হজ্জের ঐতিহাসিক পটভূমি

হজ্জের ঐতিহাসিক পটভূমি

হজ্জের ঐতিহাসিক পটভূমি

হজ্জ,মুমিনের মিলনমেলা

ডাকে তোমাকে হাতছানি দিয়ে,

ইব্রাহীমি আহ্বান নিয়ে

ডাকে শুদ্ধ হতে,ফিরে যেতে

নবজাতকের পবিত্রতায়।

হজ্জ একটি আবশ্যকীয় বা ফরয ইবাদত। এটি ইসলামের ৫ম স্তম্ভ। হজ্জ শব্দরে আভিধানিক অর্থ ‘ইচ্ছা’ বা ‘সঙ্কল্প’ করা। ইসলামী পরিভাষায় হজ্জ হলো বৎসরের নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট পোশাকে কয়েকটি স্থানে অবস্থান বা ওকুফ, কা’বা শরীফের তাওয়াফ, পশু কুরবানী, নির্দিষ্ট স্থানে পরপর ৩দিন কঙ্কর নিক্ষেপ এবং সাফা-মারওয়া টিলাদ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানে হাঁটা।

কাবাঘরে হজ্জ আদায় করেন সর্বপ্রথম হযরত আদম (আ:); তারপর নূহ (আ:)-সহ অন্যান্য সকল নবী-রাসূলগণ কাবাঘর জিয়ারত ও তাওয়াফ করে এ ধারা অব্যাহত রাখেন। নবী ইবরাহীম (আঃ)-এর সময় থেকে হজ্জ ফরয বা আবশ্যকীয় ইবাদত হিসেবে নির্ধারিত করা হয়। এটি জীবনে একবার কা’বা ঘর যিয়ারতে সামর্থবান ব্যক্তির উপর ফরয।

হিজরি সনের ১২তম মাস হলো জিলহজ্জ মাস। এই মাসে বিশ্ব মুসলিমের সবচেয়ে বড় সম্মেলন তথা হজ্জ অনুষ্ঠিত হয়। এই মাস হযরত ইবরাহীম (আ:)-এর স্মৃতিবিজড়িত এক অনন্য মাস। যখন হযরত ইবরাহীম (আ:) কে হজ্জ ফরজ হওয়ার কথা ঘোষণা করার আদেশ দেয়া হয়, তখন তিনি আল্লাহর কাছে আরজ করলেনঃ এখানে তো জনমানবহীন বন্য প্রান্তর; ঘোষণা শোনার মতো কেউ নেই। যেখানে জনবসতি আছে সেখানে আমার আওয়াজ কীভাবে পৌঁছবে? আল্লাহ তায়ালা বললেনঃ তোমার দায়িত্ব শুধু ঘোষণা করা। বিশ্বের কাছে তা পৌঁছানোর দায়িত্ব আমার। পবিত্র কুরআনে কথাগুলো এভাবে বলা হয়েছে:

 وَأَذِّن فِي النَّاسِ بِالْحَجِّ يَأْتُوكَ رِجَالًا وَعَلَىٰ كُلِّ ضَامِرٍ يَأْتِينَ مِن كُلِّ فَجٍّ عَمِيقٍ ﴿٢٧﴾

‘আর (তুমি) মানুষের নিকট হজ্জের ঘোষণা দাও; তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং কৃশকায় উটে চড়ে দূর দূরান্ত পথ অতিক্রম করে।  (সূরা হাজ্জ: ২৭)

