মুহাম্মাদ শফিকুল ইসলাম
সমস্ত প্রশংসা সেই মহান সত্তা ও প্রতিপালকের, যিনি তাঁর স্বইচ্ছাতেই মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন, এবং তাঁর জমিনে তাঁর’ই প্রতিনিধি হিসেবে সমস্ত মানব জাতিকে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন।
অসংখ্য দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক মানবতার মহানায়ক আল্লাহর প্রিয় রাসূল হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র প্রতি, তাঁর পরিবার-পরিজনের প্রতি, তাঁর সহচরবৃন্দের প্রতি এবং কিয়ামত পর্যন্ত সে সকল মু’মিন নর-নারী তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণের মাধ্যমে উত্তমরূপে জীবন-যাপন করবেন, তাদের প্রতি।
সুমহান আল্লাহ ও দয়াময় প্রতিপালক সমস্ত মানবজাতিকে সৃষ্টি করে এক মহান উদ্দেশ্য সাধনের জন্য দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। আর সে উদ্দেশ্য হচ্ছেঃ আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করা। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহর ঘোষণা ছিলো এ রকমঃ
“এ পৃথিবীতে যা কিছু রয়েছে, সমস্ত কিছুই তিনি (পরম সৃষ্টিকর্তা) তোমাদের জন্যে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর সপ্ত আকাশ সুবিন্যস্ত করেন এবং তিনি সর্ব বিষয়ে মহাজ্ঞানী। এবং (তোমরা সকলেই সেই সময়ের কথা স্বরণ কর) যখন তোমার প্রভূ (আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা) ফেরেশতাগণকে বললেনঃ নিশ্চয়ই আমি পৃথিবীতে (আমার) খলিফা (বা প্রতিনিধি) সৃষ্টি করবো।” (সূরা বাকারাঃ ২৯-৩০)
তারপর মানব জাতিকে সেই ঘোষণা অনুযায়ী সৃষ্টি করে তাদেরকে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্যে দুনিয়াতে প্রেরণের পূর্বেই সমস্ত রূহ এর নিকট থেকে অঙ্গীকারও নিয়েছেন। আর সে ব্যপারে মহান আল্লাহ সকলকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলছেনঃ
“(হে মানবজাতি! তোমরা সেই সময়ের কথা স্মরণ কর) যখন তোমার প্রতিপালক বানী আদমের পৃষ্ঠদেশ হতে তাদের বংশধরকে বের করলেন এবং তাদেরকেই (অর্থাৎ সমস্ত মানব রূহকেই) তাদের (পরস্পরকে পরস্পরের) উপর- সাক্ষী করে জিজ্ঞেস করলেন: আমি কী তোমাদের প্রতিপালক নই? তারা (সমস্ত রূহই) সমস্বরে উত্তর দিলো: হ্যাঁ! আমরা (এ ব্যাপারে পরস্পরের) সাক্ষী থাকলাম। (আর এই স্বীকৃতি ও সাক্ষী বানানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে) যাতে তোমরা কিয়ামতের দিন (দুনিয়ার কৃতকর্মের হিসাব দেয়ার সময়) বলতে না পারো-আমরা এ বিষয়ে সম্পূর্ণ অনবহিত ছিলাম।” (সূরা আ’রাফঃ১৭২)
অতঃপর মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা’য়ালা বিশেষ একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেই রূহগুলোকে এক এক করে মাতৃগর্ভের ভ্রুণের মধ্যে প্রেরণ করছেন। এবং এক নিরাপদ আঁধারে রূহসংযুক্ত সেই ভ্রুণটিকে লালন-পালন করে একটি নির্দিষ্ট সময়ে মাতৃগর্ভ হতে জমিনে পাঠিয়ে থাকেন। এ ব্যপারেই মহান আল্লাহ বলছেনঃ
