রমযানে এক দেশ হতে অন্য দেশে ভ্রমণের বিধান

রমযানে এক দেশ হতে অন্য দেশে ভ্রমণের বিধান

রমযানে এক দেশ হতে অন্য দেশে ভ্রমণের বিধান

প্রশ্নঃ আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। আশা করি কুশলেই আছেন, কামনা ও তাই। মুহতারাম বহুল প্রচারিত মাসিক আল হুদার এক জন নিয়মিত ও একনিষ্ঠ পাঠক। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই সাথেই আছি আর আহরন করছি ইসলামের সুশৃঙ্খল জ্ঞানের ভান্ডার আর সুরভিত হচ্ছি ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে। আল্লাহ আপনাদের চেষ্টা ও প্রচেষ্টাকে কবুল করুন আমীন।
এবার আসি মূল প্রশ্নে: ইনশা আল্লাহ আসছে রমযানে দেশ যাবো, কিন্তু কুয়েতসহ মধ্যপ্রচ্যের অনেক দেশে বাংলাদেশের এক দিন আগে রোযা শুরু হয়, আর বাংলাদেশে এক দিন বা কখনও কখনও দুই দিন পরে শুরু হয়। এমতাবস্থায় কুয়েত হতে রোযা শুরু বাংলাদেশে গেলে ৩১ দিন রোযা রাখার সম্ভাবনা থাকে যদি রমযান মাস ত্রিশ দিনের হয়। এই অবস্থায় আমার করণীয় কি? আমি কি ৩১টি  রোযা রাখবো নাকি ৩০দিন পুরা করে ঈদ করবো? অনুগ্রপূর্বক জুন ২০১৫ সংখ্যায় বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন। শাহ জালাল হাজারী, সুলাইবিয়া।
উত্তর: ওয়াআলাইকুমুস সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ আল-হুদার পরিবারের সকলে ভালো আছে। আপনি সূচানলগ্ন হতে আল-হুদার সঙ্গে আছেন জেনে ভালো লাগলো। আশা করি সবসময় আল-হুদার সঙ্গে থাকবেন।
আপনি সময়োপযোগী প্রশ্ন করেছেন, এই জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। কারণ এমন সমস্যায় অনেকেই পড়েন। তাই বিস্তারিতভাবে বিষয় আলোকপাত করা হচ্ছে:
যখন কোন রোযাদার এক দেশ হতে অন্য দেশে ভ্রমণ করে, যে দেশে চন্দ্র দৃশ্যমানে বৈপরীত্য রয়েছে, অর্থাৎ একদিন কিংবা দুইদিন আগে পরে চন্দ্র উদিত হয়। সেসব দেশের বেলায় নিয়ম হলো;
কোন রোযাদার ব্যক্তি যদি  এক রাষ্ট্র হতে অপর রাষ্ট্রে গমণ করে আর উক্ত রাষ্ট্রে সিয়াম ভঙ্গের সময় না হয়, তবে সে তাদের সাথে সিয়াম চালিয়ে যাবে, যে পর্যন্ত না তারা সিয়াম ভঙ্গ করে। কেননা ব্যক্তি যে দেশে অবস্থান করে সেই দেশের লোকেরা যখন রোযা রাখবে, তাকেও তাদের সাথে রোযা পালন করতে হবে। আর তারা যখন ঈদ করবে, সেও তাদের সাথেই ঈদ করবে। তেমনিভাবে ঐ দেশের লোকেরা যখন কুরবানী করবে তখন সেও কুরবানী করবে। যদিও এভাবে করতে গিয়ে এক দিন বা দুই দিন বেশি হয়ে যায়, তার জন্য এ বিধান প্রযোজ্য হবে। যেমন কোন লোক রোযা রেখে পশ্চিম দিকের কোন দেশে ভ্রমণ শুরু করলো, সেখানে সূর্য অস্ত যেতে দেরী হচ্ছে। তখন সে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবশ্যই অপেক্ষা করবে। যদিও সময় সাধারণ দিনের চেয়ে দু‘ঘণ্টা বা তিন ঘণ্টা বা তার চাইতে বেশি হয়।
