Main Menu

মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুয়্যাতের মাদানী জীবন ও পর্যালোচনা

মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুয়্যাতের মাদানী জীবন ও পর্যালোচনা

মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুয়্যাতের মাদানী জীবন ও পর্যালোচনা

প্রথম পর্ব এখানে

পূর্বে প্রকাশিতের পর  ২য় পর্ব

ভ্রাতৃত্বের বন্ধন তৈরী
মদীনায় নব গঠিত ইসলামী রাষ্ট্রের অন্যতম সমস্যা ছিল মুহাজিরদের সামাজিকভাবে পুনর্বাসন করা। মক্কা থেকে যেসব মুসলমান ঘর-বাড়ি ত্যাগ করে মদীনায় চলে এসেছিলেন, তাদেল প্রায় সবাই ছিলেন সহায়-সম্বলহীন। তাদেল মধ্যে যারা স্বচ্ছল ছিলেন, তারাও নিজেদের মালপত্র মক্কা থেকে আনতে পারেননি। তাদের সবকিছু ছেড়ে একদম খালী হাতেই আসতে হয়েছিলো। এসব মুহাজির যদিও মদীনার মুসলমানদের মেহমান ছিলেন, তথাপি এদের স্থায়ী বসবাসের ব্যবস্থা করার প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছিলো। তাছাড়া এরা নিজেরাও স্বহস্তে পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করতে ভালোবাসতেন। মদীনার সমাজ ও রাষ্ট্রপ্রধান যেরূপ দক্ষতা, বিচক্ষণতা ও বুদ্ধিমত্তার সাথে এ সমস্যার সমাধান করেছিলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে তার কোন নজীর নেই। কোন অর্ডিন্যান্স জারী করা হয়নি, কোন আইন চাপিয়ে দেয়া হয়নি, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ সরকারীভাবে বরাদ্দ করতে হয়নি। শরনার্থীদের সংখ্যা নির্ধারণ করে কোন কঠোরতা করা হয়নি এবং কোন বলপ্রয়োগও করা হয়নি। কেবল একটি নৈতিক আবেদন দ্বারা এত বড় জটিল সমস্যার সমাধান মাত্র কয়েক দিনে সমাধান হয়ে যায়। বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আকীদা, আদর্শ ও লক্ষ্যের ভিত্তিতে সত্যিকার অর্থে একটা নতুন ভ্রতৃত্বের বন্ধন তৈরী করে দেন। তিনি আনসার দিগকে ডেকে বললেন, “আজ থেকে তোমরা পরস্পর ভাই ভাই।” এভাবে সমস্ত মুহাজিরকে তিনি আনসারদের ভাই বানিয়ে দিলেন। এর ফলে আল্লাহর এই খাঁটি বান্দাগণ শুধু ভাই-ই-নয়, পরস্পরে ভাইয়ের চেয়েও ঘনিষ্ট বন্ধুতে পরিণত হলো। আনসারগণ মুহাজিরদেরকে নিজ নিজ বাড়িতে নিয়ে গেলো এবং তাদের সামনে নিজেদের সমস্ত সম্পত্তি ও সামান-পত্রের হিসেব পেশ করে বললো, “এর অর্ধেক তোমাদের আর অর্ধেক আমাদের।” এভাবে বাগানের ফল, ক্ষেতের ফসল, ঘরের সামান, বাসগৃহ, সম্পত্তি মোটকথা প্রতিটি জিনিসই সহোদর ভাইদের মতো বিভক্ত হলো। কেউ কেউ তো নিজের একাধিক স্ত্রীর মধ্য থেকে একজনকে তালাক দিয়ে তার দ্বীনি ভাইয়ের সাথে বিয়ে দিতে পর্যন্ত প্রস্তুত হয়ে ছিলেন। অবিবাহিত, বিশেষত উঠতি বয়সের যে সব মুহাজির সংসারী হওয়ার পরিবর্তে নিজেদেরকে ইসলামের খেদমতে নিয়োজিত করতে চাচ্ছিলেন, তাদের বাসস্থান ছিল ‘সুফফা’ অর্থাৎ মসজিদে নববীর একটি চত্বর। তাদেরকে আসহাবে ‘সুফফা’ বলা হতো। বিনির্মাণ কাজের জন্য এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের রূপ নেয়। সুফফাবাসী সাহাবীদের অভিভাবক ছিল ইসলামী সমাজ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং তাদের প্রয়োজন পূরণের সহায়তা করতেন। ফলে আশ্রয়হীন মুহাজিরগণ সব দিক দিয়ে নিশ্চিত বোধ করলেন। তারা যথারীতি ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্ষেত খামারের কাজে লিপ্ত হলেন। এভাবে মুহাজির পুনর্বাসনের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত হলো।