“আমিতো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মৃত্তিকা হতে; অতঃপর আমি ওকে শুক্রবিন্দু রূপে স্থাপন করেছি (মাতৃগর্ভে) নিরাপদ আঁধারে। পরে আমি শুক্রবিন্দুকে পরিণত করি রক্তপিণ্ডে; অতঃপর রক্তপিণ্ডকে পরিণত করি গোশত পিণ্ডে এবং গোশত পিণ্ডকে পরিনত করি অস্থিপঞ্জরে; অতঃপর অস্থিপঞ্জরকে ঢেকে দেই গোশত দ্বারা। অবশেষে ওকে গড়ে তুলি অন্য এক সৃষ্টিরূপে; অতএব সর্বোত্তম স্রোষ্টা আল্লাহ কত মহান।” (সূরা মু’মিনুনঃ১২-১৪)
এ ব্যপারে একটি হাদীসের বর্ণনাঃ “আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ সত্যবাদী ও সত্যের বাহক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টির প্রক্রিয়া চলে তার মাতৃগর্ভে চল্লিশদিন ধরে। অতঃপর সে শুক্রবিন্দু থেকে (চল্লিশ দিনে) জমাট বাঁধা রক্তপিণ্ডে পরিনত হতে থাকে। অতঃপর রক্তপিণ্ড হতে (চল্লিশ দিন পর্যন্ত) গোশত পিণ্ডে পরিণত হতে থাকে। অতঃপর {ভ্রুণটির বয়স যখন ১২০ (একশত বিশ) দিন হয় তখনি} আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা একজন ফেরেশতা পঠিয়ে তাকে চারটি বিষয়ে লিপিবদ্ধ করতে বলেন। অতঃপর তার মধ্যে “রূহ” ফুকে দেয়া হয়।………”(সহিহ আল বুখারী)
তারপর মহান আল্লাহ সেই মাতৃগর্ভের ভ্রুণটিকে কখনও পুর্ণাঙ্গ মানব শিশুতে পরিণত করে নির্দিষ্ট সময়ে জীবিত অবস্থায় জমিনে প্রেরণ করেন। আবার কাউকে মৃত অবস্থায় মাতৃগর্ভ থেকে বের করেন। এ ব্যাপারেই মহান আল্লাহ বলছেনঃ
“হে মানব জাতি! পুনরুত্থান সম্বন্ধে যদি তোমরা সন্দিহান হও, তবে অনুধাবন কর; আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি মৃত্তিকা হতে; অতঃপর শুক্র হতে; অতঃপর রক্তপিণ্ড হতে; অতঃপর পূর্ণাকৃতি বা অপূর্ণাকৃতি গোশতপিণ্ড হতে; তোমাদের নিকট (আমার বিধান) ব্যক্ত করবার জন্য। আমি যা ইচ্ছা করি তা এক নির্দিষ্ট কালের জন্য মাতৃগর্ভে স্থিত রাখি। অতঃপর তোমাদেরকে শিশুরূপে (মাতৃগর্ভ হতে) বের করি। পরে যাতে তোমরা পরিণত বয়সে উপনীত হও; তোমাদের মধ্যে কারো কারো (অল্প বয়সে) মৃত্যু ঘটানো হয়, এবং তোমাদের মধ্যে কাউকে প্রত্যাবৃত্ত করা হয় অকর্মণ্য (বৃদ্ধ) বয়সে, যার ফলে তারা যা কিছু জানতো সে সম্বন্ধে তারা সজ্ঞান থাকে না।” (সূরা হাজ্জঃ ৫)
এভাবেই একটি বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানব শিশুটি যখন একদিন ইসলামের ফিতরাতের উপর জমিনে পদার্পন করেন, একটি বয়সে এসে আল্লাহর হুকুমে শিশুটির জবান খুলে যায়। যখন সে কথা বলতে শিখে তখন তার পিতা-মাতা মুসলিম হলে শিশুটিকে সর্বপ্রথম আল্লাহর পবিত্র কালেমা পড়িয়ে মু’মিন বাহিনীতে ভর্তি করে দিয়ে তাকে মু’মিনের প্রশিক্ষণ দিতে থাকেন। কিন্তু তখন সেই শিশুটি কালেমা সম্পর্কে কোন কিছুর ধারণা না পেলেও একদিন সেই শিশুটি একটি পরিণত বয়সে উপনীত হয় এবং মু’মিনের বিধি-বিধান সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা লাভ করতে পারে। এবার সেই বালকটি কালেমার মাধ্যমে আল্লাহর সাথে যে অঙ্গীকার করা হয়েছে সেটাও বুঝতে পারেন। সে বুঝতে পারে যে, সে এক কঠিন শর্তে আল্লাহর সাথে একটি চুক্তিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। আর সেই চুক্তিটি হচ্ছেঃ
“লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ দাহু লা-শারীকালাহ, ওয়াআসহাদু আন্না-মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ”
