Originally posted 2013-07-12 08:40:56.
পবিত্র ইসলাম একটি যুযোপযোগী ধর্ম এবং সব যুগের সমস্যারই সমাধান রয়েছে এ ধর্মে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ইসলাম ধর্মকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করা হলেও নদী যেমন সাগরের সঙ্গে মিশে পূর্ণতা পায় তেমনি কুরআনের ঐশি শিক্ষার আলোয় মানুষ পূর্ণতা অর্জন করে। আয়ারল্যাণ্ডের খ্যাতনামা পণ্ডিত ও লেখক জর্জ বার্ণার্ড শ’ বলেছেন, “বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণে সব সময়ই ইসলাম ধর্মের প্রতি আমার বিশেষ শ্রদ্ধা রয়েছে। আমার মতে, ইসলামই একমাত্র ধর্ম যা প্রত্যেক যুগে মানুষের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম। আমি বিশ্বাস করি ইউরোপ মহাদেশে অচিরেই ইসলামের প্রসার ঘটবে এবং এখনই এর আলামত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।”
অবশ্য শুধু বার্ণার্ড শ’ নয় বিশ্বের আরো বহু লেখক ও চিন্তাবিদ আছেন যারা বিভিন্ন ধর্মের ওপর গবেষণা চালিয়ে শেষ পর্যন্ত ব্যক্তি ও সমাজ গঠনে অনন্য ভূমিকার কারণে ইসলাম ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন। গ্রিসের নও মুসলিম মিসেস আনিশা জর্জিয়া লিলিউ হচ্ছেন এদের অন্যতম। তিনি ব্যাপক অধ্যয়ন ও চিন্তা-গবেষণার পর পরিপূর্ণ দ্বীন হিসেবে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা এই নও মুসলিম মহিলার ইসলাম ধর্ম গ্রহণের ঘটনা সংক্ষেপে বর্ণনা করবো।
নও মুসলিম জর্জিয়া লিলিউ ইসলাম ধর্ম গ্রহণের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, আমার ইসলামে দিক্ষীত হওয়ার ঘটনা খুবই বিষ্ময়কর। আমি মনে করি, মহান আল্লাহর ইচ্ছায় একমাত্র ইসলাম ধর্মই সব কিছুর ওপর বিজয়ী হতে পারবে। আমি গ্রিসে জন্ম গ্রহণ করেছি এবং সেখানেই বড় হয়েছি। বাবা-মা আমার পড়া-লেখার জন্য অনেক অর্থ খরচ করেন এবং এমন এক স্কুলে ভর্তি করান যেখানে খ্রীস্টান ধর্ম চর্চার ওপর অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়া হত। কিন্তু খ্রীস্টান ধর্মের শিক্ষা এবং বাস্তব জীবনে এর প্রয়োগের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য এ ধর্মের ব্যাপারে আমার মনে সন্দেহ সৃষ্টি করে। বাইবেলের শিক্ষার ব্যাপারে আমার গভীর শ্রদ্ধা ছিল কিন্তু লক্ষ্য করলাম,মানুষ এ শিক্ষাকে কখনও নিজের জীবনে কাজে লাগায় না। আমি বিশ্বাস করতাম সব নবীই আল্লাহ প্রেরিত, কিন্তু বাইবেলে এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু উল্লেখ নেই এবং এ ব্যাপারে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য রয়েছে।
ধর্ম মানুষকে এমন কিছু শিক্ষা দেয় যাতে মানুষ সঠিকভাবে জীবন পরিচালনা করতে পারে। অর্থাত ধর্মশিক্ষা মানব জীবন ও সৃষ্টি জগতের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করে। বর্তমানে মানুষ আত্মিক শূন্যতা ও মানসিক অশান্তিতে ভুগছে। কিন্তু ধর্মের দৃষ্টিতে একমাত্র সৃষ্টিকর্তার স্মরণ ও তার ছায়াতলেই মানুষ প্রশান্তি পেতে পারে, অন্য কিছুতে নয়। পবিত্র কুরআনের সূরা রা‘দের ২৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, “একমাত্র আল্লাহর স্মরণেই মানসিক প্রশান্তি রয়েছে”।
এ ব্যাপারে গ্রিসের নও মুসলিম মিসেস আনিশা লিলিউ বলেন,আল্লাহ তায়ালা তার নবীদের মাধ্যমে আমাদেরকে এমন সব শিক্ষা দিয়েছেন যাতে এসব মেনে চলার মাধ্যমে আমরা ইহকাল ও পরকালে মহাসাফল্য অর্জন করতে পারি। হাওয়া ও আদম (আ.) ও তার সন্তানদের কাহিনী থেকে আমরা এ শিক্ষা পেতে পারি যে,দুনিয়ায় ভালো মানুষের পাশাপাশি খারাপ মানুষও রয়েছে। তাই আমাদের উচিত সতর্ক থাকা এবং খারাপ কাজ থেকে নিজেকে রক্ষা করা। এ বিষয়ে খ্রীস্টানদের ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ থাকলেও অনেক কিছুই বিকৃত করা হয়েছে। কিন্তু কুরআন শরীফ অবিকৃত এবং সত্য সন্ধানী মানুষের চিন্তা গবেষণার জন্য তা এক গুরুত্বপূর্ণ উৎস হয়ে আছে।
