সত্যবাদিতা মানুষকে জান্নাতের পথে এবং কল্যাণের দিকে নিয়ে যায়। পক্ষান্তরে মিথ্যাচার জাহান্নামের দিকে ধাবিত করে। তাই মিথ্যা কথা বলা ও প্রচার করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো(তাওবা ৯/১১৯)। সত্য কথা জান্নাতের পথে নিয়ে যায় এবং মিথ্যা কথা জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, সত্যবাদিতা ব্যক্তিকে নেকীর দিকে পরিচালিত করে আর নেকী তাকে জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। আর মানুষ সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে অবশেষে ছিদ্দীকের মর্যাদা লাভ করে। আর মিথ্যা মানুষকে পাপের দিকে নিয়ে যায়, পাপ তাকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। আর মানুষ মিথ্যা কথা বলতে বলতে অবশেষে আল্লাহর কাছে মহা মিথ্যাবাদী হিসাবে গণ্য হয়।বুখারী হা/৬০৯৪;মুসলিম হা/২৬০৭
মিথ্যাবাদীকে মুনাফিক বলা হয়। তাকে কেউ ভালবাসে না। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেনَ মুনাফিকের আলামত তিনটি। যখন সে কথা বলে, তখন মিথ্যা বলে, সে ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে এবং তার কাছে আমানত রাখা হলে তাতে খিয়ানত করে।[বুখারী হা/৬০৯৫।
রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন, আমি আজ রাতে (স্বপ্নে) দু’জন লোককে দেখলাম। তারা বলল, আপনি যে লোকটির গাল চিরে ফেলতে দেখলেন, সে বড়ই মিথ্যাচারী। সে এমন মিথ্যা বলত যে, দুনিয়ার সর্বত্র তা ছড়িয়ে পড়ত। ফলে ক্বিয়ামাত পর্যন্ত তার সাথে এ রকম ব্যবহার চলতে থাকবে’।বুখারী হা/৬০৯৬।
ধৈর্যধারণ করা :
কোন বিপদ-আপদ বা মুছীবতে পতিত হলে প্রত্যেকের উচিত হবে ধৈর্যধারণ করা। এই গুণে গুণান্বিত ছিলেন সকল নবী-রাসূল। মুমিনদেরকে নবী-রাসূলগণের গুণে গুণান্বিত হতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ! ধৈর্য অবলম্বন কর, দৃঢ়তা প্রদর্শন কর, নিজেদের প্রতিরক্ষা কল্পে পারস্পরিক বন্ধন মযবূত কর এবং আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার (আলে ইমরান ৩/২০০)। পার্থিব জীবনের সকল রোগ-শোক, দুঃখ-যাতনা, বিপদাপদ, ফল-ফসলের ক্ষতি, সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা। এতে ধৈর্যধারণ করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, আর নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে ভয়, ক্ষুধা এবং ধন ও প্রাণ এবং ফল-শস্যের অভাবের কোন একটি দ্বারা পরীক্ষা করব এবং ধৈর্যশীলদেরকে সুসংবাদ প্রদান কর’ (বাক্বারাহ ২/১৫৫)। ধৈর্যশীল ব্যক্তিদের মহান আল্লাহ মহা পুরস্কার দিবেন। তিনি বলেন, ধৈর্যশীলদেরকে তাদের পুরস্কার অগনিত দেওয়া হয়ে থাকে’ (যুমার ৩৯/১০)। তিনি আরো বলেন,আর যে ব্যক্তি (অত্যাচারিত হওয়ার পরও) ধৈর্যধারণ করে ও ক্ষমা করে দেয়, তা অবশ্যই দৃঢ়চিত্ততার কাজ (শূরা ৪৩)। মানব জাতি আল্লাহর আনুগত্যের ক্ষেত্রে ধৈর্য অবলম্বন করবে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন আর তোমার পরিবারবর্গকে ছালাতের আদেশ দাও এবং তাতে নিজেও অবিচল থাক (ত্ব-হা ২০/১৩২)।
মানুষকে সকল পাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। তাহলে ইহকাল ও পরকালে সাফল্য লাভ করতে পারবে। আর আল্লাহর ফায়ছালা মেনে নিয়ে ধৈর্যধারণ করতে হবে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন অতএব তুমি তোমার প্রতিপালকের নির্দেশের জন্য ধৈর্যধারণ কর’ (দাহর ৭৬/২৪)। নবী-রাসূলগণের জীবনীর দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, তাঁরা কতই না বিপদ ও কষ্টের সম্মুখীন হয়েছেন। এর পরেও তাঁরা ধৈর্যধারণ করেছেন। মহান আল্লাহ তাঁদের সম্পর্কে বলেন,অতএব তুমি ধৈর্যধারণ কর যেমন ধৈর্যধারণ করেছিলেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ রাসূলগণ এবং তাদের জন্যে (শাস্তি প্রার্থনায়) তাড়াহুড়া করো না (আহক্বাফ ৪৬/৩৫)।
আর বড় বিপদেই রয়েছে বড় পুরস্কার। রাসূল (ছাঃ) বলেন, অবশ্যই (বান্দার) বড় বিপদে বড় প্রতিদান রয়েছে। আর আল্লাহ কোন সম্প্রদায়কে ভালবাসলে তাকে পরীক্ষা করেন (বিভিন্ন প্রকার অসুখ-বিসুখ, বিপদ-আপদ দিয়ে)। যদি সে তাতে সন্তুষ্ট থাকে তাহ’লে তার জন্য সন্তোষ। অপরপক্ষে সে যদি তাতে অসন্তুষ্ট হয়, তাহ’লে তার জন্য অসন্তোষ।[তিরমিযী হা/২৩৯৬;] আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বর্ণনা করেন, একদা আনছারদের কিছু সংখ্যক লোক নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট সাহায্য চাইল। তাদের যে যা চাইল, তিনি তাই দিলেন। এমনকি তাঁর কাছে যা কিছু ছিল নিঃশেষ হয়ে গেল। যখন তাঁর দু’হাতে দান করার পর সবকিছু শেষ হয়ে গেল তখন তিনি বললেন, আমার কাছে যা কিছু থাকে, তা থেকে আমি কিছুই সঞ্চয় করি না। অবশ্যই যে নিজেকে চাওয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখতে চায়, আল্লাহ তাকে তা থেকে বাঁচিয়ে রাখেন। আর যে ব্যক্তি ধৈর্যধারণ করে, তিনি তাকে ধৈর্যশীলই রাখেন। যে ব্যক্তি অমুখাপেক্ষী হ’তে চায়, আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত রাখেন। ধৈর্যের চেয়ে বেশী প্রশস্ত ও কল্যাণকর কিছু কখনো তোমাদেরকে দান করা হবে না’।[বুখারী হা/৬৪৭০।]
রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন,মুমিন ব্যক্তির কাজ-কর্ম অবলোকন করলে খুব আশ্চর্য লাগে। কেননা তার সমস্ত কাজ তার জন্য কল্যাণকর। আর এটি হয়ে থাকে শুধু মুমিনদের জন্য, অন্যের জন্য নয়। যখন সে কল্যাণকর কিছু লাভ করে তখন সে (আল্লাহর) শুকরিয়া আদায় করে, তা তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর যখন কোন বিপদে পতিত হয় তখন সে ধৈর্যধারণ করে। সেটাও তার জন্য কল্যাণকর হয়।মুসলিম হা/২৯৯৯; সমাপ্ত