অর্থঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই। তিনি এক ও একক, তার কোন শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল”।
এই অঙ্গীকারটা একজন মু’মিনের জন্য দ্বিতীয় চুত্তি। যার প্রথম চুক্তিটি ছিলো দুনিয়াতে আসার পূর্বে। সর্বশেষ কালেমার মাধ্যমে যে চুক্তিটি সম্পাদিত হলো, এটি সেনা বাহিনীতে ভর্তি হয়ে প্রশিক্ষণ শেষে শপথ গ্রহণের মতই আর একটি চুক্তি বা অঙ্গীকার।
আমাদের দেশে একজন সাধারণ কিশোর সেনাবাহিনীতে ভর্তি হয়ে কঠোর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যখন প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শেষ করেন, তখন তাকে যে উদ্দেশ্যে ভর্তি করা হয়ে থাকে, সেই কর্মসম্পাদন করার জন্য তারা স্ব স্ব ধর্মগ্রন্থ স্পর্শ করে কলিজা ফাঁটা গগন বিদারী চিৎকারের মাধ্যমে প্রকাশ্য জনসন্মুখে শপথ নিয়ে বলতে থাকেনঃ
**“আমি, (এ স্থানে নিজের সৈনিক নং পদবী / পেশা নাম এবং পিতার নাম উল্লেখ পূর্বক) সর্বশক্তিমান আল্লাহর নামে, সশ্রদ্ধচিত্তে শপথ করিতেছি যে,
**আমি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের সংবিধান এবং রাষ্ট্রপতির প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ করিব;
**আমি আমার অপরিহার্য কর্তব্য মনে করিয়া আমার উপর ন্যস্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্তব্য, আমি সততা ও বিশ্বস্ততার সহিত পালন করিব; এবং আমার প্রতি জ্বল স্থল ও আকাশ পথে যেখানেই যাইবার আদেশ করা হইবে, সেখানেই যাইব;
**আমার জীবন বিপন্ন করিয়াও আমার উপর নিয়োজিত সেনাবাহিনীর কর্তব্যরত যে কোন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আদেশ পালন ও মান্য করিব।”
এই পবিত্র শপথ রক্ষার জন্য একজন সৈনিক অবর্ণনীয় কষ্ট স্বীকার করে নিজের পিঠের উপর ৪০/৫০ কেজি ওজনের ভারী বোঝা বহন করে দিনের পর রাত, রাতের পর দিন এবং মাসের পর বছর ধরে উঁচু-নিচু দুর্গম পাহাড়ী পথ অতিক্রম করে। মাইলের পর মাইল পাথারের পর পাথার, ঝোপ-জঙ্গল, গিরীপথ ও বন্ধুরপথ অতিক্রম করে। এই শপথ রক্ষার জন্য নিজের পিঠে ভারী বোঝা বহন করে আকাশ যানের উপর থেকে লম্ফ দিয়ে জমিনে পরে, সাগরের হিংস্র জন্তু জানোয়ারের তোয়াক্কা না করে গভীর সাগরে ডুব দেয়। প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টি ও কলিজা ফাঁটা রোদ্রের প্রখর তাপদাহ উপেক্ষা করে, নিজের জীবনের নিশ্চিত মৃত্যু ঝুকি নিয়েও শত্রু সৈন্যের বুহ্য অভ্যন্তরে ঢুকে পরে। সৈনিকরা এই সমস্ত কষ্ট করার উদ্দেশ্য, শুধু মাত্র একটি কারণে। আর তা হচ্ছে: তারা যে দেশ-জাতি তথা সরকার এবং রাষ্ট্রীয় সংবিধানের উপর আনুগত্যের জন্য ওয়াদাবদ্ধ, সেই ওয়াদা পালন করা।
এই যদি সাধারণ একজন সৈনিকের বেলায় হতে পারে, তাহলে যিনি সমস্ত মানব জাতির সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিযিকদাতা এবং মানুষের যাবতীয় কল্যাণের পথ দ্রোষ্টা। সেই মহান প্রভূর নিকট যে অঙ্গীকার বা চুক্তি করা হয়েছে, সেগুলো পালনের জন্য আমরা মু’মিনরা কে কতটুকু কাজ করছি? সকলেই একবার নিজে নিজে চিন্তা করে দেখুন তো?
