রমজানের রোজা যাদের উপর ওয়াজিব

eid-mubarak-card

স্মর্তব্য যে, রমজান মাসের রোজা ইসলামের অন্যতম একটি ফরজ। আল্লাহ তাআলা বলেন
{يا أيها الذين آمنوا كتب عليكم الصيام} [البقرة183] إلى قوله {فمن شهد منكم الشهر فليصمه} [البقرة 185]،
হে ঈমানদারগণ তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে।(সূরা বাকারা:১৮৩ ) -থেকে নিয়ে- অতঃপর তোমাদের কারো নিকট রমজান উপস্থিত হলে সে যেন রোজা রাখে। (বাকারা:১৮৫)
আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“بني الإسلام على خمس: شهادة أن لا إله إلا الله وأن محمد رسول الله، وإقام الصلاة وإيتاء الزكاة، وصوم رمضان، وحج البيت من استطاع إليه سبيلا” متفق عليه [أخرجه البخاري رقم 8 ومسلم رقم 16]
ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি বিষয়ের উপর রাখা হয়েছে, এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল। সালাত কায়েম করা। জাকাত প্রদান করা। রমজানের রোজা রাখা। বাইতুল্লাহর হজ করা যে তার সামর্থ রাখে। ( বুখারি-৮ মুসলিম-১৬)
আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় রোজা ফরজ। আর হাদিস দ্বারা বুঝা যায়, রোজা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি রুকন। সকল মুসলমান এ বিষয়ে একমত যে, রমজানের রোজা ফরজ। যে অস্বীকার করবে সে কাফের ও মুরতাদ বলে গণ্য হবে। তাকে তাওবা করতে বলা হবে, যদি তাওবা করে ভাল, অন্যথায় হত্যা করা হবে । প্রতিটি মুসলমানের ওপরই রমজানের রোজা ফরজ।
যদি কোন ব্যক্তি রমজান মাসে ইসলাম গ্রহণ করে তাকে অবশ্যই অবশিষ্ট দিনগুলো রোজা রাখতে হবে। তবে মাসের শুরু হতে যে সব রোজা ছুটে গেছে সেগুলোর কাজা করা ওয়াজিব নয়। রোজা সাধারণত: প্রাপ্ত বয়স্কদের উপরই ওয়াজিব । নাবালেগ-অপ্রাপ্ত বয়স্কদের উপর ওয়াজিব নয়। আর কিশোর বাচ্চা যে ভালো মন্দের বিচার করতে পারে, তার জন্য রোজা ওয়াজিব নয়। তবে সে রোজা রাখেলে তা নফল হবে। আর প্রতিটি অভিভাবকের উচিত রোজা রাখতে সক্ষম বাচ্চাকে রোজা রাখার প্রতি উৎসাহিত করা, নির্দেশ দেয়া। যাতে তার অভ্যাস গড়ে উঠে। পাগলের উপর রোজা রাখা ওয়াজিব নয়।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : তিন ব্যক্তি হতে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে, তার মধ্যে একজন হল পাগল যতক্ষণ না তার চেতনা ফিরে আসে।
মোট কথা, রোজা প্রাপ্ত বয়স্ক সকল সুস্থ-সক্ষম ও নিজ বাড়িতে অবস্থানকারী-মুকিম মুসলমানের উপর আদায় হিসাবে ওয়াজিব হয়। অসুস্থ হলে তার উপর কাজা হিসেবে ওয়াজিব হয়। অর্থাৎ সুস্থ হওয়ার পর তাকে অবশ্যই রোজার কাজা করতে হবে। অনুরূপভাবে হায়েজ-নিফাসবতী নারীদের উপর রোজার কাজা ওয়াজিব। আর মুসাফিরকে রোজা রাখা ও না রাখার স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। রোজা রাখতেও পারবে আবার ইফতারও করতে পারবে। তবে না রাখলে পরে কাজা করতে হবে।
