পূর্বে প্রকাশিতের পর:
৯ম পর্ব
হরিষে বিষাদ
ইসলাম গ্রহণের সাথে সাথে স্বজন হারা, নিঃস্ব এবং নিরাশ্রয় হতে হয়েছিল। এ সময়ে মনের অবস্থা কি হতে পারে সেকথা সহজেই অনুমেয়।
আমার ইসলাম গ্রহণের কারণে যাঁরা ক্ষুদ্ধ ও রুষ্ট হয়ে ছিলেন তাঁদের পক্ষ থেকে প্রচণ্ড আঘাতও এসেছিল ঠিক এই সময়েই।
চারিদিকে বিপদের এ ঘন-ঘটনার মধ্যেও একটি কারণে আমি সম্পূর্ণ শান্ত ও অবিচল থাকতে পেরে ছিলাম। আর সেই কারণটি হলো-ইসলাম গ্রহণ। সর্বশক্তিমান আল্লাহকে একমাত্র প্রভূ, একমাত্র সহায় ও একমাত্র রক্ষক হিসাবে আঁকড়ে ধরার ফলে কোন বিপদই সেদিন আমার কাছে বিপদ বলে অনুভূত হয়নি। এত বিপদের মধ্যেও যখনই মনে হয়েছে যে, আমি আল্লাহর মনোনীত দীনকে গ্রহণ করেছি তখনই এক অনির্বচনীয় আনন্দে আমার মন ভরে উঠেছে।
পূর্বেই বলা হয়েছে যে,এক শ্রেণীর হিন্দু কর্তৃক আমার প্রতি ঠাট্টা-বিদ্রুপ বর্ষণ,নিন্দা-কুৎসা প্রচার, এমন কি দৈহিক নির্যাতন চালিয়ে যাওয়াকেও আমি স্বাভাবিক বলেই ধরে নিয়েছিলাম এবং বলতে গেলে সে জন্যে মনে মনে প্রস্তুত হয়েই ইসলাম গ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু কোন মুসলমানের পক্ষ থেকে তেমন কিছু কোন ঘটতে পারে এটা ছিল আমার কল্পনারও বাইরে। অথচ দুর্ভাগ্যবশত আমার জীবনে তা ঘটেছে এবং আজও ঘটে চলেছে।
ভেবেছিলাম এ সম্পর্কে কিছু লিখবো না। কেননা, এতদ্বারা এক দিকে যেমন গোটা মুসলমান সমাজের মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করা হবে অন্যদিকে এ ই ঘটনাসমূহের কথা জেনে কোটি কোটি ঈমানদার মুসলমানের মনও বেদনা-ক্লিষ্ট হয়ে উঠবে। এমনকি, ইসলামকে সামান্যতম ভালবাসেন এমন ব্যক্তিও দুঃখ অনুভব না করে পারবেন না।
কতিপয় ব্যক্তির ব্যবহারের কথা তুলে গোটা মুসলমান সমাজের মর্যাদা হানি করা ও কোটি কোটি মুসলমানের মনকে বেদনা-ক্লিষ্ট করার ইচ্ছা আমার ছিল না। তাই মূল পুস্তকেই এই প্রসঙ্গটি তুলে ধরা থেকে নিজেকে বিরত রেখেছিলাম।
কিন্তু জীবনের শেষ প্রান্তে উপনীত হয়ে আজ মনে হচ্ছে যে, অন্ততঃ মুসলমানদের আত্মসচেতন ফিরিয়ে আনার জন্যে এ সম্পর্কে কিছু লেখা প্রয়োজন, অন্যথায় আল্লাহর কাছে আমাকে দায়ী হতে হবে।
স্থানাভাব এবং পাঠকবর্গের ধৈর্যচ্যুতির ভয়ে সব কথা এখানে তুলে ধরা সম্ভব হলো না। ভিন্ন ভিন্ন উপ-শিরোনাম দিয়ে কয়েকটিমাত্র ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নে তুলে ধরা হলো। যদি আরও কিছুদিন বেঁচে থাকি এবং আল্লাহ তওফিক দান করেন তবে ‘অশ্রু দিয়ে লিখে যাই’। নাম দিয়ে একখানা বই লিখবো এবং তার মধ্যে যতটা সম্ভব বিস্তারিতভাবে ঘটনাগুলো তুলে ধরবো।
শাক দিয়ে মাছ ঢাকার এই ঘৃণ্য প্রচেষ্টা কেন?
