মুসলমান ভাইদের কাছে আমার বিনীত আবেদন এটাই যে, আমাদের মত দুঃখী মানুষদের দুঃখ-কষ্ট বুঝতে চেষ্টা করুন যাদেরকে আল্লাহ হেদায়াত দান করেছেন। কিন্তু তাদের মা-বাপ দোযখে জ্বলছেন। একটু গভীরভাবে এই দুঃখ-কষ্ট বুঝতে চেষ্টা করুন এবং নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম যেই দায়িত্ব আমাদের মুসলমানদের কাঁধে সোপর্দ করেছেন সেজন্য ভাবুন।
আব্দুর রহমান: আসসালামু আলায়কুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ।
আহমদ আওয়াহ: ওয়া আলায়কুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। ভাই আব্দুর রহমান! বেশ কিছুকাল আগে থেকে আমাদের এখানে ‘আরমুগান-ই-দাওয়াত’ নামে প্রকাশিত একটি পুস্তকে হযরত মাওলানা আলী মিঞা নদভী (সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী সারা ভারতে এই ডাকনামেই মশহূর।Ñ অনুবাদক) (আল্লাহ তাঁর কবরকে আলোকিত করুন)-র নামে আপনার একটি পত্র প্রকাশিত হয়েছিল। সে সময় থেকে আপনার সঙ্গে সাক্ষাতের আমি খুব আগ্রহী ছিলাম। আপনি এমন এক সময় এসেছেন যখন আমার অন্য একটি প্রয়োজন সামনে। ফুলাত থেকে প্রকাশিত দাওয়াতী মাসিক ‘আরমুগান’-এ ইসলামে নবাগত সৌভাগ্যবান ভাই-বোনদের সাক্ষাৎকার প্রকাশের ধারা চলছে। সেপ্টেম্বর সংখ্যার জন্য আমি সন্ধান করছিলাম আপনার সঙ্গে সাক্ষাতের। খুব ভাল সময়ে আপনি এসে গেছেন।
উত্তর: আমারও কতগুলো খুব জরুরী পরামর্শ মাওলানা সাহেবের সঙ্গে করার ছিল। বছরখানেক হয়ে গেছে দেখা-সাক্ষাতের। ভালই হল যে, আপনার সঙ্গেও সাক্ষাৎ হয়ে গেল। আপনার সাক্ষাৎ আমার মনও চাচ্ছিল। আসলে হায়দারাবাদে আমাদের বহু বন্ধু-বান্ধব আপনার কথা খুব বলে। ওখানকার পত্রিকাগুলোতে আরমুগানের বরাতে অনেক সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। যদ্দারা বিরাট দাওয়াতী পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে এবং আলহামদুলিল্লাহ মানুষের মধ্যে দাওয়াতী প্রেরণা জন্ম নিচ্ছে। আমাদের এখানে ওরাঙ্গিল থেকে বহু মানুষ ফুলাত সফরের বিশেষভাবে আপনার সঙ্গে সাক্ষাতের প্রোগ্রাম তৈরি করছে। আল্লাহ তা’আলা আপনার হায়াত ও ইলমের মধ্যে বরকত দিন। মন খুশিতে ভরে ওঠে যখন দেখি যে, আমাদের হযরতের সাহেবযাদাও এই মিশনের সঙ্গে জড়িত হয়েছেন। আল্লাহ তা’আলা কবুল করুন।
প্রশ: আমীন! আল্লাহ আপনার যবান মুবারক করুন এবং আমার মত অযোগ্যকেও তাঁর দ্বীনের খেদমতে বিশেষ করে দাওয়াতের ময়দানে কবুল করুন। আমীন। জনাব আব্দুর রহমান সাহেব। আপনি আপনার বংশীয় ও পারিবারিক পরিচয় দিন।
উত্তর: ওরাঙ্গিল শহরের একটি বিরাট ব্যবসায়ী পরিবারে আজ থেকে প্রায় ৫১ বছর আগে ১৯৫৪ সালের ১৩ই আগস্ট তারিখে আমার জন্ম। জন্মের পর আমার নাম রাখা হয় অনিল রাও। পাঁচ বছর বয়সে আমাকে স্কুলে ভর্তি করা হয়। ১৯৫৯ সালে হাইস্কুলে, অতঃপর সেখান থেকে কলেজে ১৯৬১ সালে ইন্টার, ‘৬৪ সালে বিএসসি এবং ১৯৬৬ সালে ফিজিক্স-এ এমএসসি পাস করি। অতঃপর পিএইচডি করার জন্য রেজিস্ট্রেশন করাই।
প্রশ্ন: এরূপ উচ্চশিক্ষা লাভ করা সত্ত্বেও আপনি হরিদ্বার, ঋষিকেশ গেলেন কিভাবে?
