মহাগ্রন্থ আল কুরআনে যেমন মানুষের সুন্দরভাবে জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সব বিধিবিধান বর্ণনা করা হয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে মানুষের ব্যক্তিজীবনের আচার-আচরণ ও কর্মকাণ্ডের ব্যাপারেও সুস্পষ্ট ধারণা দেয়া হয়েছে। আমরা আমাদের ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক জীবন পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি ধাপে সব সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য যেভাবে কুরআন থেকে সমাধান পাই, তেমনিভাবে আল্লাহর খাঁটি বান্দা হিসেবে আমাদের পারস্পরিক আচরণ বিশেষত সদাচরণের একটি নীতিমালাও কুরআন আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছে। কুরআনের অসংখ্য স্থানে মানুষের প্রতি মানুষের সদাচরণ, পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের আচরণ, প্রতিবেশীদের সাথে আচরণ এবং বেধর্মীদের সাথে আচরণ সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এখানে সদাচরণ সম্পর্কে কুরআন থেকে নেয়া কিছু বাছাইকৃত আয়াত তুলে ধরা হলো :
﴿إِنَّ هَٰذَا الْقُرْآنَ يَهْدِي لِلَّتِي هِيَ أَقْوَمُ وَيُبَشِّرُ الْمُؤْمِنِينَ الَّذِينَ يَعْمَلُونَ الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ أَجْرًا كَبِيرًا﴾
‘এই কিতাব এমন পথ প্রদর্শন করে, যা সর্বাধিক সরল এবং সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার’ (সূরা বনি ইসরাইল : ৯)।
﴿وَإِذَا حُيِّيتُم بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوا بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوهَا ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ حَسِيبًا﴾ النساء86
‘তোমাদের কেউ যদি তোমাদেরকে দোয়া করে, তবে তোমরাও তার জন্য দোয়া করবে। তার চেয়ে উত্তম দোয়া অথবা তারই মতো ফিরিয়ে দেবে, নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে হিসাব-নিকাশ গ্রহণকারী’ (সূরা নিসা : ৮৬)।
‘হে মুমিনগণ! তোমরা যখন আল্লাহর রাস্তায় সফর করো, তখন যাচাই করে নিয়ো এবং তোমাদেরকে যখন সালাম করবে, তখন তোমরা তাকে বলো না যে, তুমি মুসলিম নও। তোমরা পার্থিব জীবনের সম্পদ অন্বেষণ করো, বস্তুত আল্লাহর কাছে অনেক সম্পদ রয়েছে’ (সূরা বনি ইসরাইল : ৯৪)।
‘তুমি কি লক্ষ করো না আল্লাহ কেমন উপমা বর্ণনা করেছেন : পবিত্র বাক্য হলো পবিত্র বৃক্ষের মতো। তার শিকড় মজবুত এবং শাখা আকাশে উত্থিত। সে প্রভুর নির্দেশে অহরহ ফল দান করে। আল্লাহ মানুষের জন্য দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেন যাতে তারা চিন্তা ভাবনা করে। আর অপবিত্র বাক্যের উপমা হলো অপবিত্র বৃক্ষ। যাকে মাটির ওপড় থেকে উপড়ে ফেলা হয়েছে। এর কোনো স্থিতি নেই’ (সূরা ইবরাহিম : ২৪-২৬)।
‘তোমার রবের প্রতি আহ্বান করো জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উপদেশ শোনানোর মাধ্যমে এবং তাদের সাথে তর্ক-বিতর্ক করো যৌক্তিক পন্থায়’ (সূরা নাহল : ১২৫)।
‘এটা আল্লাহর বড়ই অনুগ্রহ যে, আপনি তাদের প্রতি কোমল হৃদয় সম্পন্ন হয়েছেন। পক্ষান্তরে আপনি যদি রাগী ও কঠিন হতেন, তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে দূরে সরে যেত। কাজেই আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য মাগফিরাত কামনা করুন’ (সূরা আলে ইমরান : ১৫৯)।
‘যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ করো, তখন তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম বলবে। এটা মহান আল্লাহর নিকট থেকে কল্যাণময় ও পবিত্র দোয়া। এমনিভাবে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতগুলো বিশদভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা বুঝে নাও’ (সূরা আন-নূর : ৪১)।
‘হে বৎস! তোমার কথাবার্তায় মধ্যবর্তিতা অবলম্বন করবে। নিশ্চয় গাধার স্বরই সবচেয়ে নিকৃষ্ট’ (সূরা লোকমান : ১৯)।
‘তোমার প্রভু আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো। তাদের মধ্যে একজন বা উভয়েই যদি বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে উহু শব্দটিও করো না। তাদেরকে ধমক দিয়ো না, তাদের সাথে শিষ্টাচারের সাথে কথা বলো। তাদের সামনে তোমার অনুগ্রহের হাত বাড়িয়ে দাও এবং বলো : প্রভু হে! তাদের উভয়ের প্রতি রহম করো, যেমন তারা শৈশবকালে আমাকে যতন করে লালন পালন করেছেন’ (সূরা বনি ইসরাইল : ২৩-২৪)।
‘যারা সচ্ছলতায় ও অভাবের সময় আল্লাহর পথে ব্যয় করে, নিজেদের রাগকে সংবরণ করে এবং মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে, মূলত আল্লাহ তাদেরকেই ভালোবাসেন’ (সূরা আলে ইমরান : ১৩৪)।
‘যারা স্বীয় রবের জন্য সবর করে, নামাজ কায়েম করে এবং আমার থেকে প্রাপ্ত জীবিকা ব্যয় করে প্রকাশ্য ও গোপনে এবং মন্দের বিপরীত ভালো কাজ করে পরকালে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত’ (সূরা রা’দ : ২২)।
ভালো ও মন্দ কখনোই সমান নয়। মন্দকে পরিবর্তন করে দাও ভালো দ্বারা। তাহলে দেখবে যার সাথে তোমার শত্রুতা ছিল, সে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে গেছে’ (সূরা হামিম সিজদাহ : ৩৪)।
‘তোমরা তাদের দেবতাকে গালি দিয়ো না। তাহলে তারাও অজ্ঞতাবশত তোমাদের উপাস্যকে গালি দেবে’ (সূরা আনআম : ১০৮)। ‘অহঙ্কার বশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করবে না এবং পৃথিবীতে গর্ভভরে পদচারণা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ অহঙ্কারীকে ভালোবাসেন না’ (সূরা লোকমান : ১৮)।
‘রহমানের বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং মূর্খরা যখন তাদের সাথে তর্ক-বিতর্ক করার জন্য আসে তখন তারা সালাম বলে বিদায় নেয়’ (সূরা ফুরকান : ৬৩)।
‘মুমিনগণ কেউ যেন অপরকে উপহাস না করে। কেননা সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। আবার কোনো নারী অপর নারীকে যেন উপহাস না করে। কেননা সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করলে তাকে মন্দ নামে ডাকা পাপ। যারা এ ধরনের পাপ কাজ করে তওবা না করে তারাই জালেম। মুমিনগণ! তোমরা বেশি ধারণা থেকে বেঁচে থাকো। নিশ্চয় কতক ধারণা গুনাহ। আর মানুষের গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারো পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করতে পছন্দ করবে? মূলত তোমরা একে অপছন্দই করবে’ (সূরা হুজুরাত : ১১-১২)।
‘মুমিনগণ! যদি কোনো পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ আনয়ন করে, তবে তোমরা যাচাই করে নিয়ো। যাতে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতি সাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও’ (সূরা হুজুরাত : ১৬)।