যে সব কারণে আমি পৈত্রিক ধর্মের উপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠেছিলাম তার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল সেই ধর্মের ‘জাতিভেদ প্রথা’।
এই প্রথার মাধ্যমে অন্ত্যজ, অচ্ছাৎ, শঙ্কর বর্ণ, প্রতিলোম, হরিজন প্রভৃতি এক কথায় ‘দাসজাতি’ আখ্যা প্রদান করত হাজার হাজার বছর ধরে কোটি কোটি মানুষকে কিভাবে বংশ পরস্পরায় দাসত্ব নিগড়ে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে সেকথা কারো অবিদিত নয়।
সেই অন্ধকার যুগে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে বিদ্যমান দাস প্রথার কথা স্মরণ করত আজও অনেককে ঘৃণায় নাসিকা কুঞ্চিত করতে এবং সমালোচনায় পঞ্চমুখ হতে দেখা যায়। কিন্তু সেই থেকে হাজার হাজার বছর ধরে আজও ভারতের বুকে যে অতি জঘন্য ধরনের দাস প্রথা প্রচলিত রয়েছে সে সম্পর্কে উক্ত মহলকে টু শব্দটিও করতে দেখা যায় না।
এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় না গিয়ে মোটামুটিভাবে বলা যেতে পারে যে, ধর্মীয় দৃষ্টি ভঙ্গিই এই মৌনতার অন্যতম প্রধান কারণ বলে আমি মনে করি।
বইটি আর লিখে যেতে পারেনি
কেননা, ভারতের এই দাসত্ব হলো-ধর্মীয় দাসত্ব। অর্থাৎ ধর্মীয় বিধান কর্তৃপক এই দাসত্ব -প্রথা প্রবর্তিত হয়েছে, ধর্মীয় বিধান কর্তৃক একে চালু রাখা হয়েছে এবং ধর্মীয় বিধান কর্তৃক এটিকে অলঙঘ্য অপরিবর্তনীয় বলে ঘোষণার মাধ্যমে চিরস্থায়ী করে তোলা হয়েছে।
অতএব ন্যায়ের বিচারে এই প্রথা যত ক্ষতিকর এবং দূষণীয়ই হোক, যাঁরা এই ধর্মীয় বিধানের সমর্থক এবং অনুসারী, বোধগম্য কারণেই তাদের মুখ থেকে এই প্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তো দূরের কথা সামান্যতম বিরূপ মন্তব্যও আশা করা যেতে পারেনা।
তাছাড়া বিপদের ভয়ও রয়েছে। কেননা, এই প্রথার সামান্যতম বিরুদ্ধাচরণকেও ধর্মীয় বিধান কর্তৃক নিষিদ্ধ এবং ভীষণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ইহকাল সমাজচ্যুতি এবং পরকালে স্বর্গচ্যুতি এই উভয়বিধ বিপদের কথা স্মৃতিতে জাগরুক থাকার প্রথাটিকে অন্যায় এবং মানবতা বিরোধী জেনেও কেউ মুখ খুলতে পারছেন না।
এইতো হলো সাধারণভাবে সকল মানুষের অবস্থা। আর বিশেষভাবে যারা অবস্থার শিকার অর্থাৎ অন্ত্যজ, অশুচী, ছোটজাত প্রভৃতি আখ্যাপ্রাপ্ত দাস জাতীয় কোটি কোটি মানুষ; তাদের অবস্থা হলো-ঠাকুর পুরোহিতদের কাছে হাজার হাজার বছর ধরে বংশানুক্রমিকভাবে তারা জেনে আসছে যে, এই দাসত্ব এবং নির্যাতন ভোগ তাদের নিজেদেরই কর্মফল।
