ভূমিকা: ‘লা ইলা হা ইল্লাল্লাহ’ অর্থ আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন উপাস্য নেই। অর্থাৎ প্রকৃত ও সত্য ইলাহ একজনই আছেন। তিনি হলেন আল্লাহ রব্বুল আলামীন। তিনি ছাড়া আর যা কিছুর ইবাদত করা হয় যেমন মূর্তি, জ্বিন, সূর্য, কবর, পাথর, মাযার ইত্যাদি; এগুলো কারো না কারো মা’বূদ বা উপাস্য কিন্তু সবই বাতিল, অপ্রকৃত এবং মিথ্যা মা’বূদ। এ বক্তব্যের সার কথাই হল তাওহীদ বা একত্ববাদ। আর নিচে একত্ববাদের মর্ম কথা তুলে ধরা হ’ল।
তাওহীদের গুরুত্বঃ
একমাত্র তাওহীদই ঈমান ও কুফুরীর মধ্যে বিভাজন রেখা রচনা করে। তাই তওহীদের পরিষ্কার ধারণা ও সঠিক বুঝ না থাকলে নামায, রোযা, হাজ্জ, আল্লাহর পথে খরচ ও মেহনত, ইক্বামতে দীনের পথে সংগ্রাম, জিহাদ ও হিজরত ফী সাবীলিল্লাহ এবং শাহাদাতের মত সেরা ইবাদত গুলোও বিফলে যাবে। তাই আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিকে তাকালে দেখতে পাই, তিনি নবুওতের মক্কী ১৩ টি বছরের মধে ১১টি বছরই কাটিয়ে ছিলেন শুধু তাওহীদের দিক্ষা দিয়ে। অর্থাৎ তাওহীদ যত দিন সুপ্রতিষ্ঠিত হয়নি ততদিন পর্যন্ত নাযিল করা হয়নি সলাত, যাকাত, কিংবা সিয়াম ফরযের বিধান। চুরি, ডাকাতি, ব্যভিচার, বিবাহ,তালাক ইত্যাদির বিধানাবলীও নাযেল হয়েছিল তাওহীদের শেকড় মজবূত হবার পরে।
হযরত আদম আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হযরত মুহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত যত নবী-রাসূল পৃথীবিতে পাঠান হয়েছে, তাঁদের সকলকে তাওহীদ প্রতিষ্ঠার এক ও অভিন্ন দায়িত্ব দিয়েই দুনিয়াতে প্রেরণ করা হয়েছিল। এরশাদ হচ্ছে- وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ) ”আমি তোমার পূর্বে যত রাসূল প্রেরণ করেছি তাদের সকলকে আমি এই ওহীই করেছি যে, আমি ব্যতীত প্রকৃত আর কোন ইলাহ নেই, কাজেই তোমরা আমারই ইবাদত কর।” (সূরা আম্বিয়া/২৫) আরো দেখুন সূরা নাহাল: ৩৬ নং আয়াত।
মানব শিশু যখন জন্ম গ্রহণ করে, তখন ইহুদী, খৃষ্টান, বৌদ্ধ, ব্রাক্ষ্মণ কিংবা যে ধর্মেরই হোক, প্রতিটি নবজাত শিশুই তাওহীদ মেনে চলার ফিৎরাত বা প্রবনতা নিয়েই জন্ম গ্রহণ করে। কিন্তু বাবা-মার কারনেই তারা বিধর্মী, বে নামাযী বা বে-পর্দা হয়ে যায়।
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال : قال النبي صلى الله عليه و سلم كل مولود يولد على الفطرة فأبواه يهودانه أو ينصراه أو يمجسانه
হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন “প্রতিটি নবজাত শিশুই ফিৎরাতের উপর (স্বভাব জাত ধর্ম তথা আল্লাহর একত্ববাদ এর উপর) জন্ম গ্রহণ করে; পরে তার পিতা-মাতা তাকে ইহুদী বানিয়ে দেয়, নাসারা বানিয়ে দেয় অথবা পৌত্তলিক বানিয়ে দেয়। (বুখারী, হা: নং ১৩১৯, মুসলিম, হাদীস নং ২৬৫৮)
তাওহীদের ফযীলতঃ
দুনিয়ার সমস্ত পাপও যদি কোন মানুষ করে শেষ করে ফেলে কিন্তু সে একটি পাপ থেকে বাঁচতে পারে অর্থাৎ শিরক থেকে বাঁচতে পারে; তাহলে আল্লাহ তার সমস্ত পাপরাশী ক্ষমা করে দিয়ে তাকে জান্নাত দান করবেন। (তিরমিযী, মেশকাত, ইস্তিগফার অধ্যায়)
রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি শিরক না করে মারা যাবে সে জান্নাতে যাবে”। (মুসলিম)
প্রশ্নঃ তাওহীদ কি?
