রামাদান মাসে দান ও সদকা প্রদানের গুরুত্ব

is
পবিত্র রামাদান মাসে আল্লাহর রাস্তায় বেশী বেশী দান ও সদকা করা আল্লাহর রাস্তায় দান-সদকা ও ব্যয় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। এ মাসে সামর্থবান ব্যক্তিবর্গ এ ইবাদাত পালন করে সে ব্যাপারে ইসলাম ব্যাপক উৎসাহ প্রদান করেছে। কেননা রামাদান মাসে এ ইবাদাতের তাৎপর্য ও গুরুত্ব আরো বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। ইমাম বুখারী ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেন যে, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকল মানুষের চেয়ে বেশী দানশীল ছিলেন।
আর রামাদান মাসে যখন জিবরীল তার সাথে সাক্ষাতে মিলিত হতেন তখন তিনি আরো দানশীল হয়ে উঠতেন”। জিবরীলের সাক্ষাতে তিনি বেগবান বায়ুর চেয়েও বেশী দানশীল হয়ে উঠতেন”। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩০৪৮)
রামাদান মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দানশীলতা বহুগুণে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ মূলত তিনটিঃ
১। রামাদান মাসে দান-সদকাসহ সকল উত্তম আমলের সাওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। কুরআনের বহু আয়াতে আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়ের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
আল্লাহ বলেন-‘‘কে সে, যে আল্লাহকে করযে হাসানা প্রদান করবে? অত:পর তিনি তার জন্য তা বহুগুণে বৃদ্ধি করবেন।’’ (সূরা আল-বাকারাহ : ২৪৫)
২। “যারা নিজেদের ধনসম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস্যবীজ, যা সাতটি শীস উৎপাদন করে, প্রত্যেক শীষে একশত শস্যদানা । আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেন।আর আল্লাহ দানশীল সর্বজ্ঞ।’’ (সূরা আল-বাকারাহ: ২৬১)
‘‘দেখ, তোমরাই তো তারা, যাদেরকে আল্লাহর পথে ব্যয় করার আহবান জানানো হচ্ছে। অথচ তোমাদের কেউ কেউ কৃপণতা করছে। যারা কৃপণতা করছে, তারা নিজেদের প্রতিই কৃপণতা করছে। আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং তোমরা অভাবগ্রস্ত।’’(সূরা মুহাম্মাদ: ৩৮)
৩। রামাদানের প্রতি রাতে জিবরীলের সাক্ষাতে তিনি ভীষণভাবে দান করতে অনুপ্রাণিত হতেন। যেমন সহীহ বুখারীর বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে।
রামাদান মাসে উমরা পালনের ফজিলতঃ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-‘‘রামাদান মাসে উমরা করা হজ্জের সমতুল্য’’ অথবা ‘‘আমার সাথে হজ্জ করার সমতুল্য’’। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং১৬৯০ ও সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২৫৬
ইতেকাফঃ রামাদান মাসের শেষ দশদিন ইতেকাফে বসা অতি উত্তম ইবাদাত। শুরুতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাদানের প্রথম দশদিন ইতেকাফে বসেন। এরপর লাইলাতুল ক্বদরের অনুসন্ধানে মাঝের দশদিন ইতেকাফে বসেন। এরপর যখন লাইলাতুল ক্বদর শেষ দশদিনে হওয়া স্পষ্ট হয়ে গেল, তখন থেকে তিনি শেষ দশদিন ইতেকাফে বসতে লাগলেন। অত:পর তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রীগণ ইতেকাফে বসেন। হাদীসে এসেছে, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাদানের প্রথম দশদিন ইতেকাফ করেন। (সাহাবারা বলেন) আর আমরাও তার সাথে ইতেকাফ করলাম। এরপর জিবরীল আসলেন এবং বললেন, যা আপনি অনুসন্ধান করছেন তা আপনার সামনে রয়েছে। এরপর তিনি মাঝের দশদিন ইতেকাফ করলেন। (সাহাবারা বলেন)আমরাও তার সাথে ইতেকাফ করলাম। এরপর জিবরীল আসলেন এবং বললেন, যা আপনি অনুসন্ধান করছেন তা আপনার সামনে রয়েছে। তারপর বিশ রামাদান নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুতবা দিলেন এবং বললেন, যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে ইতেকাফ করেছে সে যেন ফিরে আসে…..”। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৮০)
রামাদানের শেষ দশদিনে লাইলাতুল ক্বদরের অনুসন্ধানে ব্যাপৃত থাকাঃ এ সম্পর্কে আরো বহু হাদীস রয়েছে যার সারকথা হলো – লাইলাতুল ক্বদর রামাদানের শেষ দশদিনের যে কোন রাত্রে হতে পারে। তবে বেজোড় রাত্রিসমুহের যে কোন একটিতে হুওয়ার সম্ভাবনা বেশী। অনেক উলামার মতে – সবচেয়ে বেশী সম্ভাবনাময় হল ২৭ তম রাত্রি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের আশায় ক্বদরের রাত্রিতে (নামাযে) দাঁড়ায়, তার পূর্ববর্তী সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হল”। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮০২)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাদানের শেষ দশ রাতে নিজে লাইলাতুল ক্বদরের অনুসন্ধানে ব্যাপৃত থাকতেন এবং পরিবার পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। ইমাম মুসলিম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণনা করেন-‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাদানের শেষ দশদিনে আল্লাহর ইবাদাতে এতটা পরিশ্রম করতেন যা তিনি অন্য সময় করতেন না”। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮৪৫) সহীহ বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনায় আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন-‘‘যখন রামাদানের শেষ দশদিন এসে যেত, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরনের কাপড় মজবুত করে বাঁধতেন। (অর্থাৎ দৃঢ়তার সাথে প্রস্তুতি নিতেন) এবং নিজে রাত্রে জাগতেন এবং পরিবার পরিজনকেও জাগাতেন”। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯২০ ও সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮৪৪) তিনি সাহাবাদেরকেও লাইতুল ক্বদর অনুসন্ধান এ ব্যাপৃত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন-“তোমরা শেষ দশদিনের বেজোড় রাতে এ রাত্রি তালাশ করো”। (সুনান আত-তিরমিযী, হাদীস নং ৭৯২)সমাপ্ত ।

Related Post