পূর্বজনমে যে-সব পাপও অন্যায় তারা করেছে তারই প্রায়শ্চিত্ত ভোগের জন্যে এ জনমে তারা ছোটজাত হয়ে জন্মগ্রহণ করেছে। এটা দয়াময় বিধির অলঙঘ্য বিধান এবং অদৃষ্ট বা কপালের লিখন। সুতরাং এ জন্যে শাস্ত্রকর্তা, ভগবান এবং নির্যাতনকারী মাসুষেরা মোটেই দায়ী নয়।
এই হীনমন্যতার অভিশাপ হাজার হাজার বছরে ওদের মন মস্তিষ্ককে এমনভাবেই আচ্ছন্ন-অভিভূতকরে ফেলেছে যে, ওরা যে মানুষ এবং ওদেরও যে মানুষের মতো মর্যাদা ও সম্মানের সাথে বেঁচে থাকার জন্মগত অধিকার রয়েছে সেকথা কল্পনা করতেও আজ আর ওরা সক্ষম নয়।
অবস্থা এমন পর্যায়েই নেমে এসেছে যে, আজ কেউ যদি ওদের এই অধিকার থাকার কথা বলে তবে ওরা ভীষণভাবে বিস্মিত হয় এবং এমন কথা চিন্তা করাকেও ওরা অতি জঘন্য ধরনের পাপ ও ভীষণভাবে ধর্ম বিরোধী বলে প্রত্যাখ্যান করে।
মোট কথা, হাজার হাজার বছরে ধরে এই প্রথা চালু থাকার ফলে এটা সমাজ কর্তৃক সঙ্গত ও স্বাভাবিক বলে গৃহীত হয়েছে। অর্থাৎ এটা যে অতি জঘন্য এবং মানবতা বিরোধী কাজ-অত্যাচারী এবং অত্যাচারিত এ উভয়ের মন থেকেই সেই অনুভূতি সর্ম্পর্ণরূপে তিরোহিত হয়ে গিয়েছে।
সুদূর অতীতে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে প্রচলিত দাস প্রথার কথা স্মরণ করত যাঁরা ঘৃণায় নাসিকা কুঞ্চিত করেন এবং সমালোচনার ঝড় তোলেন তাঁদের অবগতির জন্যে বলা প্রয়োজন যে, জঘন্যতার দিক দিয়ে ভারতের এই দাসপ্রথার সাথে পৃথিবীর অন্য কোন দেশের দাসপ্রাথার কোন তুলনাই হতে পারে না।
কারণ :
(ক) পৃথিবীর অন্যান্য দেশের দাসদেরকে ব্যক্তিগতভাবে দাস বলে বিবেচনা করে হতো। দয়াপরবশ হয়ে অথবা মুক্তিপণের বিনিময়ে প্রভূ কর্তৃক মুক্ত হলে সে ব্যক্তি আর দাস বলে ববেচিত হতো না-স্বাধীন মানুষের মর্যাদায় ফিরে যেতো।
তাছাড়া যেহেতু ওটা ছিল ব্যক্তিগত দাসত্ব। অতএব সংশ্লিষ্ট দাসের পিতা-মাতা বা বংশের উপর এই দাসত্বের কোন প্রভাব পড়তো না। অর্থাৎ দাসদের পিতা-মাতা এবং বংশীয় মানুষেরা সমাজের অন্যান্য স্বাধীন মানুষদের সাথে সম-মর্যাদা ভোগ করতো।
(খ) পক্ষান্তরে ভারতীয় দাসেরা কোন কারণে প্রভূ কর্তৃক মুক্তি পেলেও তাদের দাসত্ব মোচন হয় না। কেননা, ধর্মীয় বিধান এবং সামাজিক ব্যবস্থানুযায়ী তারা বংশানুক্রমিকভাবে চিরন্তন কালের দাস আর এই দাসত্ব করার জন্যেই তাদের জন্ম হয়েছে।
(গ) পৃথিবীর অন্যান্য দেশের দাস-প্রথার সাথে ধর্মের বা পরকালের কোন সম্পর্কে ছিল না। তা ছিল একান্তরুপেই পার্থিব ও ব্যক্তিগত ব্যাপার। পক্ষান্তরে ভারতীয় দাসপ্রথা সম্পূর্ণরূপে ধর্মানুমোদিত এবং কোন পক্ষ থেকে এই প্রথার সামান্যতম লংঘনের জনেও ইহলোকে তো বটেই এমনকি পারলৌকিক জীবনের অনন্তকালব্যাপী শাস্তি অবধারিত থাকার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। এ নিয়ে আর কিছু যারা হিন্দুধমের দাসপ্রথা সম্পর্কে জানতে আগ্রহী তাঁদের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, তাঁরা যেন আমার লিখিত ‘আর্তনাদের অন্তরালে’ নামক বইখানা অনন্ত একবার পাঠ করেন।