ইসলামের ইতিহাস নব অধ্যায়ের সূচনা
মুহাজিরদের পুনর্বাসনের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত হওয়ার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সবাইকে কাছে পেলেন। অপর দিকে আনসারদের ঐক্যবদ্ধ সমর্থন ও সর্বাত্মক সহযোগিতা লাভ করায় ইসলাম একটি সুসংহত শক্তিতে পরিণত হয়। ইসলাম প্রচারে এবার শুধু ইসলামের মূলনীতি বিয়য়ক শিক্ষা প্রচারই সীমাবদ্ধ ছিলনা, বিভ্রান্ত ইহুদীদের পুনরায় দ্বীনি ভাবধারায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টাও চলতে লাগলো। ইতোপূর্বে ইসলামের আদর্শ প্রচার, আকীদা-বিশ্বাসের সংস্কার আর কিছু নৈতিক শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয় প্রচার করা হলেও, যেহেতু মদীনায় একটি ইসলামী রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন হয়েছে এখন সামাজিক জীবন ধারার সংস্কার, প্রশাসনিক আইন-কানুন প্রনয়ণ এবং পারস্পারিক সম্পর্ক-সন্বন্ধ বিষয়ক বিধি-ব্যবস্থা জারির প্রয়োজন দেখা দিলো। তাই এবার সমাজ ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে অপরাধ দমন আইন ও হালাল হারামের বিধান কার্যকর করলেন। এ সময় একটি বিরাট পরিবর্তন সাধিত হলো। ইতোপূর্বে শুধু কুফরী পরিবেশেই ইসলামের দাওয়াত পেশ করা হতো এবং এর ভেতর থেকেই মুসলমানরা কাফেরদের জুলুম-নিপীড়ন সহ্য করতে হতো। এবার তারা ক্ষুদ্রাকৃতির হলেও একটি স্বাধীন ইসলামী রাষ্ট্র পেলো যার চারিদিক দিয়েই ছিলো কাফেরদের দ্বারা পরিবেষ্টিত। একটা ঘুমান্ত সমাজকে সত্যের সৈনিকরা কিভাবে এগিয়ে এসে জাগিয়ে তোলে এবং চরিত্র গঠনে এক কার্যকর ও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে তা মদীনার ইতিহাসে পাওয়া যায়। ইতিবাচক ভূমিকা সামনে আসার সাথে সাথেই কোন না কোন নেতিবাচক ভূমিকারও আবির্ভাব ঘটে যা ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়। গঠনমূলক কাজ শুরু করলে একটা নাশকতামূলক শক্তিরও আবির্ভাব ঘটে। সত্য যখন ময়দানে সক্রিয় হয় তখন বাতিলের ময়দানেও অশুভ তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। মদীনায় শান্তির সমাজ প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেখে শয়তান নিদারুন অস্থিরতা ও অস্বাভাবিক যন্ত্রণায় পড়ে গেল। তাই সে নিজের কিছু সমর্থককে ঐক্যবদ্ধ করে প্রবল প্রতিরোধের জন্য ময়দানে হাজির করলো। ব্যাপারটি এখন আর শুধু উৎপীড়ন, হয়রানী আর নির্যাতনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রইলো না, বরং গোটা আরব উপদ্বীপই এবার সংকল্প গ্রহণ করলো যে, এ নগণ্য দলটিকে তাদের ক্ষমতাসহ যতো শীঘ্রই সম্ভব খতম করে দিতে হবে; নচেত ইসলামের এ কেন্দ্রটি শক্তি অর্জন করতে শুরু করলে তাদের জন্যে ভবিষ্যতে জনগণকে আর প্রতারিত করা, ধোঁকা দিয়ে ভুল বুঝানো সম্ভব তো হবেই না বরং তাদের নিজেদের কুকর্মের কারণে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করা কঠিন হবে। কাফেরদের ষড়যন্ত্রের মোকাবেলায় ইসলামী রাষ্ট্রের অস্তিত্ব অটুট রাখার মাধ্যমে জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানদের নিয়ে কতিপয় কর্মকৌশল ঠিক করলেন যার সার সংক্ষেপ হচ্ছে;