উঃ তাওহীদ বলতে বুঝায়, যাবতীয় ইবাদত কেবল মাত্র আল্লাহর জন্য। পক্ষান-রে যে কোন ইবাদত আল্লাহর জন্য না করে অন্য কোন স্বার্থে করাকে বলে শিরক।
তাওহীদ কত প্রকার?
উঃ তাওহীদ তিন প্রকার। যথাঃ
(১) তাওহীদুর রবূবিয়্যাহ্
(২) তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ্
(৩) তাওহীদুল আসমা ওয়াস্ সিফাত
তাওহীদুর রবূবিয়্যাহ এর পরিচিতিঃ
এই তাওহীদের মূল কথা হচ্ছে, কেবল আল্লাহকেই রব হিসেবে বিশ্বাস করা এবং স্বীকৃতি দেয়া। ‘রব’ অর্থ লালন-পালন কারী, তাই দুনিয়া জুড়ে সমগ্র সৃষ্টি রাজীকে লালন-পালন করতে যা কিছুর প্রয়োজন হয়, সবকিছু কেবল একজনেই করছেন। তিনি হলেন ‘আল্লাহ’। এক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে অন্য কেউ অংশগ্রহনকারী নেই বা শরীক নেই।
অর্থাৎ জানতে হবে,মানতে হবে এবং বিশ্বাস করতে হবে যে, বস’নিচয়ের একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, ও বিধানদাতা কেবলমাত্র আল্লাহ,অন্য কেউ নয়। তিনি রিয্কদাতা, মহাব্যবস্থাপক এবং স্বার্বভৌমত্বের একচ্ছত্র অধিপতি। সকল ক্ষমতার উৎসও কেবল তিনি। মোট কথা, আল্লাহর কার্য্যাবলীতে তাঁর এককত্ব বিশ্বাস করাকে তাওহীদে রাবূবিয়্যাহ বলে।
কুরআনের বহু আয়াতে এই তাওহীদের ভিত্তি পাওয়া যায়। যেমন, মৌলিক সৃষ্টিকর্তা যে এক আল্লাহই, তিনি ছাড়া অন্য কোন সৃষ্টিকর্তা নেই সে কথা মহান আল্লাহ চ্যালেঞ্জ করে মানব জাতীকে বলেছেন, “হে মানব! তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর, আল্লাহ ব্যতীত এমন কি কোন স্রষ্টা আছে, যে তোমাদেরকে আকাশ মন্ডলী ও পৃথীবি হতে রিয্ক দান করে? তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। সুতরাং তোমরা বিপথে কোথায় চলছ?” (সূরা ফাতের/০৩)
অনুরূপ, একমাত্র আল্লাহই বৃষ্টি বর্ষণ কারী। (সূরা ওয়াকিয়া/৬৯) ভূমন্ডল নভ মন্ডল এবং এতদুভয়ের মাঝে গ্রহ নক্ষত্র চন্দ্র সূর্য মোট কথা সমূদয় বিষয়ের একমাত্র পরিচালক আল্লাহ। (সূরা সাজদাহ/৫) নি:সন্তানকে সন্তান দেওয়া, ছেলে সন্তান দেওয়া, মেয়ে সন্তান দেওয়া, (সূরা শূরা/৪৯-৫০) মুসলিম জাতিকে বিজয় দান, বিপদ মুক্ত করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ বা অন্য কোন রব নেই লা ইলা হা ইল্লাল্লাহ।
