Main Menu

ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তার ইসলাম গ্রহণ

ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তার ইসলাম গ্রহণ

ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তার ইসলাম গ্রহণ

ডক্টর মুহাম্মদ হুযাইফা (রাজকুমার)এর সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকার

আমাদের দেশ একটি সেক্যুলার রাষ্ট্র এবং রাষ্টের আইন ও সংবিধান (যার যার) নিজের ধর্ম মেনে চলার এবং ধর্মের দাওয়াত প্রদানের মৌলিক অধিকার আমাদেরকে দিয়েছে। কাউকে ঈমানের দাওয়াত দেওয়া, কেউ মুসলমান হতে চাইলে তাকে কালেমা পড়ানো আমাদের মৌলিক আইন গত অধিকার। যেই যিনিষের আইন আমাদেরকে আইন অধিকার দেয়

সে ব্যাপারে আমরা কাউকে ভয় পাই না। বেআইনী কাজ আমরা জেনে-বুঝে কখনোই করি না। ভুলে হয়ে গেলে আমরা ক্ষতিপূরণ করতে চেষ্টা করি।” (মাওলানা কলীম সিদ্দিকী)
আহমদ আওয়াহ: আসসালামু ‘আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়বারাকাতুহ
ড. হুযায়ফা: ওয়া ‘আলাইকুমুস সালামু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ
প্রশ্ন. আল্লাহরশাকর যে, আপনি এসে গেছেন। আব্বার কাছ থেকে বহুবার আপনার কথা শুনেছি। আব্বার অধিকাংশ লোকের সামনে আপনার কথা বলেন। রক্ত সম্পর্কীয় ভাইদের কল্যাণ কামনা এবং তাদেরকে চিরস্থায়ী ধ্বংস ও শাস্তির হাত থেকে বাঁচাবার জন্য ইসলামের দাওয়াত দেওয়া কেবল ইসলামী দায়িত্ব ও কর্তব্যই নয় বরং এটি একটি কল্যাণকর হবার দরুণ আমাদের দেশের আইনগত দিক দিয়েও আমাদের আইনগত (ও সাংবিধানিক) অধিকার, এই সূত্রে আপনার ইসলাম গ্রহণের আলোচনা উদাহরণ হিসেবে করে থাকেন। আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আমি খুবই আগ্রহী ছিলাম। আল্লাহ সাক্ষাৎ করিয়ে দিলেন।
উত্তর. দিল্লীতে এক সরকারী কাজে এসেছিলাম। মাওলানা সাহেবের ফোন তো পাই না। ধারণা করলাম, ফোন করে দেখি। যদি ফুলাতে থাকেন তাহলে দেখা করে যাব। বহুদিন যাবত দেখা-সাক্ষাৎ না হবার দরুণ খুবই অস্থির ছিলাম। ফোন করে জানতে পারলাম মাওলানা সাহেব দিল্লীতেই আছেন। আমার জন্য এর চেয়ে খুশির বিষয় আর কী হতে পারত যে, দিল্লীতেই দেখা হয়ে গেল। আমার আল্লাহর পরম অনুগ্রহ যে, রমাযানের আগেই দেখা হয়ে গেল । অস্থিরতাও দূর হয়ে গেল, আবার ঈমানের ব্যাটারীও চার্জ হয়ে গেল। অনেকদিন দেখা-সাক্ষাত না হলে মনে হয় ভেতরকার ব্যাটারী ডাউন হয়ে গেছে। আলহামদুলিল্লাহ! সাক্ষাত হয়ে গেল এবং একটি প্রোগ্রামেও মাওলানা সাহেবের সঙ্গে অংশগ্রহণ করলাম। বয়ান শুনেও সান্ত্বনা পেলাম।
প্রশ্ন. হুযায়ফা সাহেব! আমি একটা উদ্দেশ্য নিয়ে আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাচ্ছিলাম। আমাদের এখানে ফুলাত থেকে ‘আরমুগান’ নামে একটি মাসিক ম্যাগাজিন বের হয়। আপনি সম্ভবত জানেনও। এর জন্য আপনার একটি সাক্ষাৎকার নিতে চাই, যাতে করে যারা দাওয়াতের কাজ করেন তারা দিক-নির্দেশনা পায়। বিশেষ করে আপনার সাক্ষাৎকারের দ্বারা ভয় কমে ও উৎসাহ বাড়ে।
উত্তর. হ্যাঁ আহমদ ভাইয়া! আমি ‘আরমুগান’ সম্পর্কে বেশ জানি। আমি মাওলানা সাহেবকে কয়েকবার আবেদন জানিয়েছি এর হিন্দী সংস্করণ অবশ্যই বের করুন। মাওলানা সাহেবকে আমি বলেছিলাম যে, হিন্দী সংস্করণের কমপক্ষে পাঁচশ’ গ্রাহক বার্ষিক বানাব ইনশাআল্লাহ! আমি জানলাম যে, সেপ্টেম্বর থেকে হিন্দী সংস্করণ বের হচ্ছে। কিন্তু জানি না কেন সেপ্টেম্বরে তা বের হল না।
প্রশ্ন. ইনশা আল্লাহ অতি সত্বর তা আসছে। আপনি চিন্তা করবেন না। আব্বু ও মাওলানা ওয়াসী সাহেব এজন্য খুবই চিন্তিত আর লোকের দাবী ও চাহিদাও খুব।
উত্তর. আল্লাহ করুন। খবরটা যেন সত্য হয়। আহমদ ভাই, এখন আদেশ করুন আমার থেকে কী জানতে চান?