অনেকেই হয়তো বলতে পারেন যে, মু’মিনরা কার আনুগত্য করবে? সে সম্পর্কে হয়তো কোন দিক নির্দেশনা দেয়া হয়নি। তাই বলছিঃ একজন মানুষ যখন কালেমা পড়ে ঈমান গ্রহণ করে ইসলামে প্রবিষ্ট হন, তখন তারাও কারো না কারো আনুগত্যের কাছে দায়বদ্ধ হন। তা নাহলে তিনি মু’মিন থাকতে পারবেন না। আর সে ব্যাপারেই মহান আল্লাহ আনুগত্যের নির্দেশ দিয়ে বলছেনঃ
“হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর অনুগত হও ও রাসূলের অনুগত হও এবং তোমাদের মধ্যে (কুর’আন সুন্নাহর আলোকে) আদেশদাতাগণের। অতঃপর যদি তোমাদের মধ্যে কোন বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়, তবে তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে প্রত্যাবর্তীত কর, যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস স্থাপন করে থাকো; এটাই কল্যাণকর ও শ্রেষ্ঠতম অবস্থান।” (সূরা নিসাঃ ৬৯)
আবার অনেকেই ভাবতে পারেন যে, মু’মিনদের আবার আলাদা সংবিধান কি? যে মু’মিন যে রাষ্ট্রে বসবাস করেন, সেই রাষ্ট্রের কর্তা ব্যক্তিগণ যে সংবিধান তৈরী করেন সেটাই তো তাদেরও সংবিধান। তাই মু’মিনরা কোন সংবিধানের অনুগত থাকবে বা অনুসরণ করবে, সে সম্পর্কেও মহান আল্লাহ বলছেনঃ
“আর (এমনিভাবে) আমি এই কিতাব (আল-কুরআনকে সংবিধান হিসেবে) অবতীর্ণ করেছি, যা বরকতময় ও কল্যাণময়! সুতরাং তোমরা এটাকে অনুসরণ করে চলো। এবং এর বিরোধিতা হতে বেঁচে থাকো। হয়তো (এই কুরআন অনুসরণের মাধ্যমে) তোমাদের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ প্রদর্শন করা হবে।” (সূরা আন’আমঃ১৫৫)।
আর যে বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্যই মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা মু’মিনদেরকে দুনিয়ায় পঠিয়ে থাকেন, আর তা হচ্ছে, আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে মানব সমাজে তাঁর দ্বীন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানব কল্যাণ সাধন করা। আর এ ব্যাপারেই মহান আল্লাহ বলছেনঃ
“(হে মু’মিনগণ!) তোমরাই মানবমন্ডলীর জন্যে শ্রেষ্ঠতম সম্প্রদায়রূপে সমুদ্ভূত হয়েছো; তোমরা (মানবজাতিকে) ভালো কাজের আদেশ কর ও মন্দ কাজের নিষেধ কর এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করো…… (সুরা আল-ইমরানঃ১১০)
আর এই কাজের জন্য মু’মিন নর-নারী সমভাবেই দায়ী। এ ব্যপারেই মহান আল্লাহ বলছেনঃ
“আর মুমিন পুরুষরা ও মু’মিনা নারীরা হচ্ছে পরস্পর একে অন্যের বন্ধু, তারা (যার যার সামাজিক ভূবনে মানব জাতিকে) সৎ বিষয়ের আদেশ দেয় এবং অসৎ বিষয় হতে নিষেধ করে, আর নামাযের পাবন্ধি করে, আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ মেনে চলে। এসব লোকের প্রতি আল্লাহ অবশ্যই করুণা বর্ষণ করবেন, নিঃসন্দেহে আল্লাহ অতিশয় ক্ষমতাবান, হিকমতওয়ালা।” (সূরা আত তাওবাঃ ৭১)