বলা বাহুল্য, এই তাওহীদ বিনষ্ট হয়ে যাবে, যদি বিশ্বাস করা হয়- তথাকথিত গাউছ, কুতুব, আবদাল অথবা কোন পীর-ফকীর সন্তান দান বরকত দান, বিপদ মুক্তি ইত্যাদির ক্ষমতা রাখে। অনুরূপ যে বিশ্বাস করবে যে, কোন বুযর্গের কারনে বা উমুক নক্ষত্রের কারনে বৃষ্টি বা রোদ হয়, সেও এই তাওহীদের ভিত্তি চুরমার করে শিরকের নিকোষ কালো আঁধারে হারিয়ে যাবে।
তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ এর পরিচিতিঃ
(ক) সমগ্র সৃষ্টি কুলের ইবাদতের হকদার কেবল মাত্র, শুধুমাত্র এবং একমাত্র আল্লাহ তায়ালা এ কথা জানা, বিশ্বাস করা এবং বাস্তবে আমল করা।
(খ) মহান আল্লাহর জন্যই সমগ্র দ্বীনকে খালেছ করা। এবং
(গ) কেবল আল্লাহর জন্যই যে কোন ইবাদত পালন করাকে তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ্ বলে। আল্লাহ তায়ালা শিখাচ্ছেনঃ (إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ)
“আমরা কেবল তোমারই ইবাদত করি এবং কোবল তোমারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি।” (সূরা আল ফাতিহা)
আল্লাহ তা‘আলা আরও শেখাচ্ছেনঃ
( قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ )
“বল, আমার সলাত, আমার কুরবানী, আমার,জীবন ও আমার মরণ জগৎ সমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। “(সূরা আল আনআম/১৬২)
ইবাদত পাঁচ প্রকারঃ
১. ক্বলব বা অন্তরের দ্বারা ইবাদত। যেমন-
(ক) নিয়ত বা সংকল্পঃ লৌকিকতা, সুনাম, যশ ও খ্যাতি অর্জন কিংবা দুনিয়াবী কোন স্বর্থ হাসিল নয়, বরং কেবল মাত্র আল্লাহর সন’ষ্টি হাসিলের নিয়তেই ইবাদত করতে হবে। (সূরা আল বাইয়্যেনাহ/৫)
(খ) ভীতিঃ মূর্তি, মাযার, দরগাহ বা তথাকতিত গাউছ-কুতুবকে, নয় পূর্ণ ভয় কেবল আল্লাহর জন্যই হওয়া বাঞ্ছনীয়। আল্লাহ বলেন,“তোমরা তাদেরকে ভয় করনা; ভয় কর আমাকে।” ( সূরা আল বাক্বারা/১৫০)
(গ) আশা করাঃ দয়া অনুগ্রহ, ক্ষমা, দুনিয়াবী সফলতা, পরকালীন মুক্তি ইত্যাদি লাভের আশা আল্লাহর কাছেই করতে হবে; অন্য কারো কাছে নয়।…..
