Main Menu

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর শর্তাবলী

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর শর্তাবলী

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর শর্তাবলী

 ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর ৭টি শর্ত রয়েছে, যা জানা ও মানা প্রত্যেক মুসলমানের উপর অবশ্য কর্তব্য। কেননা এই সাতটি শর্ত পূরণ না করে শুধুমাত্র মৌখিভাবে তা পাঠ করে কোন লাভ হবে না। নিম্নে শর্তগুলি দলীলসহ উপস্থাপন করা হ’ল।

(১) (ইলম) বা জ্ঞান থাকা : অর্থাৎ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর হ্যাঁ সূচক ও না সূচক দু’টি অংশের অর্থ সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখা। আর তা হচ্ছে, বান্দা বিশুদ্ধচিত্তে শুধুমাত্র আল্লাহরই দাসত্ব করবে। আল্লাহ ব্যতীত যার ইবাদত করা হয় তা সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করবে। এই অর্থ সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান না রেখে শুধুমাত্র মৌখিভাবে কালিমা পাঠ করে কোন লাভ হবে না। বান্দা যখন এই কালেমার অর্থ সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান রাখবে, তখনই সে কেবল আল্লাহকে বিধানদাতা, রিযিকদাতা, সন্তানদাতা, জীবন-মৃত্যুর মালিক, পাপ মোচনকারী, বিপদ-আপদে রক্ষাকারী ইত্যাদি হিসাবে গ্রহণ করতে সক্ষম হবে। আল্লাহ বলেন,

فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ

‘জেনে রাখ! আল্লাহ ব্যতীত কোন (সত্য) ইলাহ নেই’ (মুহাম্মাদ ১৯)। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,

مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ

‘যে ব্যক্তি (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) আল্লাহ ব্যতীত কোন (হক্ব) ইলাহ নেই, এটা জেনে মৃত্যুবরণ করে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’।(মুসলিম হা/২৬; মিশকাত হা/৩৭।)

(২) (ইয়াক্বীন) তথা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা : অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মা‘বূদ নেই-এর উপর দৃঢ় বিশ্বাস থাকতে হবে। এ ব্যাপারে কোনরূপ সন্দেহ থাকলে কালিমা পড়ে কোন লাভ হবে না। আল্লাহ বলেন,

إِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ آمَنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوْا وَجَاهَدُوْا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ أُولَئِكَ هُمُ الصَّادِقُوْنَ-

‘তারাই মুমিন, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনার পর সন্দেহ পোষণ করে না এবং জীবন ও সম্পদ দ্বারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে, তারাই সত্যনিষ্ঠ’ (হুজুরাত ১৫)। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,

أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَنِّيْ رَسُوْلُ اللهِ لاَ يَلْقَى اللهَ بِهِمَا عَبْدٌ غَيْرَ شَاكٍّ فِيْهِمَا إِلاَّ دَخَلَ الْجَنَّةَ-

‘যে ব্যক্তি বিনা সন্দেহে (দৃঢ়ভাবে) এ সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন (সত্য) মা‘বূদ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল; আর ঐ অবস্থায় সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’।(মুসলিম হা/২৭; মিশকাত হা/৫৯১২।)

(৩) (ইখলাছ) তথা ইখলাছের সাথে কালেমা পাঠ করা : ইখলাছ হ’ল, যাবতীয় শিরকমুক্ত হওয়া। যখনই বান্দা ইখলাছের সাথে কালিমা পাঠ করবে, তখন সে আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না। সুতরাং ইখলাছবিহীন কালিমা পাঠ করলে কোন ফায়েদা হবে না। আল্লাহ বলেন,  وَمَا أُمِرُوْا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ-  ‘তাদেরকে আদেশ দেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র ইখলাছপূর্ণভাবে আল্লাহর ইবাদত করতে’ (বায়্যিনাহ ৫)। রাসূল (ছাঃ) বলেন,أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِيْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ، خَالِصًا مِنْ قَلْبِهِ-  ‘ঐ ব্যক্তি ক্বিয়ামতের দিন আমার শাফা‘আত লাভে ধন্য হবে, যে ব্যক্তি অন্তর থেকে ইখলাছের সথে বলবে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত কোন (সত্য) মা‘বূদ নেই’।  (বুখারী হা/৯৯; মিশকাত হা/৫৫৭৪।)

(৪)  (আছ-ছিদক) তথা সত্যবাদী হওয়া : অর্থাৎ সত্যনিষ্ঠার সাথে কালিমা পাঠ করা, যাতে কোন মুনাফিক্বী থাকবে না। মুখ ও অন্তরের সম মিল রেখে কালিমা পাঠ করবে। কেননা মুনাফিক্বরা মৌখিকভাবে কালিমা পাঠ করে, কিন্তু আন্তরিকভাবে অবিশ্বাস করে। তাই তারা ঈমানের দাবীতে মিথ্যাবাদী। আল্লাহ মুনাফিক্বদের সম্পর্কে বলেন,

يَقُوْلُوْنَ بِأَلْسِنَتِهِمْ مَا لَيْسَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ

‘তারা মুখে এমন কথা বলে, যা তাদের অন্তরে নেই’ (ফাতহ্ ১১)। তিনি অন্যত্র বলেন,

أَحَسِبَ النَّاسُ أَنْ يُتْرَكُوْا أَنْ يَقُوْلُوْا آمَنَّا وَهُمْ لاَ يُفْتَنُوْنَ- وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللهُ الَّذِيْنَ صَدَقُوْا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِيْنَ-  ‘মানুষ কি মনে করেছে যে, আমরা ঈমান এনেছি- এ কথা বললেই তাদেরকে অব্যাহতি দেয়া হবে এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? আমরাতো তাদের পূর্ববর্তীদেরকেও পরীক্ষা করেছিলাম। আল্লাহ অবশ্যই প্রকাশ করে দিবেন কারা সত্যবাদী ও কারা মিথ্যাবাদী’ (আনকাবূত ২-৩)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

مَا مِنْ أَحَدٍ يَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اللهِ صِدْقًا مِنْ قَلْبِهِ إِلاَّ حَرَّمَهُ اللهُ عَلَى النَّارِ-   ‘যে কোন বান্দা অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এ সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন (সত্য) মা‘বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ (ছাঃ) আল্লাহর রাসূল- তার জন্য আল্লাহ জাহান্নামকে হারাম করে দিবেন’।(বুখারী হা/১২৮; মিশকাত হা/২৫।)

(৫)   তথা গ্রহণ করা : অর্থাৎ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ করলে তার উপর যে অহি-র বিধানের অনুসরণ ফরয হয়ে যায়, তা পূর্ণরূপে গ্রহণ করতে হবে। বাপ-দাদার দোহাই দিয়ে এর কোন কিছুই প্রত্যাখ্যান করা যাবে না। আল্লাহ বলেন,

وَإِذَا قِيْلَ لَهُمُ اتَّبِعُوْا مَا أَنْزَلَ اللهُ قَالُوْا بَلْ نَتَّبِعُ مَا أَلْفَيْنَا عَلَيْهِ آبَاءَنَا أَوَلَوْ كَانَ آبَاؤُهُمْ لَا يَعْقِلُوْنَ شَيْئًا وَلَا يَهْتَدُوْنَ-

‘যখন তাদেরকে বলা হয় যে, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তার অনুসরণ কর। তখন তারা বলে, বরং আমরা এরই অনুসরণ করব, যা আমাদের পিতৃ-পুরুষগণ হ’তে প্রাপ্ত হয়েছি; যদিও তাদের পিতৃ-পুরুষদের কোনই জ্ঞান ছিল না এবং তারা সুপথগামীও ছিল না’ (বাক্বারাহ ১৭০)। তিনি অন্যত্র বলেন,

وَكَذَلِكَ مَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ فِيْ قَرْيَةٍ مِنْ نَذِيْرٍ إِلَّا قَالَ مُتْرَفُوْهَا إِنَّا وَجَدْنَا آبَاءَنَا عَلَى أُمَّةٍ وَإِنَّا عَلَى آثَارِهِمْ مُقْتَدُوْنَ، قَالَ أَوَلَوْ جِئْتُكُمْ بِأَهْدَى مِمَّا وَجَدْتُمْ عَلَيْهِ آبَاءَكُمْ قَالُوْا إِنَّا بِمَا أُرْسِلْتُمْ بِهِ كَافِرُوْنَ-  ‘

এভাবে তোমার পূর্বে কোন জনপদে যখনই আমরা কোন সতর্ককারী প্রেরণ করেছি, তখন ওর সমৃদ্ধশালী ব্যক্তিরা বলত, আমরাতো আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে পেয়েছি এক মতাদর্শের অনুসারী এবং আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করছি। তখন সতর্ককারী বলত, তোমরা তোমাদের পূর্ব-পুরুষদেরকে যে পথে পেয়েছ, আমি যদি তোমাদের জন্য তদপেক্ষা উৎকৃষ্ট পথ-নির্দেশ আনয়ন করি (তাহ’লেও কি তোমরা তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে?) তারা বলত, তোমরা যা সহ প্রেরিত হয়েছ আমরা তা প্রত্যাখ্যান করি’ (যুখরুফ ২৩-২৪)

(৬)  (ইনক্বিয়াদ) তথা আনুগত্য করা : অর্থাৎ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বললেই তাকে আল্লাহর সকল আদেশ যথাযথভাবে মেনে চলার যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে এবং তাঁর প্রত্যেকটি নিষেধ নিঃশর্তভাবে বর্জন করতে হবে। আল্লাহ বলেন,

وَمَنْ يُسْلِمْ وَجْهَهُ إِلَى اللهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَى وَإِلَى اللهِ عَاقِبَةُ الْأُمُوْرِ-

‘যদি কেউ সৎ কর্মপরায়ণ হয়ে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করে তাহ’লে সেতো দৃঢ়ভাবে ধারণ করে এক মযবূত হাতল। আর যাবতীয় কার্যের পরিণাম আল্লাহর দিকে’ (লুকমান ২২)

(৭) (মুহাববত) তথা ভালবাসা : অর্থাৎ কালিমাকে মুহাববতের সাথে পাঠ করতে হবে। বিনা মুহাববতে শুধুমাত্র মৌখিক সাক্ষ্যদানে কোন লাভ হবে না। আর কোন ক্রমেই কাউকে আল্লাহর সমতুল্য ভালবাসা যাবে না। আল্লাহ বলেন,

وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَتَّخِذُ مِنْ دُوْنِ اللهِ أَنْدَادًا يُحِبُّوْنَهُمْ كَحُبِّ اللهِ وَالَّذِيْنَ آمَنُوْا أَشَدُّ حُبًّا لِلَّهِ- (বাক্বারাহ ১৬৫)

 

Related Post