অতঃপর হযরত ইবরাহীম (আ:) মাকামে ইবরাহীমে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলে আল্লাহ তায়ালা তা উচ্চ করে দেন। বর্ণনায় আছেঃ তিনি আবু কোবাইস পাহাড়ে আরোহণ করতঃ দুই কানে অঙ্গুলি রেখে ডানে-বামে এবং পূর্ব-পশ্চিমে মুখ ফিরিয়ে ঘোষণা করেছিলেনঃ লোক সব! তোমাদের পালনকর্তা নিজের গৃহ নির্মাণ করেছেন এবং তোমাদের ওপর এই গৃহের হজ্জ ফরজ করেছেন। তোমরা সবাই পালনকর্তার আদেশ পালন করো। এই বর্ণনায় আরো বলা হয়েছেঃ ইবরাহীম (আ:)-এর এই আওয়াজ আল্লাহ তায়ালা বিশ্বের সবখানে পৌঁছে দেন এবং শুধু তখনকার জীবিত মানুষ পর্যন্তই নয়, বরং ভবিষ্যতে কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ আগমনকারী ছিল তাদের সবার কান পর্যন্ত এই আওয়াজ পৌঁছে দেয়া হয়। যার যার ভাগ্যে আল্লাহ তায়ালা হজ্জ লিখে দিয়েছেন, তাদের প্রত্যেকেই এই আওয়াজের জবাবে লাব্বায়িকা আল্লাহুম্মা লাব্বায়িক বলেছে অর্থাৎ হাজির হওয়ার কথা স্বীকার করেছে। হযরত ইবনে আব্বাস বলেন, ইবরাহীমের (আ:) আওয়াজের জবাবই হচ্ছে ‘লাব্বায়িকা’ বলার আসল ভিত্তি। (ইবনে আব্বাস, মুজাহিদ, ইকরামা, এবং সাঈদ ইবনে জুবায়ের হতে ইবনে কাসির (রা.) স্বীয় তাফসীরে বর্ণনা করেছেন)

মুহতারাম পাঠক! আপনারা কি হজ্জ ও তার বিশালত্বের বিষয়টি কল্পনা করেছেন? আপনারা কি দেখেছেন ঈমান ও তার সমুজ্জ্বলতা? লক্ষ্য করেছেন লোকদের বিরাট সমাবেশ, যারা বাইতুল্লাহ শরীফে আগমন করেছে আল্লাহর বড়ত্ব, প্রশংসা ও বুযুর্গী বর্ণনা করতে করতে?

বস্তুত হজ্জের দৃশ্য বড়ই বিস্ময়কর ও হৃদয়স্পর্শী। এ দৃশ্য দেখে মুমিনগণ আনন্দিত হন এবং একত্ববাদীগণ হন সম্মানিত ও গর্বিত। সেই সাথে অপরাধীরা হয় লজ্জিত এবং উদাসীনদের হয় দৃষ্টিভ্রম।

অতএব,হে মুসলমানগণ! আমার তো মনে হয় না যে,এই সুবিশাল সমাবেশ ও মহান মিলনমেলা আমাদেরকে কোনো উপদেশ ও শিক্ষা না দিয়েই বিদায় নিবে!

মক্কার পবিত্র ভূমিতে আল্লাহ তা‘আলার দাওয়াতে লোকদের এই বিশাল সমাবেশ সংঘটিত হয়। তারা উপস্থিত হয় আল্লাহ তা‘আলার শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা ও তার একত্ববাদের ঘোষণা দেয়ার জন্য। তাই যারা সামার্থ্য রাখে তাদের ওপর হজ্জ ফরজ করে দিয়ে আল্লাহ তাঅ‘লা বলেন:

وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ البَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلاً

‘এবং সামর্থ্যবান মানুষের উপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ্জ করা ফরজ’ (সূরা আল ইমরান: ৯৭)।

হজ্জের সমাবেশ অনেক বড় সমাবেশ যা দেখে গোটা বিশ্ব কম্পিত হয়, ইসলামের দুশমনেরা ভীত-সন্ত্রস্ত হয় এবং ইহুদী-খৃস্টানেরা ঘাবড়ে যায়। এতে কি আপনারা এই দ্বীনের শ্রেষ্ঠত্ব এবং এই উম্মতের মর্যাদার বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারছেন না?