(ঘ) ভালবাসাঃ আল্লাহকে ভাল বাসার স্বরূপ হ’ল, বান্দা আল্লাহর সামনে বিনীত বিগলিত হবে। হৃদয়ের সবটুকু ভালবাসা মিশিয়ে তাঁর নির্দেশের অকপট আনুগত্য বরণ করতে হ’বে। কেননা, মানুষ যবিতীয় কাজের মূল প্রেরণা লাভ করে পরম ভালবাসা থেকে।
ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম র: বলেন: ”আল্লাহ যা ভাল বাসেন তার সাথে পূর্ণ একাত্নতা প্রকাশ এবং তিনি যা অপছন্দ করেন তার প্রতি হৃদয়-প্রাণ দিয়ে ঘৃণা পোষণ করাকেই আল্লাহর প্রতি ভালবাসা বলে।
(ঙ) তাওক্কুল বা নির্ভরশীলতাঃ প্রত্যেক ক্ষেত্রে বাহ্যিক ও সম্ভাব্য উপায়-উপকরণ গ্রহণ করার পর উহার সফলতার ক্ষেতে একমাত্র আল্লাহর উপর নির্ভর করতে হ’বে।
২. মৌখিক ইবাদতঃ যেমন-
(ক) দুয়া বা প্রার্থনাঃ রোগ মুক্তি, পরীক্ষায় পাশ, মিথ্যা মামলা থেকে নিষকৃতি, মেয়ের বিবাহ, সন্তান লাভ ইত্যাদির আশায় কেবল মাত্র সারা জাহানের এক মাত্র উপাস্য মহান আল্লাহর নিকটেই কাতর প্রার্থনা জানাতে হ’বে। আর আল্লাহর নিকট চাওয়া এবং বিপদে-আপদে, সুখে-দু:খে তাঁকেই বিনীত ভাবে ডাকা বা দুয়া করা- এটাই প্রকৃত ও মৌলিক ইবাদত। পক্ষান-রে ক্ববরে, মাযারে, বটগাছের কাছে, জট ওয়ালা ফকীর, খানকার পীর, আর জীন ওয়ালা কবীরাজের কাছে যারা ধর্ণা দেয় তারা তাওহীদে উলূহিয়্যাকে পায়ে দলে এবং বুকে তুলে নেয় শিরকের বক্রতাকে। কেননা, এদেরকে ডাকার অর্থ হ’ল,আল্লাহর মত এরাও ইলাহ্। অথচ আমরা জানি আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই- লা- ইলা হা ইল্লাল্লাহ।
(খ) যিক্র-আযকারঃ যিক্র-আযকার, তাসবীহ-তাহলীল ও তাহমীদ ইত্যাদি এসব ইবাদত আল্লাহর জন্যই পালন করতে হবে। তাহলেই তাওহীদের উপর থাকা যাবে। কিন’ যারা বিভিন্ন ওজীফা ও যিক্র-আযকারের সময় পীর সাহেবের দিকে ক্বলবের তাওয়াজ্জুহ্, খেয়াল বা তাঁর দিকে ধ্যান করেন তারা শিরক ও বিদআত দুটোই করেন। কারণ এসবই হবে এক আল্লাহর দিকে দিলের পূর্ণ তুওয়াজ্জুহ সহকারে এবং তা কেবল মাত্র রাসূলে আকরাম ৎ এর তরীকা মোতাবেক। আল্লাহ ব্যতীত আমাদের আর কোন প্রকৃত মা’বূদ নেই, আর মুহাম্মদ ব আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল।
৩. শারীরিক ইবাদতঃ যেমন- সলাত, সিয়াম ইত্যাদি।
৪. আর্থিক ইবাদতঃ যেমন- যাকাত, ফিৎরা, ক্বুরবানী, মান্নত, ওয়াক্ব্ফ, দান, ভিক্ষা প্রদান ইত্যাদি।
৫. এমন ইবাদত যা উক্ত চার প্রকার ইবাদতের সমন্বয়ে পালন করতে হয়। যেমন হজ্জ, ওমরা, জিহাদ প্রভৃতি।
এসকল ইবাদত কেবল মাত্র এবং শুধু মাত্র আল্লাহর সন্তষ্টি লাভ, তাঁর অসন্তুষ্টি হতে বাঁচা এবং তাঁর দাসত্ব করার নিমিত্তেই পালন করতে হবে। তাহলে হবে তাওহীদ ভিত্তিক সঠিক ইবাদত। অন্যথায় দুনিয়াবী কোন স্বার্থে বা কোন মাখলূককে কেন্দ্র করে এ সব পালন করা হলে তাওহীদ বিলিন হয়ে যাবে, তাওহীদ বিদ্ধস্ত হয়ে পড়বে।