প্রশ্ন. আপনার পরিচয় দিন।
উত্তর. পূর্ব ইউপির বস্তি জেলার একটি গ্রামে জমিদারগৃহে আমার জন্ম ১৯৫৭ সালের ১৩ই আগস্ট তারিখে। ১৯৭৭ সালে ইন্টার পাস করি। আমার চাচা ইউপি পুলিশে ডি.এস.পি. ছিলেন। তার ইচ্ছায় পুলিশে ভর্তি হই। চাকুরীরত থাকা অবস্থায় ১৯৮২ সালে বিকম পাস করি এবং ১৯৮৪ সালে এমএ করি। ইউপির ৫৫টি থানার ইন্সপেক্টর-ইন-চার্জ থাকি। ১৯৯০ সালে আমার প্রমোশন হয় ও সিও হই। ১৯৯৭ সালে একটি ট্রেনিংয়ের জন্য ফ্লোরা একাডেমীতে যেতে হয়। একাডেমীর ডাইরেক্টর জনাব এ. এ. সিদ্দিকী ছিলেন আমার চাচার বন্ধু। তিনি আমাকে ক্রিমিন্যালোজিতে পি.এইচ.ডি. করার পরামর্শ দেন। আমি ছুটি নিয়ে ২০০০ সালে পি.এইচ.ডি. করি। ১৯৯৭ সালে চাকুরিতে সর্বোত্তম দক্ষতা ও কৃতকার্যতার (best XerfWrmance) ভিত্তিতে আমাকে বিশেষ পদোন্নতি হিসাবে ডি.এস,পি পদে প্রমোশন প্রদান করা হয় এবং মুজাফফরনগর জেলার পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে পোস্টিং দেওয়া হয়। আমার কনিষ্ঠ ভ্রাতা ইঞ্জিনিয়ার। এক বোন আছে যার বিয়ে হয়েছে এক কলেজ প্রভাষকের সঙ্গে। পরিবারে লেখাপড়া শেখার রেওয়াজ আছে। বর্তমানে আমি পূর্ব ইউপির এক জেলা হেড কোয়ার্টারে গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান।
প্রশ্ন. আপনার ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে আমাদেরকে বলুন।
উত্তর. আমাদের পরিবার শিক্ষিত পরিবার এ কারণে মুসলমানদের প্রতি শত্রুতায় বিখ্যাত। এর একটি কারণ এও যে, আমাদের পরিবারের একটি শাখা অনুমানিক একশ’ বছর আগে ইসলাম কবুল করে ফতেহপুর, হাঁসওয়াহ ও প্রতাপগড়ে গিয়ে বসতি স্থাপন করে। তারা ছিল অত্যন্ত পাকা মুসলমান। এদিকে আমাদের বস্তিতে তিরিশ বছর আগে বস্তির জমিদারদের ছোঁয়াছুঁয়ির জ্বালায় অতিষ্ট হয়ে আটটি দলিত (অস্পৃশ্য), অচ্ছ্যুত, নি¤œবর্ণের হিন্দু পরিবার মুসলমান হয়ে যায়। এই দুটো ঘটনায় আমার পরিবারে মুসলমানদের প্রতি শত্রুতার মনোভাব আরও বৃদ্ধি পায়। আমদের খান্দানের কিছু যুবক বজরং দলের একটি শাখা গ্রামে কায়েম করে। পরিবারের যুবকরাই ছিল এর অধিকাংশ সদস্য। আমি এসব কথা এজন্য বললাম যে, কোন মানুষের ইসলাম গ্রহণের জন্য সবচেয়ে বিরোধী পরিবেশ ছিল আমার। কিন্তু আল্লাহ যাঁর নাম হাদী (হেদায়েত দেনেওয়ালা) ও রহীম (পরম দয়ালু), আপন শানের কারিশমা দেখাতে চাচ্ছিলেন। তিনি এক অদ্ভুত ও অত্যাশ্চর্যজনক পথে আমাকে পথ প্রদর্শন করেন।
আসলে হয়েছিল কি, গাযী আবাদ জেলার পাল খোয়াহর একই পরিবারের ন’জন লোক মাওলানার কাছে এসে ফুলাতে মুসলমান হয়। এঁদের মধ্যে ছিল মা-বাপ, চার মেয়ে ও তিন ছেলে। ছেলে ছিল বিবাহিত। মাওলানা সাহেব তাদের কালেমা পড়তে বলেন। তারা বলে যে, আমরা আটজন তো এখন কালেমা পড়ছি। বড় ছেলেটি বিবাহিত। তার স্ত্রী এখনও মুসলমান হতে তৈরি নয়। তার স্ত্রী তৈরি হলেই আমাদের এ ছেলেও একত্রে কলেমা পড়বে। মাওলানা সাহেব বললেন, জীবন-মরণের আদৌ কোন ভরসা নেই। এও এক সাথেই কালেমা পড়ে নিক। এখনই তা স্ত্রীকে বলার দরকার নেই। এরপর স্ত্রীকে ইসলাম গ্রহণের জন্য প্রস্তুত করুক। তারপর আবার স্ত্রীর সঙ্গে একত্রে দ্বিতীয়বারের মত কলেমা পড়বে। মাওলানা সাহেব তাদের সকলকে কালেমা পড়ান এবং তাদের অনুরোধে সকলের ইসলামী নামও রেখে দেন। তাদের বলায় একটি প্যাডে তাদের ইসলাম গ্রহণ এবং তাদের নতুন নামের সার্টিফিকেট বানিয়ে দেন। তাদের এও বলে দেন যে, আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী। এজন্য শপথনামা তৈরি করে ডিএমকে রেজিস্ট্রি ডাকযোগে পাঠিয়ে দেবে এবং কোন পত্রিকায় ঘোষণা প্রদান যথেষ্ট হবে। এরা খুশি হয়ে সেখান থেকে চলে যায় এবং আইনগত পাকা কার্যক্রম গ্রহণ করে। বাচ্চাদেরকে মাদরাসায় ভর্তি করিয়ে দেয়। বড় মেয়েগুলো ও মা মহিলাদের এজতেমায় যেতে থাকে।