১. এখন থেকে পূর্ণ উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে ব্যাপকভাবে ময়দানে ইসলামের আদর্শ প্রচার করা হবে। দলীল-প্রমাণ দ্বারা তার সত্যতা প্রতিপন্ন করা এবং ব্যাপক জন সমর্থন পক্ষে আনার চেষ্টা করতে হবে।

২. বিরুদ্ধবাদিগণ যে-সব আকীদা-বিশ্বাসকে নিজেরা আঁকড়ে ধরে জীবন পরিচালনা করছে এবং জনগণের মাঝে প্রচার করছে, যুক্তি-প্রমাণের সাহায্যে তার অসারতা প্রমাণ করতে হবে যাতে বিবেগবান মানুষ সহজেই প্রকৃত সত্যকে গ্রহণ করতে কোন সংশয় সন্দেহ না করে।

৩. ঘর-বাড়ি ও ব্যবসা-বাণিজ্য নষ্ট করে যারা এ নতুন রাষ্ট্রে এসে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের জন্যে শুধু বসবাসের ব্যবস্থাই নয়, একই সাথে তাদেরকে উন্নতমানের নৈতিক ও ঈমানী শিক্ষা দিতে হবে। যাতে চরম দুঃখ-দারিদ্র এবং চরম অনিশ্চয়তার মধ্যেও তারা পূর্ণ ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে পারে। কোন কঠিনতর অবস্থায়ও যেন কারো পদস্খলন না হয়।

৪. মুসলমানদেরকে চরম প্রতিকূল অবস্থার মোকাবেলার জন্যে প্রস্তুত করা, যাতে করে তাদের শেষ করার উদ্দেশ্যে বিরোধীরা কোন সশস্ত্র হামলা চালালে নিজেদের দুর্বলতা ও অস্ত্রপাতির সল্পতা সত্ত্বেও তারা পূর্ণ দৃঢ়তার সাথে শত্রুর প্রতিরোধ করতে পারে। আপন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সত্যতা সম্পর্কে গভীরতর প্রত্যয় ও আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থার সাথে শেষ পর্যন্ত লড়াই করতে পিছপা না হয়। ৫. যেসব লোক নানাভাবে বুঝানো সত্ত্বেও ইসলামের কাঙ্খিত জীবন পদ্ধতির প্রতিষ্ঠার পথে বাঁধ সাধবে, তাদেরকে প্রয়োজন হলে শক্তি প্রয়োগ করে ময়দান থেকে বিতাড়িত করার মত সাহস ও দৃঢ়তা দেখাতে হবে।

ইহুদীদের চক্রান্ত রোধে তাদের সাথে চুক্তি
প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে এটা সর্বজনবিদিত যে, নববী যুগের কিছু দিন পূর্বেও কিতাবধারীরা (ইহুদীরা) এক মহামানব এবং সর্বশেষ নবীর আগমনের অপেক্ষায় ছিলো। নবুয়্যাতের আগে মদীনার ইহুদীরা প্রতিবেশী আরবদের এই বলে শাঁসাতো যে, ‘প্রতিশ্রুত নবীর আগমন মূহুর্ত প্রায় আসন্ন। আমরা তাঁর সহযোগী হয়ে শক্রদের শক্তি চূর্ণ করে দেবো।’ অথচ ইতিহাস থেকে আমরা প্রচুর ঘটনা এমনও দেখতে পাই যে, প্রতিশ্রুত নবীকে হত্যা করার ব্যাপারে ইহুদীরাই সবচেয়ে বেশী তৎপরতা দেখায়েছে। একবার শিশু নবীকে কোলে নিয়ে তাঁর ধাত্রী মা হালিমা এক মেলায় যাচ্ছিলেন। এক ইহুদী গণক তাঁকে দেখামাত্র চীৎকার জুড়ে দিলোঃ ‘ওহে ইহুদীরা! তোমরা শীঘ্রই ছুটে এস এবং এই শিশুটিকে মেরে ফেল। এ শিশু ভবিষ্যতে তোমাদের উৎখাত করে ছাড়বে।’ অনুরূপভাবে কিশোর বয়সে নবীজী একবার তাঁর চাচার সাথে বাণিজ্যিক কাফেলায় শামিল হয়ে শামদেশে যাচ্ছিলেন। সেখানে এক খৃষ্টান ধর্ম গুরু তাঁর চাচা আবু তালেবকে পরামর্শ দিলেন,‘সামনে আর অগ্রসর হয়োনা। ইহুদীরা এই শিশুর ঘোরতর শক্র। তাঁকে দেখতে পেলে এবং চিনতে পারলে প্রাণে মেরে ফেলবে।’ অবশেষে বাণিজ্যিক কাফেলা সামনে অগ্রসর না হয়ে মক্কায় ফিরে আসে। ইহুদীরা এর আগেও অনেক নবীকে হত্যা করেছে যার উল্লেখ করা হয়েছে সূরা ‘বাকারা’র ৬১ নং আয়াতে। ইহুদীরা যে মুসলমানদের চরম শক্র তা সূরা ‘মা‘য়িদা’র ৮২ নং আয়াতে আল্লাহ পাক প্রথমে ইহুদী তারপর মোশরেকদের শক্রতার কথা উল্লেখ করেছেন। আর মদীনার চারিদিকেই ছিলো সেই ইহুদীদের বসতি। ইহুদীদের এধরণের চরিত্রের কারণেই তাদের দাওয়াত দান করার সাথে সাথে একটা রাজনৈতিক সম্পর্ক নির্ধারণেরও প্রয়োজন ছিলো। মুসলমানদের মক্কা ত্যাগের কথা জানতে পেরে কাফির কুরাইশগণ নিশ্চিত হয়ে বসে থাকেনি, বরং মুসলমানদের একটি সংঘবদ্ধ দলকে মদীনায় একত্রিত হতে দেখেই তারা ইসলামের এ নয়া রাষ্ট্রকে তাদের শক্তি ও প্রভাবে মিটিয়ে দেবার পন্থা সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা শুরু করে দিয়েছিলো। এ কারণেই মদীনার চার দিকের ইহুদীদের সাথে একটা স্পষ্টতর রাজনৈতিক সম্পর্ক নির্ধারণের প্রয়োজন দেখা দিলো, যেনো মক্কার মুশরিকগণ কোন হামলা চালালে ইহুদীদের ভূমিকাটা অনুমান করা যায়। তাই মদীনা ও লোহিত সাগরের মধ্যবর্তী এলাকায় বসবাসকারী ইহুদী গোত্রগুলোর সাথে আলাপ-আলোচনা শুরু করা হলো। এদের মধ্যে কারো কারো সঙ্গে রাসূল (সঃ) নিরপেক্ষতার চুক্তি সম্পাদন করলেন। চুক্তির ধারায় উল্লেখ করা হলো যে, কুরাইশ বা অন্য কেউ যদি মদীনার মুসলমানদের ওপর হামলা করে, তাহলে এরা না মুসলমানদের পক্ষে লড়াই করবে আর না তাদের শক্রপক্ষকে সমর্থন করবে। আর কারো সাথে এই মর্মে চুক্তি করা হলো যে, যদি মুসলমানদের ওপর কেউ হামলা করে, তাহলে তারা মুসলমানদেরকে সক্রিয়ভাবে সাহায্য করবে।
মুনাফিকদের ষড়যন্ত্র
মদীনায় ইসলাম প্রচার ও প্রসারে যে সকল নতুন সমস্যার উদয় হয়েছিলো তার মধ্যে মুনাফিকদের ষড়যন্ত্র ছিলো অতিব সমস্যা সংকুল। মক্কায় শেষ পর্যায়ে এমন কিছু লোক ইসলামী আন্দোলনে শামিল হয়েছিলো যারা ইসলামের দাওয়াতকে সম্পূর্ণ সত্য বলে জানতো, কিন্তু ঈমানের দুর্বলতাবশত ইসলামের খাতিরে পার্থিব স্বার্থত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিলনা। চাষাবাদ,ব্যবসা-বাণিজ্য,আত্মীয়তা ইত্যাদি ইসলামের দাবী পুরণের পথে তাদের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতো। কিন্তু মদীনায় আসার পর এমন কিছু লোকও ইসলামী দলে অনুপ্রবেশ করলো, যারা আসলেই ইসলামে বিশ্বাসী ছিলো না। এরা নিছক ফিতনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই ইসলামে শামিল হয়েছিলো। আবার কিছু লোক অক্ষমতা হেতু নিজেদেরকে মুসলমান বলে জাহির করতো। এদের হৃদয় যদিও ইসলাম বদ্ধমুল ছিলনা, কিন্তু নিজ গোত্র বা খান্দানের বহু লোক মুসলমান হবার ফলে এরাও বাধ্য হয়ে মুসলমানদের মধ্যে শামিল হয়ে যায়। সেই সাথে আরো কিছু সুযোগ সন্ধানী লোকও ইসলামী দলে ঢুকে পড়েছিলো। এরা এক দিকে মুসলমানদের সাথী হয়ে পার্থিব ফায়দা হাসিলের চিন্তা করতো, অন্যদিকে কাফিরদের সাথেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখতো। এদের চেষ্টা ছিলো-ইসলাম ও কুফরের সংঘর্ষে যদি