কোন ব্যক্তি দিনের বেলা রোজা রাখার উপযুক্ত হয়েছে অর্থাৎ তার উপর রোজা ফরজ হয়েছে। যেমন রোজার দিনে কাফের ইসলাম গ্রহণ করেছে, বাচ্চা বালেগ হয়েছে, কোন নারী হায়েজ নেফাস হতে পবিত্র হয়েছে, অসুস্থ ব্যক্তি সুস্থতা লাভ করেছে, মুসাফির সফর থেকে ফিরে এসেছে, পাগল ভালো হয়ে গিয়েছে, এবং দিনের বেলায় রমজানের চাঁদ দেখা প্রমাণিত হয়েছে। এদের বিধান হলো তারা দিনের অবশিষ্ট অংশে পানাহার করতে পারবে না। খানা পিনা হতে বিরত থেকে দিনের বাকী অংশ অতিবাহিত করতে হবে। এবং পরে কাজা করতে হবে। কারণ, দিনটি হচ্ছে শরিয়তের পক্ষ হতে রোজার জন্য নির্দিষ্ট। কোন কারণ বশত: তারা সহিহভাবে রোজ রাখতে পারে নি, তাই পরে কাজা করে নিবে। আর পানাহার থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে রমজান মাসের সম্মান রক্ষার্থে।
প্রতিটি মুসলমানের উপর অপরিহার্য্য কর্তব্য হচ্ছে, দ্বীন ও দ্বীনের প্রতিটি বিষয়ের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া। বিশেষ করে যে সব রূকনের উপর ইসলাম প্রতিষ্ঠিত। যেমন রোজা, এ মহান ইবাদতটি একজন মুসলমানের জীবনে বছরে একবার করে আসে। পাঁচ স্তম্ভের মধ্যে কিছু এমন যা প্রতিটি মুহূর্তে একজন মুসলমানের জন্য জরুরি। যেমন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ মর্মে সাক্ষ্য দেয়া, অর্থাৎ, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল। এ দুটি শাহাদাত প্রতিটি মুসলমানের জন্য অনিবার্য। এ থেকে কোন মুসলামান এক মুহূর্তের জন্যও পৃথক হতে পারে না। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, যা একজন মুসলমানের জীবনে দৈনিক পাঁচবার করে ফিরে আসে। কিছু ইবাদত আছে এমন যা বছরে একবার আসে যেমন জাকাত ও রোজা। আবার কিছু আছে এমন যা সারা জীবনে মাত্র একবার আসে। যেমন হজ। প্রতিটি মুসলমান এ সকল আহকামের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
এখানে কিছু আহকাম এমন আছে যেগুলো শুধু দৈহিক ইবাদত বলে গণ্য যেমন দুই শাহাদাত ও নামাজ রোজ। কিছু আর্থিক ইবাদত বলে বিবেচিত যেমন জাকাত। আবার কিছু আছে যা দৈহিক ও আর্থিক উভয়ের সংমিশ্রণে বাস্তবায়িত হয়, যেমন হজ।
সকল ইবাদত আদায়ের ক্ষেত্রে দুটি বিষয় আবশ্যক। নিয়ত খালেছ থাকতে হবে। কারণ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“إنما الأعمال بالنيات وإنما لكل امرئ ما نوى”
নিশ্চয় সমস্ত আমল নিয়তের উপরই নির্ভরশীল আর প্রতিটি ব্যক্তি যা নিয়ত করে তাই পাবে।
দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, উক্ত ইবাদত আদায় করতে হবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদর্শের অনুবর্তিতায়। হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি এমন আমল করল যে ব্যাপারে আমাদের কোন নির্দেশ নেই তা প্রত্যাখ্যাত। ( বুখারি, মুসলিম ও আহমাদ)
সুতরাং প্রতিটি মুসলমানের আবশ্যিক কর্তব্য হল, সে ইসলামের রূকনগুলোকে গুরুত্ব সহকারে আদায় করবে এবং নির্ধারিত সময়ে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তারিকা অনুযায়ী আদায় করবে।
সব শেষে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা হলো, হে আল্লাহ! রোজাসহ আমাদের সকল আমালকে খালেস করো। ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে কবুল করে নাও। আর তোমার জিকির, শোকর ও সুন্দর ইবাদতের জন্য আমাদের সহযোগিতা করো।

Related Post