উত্তর: আমার পিতা আমাকে বিয়ে দিতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু জানি না কেন, আমার মন এ ধরনের ঝামেলায় জড়াতে ঘাবড়াত। আমার পিতাজী বিয়ের জন্য চাপ দিলে আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে যাই। আমি হরিদ্বার অভিমুখে রওয়ানা হই। আমি ব্রহ্মচারী জীবন যাপন করতে চাইলাম। আমাদের পরিবার ছিল আর্যসমাজী। হরিদ্বারে গিয়েএকের পর এক ছয়টি আশ্রমে আমি থাকি। কিন্তু সেখানকার পরিবেশ আমার মনঃপুত হয়নি, হরিদ্বারে একজন ইঞ্জিনিয়ার বি.এইচ.এলএ চাকুরি করতেন এবং তিনি ছিলেন বিজয়ওয়াড়ার বাসিন্দা। তার সঙ্গে আমার ভাল বন্ধুত্ব জন্মে। তিনি আমার অস্থিরতাদৃষ্টে আমাকে ঋষিকেশে শান্তিকুঞ্জ নামক আশ্রমে যাবার পরামর্শ দেন কিংবা সেখানে অন্য কোন সমাজী আশ্রমের সন্ধান করতে বলেন। আমি ঋষিকেশ গিয়ে সন্ধান শুরু করি। বহু অনুসন্ধঅনের পর আমি শ্রী নিত্যানন্দজী মহারাজ্যের সত্যপ্রকাশ আশ্রম আমার জন্য উপযোগী ভাবি, যেখানে অধিকাংশই লেখাপড়া জানা শিক্ষিত লোক থাকত। স্বয়ং স্বামী নিত্যানন্দজীও অনেক লেখাপড়া জানা শিক্ষিত লোক ছিলেন। তিনি এলাহাবাদ ইউনিভার্সিটি থেকে সংস্কৃত ভাষায় ডক্টরেট করার পর অনেকদিন তিনি রীডার, অতঃপর প্রফেসর ছিলেন। ছয় বছর পর্যন্ত সেখানে ব্রহ্মচারী থেকে জ্ঞান শিখতে থাকি। ছ’বছর পর স্বামীজি আমাকে পরীক্ষার জন্য যোগ সাধনা করান এবং আমাকে শাস্ত্রী পদদান করেন। শাস্ত্রী হবার পর আমি সাত বছরে চব্বিশটি যোগ করি। এ ছিল এক বিরাট পরীক্ষা। কিন্তু আমি সব কিছু ত্যাগ করে আমার মালিককে পাবার জন্য এসেছিলাম। এজন্য আমি কঠিন থেকে কঠিনতম সময় ও সাহসহারা হই নাই।
ওরাঙ্গিল থেকে আসার সাত বছর পর আমার ভাই ও পিতাজী আমাকে খুঁজতে খুঁজতে ঋষিকেশ এসে পৌঁছেন এবং জানি না তারা আমাকে খুঁজে বের করেন ও আমার আশ্রমে আসেন। এক সপ্তাহ পর্যন্ত তারা আমাকে তোষামোদ ও খোশামোদ করতে থাকেন এবং আমি বাড়ি ফিরে যাবার জন্য জোর করতে থাকেন। কিন্তু আমার মন ঘরে ফিরতে ভয় পায়। আমি আমার পিতা ও ভাইকে খুবই খোশামোদ করি এবং ঈশ্বরকে পাওয়া পর্যন্ত আমাকে সেখানে থাকতে দেবার জন্য বলি। তারা এই শর্তে আমাকে ছেড়ে চলে যান যে, আমি আমার খরচে আশ্রমে থাকব এবং কারো দান-খয়রাত খাব না। তাঁরা আশ্রমের অদ্যাবধি যে টাকা আমার বাবদ খরচ হয়েছে তা দিয়ে যান এবং ভবিষ্যতের ব্যয়াদি নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা আশ্রম ফান্ডে জমা করেন।
প্রশ্ন: এতদিন পর্যন্ত একজন অধ্যাপক স্বামীজির প্রশিক্ষণাধীনে এ ধরনের লেখাপড়া জানা লোকের সাথে আশ্রমে থাকা সত্ত্বেও ইসলামের দিকে আসার খেয়াল আপনার মনে কিভাবে জাগল? আপনার ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে আমাদেরকে একটু বিস্তারিত বলুন।