সৈনিকরা দেশ ও মানব সেবার জন্য কাজ করলে দেশের সরকার তাদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকেন, যেমনঃ যার যার পদমর্যাদা অনুযায়ী মাসের শেষে নির্দিষ্ট পরিমানের একটা পারিশ্রমিক, বিনা পয়সায় থাকা-খাওয়া ও চিকিৎসা সুবিধা, অকর্মন্ন বয়সে পেনশন সুবিধা ইত্যাদি।
তদ্রুপ মু’মিন নর-নারীরা মহান আল্লাহর নির্দেশ মত কাজ করলে, তাদের জন্যেও রয়েছে প্রচুর সুযোগ সুবিধা। এ ব্যাপারেই মহান আল্লাহ বলছেনঃ
“আল্লাহ (সৎকর্মশীল) মু’মিন পুরুষ ও মুমিনা নারীদেরকে (তাদের সৎ কর্মের পুরস্কার হিসেবে) এমন উদ্যানসমূহের ওয়াদা দিয়ে রেখেছেন, যেগুলোর নিম্নদেশে বইতে থাকবে নহরসমূহ, যে (উদ্যান) গুলোর মধ্যে তারা অনন্তকাল অবস্থান করবে, আরও (ওয়াদা দিয়েছেন) ঐ উত্তম বাসস্থানসমূহের যা চিরস্থায়ী উদ্যানসমূহে অবস্থিত হবে, আর (এগুলোর চেয়েও) আল্লাহর সন্তুষ্টি হচ্ছে সর্বাপেক্ষা বড় (নিয়ামত), এটা হচ্ছে অতি বড় সফলতা।” (সূরা আত তাওবাঃ ৭২)
সৈনিকরা যেমনিভাবে তাদের দায়িত্ব পালন না করলে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা হতে বঞ্চিত হন, এছাড়াও ওয়াদা খেলাপের কারণে কঠিন শস্তি পেয়ে থাকেন। তদ্রুপ কোন ব্যক্তি মু’মিন হওয়ার পরেও যদি তিনি আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানব কল্যাণ সাধনের জন্য চেষ্টা না করেন, তাহলে তিনিও কোনক্রমেই আল্লাহর ঘোষিত পুরস্কার প্রাপ্তির যোগ্য হতে পারবেন না। বরংচ দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে ওয়াদা খেলাপকারী বা শপথ ভঙ্গকারী হিসেবে অবশ্যই তাকেও কঠিন শাস্তি পেতে হবে।
সুতরাং হে আমার প্রাণ প্রিয় মু’মিন ভাই ও বোনগণ! আসুন আমরা পবিত্র কুর’আনুল কারীম এবং সহীহ হাদীস থেকে আমাদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে ভালো ভাবে জানার চেষ্টা করি. এবং জানার পর থেকেই আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হয়ে মহান আল্লাহর অনুগত বান্দা-বান্দী হিসেবে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করি।
দয়াময় প্রতিপালক ও সুমহান আল্লাহ আমাদের সমস্ত দুনিয়ার মু’মিন নর-নারীকেই তাঁর দেয়া দায়িত্ব পালনের পথ সহজ করে দিন এবং আমাদের সকলকেই দ্বীনের সৈনিক হিসেবে কবুল করে নিয়ে গোটা দুনিয়ার জমিনে তাঁর দ্বীন বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানব কল্যাণ সাধন করার তাওফীক দান করুন। আমিন॥