‘তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত’ এর পরিচিতিঃ ‘তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত’ এর তাৎপর্য হল: আল্লাহর সুন্দর সুন্দর নাম ও গুণাবলীর ক্ষেত্রে তাঁর একত্ববাদ। আর তা হ’ল- “পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীছে আল্লাহ তায়ালার যে সকল সুন্দর সুন্দর নাম ও উন্নত গুণরাজীর বিবরণ এসেছে তা হুবহু আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত” – এ কথা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে হবে। মহান আল্লাহর ঘোষণাঃ (اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى ) “আল্লাহ ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য কোন মা’বূদ নেই, তাঁর রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম।” (সূরা ত্বাহাঃ ৮)
তবে কোন অবস্থাতেই আল্লাহর কোন নাম বা গুণকে অস্বীকার করা, বিকৃত ব্যাখ্যা করা, উপমা ও ধরণ বর্ণনা করা চলবে না। মহান আল্লাহ বলেনঃ (لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ) “তাঁর মত কোন কিছূ নেই, তিনি সর্ব শ্রোতা এর্ব সর্বদ্রষ্টা।” (সূরা শূরা/১১)
এ তাওহীদের মূল ভিত্তি ৩ টিঃ (ক) আল্লাহর গুণাবলী সম্পর্কে কুরআন ও সহীহ হাদীছে যা যেভাবে যতটুকু বর্ণনা এসেছে সেভাবে ততটুকুই বিশ্বাস রাখতে হবে। এর কোনটিকে অস্বীকার করা যাবে না। কমানো, বাড়ানো কিংবা অপব্যাখ্যা করা যাবে না।
(খ) আল্লাহর কোন গুণকে সৃষ্টির কোন গুণের সাথে তুলনা করা, বা উপমা ও ধরণ সাব্যস্ত করা যাবে না।
(গ) আল্লাহর যে কোন গুণেরই কাইফিয়্যাত বা ধরণ জানতে চাওয়ার ইচ্ছাকে অবশ্যই দমন করতে হ’বে। যেমন আল্লাহর দু’হাত এর কথা কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। তাই তাঁর হাত আছে বলে বিশ্বাস করতে হবে। অনেকে বলে আল্লাহর হাত নেই। এটা বড় ভূল। তাইবলে মনে করা যাবে না যে, আল্লার দু’হাত মানুষের মত (নাউযূ বিল্লাহ) । আবার একথাও বলা যাবে না যে আল্লাহর হাত মানে রহমত। বা আল্লাহর হাত মানে কুদরত (নাউযূবিল্লাহ) । কিংবা কেমন তাঁর হাত? – এ প্রশ্নও করা পাবে না। বরং বিশ্বাস করতে হবে যে- আল্লাহর জন্য যেমন প্রযোজ্য বা যেমন শোভনীয় তেমনি তাঁর দুটি হাত রয়েছে।
এই তিনটি ভিত্তির কোন একটি অমান্য করলেই পদস্খলন অনিবার্য।
আল্লাহর কতিপয় গুণাবলীঃ
এ সব কথা অন্তরে গেঁথে নেয়ার পর আসুন- আল্লাহর কিছু গুণাবলী উল্লেখ করি। এগুলো অনেক মানুষেরই জানার অভাব রয়েছে। যথাঃ
১) আল্লাহ কথা বলেন- সূরা আন নিসা/১৬৪।