ইসলাম বিজয়ী হয়, তাহলে এরা যেনো ইসলামের মধ্যে আশ্রয় পেতে পারে; আর যদি কুফর জয়লাভ করে, তবুও যেনো এদের স্বার্থ নিরাপদ থাকে। এদের এই চাতুরতা সম্পর্কে আল্লাহ পাক সূরা ‘বাকারার’ আট আয়াত থেকে বেশ কয়েকটি আয়াতে ধারাবাহিক ভাবে উল্লেখ করেছেন। তারা নিজেদেরকে খুব বুদ্ধিমান আর খাঁটি ঈমানদারকে বোকা মনে করে। তার কারণ হচ্ছে যারা সাচ্চা দিলে নিষ্ঠা সহকারে ইসলাম গ্রহণ করার সাথে ময়দানে কাজ করতেন বাতেলের হাতে নানা প্রকার উৎপীড়ন, নির্যাতন,কষ্ট ও বিপদের সম্মুখীন হতেন বিধায় তাদেরকে তারা নির্বোধ মনে করতো। তাদের মতে নিছক সত্য ও ন্যায়ের জন্য সারা দেশের জনসমাজের শক্রতার মুখোমুখি হওয়া নিরেট বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। তারা মনে করতো, হক ও বাতিলের বিতর্কে না জড়ায়ে সব ব্যাপারেই কেবলমাত্র নিজের স্বার্থের দিকে দৃষ্টি রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। এরা মুসলমান সেজে ভিতর থেকেই মুসলমানদের জামায়াতের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করে। মুসলমানদের গোপনীয় বিষয়সমূহ জেনে নিয়ে তা শক্রদের জানিয়ে দিত। ইসলাম সম্পর্কে অমুসলিমদের মধ্যে খারাপ ধারণা সৃষ্টি করতে এবং সহজ সরল মুসলমানদের মনে সন্দেহ-সংশয় ও দ্বিধা- দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করতে তারা এমন কৌশল অবলম্বন করে যা কেবল মুসলমান সেজে থাকা একজন মুনাফিকের পক্ষেই সম্ভব। ইসলামের প্রকাশ্য শক্ররাও এমন সব কৌশল করতে পারে না। ইসলামী দলের পক্ষে এই মিত্রবেশী শক্ররাই ছিলো সবচেয়ে বেশী অসুবিধার কারণ। এদের সঙ্গে কাজ করা মোটেই সহজতর ছিলো না। মদীনার গোটা জীবনে এই শ্রেণীর লোকদের সৃষ্ট ফেতনার কিভাবে মুকাবেলা করা হবে তা ছিলো রীতিমত ভাবনার বিষয়।

এক শ্রেণীর ধর্মীয় মহলের বিরোধিতা
অপর দিকে ইসলাম ও জাহেলিয়াতের ইতিহাসে এটা একটা মর্মপীড়াদায়ক ঘটনা যে, ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজে বিরোধীতার তালিকায় এক শ্রেণীর ধর্মীয় মহল জড়িত থাকে। যেটা এখনও স্পষ্টভাবেই পরিলক্ষিত হচ্ছে। ধর্মীয় মহলের যেখানে সত্য দীন প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালনের কথা, সেখানে তারাই ইসলাম প্রতিষ্ঠা হোক তা মেনে নিতে পারেন না। এর কিছু উপকরণও তাদের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়। যেমন, ধর্মীয় মহল প্রথমে ধর্মের খাদেম ও পতাবাহী হয়। কিন্তু ক্রমান্বয় যখন তাদের একটা পদপর্যাদার সৃষ্টি হয়ে যায় এবং ধর্মের সাথে তাদের কিছু স্বার্থ জড়িত হয়ে যায়, তখন তারা ধর্মকে নিজেদের তাবেদার বানিয়ে নেয় এবং ধীরে ধীরে ধর্মের নামে নিজেদের কিছু চিরস্থায়ী অধিকার সৃষ্টি করে ফেলে। ধর্মপ্রাণ জনসাধারণকে তারা নিজেদের কিছু শ্রেণী ভিত্তিক দাবীদাওয়া মানতে বাধ্য করে এবং এর পরিণামে তাদের জন্য কিছু বিশেষ সম্মানজনক পুরস্কার নির্দিষ্ট হয়ে যায়। ধর্ম তার অনুসারীদের নৈতিক অধোপতনের যুগে সর্বদাই এই সব স্তর অতিক্রম করে থাকে। এ পর্যায়ে এসে ধর্ম একটা চমৎকার লাভজনক ব্যবসায়ে পরিণত হয় এবং তা উত্তরাধিকার সূত্রে হস্তান্তরযোগ্য স্থাবর সম্পত্তির রূপ ধারণ করে। এ পর্যায় এসে ওয়ায নসীহত হয়ে যায় ব্যবসায়িক পণ্য, ধর্মীয় শিক্ষা হয়ে যায় জীবিকার উপায়। আর ফতোয়া বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পর্যবসিত হয়ে একটা নিজস্ব বাজার মূল্য সৃষ্টি করে। ধর্মীয় পদ আধ্যাত্মিক নেতৃত্ব ও ক্ষমতার সিড়িতে পরিণত হয়। ধর্মীয় নেতারা একবার এই স্তরে উপনীত হলে তাদের বাণিজ্যিক মানসিকতা প্রত্যেক ব্যাপারে এরূপ চিন্তা করতে বাধ্য হয় যে, আমাদের স্বার্থ বহাল আছে কিনা, এবং আমাদের পদমর্যাদা অন্য কেউ কেড়ে নিচ্ছে নাতো? ব্যবসায়ী মনমানস যখন এসব গুণবৈশিষ্ট সহকারে ধর্মের গন্ডীতে প্রবেশ করে তখন তাদের মধ্যে কতিপয় বৈশিষ্ট দেখা দিতে থাকে। যেমন,১. কারো দিক থেকে ভিন্নমত পোষণ সহ্য করতে পারেনা এবং কোন বৃহত্তর উদ্দেশ্যে অন্যদের সাথে সহযোগিতা করতে পারেনা। ২. নিজেদের মধ্যে কোন ভুল ভ্রান্তি বা দুর্বলতার অস্তিত্ব স্বীকার করেনা এবং তা সংশোধনেও প্রস্তুত হয় না। ৩. নেতৃত্বের পদ ও প্রভাব বিস্তারে গদি ছেড়ে অন্য কারো নেতৃত্ব, নির্দেশে বা আহবানে অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারেনা। এসব বৈশিষ্টের চরম অবস্থায় পৌঁছে ছিল ইহুদী জাতির ধর্মীয় মহল। বক ধার্মিকতা ও বিকৃত দীনদারীর আরো একটি ক্ষতিকর দিক এই হয়ে থাকে যে, তারা সত্য পন্থীদের বিপদে কোন অবস্থায়ই ধর্মীয় পক্ষের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত হয় না। বরং তাদের ভূমিকা ধর্মের শক্রদের তথা কুফরী, নাস্তিকতা ও পাপাচারীদের পক্ষেই যায়। যাদের কাছে কোন প্রাণবন্ত আদর্শ ,স্বভাব ও চরিত্রে সমকালীন মানব সমাজের জন্য কোন আকর্ষণ নেই এবং যাদের কাছ থেকে মানব জাতির কোন গঠনমূলক সেবা পাওয়ার আশা নেই, তারা নিছক অন্যদের গতি রোধ করা ব্যতীত নিজেদের জন্যে কোন স্থায়ী সাফল্য আনতে পারেনা। যাদের কাছে স্থবিরতা, কর্মবিমুখতা, গোঁড়ামি, বিকৃতি ও স্বার্থপরতাই বিরাজ করে. তারা সঠিক কাজের প্রতিবন্ধকতা ছাড়া আর কিইবা করতে পারে? শেষ পর্যন্ত এ ধরনের লোকদের কপালে ব্যর্থতা ও অপমান ছাড়া আর কিছু জোটে না। আমরা কুরআন থেকে জানতে পাই যে, দ্বিতীয় হিজরীর শাবান মাসে কেবলা পরিবর্তনের ঘঁটনায় তো ইহুদী সমাজের প্রতিহিংসা ও বহু কপট মুসলমানেরই-যাদের হৃদয় ঈমানের আসন প্রতিষ্ঠিত হয়নী-তাদের আসল চেহারা প্রকাশ পেল। তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তীব্র সমালোচনা করলো। এর ফলে ইসলামী আন্দোলনে এসব লোকের ভূমিক কি, তা- স্পষ্ট হয়ে উঠলো। এভাবে বহু স্বার্থপর দো-দিল বান্দাহ ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজে নীরব থেকে ইহুদীদের সহযোগী হলো। মক্কার কোরেশদের বিরোধীতার পেছনে আসল চালিকাশক্তি ছিল দাম্ভিকতা ও অহংকার। আর ইহুদীদের মন আচ্ছন্ন ছিল প্রতিহিংসা, বিদ্বেষ ও পরশ্রীকাতরতায় ভরপুর। কোরায়েশরা অভিজাত্যবোধ ও শ্রেষ্ঠত্ববোধের রোগে আক্রান্ত ছিল, আর ইহুদীরা আক্রান্ত ছিল হীনমন্যতার ব্যাধিতে। এ জন্য কোরায়েশদের মধ্যে ছিল খোলাখুলি প্রত্যাখ্যান ও সংঘাতের মনোভাব। আর ইহুদীদের বিরোধিতায় প্রাধান্য ছিল কুটিল ষড়যন্ত্র ও ধাপ্পাবাজী স্বভাবের । কোরায়েশদের মধ্যে ছিল বীরোচিত দাম্ভিকতা আর