তাদের ইসলাম গ্রহণের কথা জেনে মহিলারা খুশি হয়ে মিষ্টি বিতরণ করে। বড় ছেলের বৌ জেনে পরিবারের অন্যান্য লোকদের বলে দেয়। অতঃপর এক দু’জন করে সর্বত্র এ খবর ছড়িয়ে পড়ে। ফলে এলাকার পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। হিন্দু সংগঠনগুলো উত্তেজিত হয়ে উঠে। টিভি চ্যানেলের লোকেরা এসে যায়। ফলে দেখতে না দেখতেই দাবানলের মত চতুর্দিকে এ খবর ছড়িয়ে যায়। দৈনিক জাগরণ, ও অমর উজালা এ দুই হিন্দী পত্রিকায় চার কলামব্যাপী বড় বড় হরফে এই খবর ছাপা হয় যার হেডিং ছিল :
“লোভ দেখিয়ে ধর্মান্তকরণে সমগ্র হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ : ধর্মান্তকরণ ফুলাত মাদরাসায় হয়েছে।”
এই খবরে গোটা এলাকায় তীব্র উত্তেজনা ও উত্তাপ সৃষ্টি হয়ে যায়। সে সময় আমার পোস্টিং ছিল মুজাফফর নগর। অফিসিয়াল দায়িত্ব ছাড়াও এ খবরে আমার নিজের মধ্যেও ক্রোধের সঞ্চার হয়। আমি আমার দু’জন ইন্সপেক্টরসহ ফুলাত পৌঁছি। সেখানে যেসব লোকের সঙ্গে দেখা হয়, তাঁরা অজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং বলে যে মাওলানা সাহেবই কেবল সঠিক বিষয় বলতে পারেন। তারা আমাদেরকে আশ্বস্ত করেন যে, আমাদের এখানে কোন বেআইনী কাজ হয় না। মাওলানা সাহেবের সঙ্গে আপনারা দেখা করুন। তিনি আপনাদেরকে যা সত্য তাই বলবেন। আমি তাদেরকে আমার ফোন নম্বর দিই যে, মাওলানা সাহেব কবে ফুলাত আসবেন জেনে আমাকে যেন জানায়।
তৃতীয় দিন ফুলাতে মাওলানা সাহেবের প্রোগ্রাম ছিল। ২০০২ সালের ৬ই নভেম্বর বেলা এগারটায় আমরা ফুলাত পৌঁছি। মাওলানা সাহেবের সঙ্গে দেখা হয়। তিনি খুব আনন্দের সঙ্গে আমাদের সঙ্গে মিলিত হন। আমাদের জন্য চা-নাশতার ব্যবস্থা করেন। বলেন, খুব খুশি হয়েছি যে, আপনারা এসেছেন। আসলে মৌলভী-মোল্লাদের ও মাদরাসাগুলো নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার করা হয়ে থাকে। আমি তো আমার সাথীদের ও মাদরাসাওয়ালাদের বারবার বলি, পুলিশের লোক, হিন্দু সংগঠনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ, সি.আই.ডি. সিবিআই-এর লোকদের খুব বেশি বেশি মাদরাসাগুলোতে ডেকে আনা দরকার বরং কয়েক দিন মেহমান রাখা উচিত যাতে করে তারা ভেতরকার অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হতে পারেন এবং মাদরাসাগুলোর কদর বুঝতে পারেন। আমি জানতে পেরেছি, আপনি একদিন আগেও এসেছিলেন। সফরে আমাকে এদিক থেকেই যাওয়ার ছিল কিন্তু খেয়াল হল যে, আপনি অপেক্ষা করবেন। এজন্য কেবল আপনার জন্যই আজ এসেছি। মাওলানা সাহেব হেসে বললেন, বলুন আপনার কী সেবা করতে পারি?
আহমদ ভাই! মাওলানা সাহেব সাক্ষাতের প্রারম্ভেই এমন আস্থা ও ভালবাসার প্রকাশ ঘটালেন যে, আমার চিন্তা-ভাবনার ধারাই পাল্টে গেল। আমার ভেতর ক্রোধের আধা ভাগও থাকেনি। আমি পত্রিকা বের করলাম এবং জানতে চাইলাম এ খবর আপনি পড়েছেন।”
মাওলানা সাহেব বললেন, “রাত্রে আমাকে এ পত্রিকা দেখানো হয়েছে। আমি ‘অমর উজালা’তে এই খবর পড়েছি।”
আমি বললাম, “এরপর এ ব্যাপারে আপনি কী বলেন?”
মাওলানা সাহেব বললেন যে, “আমি এক সফরে যাচ্ছিলাম। গাড়িতে আরোহণ করতে যাচ্ছিলাম। এমন সময় একটি জীপ গাড়ি এসে দাঁড়াল। আমার সফরের তাড়া ছিল। আমি আমার সাথীদের বললাম, “এরা হযরতজীর সঙ্গে সাক্ষাত করতে এসে থাকবে। তাদেরকে ক্বারী হিফজুর রহমান সাহেবের ঠিকানা বলে দাও। কিন্তু একজন আমাকে চিনতেন। বললেন, আমরা অন্য কোথাও যাব না। আমরা আপনার কাছেই এসেছি। এরা আমাদের ভাই। তারা তাদের বাড়ির লোকজনসহ মুসলমান হতে চায়। এজন্য তারা এক মাস যাবত পেরেশান। আমি গাড়ি থেকে নেমে আসি, তাদের কালেমা পড়াই। বেশি বলায় তাদের ইসলামী নামও বলে দিই। এবং তাদের একটি একটি সার্টিফিকেটও ইসলাম গ্রহণের দিই। তাদের এও বলে দিই যে, আইনগত কার্যক্রম সম্পন্ন হলে আপনারা শপথনামা/ হলফনামা তৈরি করে ডি.এম.কে জানাবেন। একটি পত্রিকায় ঘোষণা পাঠাবেন। আরও ভাল হয় যদি জেলা গেজেটে দিয়ে দেন। তারা ওয়াদা করল যে, কালই গিয়ে আমরা সব কাজ করব। আমি জানতে পেরেছি, তারা এসব কাজই সম্পন্ন করেছে। মাওলানা সাহেব বললেন, আমাদের দেশ সেকুল্যার রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের আইন-কানুন আমাদেরকে আপন ধর্ম মানা ও ধর্মের দাওয়াত প্রদানের মৌলিক অধিকার আমাদেরকে দিয়েছে। কাউকে ঈমানের দাওয়াত দেয়া, কেউ মুসলমান হতে চাইলে তাকে কালেমা পড়ানো আমাদের মৌলিক আইনগত ও সাংবিধানিক অধিকার। যেই অধিকার আইন ও সংবিধান আমাদেরকে দেয় সে ব্যাপারে আমরা কাউকে ভয় পাই না। আমরা জেনে-বুঝে কোন বেআইনী কাজ কখনো করি না। ভুলে হয়ে গেলে তার সংশোধন ও ক্ষতিপূরণ করতে চেষ্টা করি। লোভ দেখিয়ে কিংবা ভীতি প্রদর্শনপূর্বক ধর্ম পরিবর্তনের কথা বলছেন? এটা তো একদম বেআইনী। আমার ব্যক্তিগত ধারণা হল এই যে, এই বেআইনী কাজ সম্ভবও নয়। ধর্ম পরিবর্তন করা অথবা কারোর মুসলমান হওয়া তার অন্তর-মনের বিশ্বাসের পরিবর্তন যা লোভ-লালসা ও ভয়-ভীতির দ্বারা হতেই পারে না। আপনাকে খুশী করার জন্য কেউ বলতে পারে যে, আমি হিন্দু হচ্ছি অথবা মুসলমান হচ্ছি। কিন্তু এত বড় সিদ্ধান্ত নিজের জীবনে মানুষ ভেতরের অনুমোদন ছাড়া নিতে পারে না।
দ্বিতীয়ত, এর চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরী তা হল এই যে, আমি একজন মুসলমান আর মুসলমান তাকে বলা হয় যে, সকল সত্য কথাকে মানে যা সকল সত্যের থেকে অধিক সত্য। আমাদের মালিক এবং তাঁর প্রেরিত রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাঁর সম্পর্কে এই ভুল ধারণা বিদ্যমান যে, তিনি কেবল মুসলমানদের রাসূল এবং তাদের (মুসলমানদের) জন্য মালিকের পক্ষ থেকে সংবাদবাহক ছিলেন। অথচ কুরআন পাকে ও হাদীছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এ কেবল একথাই পাওয়া যায় যে, আমি সকলের মালিক ও প্রভুর পক্ষ থেকে প্রেরিত সমগ্র মানব জাতির প্রতি অন্তিম (শেষ) ও সত্য রাসূল। তিনি এত সত্যবাদী ছিলেন যে, তাঁর দ্বীনের ও তাঁর জীবনের শেষ দুশমনও তাঁকে কখনো মিথ্যাবাদী বলতে পারেনি। বরং তাঁর শত্রুরাও তাঁকে আস-সাদিকুল আমীন (বিশ্বস্ত আমানতদার) এবং সত্যবাদী ও ঈমানদার উপাধি দিয়েছে। আমাদের বিশ্বাস এই যে, দিন হচ্ছে আমাদের চোখ দেখছে। এই চোখ ধোকা দিতে পারে একথা মিথ্যা হতে পারে যে দিন হচ্ছে কিন্তু আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিনি আমাদের খবর দিয়েছেন এর মধ্যে বিন্দুমাত্র ভুল, ধোকা ও মিথ্যা হতে পারে না। আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানিয়েছেন, মানুষ পরস্পর রক্ত সম্পর্কীয় ভাই। সম্ভবত আপনারাও তা বিশ্বাস করেন।”
আমি বললাম যে, “আমাদের এখানেও তাই মনে করা হয়।”
মাওলানা বললেন, “একথা তো একদম সত্য যে, আমরা এবং আপনারা/ আমি এবং আপনি রক্তসম্পর্কীয় ভাই। বেশি থেকে বেশি এই হতে পারে যে, আপনি আমার চাচা অথবা আমি আপনার চাচা। আমার ও আপনার মধ্যে রক্ত সম্পর্ক আছে। এই রক্ত সম্পর্ক ছাড়াও আপনিও মানুষ আর আমিও মানুষ। আর মানুষ তো সে-ই যার মধ্যে প্রেম-ভালবাসা বিদ্যমান। একে অন্যের প্রতি কল্যাণের প্রেরণা বিদ্যমান। এই সম্পর্কের ভিত্তিতে আপনি যদি এটা মনে করেন যে, হিন্দু ধর্মই একমাত্র মুক্তির পথ ও মোক্ষ লাভের উপায় তাহলে আপনাকে এই সম্পর্কের দিকে তাকিয়ে ও এই সম্পর্কের খাতিরে আমাকে হিন্দু বানাবার জন্য জানপ্রাণ দিয়ে চেষ্টা করা উচিত। আর আপনি যদি মানুষ হন, আপনার বুকের মধ্যে যদি পাথর না থেকে থাকে, মায়া-মমতাশূন্য না হন, তাহলে আপনার ভেতর ততক্ষণ পর্যন্ত স্বস্তি আসা উচিত নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি ভুল পথ ছেড়ে মুক্তির পথে না এসে যাই।”
মাওলানা সাহেব আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “কথা ঠিক কিনা?”