মানুষে মানুষে এই ভেদ-বৈষম্য এবং এক বা একাধিক শ্রেণী কর্তৃক কোটি কোটি মানুষকে পশু অপেক্ষা ও হীন ও জঘন্য মনে করা এবং তাদের উপর প্রভূত্ব বিস্তার শোষণ নির্যাতন চালিয়ে যাওয়া সম্পর্কে আমি গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করেছি। বিবেক এটাকে অতি জঘন্য কাজ বলে রায় দিয়েছে। মনে প্রশ্ন জেগেছে ঃ
এটা কি করে ধর্মের কাজ এবং ধর্মানুমোদিত হতে পারে? ধর্ম হলো বিশ্বপ্রভূর এক অমর ও অতুলনীয়অবদান। মানুষকে মর্যাদাশালী তথা মহীয়ান গরীয়ান বা সৃষ্টির সেরা করে গড়ে তোলাই হলো ধর্মের কাজ, অনন্ত তা ই হওয়া উচিত।
এমতাবস্থায় কোন ধর্ম যুদি মানুষকে মর্যাদাশীল তথা মহীয়ান গরীয়ান করে গড়ে তোলার পরিবর্তে এক মানুষের দ্বারা অন্য মানুষের মর্যাদাকে ধুলায় লুটিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয় তবে তাকে কি করে ধর্ম বলা যেতে পারে? এমনিভাবে কোটি কোটি মানুষের মর্যাদাকে যে ধর্ম চিরতরে ধুলায় লুটিয়ে দিলো তাকে আর যা-ই হোক কোনক্রমেই ‘মানবধর্ম’ বলা যেতে পারে না।
‘বিবেকের তাড়নায় ছুটে গিয়েছি এবং পৃথিবর কোথাও ‘মানবধর্ম’ অর্থাৎ যে ধর্মে সকল মানুষের সম অধিকার ও সম মর্যাদা রয়েছে এমন কোন ধর্ম আছে কিনা তা জানতে চেয়েছি।
দুঃখের বিষয়, সাধ্যানুযায়ী যে সব ধর্মের সাথে আমি পরিচিত হতে পেরেছি তার সবগুলোই আমাকে নিদারুণভাবে হতাশ করেছে। কেননা, তাদের প্রায় সব ক’টিই গুরু-পুরোহিত ধর্মাধ্যক্ষ, ঈশ্বরের অংশ, অবতার, সদা প্রভূর ঔরস-জাত একমাত্র সন্তান, অতিমানব, মহামানব প্রভৃতি কোন না কোন আখ্যা প্রদান করতে ব্যক্তি বিশেষ বা শ্রেণী বিশেষকে সাধারণ মানুষদের উপর জগদ্দল পাথরের মতো চাপিয়ে দিয়েছে। কালক্রমে এই ব্যক্তি বা সেই শ্রেণীর মানুষেরা সাধারণ মানুষদের উপাস্য বা নমস্যরূপে পরিগণিত হয়েছেন।
কোন কোন ধর্ম গাত্র-বর্ণ, বংশ, গোত্র, ধর্ম-সম্পদ, দৈহিক শক্তি, শিক্ষা-দীক্ষা, প্রভাব প্রতিপত্তি প্রভৃতির উপর গুরুত্ব আরোপ করত বিশেষ সুবিধা ভোগী এক বা একাধিক ‘বড়জাত’ সৃষ্টি করত সাধারণত মানুষদের মর্যাদাকে অস্বীকার করেছে।
এসব দেখেশুনে যখন হতাশ হয়ে পড়েছি তখন ইসলাম এবং একমাত্র ইসলামই আমাকে হতাশামুক্ত করেছে। শুধু তাই নয় মানব ধর্মের প্রকৃত চেহারা কি হওয়া উচিত সে সম্পর্কেও আমার সম্পর্কে এক অনবদ্য রূপরেখা একে দিয়েছে।