উত্তর: আসলে যেই সত্য মালিকের সন্ধানে আমি ওয়াঙ্গিল ছেড়ে ছিলাম আমার ওপর আমার সেই মালিক করুণা অনুভব করলেন এবং তিনি আমার জন্য নিজেই রাস্তা বের করে দিলেন। আহমদ ভাই। আপনার জানা আছে যে, আর্য সমাজ হিন্দু ধর্মের খুবই সংশোধিত রূপ। এতে এক নিরাকার খোদার উপাসনার দাবি করা হয়েছে। মূর্তি পূজা ও পুরনো দেবমালা কাহিনী অস্বীকার করা হয়েছে, প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এই ধর্মের মূল গ্রন্থ ‘সর্ত্যার্থ প্রকাশ’। এটি স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী রচিত। এই ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী বিবেকানন্দ ইসলাম ধর্ম ও এর শিক্ষামালা দ্বারা খুব বেশি প্রভাহিত হন এবং তিনি হিন্দুদেরকে মুসলমান হতে বাধা দেবার জন্য হিন্দু ধর্মকে জ্ঞান-বুদ্ধি ও যুক্তিমাফিক বানাবার জন্য আর্য সমাজের ভিত্তি স্থাপন করেন। তাঁর দাবি হল, আর্য সমাজ শতকরা একশ ভাগ বৈদিক ধর্ম যা যুক্তি-তর্কের ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং একদম বৈজ্ঞানিক ও যৌক্তিক। কিন্তু যখন আমি আর্য সমাজ পড়লাম আমার মনে তখন অনেক কিছু কাঁটার মত খচখচ করে বিঁঁধতে থাকে। ১৩ বছরের কঠিন কঠোর তপস্যা সত্ত্বেও আমি আমার ভেতর কোন পরিবর্তন অনুভব করলাম না। কখনো কখনো আমি স্বামী নিত্যানন্দজীর কাছাকাছি হতে চেষ্টা করতাম ইনি নিজেই তাঁর বিষয়ে তৃপ্ত নন। ১৯৯২ সাল আমার জন্য ছিল কঠি সময়। মা-মাপকে দুঃখ-কষ্ট দিয়ে ১৩টি বছর সন্ন্যাস গ্রহণের পর লোকে আমাকে শাস্ত্রীজি বলত। এ ছাড়া আমার ভেতরের মানুষটাকে আগের তুলনায় কিছুটা পতিত অবস্থায়ই পেলাম। নানা ধরনের খেয়াল আমার দিলে জাগল। কোন কোন সময় কয়েকদিন পর্যন্ত আমার ঘুম আসত না। কখনো খেয়াল জাগত, খোদাকে পাবার রাস্তাই ভুল। আমাকে অন্য পথ খুঁজতে হবে। কখনো এই ধারণা জাগত আমার আত্মাটাই ময়লা-আবর্জনাপূর্ণ। এজন্য আমার ওপর কোন আছর হচ্ছে না। রাত্রে যখন আমার ঘুম আসত না তখন আমি উঠে পড়তাম এবং মনে মনেই আমার মালিকের কাছে দো’আ করতাম, সত্য মালিক। তুমি যদি থাকো এবং অবশ্যই তুমি আছ তাহলে তুমি তোমার অনিল রাওকে তোমার পথ দেখাও। তুমি খুব ভাল জান যে, আমি সব কিছু কেবল আর কেবল তোমাকে পাবার জন্য ছেড়েছি। এ সময় উত্তর কাশীতে কঠিন ভূমিকম্প দেখা দেয়। পুরো হরিদ্বার ও ঋষিকেশ কেঁপে ওঠে। আমার মনও আরও ভয় পেয়ে যায়। এভাবে আমিও যদি কোন দুর্যোগ ও দুর্ঘটনায় মারা যাতই তাহেল আমার কী হবে। ১৯৯২ সালে ১৭ই ডিসেম্বরের রাত। আমাকে স্বামীজি ডেকে