আমি বললাম, “বিলকুল ঠিক।”
মাওলানা সাহেব বললেন, “আপনাকে সর্বপ্রথম এসেই আমাকে হিন্দু হবার জন্য বলা দরকার ছিল।”
দ্বিতীয় কথা হল, আমি মুসলমান। বহির্গত সূর্যের আলোকরশ্মির চেয়েও আমার এ কথার ওপর বেশি বিশ্বাস যে, ইসলামই একমাত্র সর্বপ্রথম ও সর্বশেষ, ফাইনাল ধর্ম এবং মুক্তি ও মোক্ষ লাভের একমাত্র পথ। আপনি যদি মুসলমান না হয়ে দুনিয়া থেকে চলে যান তাহলে চিরস্থায়ী নরকে জ্বলতে হবে। জীবনের একটি নিঃশ্বাসেরও বিশ্বাস নেই। যেই শ্বাসটি ভেতরে গেল এর কী নিশ্চয়তা যে তা বাইরে আসা পর্যন্ত আপনি বেঁচে থাকবেন। আর এরই বা ভরসা কোথায় যে, যেই নিঃশ্বাসটি বাইরে বেরিয়ে গেল তা ভেতরে নিয়ে আসা পর্যন্ত আপনি বেঁচে থাকবেন। এমতাবস্থায় আমি যদি মানুষ হই আর আমি আপনাকে আমার রক্তসম্পর্কীয় ভাই মনে করি তবে যতক্ষণ আপনি কালেমা পড়ে মুসলমান না হবেন ততক্ষণ আমার স্বস্তি আসবে না। একথা আমি নাটক হিসেবে উচ্চারণ করছি না/ বলছি না। স্বল্পক্ষণের এই সাক্ষাতের পর এই রক্ত সম্পর্কের কারণে যদি রাত্রে শুতে শুতেও আপনার মৃত্যু ও নরকে জ্বলবার খেয়াল জাগে তাহলে আমি অস্থির হয়ে কাঁদতে থাকব। এজন্য স্যার! আপনি পালখোহওয়ালদের চিন্তা বাদ দিন। যেই মালিক জন্ম দিয়েছেন, পয়দা করেছেন, জীবন দিয়েছেন তাঁর সামনে মুখ দেখাতে হবে। আমার ব্যথার চিকিৎসা তো তখন হবে যখন আপনারা তিনজনই মুসলমান হয়ে যাবেন। এজন্য আপনাকে অনুরোধ, আপনি আমার ওপর দয়া করুন। আপনারা তিনজনই কালেমা পড়–ন।
আহমদ ভাই! আমি এক অপর বিস্ময়ের সাগরে নিমজ্জিত ছিলাম। মাওলানা সাহেবের ভালবাসা তো নয় ছিল যাদু! আমি এমন এক পরিবারের সদস্য যাদের ঘুটিতে মুসলমান, মুসলিম রাজা-বাদশাহ ও ইসলামের প্রতি শত্রুতা পান করানো হয়েছিল। আমি এই খবর পড়ে সীমাতিরিক্ত উত্তেজিত ও বিক্ষুব্ধ হই এবং বিষয়টি তদন্ত করে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফুলাত গিয়েছিলাম। কিন্তু মাওলানা সাহেব আমাকে না ইসলাম সম্পর্কে অধ্যয়নের জন্য বলছেন, আর না ভুল বোঝাবুঝি দূর করার জন্যই বলছেন। ব্যাস, সোজাসুজি মুসলমান হবার জন্য বলছেন এবং অন্তরাÍা, আমার বিবেক যেন মাওলানা সাহেরব ভালবাসার নিগড় যেন অসহায় রকম বন্দী। আমি বললাম, কথা তো আপনার একেবারে সাদামাটা ও সত্য এবং আমাদেরকে ভাবতেই হবে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত এত জলদী করার নয় যে, এত তাড়াতাড়ি আমি তা নিতে পারি। মাওলানা সাহেব বললেন, সত্য কথা হল এই যে, আপনি এবং আমি সবাই মালিকের সামনে এক বড় দিনে হিসাবের জন্য একত্র হব, সে সময় এই সত্য আপনি অবশ্যই পাবেন যে, এই ফয়সালা খুব তাড়াতাড়ি করার এবং এতে বিলম্ব করার আদৌ অবকাশ নেই। মানুষ এ ব্যাপারে যত দেরী করবে, পস্তাবে।