ইহুদীদের স্বভাবে ছিল কাপুরুষোচিত ইতরামী। কোরায়েশদের বিরোধিতায় যেখানে সরাসরি আক্রমণাত্মক বৈশিষ্টের অধিকারী ছিল, সেখানে ইহুদীরা এগিয়ে ছিল গোপন যোগসাজশ, চক্রান্ত, কপটতা ও ভন্ডামীর দিক থেকে। সত্য ও ন্যায়ের পতাকাবাহীদের ডাকে যারা সাড়া দেয়,তাদের চরিত্র যতটা উন্নত মানের হয়ে থাকে, তাদের বিরোধিতাকারীদের চরিত্রে ঠিক ততই অধোপতন ঘটে। ইতিবাচক আন্দোলন মানবতাকে যতটা নৈতিক চরিত্র সম্পন্ন মানুষ হতে সহায়তা করে,নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তাকে ততোটাই বিকৃত ও বেপরওয়া করে দেয়।
ইসলামের গতি রোধ করতে পঞ্চম বাহিনী তৈরী
মানবেতিহাসের অভিজ্ঞতা সাক্ষ দেয়, যখনই সততা ও মানব কল্যাণের লক্ষ্যে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা সহকারে কোন আন্দোলন পরিচালিত হয়েছে এবং তা বিজয়ের দিকে এগিয়ে চলেছে, তখন তার প্রতিরোধকারী শক্তিগুলোর একটি হয়ে থাকে যারা প্রকাশ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং সমকালীন অস্ত্র প্রয়োগ করে তারা শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যায়। অপর শক্তিটি হয়ে থাকে সেই সব নৈরাজ্যবাদী ও নাশকতাবাদী লোক, যারা চারিত্রিক হীনতা ও নীচতার কারণে কাপুরুষতা ও শঠতার নিম্নস্তরে নেমে আসে এবং মোনাফেকীর গোপন ঘাঁটিতে বসে চক্রান্তের জাল বিস্তারের কাজে আত্মনিয়োগ করে। মক্কার মোশরেকদের প্রতিক্রিয়াশীল আচরণ ছিল প্রথমোক্ত শক্তি আর মদীনার ইহুদী ও তাদের বংশবদরা ছিল শেষোক্ত শক্তি। ইসলামী আন্দোলন যে উন্নত নৈতিক চরিত্রের অধিকারী জনশক্তির সমাবেশ ঘটিয়েছিল, তাদের সামনে টিকে থাকার মত সমমানের নৈতিক চরিত্র সম্পন্ন জনশক্তি ইহুদীদের কাছে ছিলনা। তাদের কাছে যে জনশক্তি ছিল, তা নৈতিক দিক দিয়ে মনুষ্যত্বের কাংখিত সর্বনিম্নমানের চেয়েও নিম্ন মানের ছিল। এই পতিত দশা থেকে টেনে তোলার মত কোন প্রেরণা ও চালিকাশক্তি তাদের কাছে অবশিষ্ট ছিলনা। মানবতার পুনর্গঠনের কুরআনী দাওয়াত যে নতুন মানুষ গড়ে তুলেছিল, ইহুদীবাদের গড়া প্রাচীন ধাচের মানুষ তার সামনে দাঁড়ানোরই যোগ্য ছিলনা। অপপ্রচার চালিয়ে ভুল বুঝাবুঝি ও শক্রতা যতই সৃষ্টি করুক না কেন, যুক্তির ময়দানে ইহুদী শক্তি ক্রমেই পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছিল। সমকালীন মানব সমাজ তাদেরকে পেছনে ফেলে ইসলামী জীবন ব্যবস্থার পতাকা উড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল। রাজনৈতিক অংগনে ইহুদীদের সাধ ছিল ইসলামী বিপ্লবকে ধ্বংস করে দেবে। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে তাদের সে শক্তি ছিলনা। তাদের এ অক্ষমতা ও অসহায়ত্বের অনুভূতি তাদের চরিত্রের মৌলিক বৈশিষ্টের সাথে মিলিত হয়ে কাপুরুষত্বের রূপ ধারণ করেছিল। অসহায়ত্ব ও কাপুরুষত্বের পরিবেশে মানুষের মনে যে প্রতিদ্বন্দ্বি মানসিকতা সক্রিয় থাকে, তা সর্বদাই হিংসা ও বিদ্বেষের পথ দিয়ে তাকে মোনাফেকির গোপন ঘাঁটিতে পৌঁছে দিয়ে থাকে। ফলে সে প্রতিপক্ষের ওপর সম্মুখ থেকে আক্রমণ চালানোর পরিবর্তে পেছন থেকে গোপন আঘাত হানে। ইসলামের ক্রমবর্ধমান শক্তি দেখে অনেকে নিজেদের ভবিষ্যত গড়ে তোলার জন্য এই চোরা পথ দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে লাগলো। এরা নিছক ফেতনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই ইসলামে শামিল হয়েছিল। নীজ বংশের বহু লোক মুসলমান হবার ফলে এরা বাধ্য হয়ে মুসলমানদের মধ্যে শামিল হয়ে যায়। মক্কার মোশরেক আর মদীনার ইহুদী এই দুই শক্তি মিলে ইসলামের গতি রোধ করতে এই স্তরে থাকা মোনাফেকদের দিয়ে তৈরী করলো পঞ্চম বাহিনী। পঞ্চম বাহিনীর কাতারে যত লোক শরীক হয়েছিল, তারা সকলেই ছিল বয়সে প্রাচীন ও স্বচ্ছল। তারা ছিল স্বার্থপর এবং পাষাণ হৃদয়। তারা পরিচিত মহল থেকে নতুন নতুন মোনাফেককে ভর্তি করতো। তাছাড়া মুসলমানদের মধ্য থেকে দুর্বল লোকদেরকে খুঁজে তাদেরকেও প্রভাবিত করতো, তাদেরকে ব্যবহার করতো, তাদের মধ্যে সন্দেহ সংশয় ছড়িয়ে মুসলমানদের পরিবেশ ঘোলাটে করতো। গোপন সলাপরামর্শ, গুজব রটনা, কানাঘুষা ও ফিসফিসানির এই পরিবেশে ইসলামী আন্দোলনের প্রধানতম নেতার ব্যক্তিত্ব শুরু থেকেই আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিল এবং একের পর এক আক্রমণ চালানোও হচ্ছিল। ইসলামের উদারতার সুযোগে নাশকতাবাদী কুচক্রী ফেতনাবাজদের ভাগ্য যদি সুপ্রসন্ন হয়, তাহলে কুটিল থেকে কুটিলতর এবং জঘন্য অপবাদ রটনা করে কোন প্রলয়ংকরী বিপর্যয় ঘটিয়ে দেয়া অসম্ভব ছিলনা। এ সুযোগ গ্রহণ করে মোনাফেকদের দক্ষতার সাথে কাজে লাগানোর জন্য শয়তানের দ্বিতীয় যে জিনিসটির প্রয়োজন ছিল, তা হলো এমন একজন ঝানু লোক, যার মস্তিষ্ক কুটিল চক্রান্ত উদ্ভাবনে অত্যন্ত সৃজনশীল ও দক্ষ হবে, এবং যার বুকে গোপন সলাপরামর্শকারীদের সৃষ্টি করা বারুদের স্তুপে জলন্ত অংগার নিক্ষেপের সাহস থাকবে। আব্দুল্লাহ বিন উবাই ছিল সে বৈশিষ্টের অধিকারী।
তাই এই বাহিনীর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দায়িত্ব দেয় হলো

আব্দুল্লাহ বিন উবাইর হাতে। ইসলামের গতি রোধের চেষ্টায় সমগ্র অপকর্ম নাটকের প্রধান খলনায়ক হয়ে ইতিহাসের মঞ্চে অভিনয় করতে থাকে এই ব্যক্তি। তার পেছনে ছিল বড় বড় ইহুদী ও মোশরেক নেতাদের আশীর্বাদ। আর সাথী ছিল সচেতন মোনাফেক, অপরিপক্ক মুসলমান ও নিরক্ষর বেদুইনরা। মদীনায় মুসলমানরা যে সব বিরোধিতা ও চক্রান্তের সম্মুখীন হয়েছে তার সবগুলোর পেছনে ইহুদী প্রভাবিত মোনাফেকদের এই বিকৃত ও ধ্বংসাত্মাক শক্তির বিরাট ভূমিকা ছিল, যারা ইহুদীদের ক্রীড়ানক হিসেবে কাজ করতো। সবচেয়ে বেশী সমস্যা সৃষ্টি করতো ডাহা মিথ্যা, বানোয়াট ও নোংরা অপপ্রচারের মাধ্যমে। যেমন, পদলোভের অভিযোগ, ধর্মীয় প্রতীক সমূহের অবমাননার অভিযোগ, ধর্মের আড়ালে স্বার্থোদ্ধারের অপবাদ, আয়শা (রা:) এর ব্যপারে জঘন্য মিথ্যা অপবাদ ইত্যাদি। আধুনিক কালের কিছু বিদ্বেষপরায়ণ নব মোনাফেকরা ও ইসলামী আন্দোলন ও তার ধারক বাহকদের বিরুদ্ধে তৎকালীন দুশমনদের আরোপিত সমস্ত নোংরা অপবাদকে ইতিহাস থেকে হুবহু গ্রহণ করে চলেছে। অপর দিকে হাজারো বাধা উপেক্ষা করে যুবকরা সাধারণত ইসলামী আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েছিলো। তাদের সাহস যোগায়েছে আল্লাহর বাণী, “প্রত্যেক দুঃখের সাথে অবশ্যই সুখ রয়েছে।” এই দর্শনে তাদের ছিল পূর্ণ আস্থা । (চলবে…)

Related Post