সুন্দর স্বভাবের ছিলেন, খোলা-মেলা চলা-ফেরা করতেন না। সুখ ও শান্তিতে ইজ্জতসহ বসবাস করতেন, আর মৃত্যুর সাথে সাথে তাকে এমন করে বেইজ্জত করা হলো। তার চেহারা অপর কেউ দেখেনি কিন্তু জীবনটা চলে যাওয়ার সাথে সাথে একী অবস্থা? তাকে উলঙ্গ করা হলো, তাকে সকলে উলঙ্গ অবস্থায় দেখলো। তিনি কোন দিন কাউকে আঘাত করেননি, এমন কি কারো সাথে ঝগড়া করেননি, গালিও দেননি। কিন্তু তার আত্মা বিদায় নেয়ার সাথে সাথে এভাবে মানুষ তাকে আঘাত করছে কেন? চোখের সামনে এই যদি হয় তার অবস্থা তবে পরজগতে? এ কঠিন অবস্থায় নানা ধরনের প্রশ্ন জাগছিল আমার হৃদয়ে। তন্মধ্যে সব চেয়ে বড় যে প্রশ্নটি আমার হৃদয়ে উদ্ভব হয়েছিল তা হলোঃ- সত্যই কি এটি বিধাতার হুকুম? এর পর হতে আমি ধর্ম নিয়ে গভীর ভাবে গবেষণা শুরু করলাম। এক এক করে হৃদয়ের সকল প্রশ্নের জবাব খুঁজতে শুরু করলাম। পরিশেষে আমি অন্ধকার থেকে আলোর সন্ধান পেলাম। ভ্রান্ত পথ ছেড়ে মহান সৃষ্টিকর্তার সঠিক পথে চলে আসলাম। বুঝতে আর দেরি হলো না যে, ইসলাম একমাত্র আল্লাহ মনোনীত ধর্ম, যাতে রয়েছে দুনিয়াতে সম্মান, মৃত্যুর পর সুখ ও পরকালেও শান্তি রয়েছে তাতে। কিন্তু আমি আফসোস করতাম, হায়! আমার জন্ম যদি কোন মুসলিম পরিবারে হতো, পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে মুসলমান হওয়ার সম্ভব হয়নি। কারণ আমি যদি মুসলমান হয়েছি পরিবারের লোক জন জানতে পারে, তাহলে তারা আমাকে পৃথিবী থেকে চিরতরের জন্য সরিয়ে ফেলবে। কিন্তু ভিতরে ভিতরে মুসলমান হয়ে গিয়েছি।
১৯/০৩/২০১৩ ঈসায়ী তারিখে আমি কুয়েত আসি। একটি কোম্পানী ক্যাপটেনের পদে চাকরী করছি, কাছ থেকে মুসলমানদের নামাযের দৃশ্য দেখে আরো মুগ্ধ হই। কুয়েতি হোক আর বিনদেশী হোক, তারা এক কাতারে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করছেন। যা হিন্দু ধর্মে কল্পনাও করা যায় না। তাই আমি বন্ধু আব্দুল করীমকে বললাম, আমি মুসলমান হবো, মুসলমান হওয়ার ব্যবস্থা করুন। কুয়েত আসার এক সাপ্তাহ পর বন্ধু আব্দুল করীমের সহযোগিতায় এক কুয়েতির সঙ্গে ইসলাম প্রেজেন্টেশন কমিটি (আই পি সি)-তে আসি। আই পি সির সম্মানিত দাঈ মুহতারম মাওলানা মামুনুর রশীদ সাহেবের সাথে সাক্ষাত হয়, তিনি আমাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন, বিশেষ করে যে প্রশ্নটি করেন, তা হলো: আপনি কারো চাপে পড়ে ইসলাম গ্রহণ করতে রাজী হয়েছেন কিনা? আমি তাকে পরিষ্কারভাবে উপরের বর্ণিত ঘটনাগুলো বললাম। তবুও তিনি আমাকে ইসলাম নিয়ে আরো ভাবতে বললেন, এবং কয়েকটি বই দিলেন, বিশেষ করে “আমি কেন ইসলাম গ্রহণ করলাম?” “মহাসত্যের ডাক” এই দু‘টি বই পড়তে বললেন। কিন্তু আমার মন মানছেনা, দেরি সহ্য হচ্ছে না। তবুও সেদিন বইগুলো নিয়ে বাসায় চলে গেলাম। বইগুলো পাঠ করে আবার আমি আই পি সিতে আসলাম। ০৩/০৪/২০১৩ ইং বুধবার দিন আইপিসির মোল্লাহ সালেহ মসজিদে বাদ যোহর আমি মুসল্লিগণের সামনে ইসলামের শ্বাশত বাণী উচ্চারণ করলাম “আশহাদু আল লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ” আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন উপাস্য নেই, আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল” আব্দুল্লাহ এখন গর্ববোধ করছেন, যে আমি একজন মুসলিম।
সম্মানিত পাঠক পাঠিকাগণ! এই নও মুসলিম আব্দুল্লাহর জন্য দোয়া করবেন আল্লাহ যেন তাকে ইসলামের উপর অটল রাখেন এবং ইসলামের একজন সৈনিক হিসেবে আল্লাহ তাকে কবুল করেন। আমীন