জানি না, এরপর জীবন-জিন্দেগী ফয়সালা করার অবকাশ দেয় কি না। মৃত্যুর পর পুনরায় আফসোস ও পস্তানো ছাড়া মানুষের আর কিছুই করার থাকবে না। করতে পারবে না। এ কথা অনড় সত্য যে, ঈমান গ্রহণ করা এবং মুসলমান হাবার থেকে বেশি তাড়াহুড়া করার মত আর কোন ফয়সালা হতেই পারে না। তবে হাঁ আপনি যদি হিন্দু ধর্মকে মুক্তির পথ মনে করেন তাহলে আমাকে হিন্দু বানাতে আপনাকে এতটাই জলদী করা দরকার যেভাবে আমি মুসলমান হবার জন্য তাড়াতাড়ি করতে বলছি। আমার খেয়াল হল যে, যেই বিশ্বাসের সাথে ও যেই দৃঢ় আস্থা ও প্রত্যয়ের সঙ্গে মাওলানা সাহেব আমাকে মুসলমান হতে বলছেন সেই বিশ্বাস ও আস্থার সাথে আমি তাঁকে হিন্দু হতে বলতে পারছি না। বরং সত্য বলতে কি আমরা আমাদের গোটা ধর্মকে কোথাও শ্রুত প্রথার ওপর কাহিনীসমষ্টি ছাড়া কিছু মনে করি না। হিন্দু ধর্মের ওপর আমার বিশ্বাসের অবস্থা যখন এই তখন কাউকে কোন্ ভরসায় ও কিসের ওপর ভর করে হিন্দু হবার জন্য বলতে পারি? আমার ভেতর থেকে কেউ যেন বলছিল, রামকুমার! ইসলামের মধ্যে অবশ্যই সত্য রয়েছে যে, মাওলানা সাহেবের মধ্যে এই বিশ্বাস রয়েছে। মাওলানা সাহেব কখনো কখনো তোষামোদের সাথে আবার কখনো জোর দিয়ে বারবার আমাদেরকে কালেমা পড়ে মুসলমান হবার জন্য বলতে থাকেন। মাওলানা সাহেব যখন তোষামোদ করতেন তখন আমার মনে হত যেন কোন বিষপানে ইচ্ছুক ও আগ্রহী অথবা আগুনে লাফ দিয়ে পড়তে উদ্ধত কাউকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাবার জন্য কোন সংবেদনশীল কোন মমতাময়ী মা তোষামোদ করছেন।
মাওলানা সাহেব আমাদেরকে বারবার কালেমা পাঠের ওপর জোর দিতে থাকেন। আমি ওয়াদা করি, আমরা বিষয়টা নিয়ে অবশ্যই চিন্তা-ভাবনা করব। আমাদের পড়ার জন্য কিছু বই দিন। মাওলানা তাঁর লিখিত “আপনার আমানত আপ কী সেবা মে” আমাদের পড়তে দেন। আর প্রতিদিন একশ’বার “ইয়া হাদী, ইয়া রাহীম” এই বিশ্বাস নিয়ে পড়ার জন্য বলেন যে, ওহ্ মালিক যিনি পথ প্রদর্শন করেন সর্বাধিক দয়ালু! চোখ বন্ধ করে যখন সেই মালিককে এই সব নামে স্মরণ করবেন তখন আপনাদের জন্য ইসলামের পথ অবশ্যই খুলে দেবেন। মূলত মানুষের দিল্কে, হৃদয়-মনকে পাল্টো দেবার ফয়সালা সেই একক সত্তার কাজ। আমি মাওলানা সাহেবকে বলি, ঠিক আছে। পরিবেশ গরম হচ্ছে, উত্তপ্ত হচ্ছে। আপনি পত্রিকার এই খবর খণ্ডন করে একটি বিবৃতি দিন। মাওলানা সাহেব বললেন, আমি তাদেরকে ধর্মীয় ও তাদের আইনগত অধিকার ভেবে কালেমা পড়িয়েছি। মিথ্যা খণ্ডন কীভাবে হতে পারে? আমার অভিমত হল, আপনারও কোন মিথ্যা কথা লুকানো ঠিক নয়। আমি বললাম, আচ্ছা আমরা নিজেরাই করে দেব। এরপর আমরা ফিরে যাই। এ সময় আমার দু’জন ইন্সপেক্টর আমাকে বললেন, “স্যার, দেখলেন? কত সৎ ও সজ্জন মানুষ। আমাদের তো মনের বোঝা হালকা হয়ে গিয়েছে। মাওলানা সাহেব তো এমন মানুষ যে, কখনো কখনো শান্তির জন্য তাঁর সান্নিধ্যে এসে আমাদের বসা দরকার। কোনরূপ রাগ নেই, ঈর্ষা নেই। বিদ্বেষ নেই, নেই কোন আবেদন-নিবেদন কিংবা জটিলতা অথবা দ্ব্যর্থবোধকতা। সোজাসুজি স্পষ্ট কথা।
প্রশ্ন. আপনি কালেমা পড়েন নি?