পাঠান এবং বলেন; হরিয়ানার সোনীপথ জেলার রাই নামক স্থানে একটি বড় আর্য সমাজ আশ্রম আছে। সেখানে আশ্রমের ৫০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে উৎসব অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আমার সেখানে যাবার কথা ছিল। কিন্তু আমার শরীর ভাল নয়। এমনিতেও আমি আপনাকে পরিচয় করিয়ে দিতে চাচ্ছি। ওখানকার প্রোগ্রামে সভাপতিত্ব করা ও যজ্ঞের জন্য কাল আপনাকে যেতে হবে। একথা শুনে আমি খুশি হই যে, স্বামীজি আমাকে কত ভালবাসেন। খুশি খুশি আপন কামরায় ফিরে আসি। সফরের প্রস্তুতি গ্রহণ করি। কিন্তু রাত্রে বিছানায় শুতে গিয়ে আমার মনে হল এই সংসারের সামনে পরিচয় ও যশ-নাম-খ্যাতি হলে কী আসে-যায় তাতে? তুমি কি এজন্য ওরাঙ্গিল ছেড়ে ছিলে। মা-বাপ, ভাই-বোন সব কিছু ত্যাগ করে কি এই নামের জন্যই তুমি এসেছিলে? আমার দিল খুব ব্যথিত হল। আমার ঘুম উড়ে গেল। আমি বিছানা ছেড়ে উঠলাম এবং চোখ বন্ধ করে মালিকের কাছে প্রার্থণ করতে লাগলাম, আমার মালিক। তুমি সব কিছু করনেওয়ালা। আমার যেতে হবে। হে আমার মালিক! আর কতদিন আমি অন্ধকারে ঘুরে মরব। আমাকে তুমি সত্য পথ দেখিয়ে দাও। সেই পথ যা তোমার পছন্দনীয়। সেই পথ যেপথে চলে আমি তোমাকে পেতে পারি। খুব কেঁদে কেঁদে আমি দো’আ করতে থাকি। কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ি। ঘুমিয়ে স্বপ্নে দেখি কি আমি এক মসজিদে আছি। সেখানে একজন সৌম্যদর্শন মাওলানা সাহেব একটি সাদা চাদর গায়ে এবং পরনে লুঙ্গি। হেলান দিয়ে বসে আছেন। বহু মানুষ আদব সহকারে বসে আছে। লোকেরা বলল, ইনি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আমি তাদের জিজ্ঞেস করলাম, সেই মুহাম্মদ সাহেব যিনি মুসলমানদের ধর্মগুরু? তখন স্বয়ং হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বললেন : না, না, আমি কেবল মুসলমানদের ধর্মগুরু (রসূল) নই, বরং আমি তোমাদেরও রসূল। এরপর তিনি আমায় ধরলেন ও নিজের কাছে বসালেন এবং পরম সমাদরে আমাকে গলার সঙ্গে জড়িয়ে ধরে বললেন, যে তালাশ করে সে পায়। তুমি যদি কোন সমব্যথী ও সংবেদনশীল কাউকে পাও তবে তার কদর করবে। আজকের দিন তোমার জন্য ঈদের দিন।
আমার ঘুম ভেঙে গেল। আমার মনের অবস্থা ছিল আজীব ধরনের। আমার এক ধরনের পুলক অনুভূতি লাগছিল। নিজের মনেই নিজে খুশি হচ্ছিলাম। আমার সাথীরা আমাকে আর কখনো এত খুশি দেখেনি। তারা বলতে লাগল, স্বামীজি তাঁর স্থলে সভাপতিত্ব করার জন্য পাঠাচ্ছেন। আসলেই কর্তা আপনার খুশি হবার কথা।