২) “আল্লাহ সত্ত্বাগতভাবে সপ্তআকাশের উপর আরশে আযীমের উপর বিরাজমান।”- সূরা ত্বাহা/৫, আনআম/৩, হাদীছ-মুসলম, আবূদাউদ।
“আল্লাহ তায়ালা সর্বত্র বিরাজমান” এই ধারণা ভুল। “আল্লাহ মুমিনের ক্বলবে আছেন বা ‘মুমিনের ক্বলব আল্লাহ আরশ” এ কথাটিও ঠিক নয়; বরং উহা আল্লাহর সাথে বে-আদবী এবং এতে আল্লাহকে ছোট করা হয়। বরং সঠিক কথা হল, আল্লাহ তায়ালা সাত আসমানের উপরে; আরশের উপরে মহিমান্বিত রয়েছেন, আর তাঁর দৃষ্টি, জ্ঞান, ও ক্ষমতা সর্বত্রই বিরাজমান। আল্লাহ তায়ালা আরশের উপর কি অবস্থায় রয়েছেন তা কিন্তু তিনি পবিত্র কুরআনে কিংবা তাঁর রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সহীহ সুন্নাহর মধ্যে বর্ণণা দেননি তাই কেউ জানে না যে আল্লাহ আরশের উপর কি অবস্থায় রয়েছেন।
৩) গাইবের খবর এক মাত্র তিনিই জানেন; অন্য কেউ নয়। ( সূরা আনআম/৫৯, সূরা লুক্বমান/৩৪)
৪) আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। (সূরা বুরুজ/১৬)
৫) আল্লাহ মুমিনদেরকে ভাল বাসেন। (সূরা আলু ইমরান/৩১,১৪৬,)
৬) আল্লাহর চেহারা রয়েছে। (সূরা আর রাহমান/২৭)
৭) আল্লাহর দু’টি হাত আছে। (সূরা আল মায়েদাহ/৬৪, সূরা যুমার/৬৭)
৮) আল্লাহর চক্ষু আছে। (সূরা হুদ/৩৭,সূরা আন আম/১০৩, বুখারী, মুসলিম)
৯) আল্লাহ সর্ব শ্রতা। (সূরা বাক্বারাঃ১৩৭,) বি:দ্র: আল্লাহ পাকের শ্রবণ শক্তির কথা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বণিত হয়েছে কিন্তু আল্লাহর কানের কথা কোথাও বর্ণিত হয়নি তাই তাঁর কানের কথা বলা উচিৎ নয়। এমনকি এ কথাও বলা যাবে না যে “কান না থাকলে তিনি কিভাবে শুনবেন?” কিংবা একথাও বলা যাবে না যে, “যেহেতু তিনি শুনেন তাই বুঝাগেল তাঁর কান আছে।” অর্থাৎ তাঁর কান আছে বলব না এবং নাইও বলব না। আমরা বলব তাঁর কান আছে কি না যেহেতু কুরআন ও সহীহ হাদীছে নেই তাই আমরাও জানি না।
১০) মুমিন লোকেরা পরকালে আল্লাহকে দেখবে। (সূরা ক্বিয়ামাহ/২২,২৩)
১১) আল্লাহর ক্লান্তি নেই। (সূরার বাক্বারা/২৫৫)
১২) আল্লাহর তন্দ্রা ও ঘুম নেই। (সূরা বাক্বারা/২৫৫)
১২) আল্লাহ খুশি হন।
১৩) আল্লাহ হাসেন।
১৪) আল্লাহ রাগান্বিত হন, ইত্যাদি।
সাবধান ! এ সব গুণাবলীর কোনটিকে অস্বীকার করলে, অপব্যাখ্যা করলে, সৃষ্টির কোন গুণের সাথে তুলনা করলে কিংবা ধরন নিরূপণ করলে তাওহীদের সম্পূর্ণ প্রাসাদ চুরমার হয়ে যাবে।
আল্লাহ আমাদেরকে তাওহীদের সঠিক জ্ঞান অর্জনের তাওফীক দান করুন। কারণ, এ জ্ঞানই সবচেয়ে মূল্যবান। আল্লাহ আমাদের তাওহীদের কথা বলার শক্তি দান করুন। কেননা, এ কথাই পৃথিবীর সবচেয়ে দামী কথা। সেই সাথে ক্ষমতা দান করুন তাওহীদ ভিত্তিক ইবাদত করার। কারণ, এটা ছাড়া সকল ইবাদতই অন্তসার শুণ্য এবং আকাশে উৎক্ষিপ্ত ধুলিকনার মত মূল্যহীন।