উত্তর. আমি ঘরে গিয়ে “আপ কী আমানত আপকী সেবা মেঁ”। পড়ি। ভালবাসা, সমবেদনা ও সত্য-সাধুতা এর প্রতিটি ছত্র থেকে ঝরে পড়ছিল। পড়ে মনে হল যে, একবার পুনরায় আমার মাওলানা সাহেবের সঙ্গে সাক্ষাৎ হল। এরপর বারবার আমার ভেতর মাওলানা সাহেবের সঙ্গে সাক্ষাতের আগ্রহ থেমে থেমে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ইসলাম সম্পর্কে পড়ার আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। আমি মুজাফফর নগরে একটি দোকান থেকে কুরআন মাজীদের একটি হিন্দী অনূদিত কপি নিয়ে আসি। আমি ফোনে মাওলানা সাহেবের কাছে একটি পড়ার আকাঙ্খা ব্যক্ত করি। তিনি বলেন, দেখুন কুরআন মজীদ আপনি অবশ্যই পড়বেন। কিন্তু কেবল হ্যাঁ, কেবল একথা মনে করে যে, আমার মালিকের প্রেরিত বাণী। একথা মনে করে পড়–ন একথা ভেবে পড়–ন যে, এটি কেবল আমার জন্য কেবলই আমার জন্য পাঠানো হয়েছে। এজন্য মালিকের কালাম মালিকের কথা মনে করে খুব ভাল হয়, আপনি প্লান করে পড়–ন। পাক-পবিত্র কালামের পাক-পবিত্র নূর পাক-সাফ হয়ে সাফ-সুতরো অবস্থা পড়া উচিত। অতঃপর আমি দু’সপ্তাহে গোটা কুরআন মাজীদ পড়ে ফেলি। এখন আমার জন্য মুসলমান হওয়ার জন্য ভেতরের দরজা খুলে গিয়েছে। আমি ফুলাত গিয়ে মাওলানা সাহেবের সামনে কালেমা পড়ি। মাওলানা সাহেব আমার নাম ‘রামকুমার’ বদলে আমার ইচ্ছানুক্রমে ‘মুহাম্মদ হুযায়ফা’ রাখেন এবং বলেন যে, আমাদের নবী কারীম (সাঃ) এ নামের তাঁর এক সাহাবীকে গোপনীয়তা রক্ষা ও গোয়েন্দাগিরীর জন্য পাঠাতেন। এদিক দিয়ে এ নাম আমার খুব ভাল লাগে।
প্রশ্ন. এরপর ইসলাম সম্পর্কে পড়াশোনার আর কি কি করেছেন?
উত্তর. মাওলানা সাহেবের পরামর্শক্রমেই ছুটি নিয়ে জামা’আতে এক চিল্লা দিই। মাওলানা সাহেব আমাকে কঠোরভাবে নিষেধ করে দিয়েছিলেন আমি যেন কোন জামা’আতে আমার পরিচয় না দিই, আমি নওমুসলিম তাও না বলি। সত্যি বলতে কি আপনি জন্মসূত্রেই মুসলমান। আমাদের নবী সত্য বলেছেন, প্রত্যেক নবজাতক ইসলামী আদর্শের ওপর জন্মগ্রহণ করে থাকে। এজন্য সকল ধর্মে শিশুদেরকে দাফন করা হয়ে থাকে। আপনি জন্মসূত্রেই মুসলমান এবং আমাদের সকলের পিতাই হযরত আদম তিনি বিশ্বজাহানের সর্বপ্রথম মুসলমান ছিলেন। এজন্য আপনি পুরুষানুক্রমে মুসলমান। জামা’আতে আমার সময় ভালই কাটে। লোকে আমাকে নামায প্রভৃতি মুখস্ত করাতে চেষ্টা করেছে। গুজরাটের একজন তরুণ আলেম ছিলেন আমাদের জামা’আতের আমীর। চল্লিশ দিন আমি পুরো নামায এবং অনেক দো’আ মুখস্ত করেছি। জামা’আত থেকে ফিরে এসে দেখি আমাকে এলাহাবাদে বদলী করা হয়েছে। এলাহাবাদে পোস্টিংকালে আমি আমার স্ত্রীকে অনেক কিছু বলে দিই। সে ছিল খুব অনুগত, সহজ-সরল মহিলা। সে আমার সিদ্ধান্তের এতটুকু বিরোধিতা করেনি বরং সকল অবস্থায় আমার সাথে থাকবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। আমি তাকেও বই-পুস্তক পড়িয়েছি। আমাদের বিয়ে হয়েছে দশ বছর। কিন্তু কোন সন্তানাদি ছিল না। আমি তাকে লোভ দেখাই যে, ইসলাম কবুল করলে আমাদের মালিক আমাদের ওপর খুশি হবেন এবং আমাদের সন্তানাদিও দেবেন। সন্তান না হবার কষ্টে সে খুবই বিষণœ থাকত। এই কথায় সে খুব খুশি হয়। এক মাদরাসায় নিয়ে গিয়ে তাকে কালেমা পড়াই। আল্লাহর কাছে বহু দো’আ করি, আমার মালিক আমার রব! আপনার ভরসায় আমি তাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। আপনি আমার ভরসার সম্মান রক্ষা করুন। এবং একটা হলেও তাকে সন্তান দিন। আল্লাহর কি কাজ! এগার বছর পর আমাদের তিনি পুত্রসন্তান এবং এর তিন বছর পর এক কন্যা সন্তান দিয়েছেন।
প্রশ্ন. ইসলাম গ্রহণের পর চাকরিতে আপনার কোন সমস্যা হয়নি?