হজ্জের ফযীলত:

الْحَجُّ الْمَبْرُورُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلا الْجَنَّةُ : رَوَاهُ البُخَارِيُّ

অর্থ : মাবরুর হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ভিন্ন অন্য কিছু নয়।

مَنْ حَجَّ لِلَّهِ فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ رَجَعَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ : رَوَاهُ البُخَارِيُّ ومُسْلِم

যে হজ্জ করল ও শরীয়ত অনুমতি দেয় না এমন কাজ থেকে বিরত রইল, যৌন-স্পর্শ রয়েছে এমন কাজ ও কথা থেকে বিরত থাকল, সে তার মাতৃ-গর্ভ হতে ভূমিষ্ট ‘হওয়ার দিনের মতো পবিত্র হয়ে ফিরে এল।

عن عَائِشَةَ قَالَتْ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَا مِنْ يَوْمٍ أَكْثَرَ مِنْ أَنْ يُعْتِقَ اللَّهُ فِيهِ عَبْدًا مِنْ النَّارِ مِنْ يَوْمِ عَرَفَةَ وَإِنَّهُ لَيَدْنُو ثُمَّ يُبَاهِي بِهِمْ الْمَلَائِكَةَ فَيَقُولُ مَا أَرَادَ هَؤُلَاءِ.  رواه مسلم (1348)

আরাফার দিন এতো সংখ্যক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন যা অন্য কোনো দিন দেন না। এদিন আল্লাহ তাআলা নিকটবর্তী হন ও আরাফার ময়দানে অবস্থানরত হাজিদেরকে নিয়ে তিনি ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করেন, ও বলেন ‘ওরা কী চায়?।’

عَنْ مَاعِزٍ التَّمِيْمِيْ ] عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَنَّهُ سُئِلَ أَيُّ اْلأَعْمَالِ أَفْضَلْ؟ قال: إيمانٌ باللهِ وَحْدَهُ ، ثُمَّ حَجَّةٌ مَبْرُوْرَةٌ تَفْضُلُ سَائِرَ الْأعْمَالِ كَمَا بَيْنَ مَطْلَعِ الشَّمْسِ إلى مَغْرِبِهَا رواه أحمد

সর্বোত্তম আমল কী এ ব্যাপারে এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন। উত্তরে বললেন, ‘অদ্বিতীয় আল্লাহর প্রতি ঈমান, ও তারপর মাবরুর হজ্জ যা সকল আমল থেকে শ্রেষ্ঠ। সূর্য উদয় ও অস্তের মধ্যে যে পার্থক্য ঠিক তারই মত।’

عَنْ أبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه قالَسُئِلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، أَيُّ الْعَمَلِ أَفْضَلُ فَقَالَ: إِيمانٌ بِاللهِ وَرَسُولِهِ قِيلَ: ثُمَّ ماذا قَالَ: الْجِهادُ في سَبيلِ اللهِ قِيلَ: ثُمَّ ماذا قَالَ: حَجٌّ مَبْرورٌ).. رواه البخاري.

অন্য এক হাদিসে এসেছে, ‘উত্তম আমল কি?’ এই মর্মে রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হল। উত্তরে তিনি বললেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান। বলা হল, ‘তারপর কী’? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ। বলা হল তারপর কোনটি? তিনি বললেন, মাবরুর হজ্জ। (বুখারী)

عَنْ عَائِشَةَ أُمِّ المُؤْمِنِينَ رَضِي الله عَنْهَا قَالتْ قُلتُ يَا رَسُول اللهِ أَلا نَغْزُو وَنُجَاهِدُ مَعَكُمْ فَقَال لكِنَّ أَحْسَنَ الجِهَادِ وَأَجْمَلهُ الحَجُّ حَجٌّ مَبْرُورٌ فَقَالتْ عَائِشَةُ فَلا أَدَعُ الحَجَّ بَعْدَ إِذْ سَمِعْتُ هَذَا مِنْ رَسُول اللهِ [،  رَوَاهُ البُخَارِيُّ

একদা রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করে আয়েশা (রা.) বলেন,‘ইয়া রাসূলুল্লাহ আমরা কি আপনাদের সাথে জিহাদে ও অভিযানে যাব না? তিনি বললেন,‘তোমাদের জন্য উত্তম ও সুন্দরতম জিহাদ হল ‘হজ্জ’, তথা মাবরুর হজ্জ।’

عَنْ أبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : الحَجَّاجُ والعُمَّارُ وَفْدُ اللهِ ، إن دَعَوْهُ أَجَابَهُمْ واِنْ اسْتَغْفِرُوْهُ غَفَرَ لَهُمْ رواه النسائي و ابن ماجة

