সম্মানিত পাঠক: আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের জীবন ও মৃত্যু দান করেছেন আমাদের মধ্যে কে উত্তম আমল করে তা পরক্ষা করার জন্য। মহান আল্লাহ বলছেন:
كما قال جل شأنُه ﴿الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا وَهُوَ الْعَزِيزُ الْغَفُورُ﴾ ]الملك: ২[
যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যাতে তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন যে, কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম। আর তিনি মহাপরাক্রমশালী, অতিশয় ক্ষমাশীল।
সম্মানিত পাঠক : আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ঘোষণা করেছেন যে ব্যক্তি সর্বদা সৎকাজের চেষ্টা করবে, তার জন্য রয়েছে উত্তম জীবন, স্থায়ী মর্যাদা, নিরাপত্তা ও সংরক্ষণ: মহান আল্লাহ বলছেন:
﴿مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ﴾ ]النحل: ৯৭]
যে মুমিন অবস্থায় নেক আমল করবে, পুরুষ হোক বা নারী, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তারা যা করত তার তুলনায় অবশ্যই আমি তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দেব।
وقال – سبحانه ﴿وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا وَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ﴾ ]العنكبوت: ৬৯[.
আর যারা আমার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, তাদেরকে আমি অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আর নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সাথেই আছেন।
প্রিয় পাঠক: কুরআনের বহু আয়াতে সুসংবাদ রয়েছে যারা সর্বদা সৎকাজে নিজেকে আত্ম নিয়োগ করবে। এবং মন্দ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখবে: মহান আল্লাহ বলছেন:
قال – تعالى -: إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَانَتْ لَهُمْ جَنَّاتُ الْفِرْدَوْسِ نُزُلًا * خَالِدِينَ فِيهَا لَا يَبْغُونَ عَنْهَا حِوَلًا الكهف
নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তাদের মেহমানদারির জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফেরদাউস। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। তারা সেখান থেকে অন্য কোথাও স্থানান্তরিত হতে চাইবে না। (সূরা কাহাফ) ১০৭ – ১০৮
সম্মানিত পাঠক: রাসূল (সা.) যে বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন, সেটি অনেক মুসলমান তা বেমালুম ভুলে রয়েছে; আর সেটি হলো আখেরাতকে প্রাধান্য দেওয়া। আর এটি অর্জন হয় আমালে সালেহ দ্বারা। আর আমালে সালেহ করতে না পারলে ক্ষতিগ্রস্ত ও লজ্জিত হতে হবে। রাসূল (সা.) বলেছেন:
مَن كانت الآخرة هَمَّه، جعَلَ الله غِناه في قلبه، وجَمَع له شَمْلَه، وأتتْه الدنيا وهي راغمة، ومَن كانت الدنيا هَمَّه، جعَلَ الله فقْرَه بين عَينيه، وفرَّق عليه شَمْلَه، ولم يأتِه من الدنيا إلاَّ ما قُدِّر له.
যে ব্যক্তির উদ্দেশ্য আখেরাত অর্জন করা হবে, আল্লাহ তার অন্তরকে ধনি করে দিবেন, এবং বিক্ষিপ্ত কর্মকান্ডগুলো একত্র করে দিবেন। দুনিয়া বিমুখ হওয়ার পরও তার পদতলে চলে আসবে। আর যে ব্যক্তির উদ্দেশ্য হবে দুনিয়া অর্জন করা, তার চোখের সামনে দারিদ্রতা এনে দিবেন। এবং যাবতীয় কর্মকান্ড বিক্ষিপ্ত করে দিবেন, এবং ভাগ্যে নির্দিষ্ট অংশ ছাড়া তাকে কিছুই দেওয়া হবে না।
আমালে সালেহের উপর অটল থাকার ১০টি পদ্ধতি:
প্রথম: আল্লাহ র কাছে সাহায্য চাওয়া: আল্লাহ তায়ালা বলছেন:
رَبَّنَا لا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ آل عمران 8
হে আমাদের রব, আপনি হিদায়াত দেয়ার পর আমাদের অন্তরসমূহ বক্র করবেন না এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান করুন। নিশ্চয় আপনি মহাদাতা।
দ্বিতীয়: সৎলোকের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা, ওয়াজ মাহফিলে বসা:
কবির ভাষায়-