তারা কী করে জানবে আমি কেন এত খুশি! সকাল সকাল উঠে আমি ঋষিকেশ বাস আড্ডায় পৌঁছি। সেখান থেকে সাহারনপুর বাস টার্মিনাল। টার্মিনালের সামনে একটি মসজিদ দেখতে পাই। আমি মসজিদের ভেতর যাই। লোকে আমাকে বিস্ময়ভরে দেখছিল। আমি তাদের বলি, মালিকেরঘর দেখার জন্য এসেছি। মসজিদের ভেতর গিয়ে আমি চারিদিকে খোঁজাখুঁজি শুরু করি রাত্রে দেখা কোন লোক পাই কি না। কিন্তু মসজিদ ছিল খালি। মসজিদ থেকে বেরিয়ে আমি এবং বড়োৎগামী বাসে গিয়ে উঠে বসি। বড়োৎ থেকে হরিয়ানার বাস পাব। সোনীপথগামী হরিয়ানা রোড ওয়েজ-এ যেয়ে বসি। সামনের সিটে আপনার আব্বা মাওলানা কলীম সাহেব বসাছিলেন। আমি তাঁর কাছে জানতে চাইলাম, আপনার পাশে আর কেউ আছেন? তিনি বললেন, না কেউ নেই। আপনি আসতে পারেন। এরপর আমাকে খুশি হয়ে পাশে বসালেন। অতঃপর আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, পণ্ডিতজী! কোত্থেকে আসছেন? আমি বললাম, ঋষিকেশ সত্যপ্রকাশ আশ্রম থেকে। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, সোনীপথ যাচ্ছেন। আমি বলি না, রাই-এ আর্য সমাজ আশ্রমের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে যজ্ঞ করার জন্য যাচ্ছি। জিজ্ঞেস করলেন, আপনি আর্যসমাজী? আমি বলি হ্যাঁ। মাওলানা সাহেব অত্যন্ত ভদ্রতা সহকারে আমার কুশলাদি জেনে কিছুক্ষণ পর আমাকে বললেন, অনেকদিন থেকে আমি কোন আর্যসমাজ গুরু সন্ধান করছিলাম। আসলে ধর্ম আমার দুর্বলতার বিষয়। আমি সব ধর্ম সম্পর্কেই পড়ি। আমার খেয়াল হয় যে, আমাদের কাছে যা আছে তাই সত্য। এই ধারণা তো ভাল নয়। যা সত্য তা আমাদের তা সে যেখানেই থাকুক না কেন। এটাই আসলে সত্য কথা। আমি সত্যার্থ প্রকাশও পড়েছি এবং বারবার পড়েছি। কতকগুলো কথা আমার উপলব্ধিতে আসেনি। সম্ভবত আমার বুদ্ধিও মোটা। আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আপনার থেকে জেনে নিই? আমি আপত্তি হিসাবে নয় বরং বোঝার জন্য জানতে চাই। আমি বললাম, অবশ্যই। বলুন কী জানতে চান? এরপর মাওলানা সাহেব আমাকে প্রশ্ন করতে শুরু করলেন। আমি উত্তর দিতে থাকি। একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকেন। সত্যি বলতে কি আহমদ ভাই! মাওলানা সাহেব প্রশ্ন করছিলেন আর আমার মনে হচ্ছিল মাওলানা কলীম সাহেব অনিল রাওকে নয় বরং অনিল রাও স্বামী নিত্যানন্দজীকে প্রশ্ন করছে। একেবারে সে সব প্রশ্ন যা আমি আমাকে করতাম। যার উত্তর সে আমাকে দিতে পারত না, আমার ওপর রাত্রে দেখা স্বপ্নের প্রতিক্রিয়া ছিল, প্রভাব ছিল। চার-পাঁচটি প্রশ্নের পর আমি আত্মসমর্পন করি এবং মাওলানা সাহেবকে বলি, মাওলানা সাহেব এসব প্রশ্ন যা আমার মনেও কাঁটার মত খচ খচ করে বিধেঁ। আর এসব প্রশ্নের উত্তর আমার গুরু স্বামী নিত্যানন্দজীও দিতে পারেননি। অতএব আমি আপনাকে কীভাবে তৃপ্ত করব। (চলবে…)