হযরত ফাতিমা বিনতে কায়েস (রাঃ)

ফাতেমা বিনতে কায়েস

ফাতেমা বিনতে কায়েস

তার নাম ফাতিমা। পিতা কায়েস ইবনে খালেদ আকবর ইবনে ওয়াহাব। আর মাতা উমায়মা ইবনেতে রবীআ’ ছিলেন বনু কেনানার মহিলা। তার ভাই ছিলেন যাহহাক। তিনি ভাইয়ের চেয়ে ১০ বছর বড় ছিলেন। আবূ আমর হাফ্ছ ইবনে মুগীরার সাথে তার বিয়ে হয়। হিজরতের প্রথম পর্যায়ে নারীরা যখন মক্কা মুয়ায্যামা থেকে হিজরত করেন। তখন তাদের সাথে হযরত ফাতিমা ইবনেতে কায়েসও ছিলেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমতি, বিচক্ষণ, সুস্থ চিন্তার অধিকারী এবং সাহিত্যসেবী মহিলা। অনেক রাবী তার উদ্ধৃতি দিয়ে হাদীস বর্ণনা করেছেন। এদে

র কয়েক জনের নাম নিম্নে বিবৃত হলো ঃ
শাঈ, নাখ্ঈ, আবূ সালমা, কায়েস ইবনে মুহাম্মদ, আবূ বকর ইবনে জাহাদ, ওরওয়া, আবদুল্লাহ্ ইবনে আবদুল্লাহ্, আসওয়াদ, সুলায়মান ইবনে ইয়াসার, আবদুল্লাহ্ আল-বাহী, আবদুর রহমান ইবনে আছেম, তামীম প্রমুখ।

২৩ হিজরীতে খলীফা ওমর (রা.) শহীদ হলে হযরত ফাতিমা ইবনেতে কায়েসের গৃহেই মজলিসে শুরার বৈঠক বসে। যেহেতু তিনি ছিলেন প্রজ্ঞার অধিকারী মহিলা, তাই খেলাফতের ব্যাপারে তার নিকট থেকেও পরামর্শ নেয়া হয়। হিজরী দমশ সালে হযরত আলী (রা.) একটি বাহিনী নিয়ে ইয়ামান গমন করলে তার স্বামী আবূ আমরও উক্ত বাহিনীর সাথে যান। বিদায় কালে তিনি বিয়ের উকীল ইয়াস ইবনে রবী’আর মারফতে স্ত্রী ফাতিমাকে শেষ তালাক দিয়ে যান। ইতোপূর্বে দু’তালাক দিয়েছিলেন। স্ত্রীর খোরপোষ বাবদ তিনি ৫ছা’ যব এবং ৫ছা খোরমাও প্রেরণ করেন। হযরত ফাতিমা ইয়ারেস নিকট খাদ্য ও বাসস্থান দাবী করলে তিনি বলেন, তোমার স্বামী কেবল এটুকুই আমাকে দিয়েছেন। এছাড়া আমার কাছে আর কিছুই নেই। আর এটাও তিনি দিয়েছেন দয়াপরবশ হয়ে সহানুভূতি স্বরূপ। অন্যথায় তার কাছে আমার কোন অধিকার নেই। কথাগুলো তার কাছে খুব অসহ্য ঠেকে। তিনি কাপড়-চোপড় নিয়ে নবীজীর কাছে হাযির হন। খালেদ ইবনে ওয়ালীদ এবং অন্যান্যরাও সেখানে পৌঁছেন। হযরত ফাতিমা সব কথা খুলে বলেন। নবীজী জানতে চাইলেন, আবূ আমর তোমাকে ক’বার তালাক দিয়েছে। তিনি বললেন, তিনবার। নবীজী বললেন, এখন আবূ আমর এর উপর তোমার খোরপোষ আর ওয়াজেব নয়। এখন তুমি উম্মে শুরাইক এর গৃহে থেকে উদ্দত পালন কর। কিন্তু উম্মে শুরাইকের গৃহে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ছিল। তাই তিনি বলেন যে, ইবনে মাকতুম অন্ধ এবং তোমার চাচাতো ভাই। তার বাসায় থেকে ইদ্দত পালন করলেই ভাল হয়। নবীজীর নির্দেশ অনুযায়ী তিনি ইবনে মাকতুম এর গৃহে থেকে ইদ্দত পালন করেন। ইদ্দতের মেয়াদ শেষ হলে চারিদিক থেকে বিয়ের পয়গাম আসতে থাকে। আমীর মুআবিয়া ইবনে আবূ সুফিয়ান, আবূ জাহাম এবং উসামা ইবনে যায়েদও পয়গাম পাঠান। এসব পয়গাম নিয়ে তিনি নবীজীর সাথে পরামর্শও করেন। নবীজী বলেন, মুআবিয়াতে নিঃস্ব ব্যক্তি, তার কাছে কিছুই নেই। আর আবূ জাহামতো ঝগড়াটে এবং বদমেযাজী। উসামা ইবনে যায়েদ এদের চেয়ে ভালো। তুমি তাকে বিয়ে কর। হযরত ফাতিমার ধারণা ছিল, নবীজী তাকে বিয়ে করবেন, তাই তিনি ইতস্তত করেন। নবীজী বললেন, তোমার আপত্তি কি জন্য? আল্লাহ্ ও রাসূলের আনুগত্য কর, এতে তোমার মঙ্গল রয়েছে। অবশেষে তিনি রাযী হন এবং উসামা ইবনে যায়েদকে বিয়ে করেন। হযরত ফাতিমা বলেন, এ বিয়ের পর আমি লোকের নিকট ঈর্ষার বস্তুতে পরিণত হই। হযরত ফাতিমা ছিলেন রূপ-গুণের অধিকারী মহিলা। তার শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্যই ছিল না, অভ্যাস, গুণাবলী, স্বভাব-চরিত্র সবই ছিল ভালো। ৫৪ হিজরীতে স্বামী উসামার ইন্তিকালে তিনি ভীষণ দুঃখিত হন। এরপর তিনি আর বিয়ে করেননি। ইদ্দত অতিক্রমের পর খলীফা ইয়াযীদ হযরত ফাতিমার ভাই যাহহাককে ইরাকের শাসনকর্তা নিযুক্ত করলে তিনি ভাইয়ের সাথ কুফা গমন করেন এবং সেখানেই বসবাস করেন। জীবন চরিত্র ও ইতিহাস গ্রন্থে হযরত ফাতিমার মৃত্যু সাল সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না। কিন্তু মক্কায় হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের এর শাসনকাল পর্যন্ত তিনি বেঁচে ছিলেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।

Related Post