صحبت صالح ترا صالح كند ** صحبت طالح ترا طالح كند
اي برادر دور باش أز يار بد ** يار بد بدتر بود أز مار بد
اس دنيا كي دوستي مثل كاغذ فول هي ** ديكهنى مين خوشنما هى بو مكر كجه بهى نهين
সৎসঙ্গ স্বর্গবাস, আর অসৎসঙ্গ সার্বনাশ। সুতরাং অসৎ বন্ধুদের সঙ্গ ত্যাগ করুন। কেননা তারা বিষধর সাপ অপেক্ষা ক্ষতিকারক।
দুনিয়াবী বন্ধু সঙ্গ কাগজের ফুলের মত, দেখতে সুন্দর, কিন্তু তা থেকে কোন সুঘ্রাণ ছড়ায় না।
তৃতীয়: সাহাবা ও পূর্বসূরীদের জীবনী অধ্যয়ন করা:
চতুর্থ: হৃদয় আকৃষ্টকারী ক্যাসেট বেশি বেশি শোনা ইসলামী লাইব্রেরি ভ্রমণ করা।
পঞ্চম: ফারায়েজ আমলগুলো আদায়ের প্রতি লালচ বা লোভ করা, যেমন পাচঁ ওয়াক্ত নামাজ, এবং কাজা রোযা থাকলে তা দ্রুত আদায় করে নেওয়া।
ষষ্ঠ: অল্প হলেও নফল আমলের প্রতি অভ্যস্ত হওয়া এবং মনের তৃপ্তি নিয়ে আদায় করা।
কেননা আল্লাহ নিকট ঐ আমল উত্তম যা সর্বদা করা হয় যদিও তা পরিমাণে অল্প হয়।
সপ্তম: কুরআন মুখস্ত শুরু করা। এবং সর্বদা তেলাওয়াত অব্যাহত রাখা। আর মুখস্ত করা হয়েছে তা ফরয ও নফল নামাযে পড়া।
অষ্টম: বেশি বেশি যিকর ও ইস্তেফার করা, কেননা আমলটি করা অনেক সহজ, ফায়দা অধিক, ঈমান বৃদ্ধি পায়, মজবুত হয়।
নবম: দিল বিনষ্টকারী সমস্ত বস্তু দূরে থাকা। এবং অসৎ সাথীবর্গ হতেও দূরে থাকা। টেলিভিশনে অশ্লীল ছবি ও গান দেখা থেকেও দূরে থাকা। ইন্টারনেটে ও পত্র পত্রিকায় চরিত্র হননকারী দৃশ্য না দেখা।
দশম: কখনও কোন পাপ হয়ে গেলে দ্রুত তাওবায়ে নাসুহ করা। কেননা তাওবা করার দ্বারা আল্লাহ অত্যন্ত খুশি হন।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! যেই রাসূলের আগের ও পরের সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়েছে; তিনি নেক আমলগুলো খুবই গুরুত্ব দিয়ে করতেন। এবং সর্বদা নেক আমলের উপর অটল থাকতেন। হযরত উবায়েদ বিন উমায়ের (রা.) উম্মুল মুমেনীন হযরত আয়েশা (রা.)কে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি রাসূলের এমন একটি আমলের কথা বলুন, যা দেখে আপনি আশ্চর্যান্বিত হয়েছেন: উবায়েদ বিন উমায়ের (রা.) বললেন: হযরত আয়েশা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন: কোন এক রাতের ঘটনা; রাসূল (সা.) বললেন, “হে আয়েশা! আমাকে ছাড়, আমি আজ রাত আল্লাহ র ইবাদত করবো” আমি বললাম, আল্লাহ র শপথ; আপনার নিকটে থাকতে চাই, আমি আপনাকে আনন্দ দিতে চাই। আয়েশা বললেন; রাসূল উঠে গিয়ে পবিত্র হয়ে আসলেন এবং নামাযে দাঁড়িয়ে গেলেন; এত কাঁদলেন যে, তাঁর বক্ষ ভিজে গেল, তিনি বললেন আরো কেঁদে কেঁদে দাঁড়ি ভেজালেন, ক্রন্দনের কারণে জমিন পর্যন্ত ভিজে গেল। বেলাল (রা.) এসে আযান দিলো, হযরত বেলাল দেখলেন যে, রাসূল (সা.) কাঁদছেন, বললেন হে আল্লাহ র রাসূল! আপনি কেন কাঁদছেন? আল্লাহ তো আপনার আগের ও পরের সমস্ত গোনাহ মাফ করে দিয়েছেন। রাসূল (সা.) বললেন, আমি কি আল্লাহ র কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না? আজ রাতে আমার উপর একটি আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে, তাদের জন্য কঠিন শাস্তি রয়েছে, যারা আয়াতটি পড়বে কিন্তু গবেষণা করবে না।
إن في خلق السماوات والأرض واختلاف الليل والنهار لآيات لأولي الألباب الذين يذكرون الله قياما وقعودا وعلى جنوبهم ويتفكرون في خلق السماوات والأرض ربنا ما خلقت هذا باطلا سبحانك فقنا عذاب النار
নিশ্চয় আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টি এবং রাত ও দিনের বিবর্তনের মধ্যে রয়েছে বিবেকসম্পন্নদের জন্য বহু নির্দশন। যারা আল্লাহকে স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে ও কাত হয়ে এবং আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে। (বলে) ‘হে আমাদের রব! তুমি এসব অনর্থক সৃষ্টি করনি। তুমি পবিত্র মহান। সুতরাং তুমি আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা কর’। (সূরা আলে ইমরান:১৯০-১৯১)