শাহাদাতাইনের অর্থ
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া সত্য কোন মা’বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রাসূল।
১) شَهَادَةُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ এর অর্থ হল: এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া যে আল্লাহ্ ছাড়া সত্য কোন মা’বূদ নাই।
২) ইবাদাত হলো ঐ সকল কথা ও কাজ যা আল্লাহ্ তায়ালা ভালোবাসেন এবং তাতে তিনি সন্তুষ্ট হন।
৩) ইবাদাত অনেক প্রকার: যেমন: দুয়া’ (প্রার্থনা করা), ভয়, ভরসা, সালাত (নামাজ), আল্লাহর স্মরণ এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা ইত্যাদী। দুয়া’ বা প্রার্থনার দলীল: আল্লাহ্ তায়ালার বাণী:
﴿وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ﴾ (60) غافر
অর্থ: তোমাদের পালনকর্তা বলেন:তোমরা আমার নিকট দুআ’ কর, আমি তোমাদের দুআ’ কবুল করব। নিশ্চয়ই যারা আমার ইবাদাতে অহংকার করে তারা অচিরেই লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। সূরাহ্ আল মু’মিন/গাফির আয়াত-৬০।
ভয়ের দলীল: আল্লাহর বাণী:
﴿فَلَا تَخَافُوهُمْ وَخَافُونِ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ﴾ آل عمران-175
অর্থ: অতএব, তোমরা তাদেরকে ভয় করো না । বরং আমাকে (আল্লাহকে) ভয় কর, যদি তোমরা মু’মিন হও। সূরাহ্ আলি ইমরান আয়াত-১৭৫। তাওয়াক্কুল বা ভরসার দলীল: আল্লাহর (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) বাণী:
﴿ وَعَلَى اللَّهِ فَتَوَكَّلُوا إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ ﴾[المائدة: 23
অর্থ: বস্তুতঃ তোমরা যদি মু’মিন হও, তাহলে তোমরা আল্লাহর ওপরই ভরসা কর। সূরাহ্ আল মায়িদাহ্ আয়াত-২৩। সালাতের দলীল: আল্লাহর বাণী:
﴿وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَلَا تَكُونُوا مِنَ الْمُشْرِكِينَ﴾ [الروم : 31[
অর্থ: তোমরা সালাত কায়েম কর এবং মুশরিকদের অর্ন্তভুক্ত হয়ো না, সূরাহ্ আররূম আয়াত-৩১। যিকির বা আল্লাহর স্মরণের দলীল:
﴿ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اذْكُرُوا اللَّهَ ذِكْرًا كَثِيرًا﴾
অর্থ: হে, মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহ্ তায়ালাকে অধিক স্মরণ কর। সূরাহ্ আল আহ্যাব আয়াত-৪১। পিতা মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার দলীল:
﴿وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ إِحْسَانًا [الأحقاف : 15﴾
অর্থ: এবং আমি মানুষকে ¯^xq পিতা মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের আদেশ দিয়েছি। সূরাহ্ আল আহ্ক্বাফ আয়াত-১৫।
১- সকল প্রকার ইবাদাত এক,অদ্বিতীয় লাশারীক আল্লাহর জন্যই করতে হবে। অতএব, যে ব্যক্তি কোন ইবাদাত আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের জন্য করবে সে কাফের।
আল্লাহ্ তায়ালা বলেন:
﴿وَمَنْ يَدْعُ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخَرَ لَا بُرْهَانَ لَهُ بِهِ فَإِنَّمَا حِسَابُهُ عِنْدَ رَبِّهِ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الْكَافِرُونَ﴾ [المؤمنون : 117[
অর্থ: আর যে আল্লাহর সাথে অন্য মা’বূদকে ডাকে সে সম্পর্কে তার নিকট কোন প্রমাণ নেই। তার পালন কর্তার নিকটই তার হিসাব। অবস্থা তো এই যে, নিঃসন্দেহে কাফেররা সফলকাম হবে না। সূরাহ্ আল-মু’মিনূন-১১৭।
২- মানুষ এবং জ্বিন জাতিকে আল্লাহ্ (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) কেবল তাঁর ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তিনি বলেন:
﴿وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ﴾ [الذاريات : 56[
অর্থ: এবং আমি মানব ও জ্বিন জাতিকে কেবল মাত্র আমার ইবাদাত করার জন্য সৃষ্টি করেছি। সূরাহ্ আযযারিয়াত আয়াত-৫৬।