উত্তর. এলাহাবাদে পোস্টিং থাকাকালে আমি আমার ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দিই এবং আইনগত কার্যক্রম হাইকোর্টের একজন উকীলের মাধ্যমে গ্রহণ করি যেজন্য আমাকে আমার বিভাগ থেকে অনুমতি গ্রহণ আবশ্যক ছিল। আমি এজন্য দরখাস্ত করি। একজন বেদজী ছিলেন আমার বস। তিনি কঠোরভাবে আমাকে এর থেকে বাধা দেন এবং আমি এ সিদ্ধান্ত নিলে তিনি আমাকে সাসপেন্ড করবেন বলে হুমকী দেন। আমি তাকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিই, এ সিদ্ধান্ত তো আমি নিয়ে ফেলেছি। এখন আর সেখান থেকে ফেরার কোন প্রশ্নই আসে না। আপনি যা করতে পারেন করুন। তিনি আমাকে সাসপেন্ড করেন। আমি আল্লাহর শোকর আদায় করি এবং তিন চিল্লার জন্য জামা’আতে চলে যাই। বাঙ্গালোর ও মহীশূরে আমার সময় কাটে এবং আলহামদুলিল্লাহ খুব ভাল কাটে। এ সময় পর্বে তিনবার হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যিয়ারত নসীব হয় স্বপ্নে, যাতে আমি এত খুশি হই যে বলতে পারব না। আমি যখন ফিরে আসি দেখতে পাই আল্লাহ পাক আমার সব অফিসারের মন নরম করে দিয়েছেন। লাখনৌয়ের একজন মুসলমানঅফিসার যিনি খুব বড় পদে সমাসীন তাঁকে গিয়ে আমার অবস্থাটা খুলে বলি। তিনি ফুলাত গিয়েছেন এবং মাওলানা সাহেবকে চেনেন ও জানেন। তিনি আমাকে সাহায্য করেন। আমাকে চাকুরীতে পুনর্বহাল করা হয়।
প্রশ্ন. আপনার সঙ্গী দুই ইন্সপেক্টরের কী হল, যারা আব্বুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন?
উত্তর. তাদের একজন ইসলাম কবুল করেছেন। তার পরিবারের পক্ষ থেকে অনেক সমস্যা ও বিপদাপদ এসেছে। তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু তিনি দৃঢ় ও স্থির আছেন আপন বিশ্বাসে। আল্লাহ তা’আলা তার অবস্থার সমাধান করেছেন। দ্বিতীয়জন ভেতরে ভেতরে তৈরি, কিন্তু সাথীর অসুবিধাদি দৃষ্টে একটু ভীত।
প্রশ্ন. পরিবারের লোকদের ওপর কাজ করেননি?
উত্তর. আলহামদুলিল্লাহ, কাজ চলছে। ব্যাপক ও বিস্তারিতভাবে চলছে। আমার ট্রেনের সময় হয়ে গেছে। এরপর আবার কোন সাক্ষাতে বিস্তারিত বলা যাবে। শুনলে খুব ভাল লাগবে।
প্রশ্ন. ‘আরমুগান’ পাঠকদের উদ্দেশ্যে এক মিনিটে কোন পয়গাম আপনি দেবেন?
উত্তর. ইসলামের থেকে বড় কোন সত্য নেই। আর এ এমন এক সত্য যে, একে যিনি মেনে চলবেন তার এর ওপর আমল করতে কাউকে ভয় পাবার দরকার নেই, কিংবা অন্যের কাছে পৌঁছতে বাধা সৃষ্টি করারও দরকার নেই। কম বেশ বিরোধিতা আসবে। আমাদের মাওলানা সাহেব বলেন, “ইসলাম এক আলো আর সমস্ত বাতিল ধর্ম অন্ধকার। অন্ধকার কখনো আলোর ওপর জয়যুক্ত হতে পারে না বরং আলোই জয়ী হয়। আলো যখন কখনো কখনো হ্রাস পায় তখন মনে হয় অন্ধকার চতুর্দিকে ছেয়ে গেছে এবং সবকিছু ঢেকে ফেলেছে। কিন্তু আলো একটু উজ্জ্বল করে তুলে ধরুন, দেখবেন অন্ধকার দূরে পালিয়ে গেছে।” ব্যাস, আমাকে এটা মানতে হবে। আর এটাই আমার পয়গাম যে, বিজয় সবসময় আলোর মশালধারীদেরই হয়। এজন্য কোনরূপ ভয়-ভীতি ব্যতিরিকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া দরকার এবং কোন রকম লোভ-লালসা ছাড়াই সত্যিকারের পারস্পরিক ব্যথা-বেদনার হক আদায় করার নিয়তে দাওয়াত দিয়ে যাই। দেখবেন, আমার মত ইসলাম দুশমন ও মুসলমানদের প্রতি শত্রু তার মাঝে যার লালন-পালন বিরোধী তদন্তের উদ্দেশ্য গমনকারী যদি হেদায়াত জুটতে পারে তাহলে সহজ সরল মন মস্তিষ্কের লোকগুলোর উপর এর প্রভাব না পড়ে যায় কিভাবে?
প্রশ্ন. শুকরিয়া, জাযাকাল্লাহ।
উত্তর. আচ্ছা, এজাযত দিন। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতাতুহ।
প্রশ্ন. ওয়া আলাইকুমুস সালাম ও রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। অনেক অনেক শুকরিয়া। ইনশাল্লাহ আবার যখন আসবেন তখন অবশ্যই এর দ্বিতীয় অংশ শোনাবেন।
উত্তর. ইনশাল্লাহ অবশ্যই।

সাক্ষাৎকার গ্রহণে
আহমদ আওয়াহ নদীভী
সমাসিক আরমুগান, অক্টোবর ২০০৬

Related Post