গ্রিসের নও মুসলিম জর্জিয়া লিলিউ বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন মুসলিম ছাত্রের সঙ্গে পরিচিত হন। এ পরিচয়ের সুবাদে তিনি ইসলাম ধর্মের সন্ধান পান এবং এ ধর্ম নিয়ে গবেষণা করতে উদ্বুদ্ধ হন। এ ব্যাপারে লিলিউ বলেন,এক মুসলিম সহপাঠীর সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পর ধর্ম নিয়ে তার সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ি। ওই মুসলিম সহপাঠী আমার কাছে খ্রীস্টানদের ধর্মবিশ্বাস ‘ত্রিত্ববাদ’ সম্পর্কে জানতে চাইলে যতটুকু সম্ভব আমি ত্রিত্ববাদের স্বপক্ষে বক্তব্য তুলে ধরার চেষ্টা করি। ত্রিত্ববাদ বলতে এক ঈশ্বরের মধ্যে পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মার মিলনকেই বোঝায়। বর্তমানে বেশিরভাগ খ্রীস্টানই স্রষ্টা সম্পর্কে এই ধারণা পোষণ করে।
কিন্তু আমার ওই সহপাঠি ত্রিত্ববাদের বিরুদ্ধে শক্ত যুক্তি ও দলিল-প্রমাণ উপস্থাপন করলে আমি নিজ ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে অনেকটা হতাশ হয়ে পড়ি। আমি তাকে বলি ‘ত্রিত্ববাদ’ সম্পর্কে যদি আরো বিস্তারিত জানতে চাও তাহলে এমন কারো কাছে যাও যে এ সম্পর্কে আরো ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারবে। কারণ আমি নিজেও মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতাম, ঈসা (আ.) আল্লাহর পুত্র হতে পারেন না এবং তিনি কেবলমাত্র আল্লাহর প্রেরিত দূত বা নবী। এভাবেই ইসলাম ধর্মের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে।
নও মুসলিম জর্জিয়া লিলিউ আরো বলেন, ইসলামের মূলনীতি এবং খ্রীস্টান ধর্মের সঙ্গে ইসলামের পার্থক্য নিয়ে চিন্তা ও গবেষণা শুরু করি। আমি অবাক হই এটা জেনে যে,এ দুই ধর্মের মধ্যে বহু বিষয়ে মিল রয়েছে। বিশেষ করে ইসলামের তৌহিদ ও বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)এর নবুওয়াতের স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে বাইবেলে। আমি ইসলাম নিয়ে যতই গবেষণা করতে থাকি ততই লক্ষ্য করি,বিভিন্ন বিষয়ে ইসলামের অকাট্য যুক্তি রয়েছে। ইসলামের মূল নীতিগুলো সম্পর্কে জানার পর এ ধর্মের আরো গভীরে প্রবেশের চেষ্টা করি। বুঝতে পারি,এ ধর্ম কোনোভাবেই মানুষের চিন্তার ফসল হতে পারে না। এভাবে চিন্তা করতে করতে উপলব্ধি করি, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা এবং এ ধর্ম আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
বাস্তবতা হচ্ছে, মানব জাতি বস্তুগত দিক দিয়ে যতই উন্নতিই করুক না কেন এসব উন্নতি মানুষের সব সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম নয়। বহু চিন্তাবিদ ও গবেষক স্বীকার করেছেন, একমাত্র ধর্মের ছায়াতলেই মানুষ প্রকৃত শান্তি পেতে পারে। পবিত্র কুরআনের বিখ্যাত তাফসিরকারক আল্লামা তাবাতাবাঈ বলেছেন, বিশাল প্রকৃতি বিজ্ঞানের খুব সামান্যই আমরা জানতে পেরেছি। নিঃসন্দেহে, একজন মনোবিজ্ঞানীর কাছ থেকে মহাকাশ বা জ্যেতির্বিদ্যা সংক্রান্ত জ্ঞান যেমন আশা করা যায় না তেমনি একজন চিকিৎসকের কাছ থেকে কারিগরি জ্ঞান পাওয়াও কষ্টকর।
মানুষ অনন্য প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী এবং ধর্মের সঙ্গে মানব প্রকৃতির গভীর সম্পর্ক রয়েছে। তাই মানুষ যতই ধর্ম থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখবে ততই নানা সংকটে জর্জরিত হবে এবং অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে। ইসলাম ধর্ম বিশ্ব প্রকৃতি ও মানব প্রকৃতির দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছে এবং মহান আল্লাহ এই দুই প্রকৃতির সঙ্গে মিল রেখে মানব সমাজের জন্য এমন এক বিধান দিয়েছেন যার ফলে ইসলাম একটি চিরন্তর ধর্ম হিসেবে টিকে আছে। গ্রিসের নও মুসলিম মিসেস আনিশা লিলিউ ইসলামের বিধানকে মানব প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ উল্লেখ করে বলেছেন,ইসলাম সম্পর্কে জানার আগে আমি সবসময়ই একটি পূর্ণাঙ্গ ধর্মের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতাম। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি, আমার মধ্যকার ওই চিন্তা ছিল একটি প্রকৃতিগত বিষয় যা সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ সবার মধ্যেই দিয়েছেন।
নও মুসলিম মিসেস আনিশা জর্জিয়া লিলিউ নিজের মুসলমান হওয়ার কাহিনী তুলে ধরে আরো বলেছেন,মুসলমান হচ্ছেন সেই ব্যক্তি যিনি কুরআনের শিক্ষাকে মনে প্রাণে গ্রহণ করেছেন এবং তা মেনে চলছেন। আমি নিজেও এখন কুরআনের প্রতিটি আয়াত মেনে চলার চেষ্টা করছি। আমি আশা করি পূর্ণতায় পৌঁছার ও সঠিক পথে চলার ক্ষেত্রে আল্লাহ আমাকে সহযোগিতা করবেন।