যেহেতু বাংলাদেশে যখন পৌঁছেছেন সেখানে এখনও ঈদের চাঁদ দেখা যায়নি। অতএব আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে। কেননা রাসূলে কারীম (সা.) আমাদেরকে চাঁদ না দেখে রোযা রাখতে নিষেধ করেছেন:  إذا رأيتموه فصوموا، وإذا رأيتموه فأفطروا অর্থাৎ তিনি বলেন: তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখ, এবং চাঁদ দেখে রোযা ভঙ্গ করো। (বুখারী ও মুসলিম)
এর বিপরীত কেউ যদি এমন দেশে সফর করে যেখানে নিজের দেশের পূর্বে চাঁদ দেখা গেছে  (যেমন কেউ বাংলাদেশ হতে কুয়েতে রমযান মাসে আসলো) তবে সে কুয়েতবাসীদের হিসাব অনুযায়ী রোযা ভঙ্গ করবে এবং ঈদের নামায পড়ে নিবে। আর যে ‘কটা রোযা বাকী থাকবে (কম হবে) তা রমযান শেষে কাযা আদায় করে নিবে। চাই এক দিন হোক বা দুই দিন। কেননা আরবী মাস ২৯ দিনের কম হয় না, রাসূল (সা.) বলেছেন: إنما الشهر تسع وعشرون، فلا تصوموا حتى تروه، ولا تفطروا حتى تروه । আরবী মাস ২৯ দিনের কম হয় না, সুতরাং তোমরা চাঁদ দেখে রোযা আরম্ভ করবে এবং চাঁদ দেখে রোযা ভঙ্গ করবে। তবে বাংলাদেশ হতে আগমনকারীকে ২৯ দিন পূর্ণ না হলেও রোযা ভঙ্গ করতে হবে, কারণ ঈদের চাঁদ দেখা গেছে। আর চাঁদ দেখা গেলে তো রোযা ভঙ্গ করা আবশ্যক। কিন্তু যেহেতু তার একটি বা দুটি রোযা কম হলো, তাই রমযান শেষে তাকে সেগুলো কাযা করতে হবে। কেননা আরবী মাস ২৮ দিনে হয় না।
কিন্তু পূর্বের মাসআলাটি এর বিপরীত। নতুন চাঁদ না দেখা পর্যন্ত রোযা ভঙ্গ করা জায়েয নয়। কেননা নতুন চাঁদ না দেখা পর্যন্ত রমযান মাস বহাল। যদিও দু‘একদিন বেশি হয়ে যায়, (যেমনটি আপনি প্রশ্নে উল্লেখ করেছেন)  তাতে কোন অসুবিধা নেই। সেটা একদিনে কয়েক ঘণ্টা বেশি হওয়ার মতো। অতিরিক্ত রোযা নফল হিসেবে গণ্য হবে।
এমনই একটি ঘটনা ঘটেছিলো হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের (রা.) সঙ্গে হযরত কুরাইবের (রা.)। উম্মুল ফযল হযরত কুরাইবকে হযরত আমিরে মুআবিয়ার (রা.) নিকট প্রেরণ করলেন, তখন ইবনে আব্বাস (রা.)-কে কুরাইব (রা.) বললেন যে, শামের লোকেরা জুমুয়ার রাতে রমযানের চাঁদ দেখেছে, তখন ইবনু আব্বাস (রা.) বললেন, আমরা তো শনিবার রাতে রমযানের চাঁদ দেখেছি, সুতরাং আমরা ত্রিশ রোযা পূর্ণ করবো অথবা চাঁদ দেখা গেলে ঈদ করবো। অতঃপর হযরত কুরাইব বললেন, আমিরে মুআবিয়া (রা.)-এর চাঁদ দেখা ও রোযা আরম্ভ করা আমাদের জন্য কি যথেষ্ট না? ইবনু আব্বাস (রা.) জবাব দিলেন, ‘না’। আল্লাহর রাসূল (সা.) আমাদেরকে এমনটিই নির্দেশ দিয়েছেন।
বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া জন্য উদাহরণ পেশ করা হচ্ছে:
১। এমন শহর বা দেশ থেকে (বাংলাদেশ) ভ্রমণ শুরু করেছে, যেখানকার লোকেরা শুকবার দিন রোযা আরম্ভ করেছে, যে দেশের দিকে (কুয়েত) ভ্রমণ করা হলো, তারা রোযা আরম্ভ বৃহস্পতিবার। এই ক্ষেত্রে যদি কুয়েতে ২৯ রোযা হয়, তাহলে তাকে ঐ দিনই কুয়েতবাসী সঙ্গে ঈদ করতে হবে। পরবর্তীতে তিনি একটি রোযা কাযা করবেন।
২। এমন শহর বা দেশ থেকে (কুয়েত) ভ্রমণ শুরু করেছে, যেখানকার লোকেরা বৃহস্পতিবার দিন রোযা আরম্ভ করেছে, যে দেশের দিকে (বাংলাদেশ) ভ্রমণ করা হলো, তারা রোযা আরম্ভ শুক্রবার দিন। এই ক্ষেত্রে যদি বাংলাদেশের লোকেরা রবিবার তিন ৩০ রোযা পূর্ণ করে ঈদ করেন, তাহলে তাকে ঐ দিনও তাদের সঙ্গে রোযা থাকতে হবে। যদিও তার রোযার সংখ্যা ৩১ দিন হয় না কেন? (যেমনটি আপনি প্রশ্নে উল্লেখ করেছেন।)  আপনি রোযা ভাঙ্গতে পারবেন না। কেননা আপনি যেখানে অব্সথান করছেন, সেখানে চাঁদ দেখা যায় নি। এই ক্ষেত্রে আপনার অবস্থা পশ্চিম দিকে সফর করার কারণে সেটা একদিনে কয়েক ঘণ্টা বেশি হওয়ার মতো। কেননা রোযা রাত পর্যন্ত রাখা ফরয। সূর্য না ডুবলে ইফতার করার সুযোগ নাই। আল্লাহ বলছেন: তোমরা রাত পর্যন্ত রোযা পূর্ণ করো। সূরা বাকারা: ১৪৫) আর আপনার অতিরিক্ত রোযা নফল হিসেবে গণ্য হবে।
৩। এমন শহর বা দেশ থেকে (কুয়েত) ভ্রমণ শুরু করেছে, যেখানকার লোকেরা বৃহস্পতিবার দিন রোযা আরম্ভ করেছে, যে দেশের দিকে (বাংলাদেশ) ভ্রমণ করা হলো, তারা রোযা আরম্ভ শুক্রবার দিন। আর বাংলাদেশে ২৯ রোযা পূর্ণ করে চতুর্থ শুক্রবার দিন করলো, এমতাবস্থায় কুয়েত হতে ভ্রমণকারী তাদের সঙ্গেই ঈদ করবেন, কুয়েত প্রবাসীর ৩০ রোযা হবে আর স্বদেশীদের ২৯ রোযা হবে।
৪। যে দেশ হতে ভ্রমণ শুরু করেছে যেমন বাংলাদেশ, তারা শুক্রবার রোযা আরম্ভ করে মাস শেষে শনিবার ৩০ রোযা পূরণ করে ঈদ করলো, এমন দেশে গেলো যেমন কুয়েত। কুয়েতবাসীরা মাস শেষ করে শুক্রবার দিন ২৯ রোযায় ঈদ করলো। এমতাবস্থায় তাকে কুয়েতবাসীদের সঙ্গে ঈদ করতে হবে। যদিও তিনি বাংলাদেশ হতে রোযা আরম্ভ করে এসেছে, তাকে আর বাংলাদেশীদের মত ৩০ রোযা পূরণ করতে হবে। কেননা তিনি ২৯ রোযা পূরণ করেছেন। আর আরবী মাস ২৯ দিনেও হয়ে থাকে।

Related Post