‘হজ্জ ও উমরা পালনকারীগণ আল্লাহর অফদ-মেহমান। তারা যদি আল্লাহকে ডাকে আল্লাহ তাদের ডাকে সাড়া দেন। তারা যদি গুনাহ মাফ চায় আল্লাহ তাদের গুনাহ মাফ করে দেন।’

عَنْ أبِي هُرَيْرَةَ ] أَنَّ رَسُوْلَ الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قال : العُمْرَةُ إلى العُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا، و الْحَجُّ الْمَبْرُورُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلا الْجَنَّةُ ،، رَوَاهُ البُخَارِيُّ

আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এক উমরা হতে অন্য উমরা, এ দুয়ের মাঝে যা কিছু (পাপ) ঘটবে তার জন্য কাফফারা। আর মাবরুর হজ্জের বিনিময় জান্নাত ভিন্ন অন্য কিছু নয়।”

হাদীসে আরো এসেছে,

إِنَّ اْلإِسْلَامَ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَه ، و إِنَّ الهِجْرَةَ تَهْدِمُ مَا كان قبلَها ، و إِنَّ الْحَجَّ يَهْدِمُ ما كان قبلَه ،، رَوَاهُ مُسْلِمٌ

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কারো ইসলাম-গ্রহণ পূর্বকৃত সকল পাপকে মুছে দেয়। হিজরত তার পূর্বের সকল গুনাহ মুছে দেয়, ও হজ্জ তার পূর্বের সকল পাপ মুছে দেয়।

হজ্জ ব্যক্তিকে মুত্তাকী বানিয়ে দেয়:

সম্মানিত পাঠক বৃন্দ! হজ্জের শিক্ষণীয় বিষয় থেকে আরো একটি বিষয় হলো, হজ্জ তাকওয়া বা পরহেযগারী অবলম্বন করার গুরুত্ব এবং বান্দার আমলে তার সীমাহীন প্রভাবের বিষয়টি সুস্পষ্ট করে দেয়।

  তাকওয়া হলো: ঐ মাপকাঠি, যদ্বারা আমল ওজন করা হয়। অনুরূপভাবে তার মাধ্যমে মানুষের মর্যাদাও নিরূপণ করা হয়। একারণেই হজ্জ সম্পর্কিত আয়াতগুলোতে তাকওয়ার ব্যাপারে অধিক পরিমাণে ওসিয়ত করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

وَأَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلَّهِ فَإِنْ أُحْصِرْتُمْ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنَ الْهَدْيِ………. وَاتَّقُواْ اللَّهَ وَاعْلَمُواْ أَنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ

‘আর আল্লাহ্কে ভয় কর। এবং জেনে রাখো, নিশ্চয় আল্লাহর আযাবদানে কঠোর’ (সূরা-বাকারা:১৯৬)।

আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন :

  الْحَجُّ أَشْهُرٌ مَّعْلُومَاتٌ ۚ فَمَن فَرَضَ فِيهِنَّ الْحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِي الْحَجِّ ۗ وَمَا تَفْعَلُوا مِنْ خَيْرٍ يَعْلَمْهُ اللهُ ۗ وَتَزَوَّدُوا فَإِنَّ خَيْرَ الزَّادِ التَّقْوَىٰ ۚ وَاتَّقُونِ يَا أُولِي الْأَلْبَابِ ﴿١٩٧

হজ্জ্বে কয়েকটি মাস আছে সুবিদিত। এসব মাসে যে লোক হজ্জ্বের পরিপূর্ণ নিয়ত করবে, তার পক্ষে স্ত্রীও সাথে নিরাভরণ হওয়া জায়েজ নয়। না অশোভন কোন কাজ করা, না ঝাগড়া-বিবাদ করা হজ্জ্বের সেই সময় জায়েজ নয়। আর তোমরা যাকিছু সৎকাজ কর, আল্লাহ তো জানেন। আর তোমরা পাথেয় সাথে নিয়ে নাও। নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম পাথেয় হচ্ছে আল্লাহর ভয়। আর আমাকে ভয় করতে থাক, হে বুদ্ধিমানগন! তোমাদের উপর তোমাদের পালনকর্তার অনুগ্রহ অন্বেষণ করায় কোন পাপ নেই। (সূরা বাকারা:১৯৭)।