২- যে ব্যক্তি সত্যিকার অর্থে আল্লাহর ইবাদাত করবে সে অবশ্যই ব্যাপক উন্নতি, সৌভাগ্য, শান্তি এবং সুন্দর জীবন লাভ করবে। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন:
﴿مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ﴾ [النحل : 97]
অর্থ: যে মু’মিন পুরুষ ও নারী নেক আমল করেছে, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব। তারা যে আমল করতো তার বিনিময়ে আমি অবশ্যই তাদেরকে উত্তম পারিশ্রমিক দিয়ে পুরুষ্কৃত করব। সূরাহ্ আন্ নাহল- ৯৭।
২- শাহাদাতু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ (شهادة أن محمدا رسول الله ) এর অর্থ: তিনি (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে সকল বিষয়ে সংবাদ দিয়েছেন তা বিশ্বাস করা, তিনি যা আদেশ করেছেন তা পালন করা, তিনি যা হতে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকা এবং তাঁর দেওয়া পদ্ধতি অনুযায়ী আল্লাহর ইবাদাত করা।
ক- আমাদের প্রিয় নবীর নাম: মুহাম্মাদ্ বিন আব্দুল্লাহ্ বিন আব্দুল মুত্তালিব আল-হাশিমী আল-কুরাইশী। অতএব তিনি (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরবের সর্বোন্নত বংশে জন্ম গ্রহণ করেন।
খ- আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সকল মানুষের নিকটে নবী ও রাসূল হিসেবে প্রেরণ করতঃ সকলের উপর তার অনুসরণ করা ফরয বা আবশ্যক করেছেন। আল্লাহ্ তায়া’লা বলেন:
﴿قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا﴾ [الأعراف : 158[
অর্থ: আপনি বলে দিন, হে মানব জাতি! আমি তোমাদের সকলের জন্য আল্লাহর রাসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি। সূরাহ্ আল আ’রাফ আয়াত -১৫৮।
গ- নবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কায় জন্ম গ্রহণ করে সেখানেই অবস্থান করেন। তিনি (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মানুষদেরকে তাওহীদ ও এক আল্লাহর ইবাদাতের প্রতি আহ্বান করেন, অতঃপর মদীনায় হিজরত করেন। তিনি (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মানুষদেরকে ইসলামের অন্যান্য আহ্কামের ব্যাপারেও আদেশ করেন। যেমন: যাকাত, সিয়াম বা রোজা এবং জিহাদ ইত্যাদী। পরিশেষে ৬৩ (তেষট্টি) বছর বয়সে মদীনাতে তিনি ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি অ-ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
ঘ- যে ব্যক্তি নবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বিরোধীতা করবে সে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি ভোগ করবে। আল্লাহ্ (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) বলেন:
﴿فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ﴾ [النور : 63]
অর্থ: যারা রাসূলের (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশের বিরুদ্ধাচারণ করে তাদের সতর্ক থাকা উচিৎ যে, তারা যে কোন বিপদের সম্মুখীন হবে অথবা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে। সূরাহ্ আন্ নুর আয়াত ৬৩।
ঙ- যে ব্যক্তি রাসূল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অনুসরণ করবেন তিনি পরিপূর্ণ সৌভাগ্য এবং বড় সফলতা অর্জন করবেন। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন:
﴿وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ﴾
অর্থ: তোমরা আল্লাহ্ ও রাসূলের (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুগত হও, যেন তোমরা করুণা লাভ করতে পার। সূরাহ্ আলি ইমরাণ আয়াত ১৩২। আল্লাহ্ তায়ালা আরো বলেন: ﴿وَإِنْ تُطِيعُوهُ تَهْتَدُوا﴾ [النور : 54]
অর্থ: তোমরা যদি তাঁর (রাসূলের (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) আনুগত্য কর তাহলে তোমরা হেদায়েত-প্রাপ্ত হবে। সূরাহ্ আন নুর আয়াত ৫৪।