এমনিতেই আলোচনা দীর্ঘায়িত করত পাঠকবর্গের ধৈর্যচ্যুতির যথেষ্ট কারণ ঘটিয়েছি। অতএব ইসলাম মানুষের গড়া ভেদ-বৈষম্যের চির অবসান ঘটিয়ে কিভাবে মনবতাকে চির ভাস্বর ও চির সমুন্নত করে তুলেছে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা আর ঙ্গত হতে পারে না। তাই সে সম্পর্কে অতি সংক্ষেপে কিছুটা আলোকপাত করে আমার আসল বক্তব্যকে তুলে ধরছি।
ইসলাম সম্পর্কে জানতে গিয়ে আমি বিশেষভাবে লক্ষ্য করেছি যে,পবিত্র কুরআন এবং হাদীসের গ্রন্হসমূহ দুটি বিষয়ের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরো করেছে। তার একটি হলোঃ বিশ্বপতি আল্লাহর একত্ব এবং সার্বভৌমতব, দ্বিতীয়টি হলোঃ এই সৃষ্টিজগতে মানুষের মর্যাদা,অধিকার এবং কর্তব্য।
মানুষের মর্যাদার কথা বলতে গয়ে ইসলাম সুস্পষ্ট এবং দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেছে মানুষ সৃষ্টির সেরাজীব এবং আল্লাহর প্রতিনিধি। ”
আমি অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি যে,পৃথিবীর অন্য কোন ধর্ম মাটির মানুষকে সৃষ্টির সেরা এবং অসীম অনন্ত আল্লাহর প্রতিনিধি হওয়ার মতো এত বড় সম্মান ও মর্যাদা দেয়নি দিতে পারিনি।
এমন কি এই বিংশ শতাব্দীর শেষ পাদেও যে সব উত্তম,যে সব মতবাদ ও যে সব সংস্থা-সংগঠন মানুষের মর্যাদা ও অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করতে গিয়ে সারা বিশ্বে ভীষণ আলোড়নের সৃষ্টি করেছে,খোঁজ খবর নিলে দেখা যবে যে, মানুষের সম্মান ও মর্যাদা সম্পর্কে তাদের ধ্যান-ধারণা আজও অত্যন্ত নিম্ম পর্যায়েই রয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ মানুষ যে আল্লাহর প্রতিনিধি, মানুষ সম্পর্কে এত বড় একটা ধারণায় উপনীত হওয়ার মতো মন মানসই আজ অবধি তাদের মধ্যে গড়ে উঠতে পারেনি।
কেউ হয়তো বলতে পারেন যে, হিন্দুধর্মের কোন কোন গ্রন্হ মানুষ অর্থাৎ নরকে ‘নারায়ন’ এবং জীবকে ‘শিব’ বলে আখ্যায়িত করেছে। মানুষ বিশেষকে উক্ত ধর্ম ভগবান,ঈশ্বরের অংশ অবতার প্রভৃতি বলতেও ত্রুটি করেনি। এমতাবস্থায় ‘প্রতিনিধি হওয়া অপেক্ষা ভগবান বা ঈশ্বর বলে আখ্যা লাভ-ই তো অধিক সম্মান জনক।
তাঁদের কথার উত্তরে অত্যন্ত বিনময়ের সাথে আমি বলতে চাই যে, নরকে ‘নারায়ণ’ এবং জীবকে ‘শিব’ বলে আখ্যায়িত করলেই নর নারায়ন হয়ে যায় না- জীবও শির হয় না। অনুরূপভাবে নয় বা জীবের পক্ষে ভগবান, ঈশ্বর প্রভৃতি হওয়াও সম্ভব নয়। (চলবে)
১ম পর্ব ২য় পর্ব ৩য় পর্ব ৪র্থ পর্ব ৫ম পর্ব ৬ষ্ঠ পর্ব ৭ম পর্ব ৮ম পর্ব