তিনি আরো বলেন : 

{ فَمَن تَعَجَّلَ فِى يَوْمَيْنِ فَلا إِثْمَ عَلَيْهِ وَمَن تَأَخَّرَ فَلا إِثْمَ عَلَيْهِ لِمَنِ اتَّقَى }

‘অতঃপর যে তাড়াহুড়া করে দু’দিনে চলে আসবে, তার কোনো পাপ নেই। আর যে বিলম্ব করবে তারও কোনো অপরাধ নেই। এ বিধান তাদের জন্য যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে। আর তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর এবং জেনে রাখ,নিশ্চয় তোমাদেরকে তাঁরই কাছে সমবেত করা হবে’ (সূরা আল-বাকারা: ২০৩)।

অন্য এক আয়াতে তিনি বলেন: ذلِكَ وَمَن يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقْوَى الْقُلُوبِ

‘এটাই হলো আল্লাহর বিধান যে আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করে,নিঃসন্দেহে তা অন্তরের তাকওয়া থেকেই’ (সূরা হজ্জ: ৩২)।

তিনি আরো বলেন :  { لَن يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلاَ دِمَاؤُهَا وَلَاكِن يَنَالُهُ التَّقْوَى مِنكُمْ }

‘আল্লাহর কাছে পৌঁছে না এগুলোর গোশত ও রক্ত, বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া’ (সূরা আল-হজ্জ: ৩৭)।

প্রিয় পাঠক! আল্লাহ তা‘আলার দরবারে মানুষের মর্যাদা ও পরিচয় ভাষা, বর্ণ, দৈহিক আকৃতি ও দেশের ভিত্তিতে হয় না। বরং তা হয় একমাত্র তাকওয়ার ভিত্তিতে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:  إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عَندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ  নিশ্চয় তোমদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্মানিত যে তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক তাকওয়াসম্পন্ন’ (সূরা হুজুরাত: ১৩)।

হজ্জ উম্মতকে ঐক্যের আহ্বান জানায়:

হজ্জের সময় হাজীগণ একই স্থানে একত্রিত হন এবং একই সাথে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদতে নিমগ্ন হন। নামায আদায় এবং সিয়াম সাধনার ক্ষেত্রেও মুসলমানগণ ঐক্যের পরিচয় দেন। সমষ্টিগত এই ইবাদতগুলো মুসলিম উম্মাহকে সাম্য ও ঐক্যের শিক্ষা দেয়। সেই সাথে এও জানিয়ে দেয় যে,এ জাতি কখনো সফল হতে পারবে না যদি না তারা ঐক্যবদ্ধ হয়।

একথা আজ দিবালোকের ন্যায় পরিস্কার যে,বর্তমানে মুসলমানদের উপর কাফির-মুশরিকরা যে আগ্রাসন চালাচ্ছে তা কেবল তাদের দ্বিধা বিভক্তি ও ঐক্যহীনতার কারণেই। যেমন আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে বলেন:   { وَلاَ تَنَازَعُوا فَتَفْشَلُوا وَتَذْهَبَ رِيحُكُمْ }

‘আর তোমরা পরস্পর বিবাদে লিপ্ত হয়ো না। তাহলে তোমরা সাহসহারা হয়ে যাবে এবং তোমাদের শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাবে(সূরা আল-আনফাল: ৪৬)।

হজ্জ মানুষকে শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে জীবন পরিচালনার শিক্ষা দেয়:

হজ্জের তাৎপর্যসূহের মধ্যে এটিও একটি যে,হজ্জ কাফির সম্প্রদায়ের নিকট এ মর্মে পত্র প্রেরণ করে, হে কাফির ও অমুসলিম সম্প্রদায়! তোমরা চেয়ে দেখো মুসলিম জাতি তাদের ধর্ম পালনে কত অবিচল ও সুশৃঙ্খল! কত মজবুত ও অটল!! এতে কাফিরগোষ্ঠী ভীত-সন্তস্ত্র হয় এবং মুসলমানদের তারা ভয় পায়। তারা মুসলমানদের সামনে মাথা উঁচু করে কথা বলার সাহস পায় না। তারা হয়ে যায় বাকশক্তিহীন ।

Related Post