শেষ দিবসের (পরকালের) প্রতি ঈমান

শেষ দিবসের (পরকালের) প্রতি ঈমান

শেষ দিবসের (পরকালের) প্রতি ঈমান

এ দিবসের প্রতি বিশ্বাসের অর্থ:দৃঢ় এ বিশ্বাস রাখা যে কিয়ামত দিবস অবশ্যই সংঘটিত হবে। অতএব, আমাদের প্রত্যেকেই বিশ্বাস করে যে আল্লাহ মানুষদেরকে কবর থেকে উত্থিত করবেন, অতপরঃ তাদের হিসাব নিয়ে কৃতকর্ম অনুযায়ী তাদেরকে প্রতিদান দিবেন। অবশেষে জান্নাতীগণ জান্নাতে এবং জাহান্নামীরা জাহান্নামে স্থায়ী হবে। কিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাস ঈমানের ছয়টি রুকনের (স্তম্ভের) অন্যতম। কেউ এর প্রতি বিশ্বাস না রাখলে তার ঈমান সঠিক হবে না।

শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস তিনটি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে:

১- পুনরুত্থানে বিশ্বাস:

তা হলো মৃত ব্যক্তিদেরকে কবর থেকে পুনরুজ্জীবিত করা, মৃত শরীরে আত্মা ফিরিয়ে দেওয়া, অতপরঃ সকল মানুষ আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান হবে, তারপর তাদেরকে পোশাক, জুতা ও খাতনা বিহীন অবস্থায় এক যায়গায় একত্রিত করা হবে। । পুনরুত্থানের দলীল: আল্লাহ বলেন:

 ﴿ثُمَّ إِنَّكُمْ بَعْدَ ذَلِكَ لَمَيِّتُونَ (15) ثُمَّ إِنَّكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ تُبْعَثُونَ﴾ [المؤمنون : 15- 16 [

অর্থ: তারপর নিশ্চয়ই তোমাদেরকে এর পরে মৃত্যুবরণ করতে হবে। তারপর নিশ্চয়ই তোমাদেরকে ক্বিয়ামতের দিন পুনরায় উঠানো হবে। সূরাহ্‌ আল মু’মিনূন আয়াত ১৫-১৬।

একত্রিত করার (হাশরের) দলীল: রাসূল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বাণী:

 يحشر الناس يوم القيامة حفاة عراة غُرْلا

অর্থ: কিয়ামতের দিন মানুষদেরকে জুতা, পোশাক এবং খাতনা বিহীন অবস্থায় সমবেত করা হবে। বুখারী ও মুসলিম ।

২- হিসাব-নিকাশ এবং মীযানে (দাঁড়ি পাল্লা) বিশ্বাস:

সৃষ্টিজীব দুনিয়াতে যে সকল আমল করেছে আল্লাহ্ কিয়ামতের দিন তাদের সে সকল কর্মের হিসাব নিবেন। অতএব, যে ব্যক্তি তাওহীদবাদী এবং আল্লাহ ও রাসূলের (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুসারী হবেন তাঁর হিসাব খুব সহজ হবে। আর যদি কোন ব্যক্তি শির্‌ক করে এবং আল্লাহ্‌ ও রাসূলের (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অবাধ্য হয়ে থাকে তবে তার হিসাব খুব কঠিন হবে। বড় একটা পাল্লায় আমল সমূহ ওজন করা হবে, ভালো আমল গুলো এক পাল্লায় রাখা হবে, খারাপ আমল গুলো অন্য পাল্লায় রাখা হবে।

যার খারাপ আমলের চেয়ে ভালো আমলের পাল্লা ভারী হবে তিনি জান্নাতী হবেন। অপর দিকে যার ভালো আমলের চেয়ে খারাপ আমলের পাল্লা ভারী হবে সে জাহান্নামী হবে। হিসাবের দলীল: আল্লাহ বলেন:

  ﴿فَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ (7) فَسَوْفَ يُحَاسَبُ حِسَابًا يَسِيرًا (8) وَيَنْقَلِبُ إِلَى أَهْلِهِ مَسْرُورًا (9) وَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ وَرَاءَ ظَهْرِهِ (10) فَسَوْفَ يَدْعُو ثُبُورًا (11) وَيَصْلَى سَعِيرًا﴾  الإنشقاق

অর্থ: অতঃপর যার ডান হাতে তার আমলনামা দেয়া হবে। অতঃপর অচিরেই তার হিসাব নিকাশ সহজ করা হবে। বস্তুতঃ সে তার পরিবারবর্গের নিকট সন্তুষ্ট চিত্তে প্রত্যাবর্তন করবে। কিন্তু যার আমলনামা তার পিঠের পিছনের দিক থেকে দেয়া হবে। অতঃপর সে অচিরেই মৃত্যুকে ডাকবে এবং সে উত্তপ্ত জাহান্নামে প্রবেশ করবে। সূরাহ্‌ আল ইনশিক্বাক্ব আয়াত ৭-১২।

মীযান বা মাপ যন্ত্রের দলীল হল: আল্লাহ বলেন:

﴿وَنَضَعُ الْمَوَازِينَ الْقِسْطَ لِيَوْمِ الْقِيَامَةِ فَلَا تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْئًا وَإِنْ كَانَ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِنْ خَرْدَلٍ أَتَيْنَا بِهَا وَكَفَى بِنَا حَاسِبِينَ﴾ (47) الأنبياء

অর্থ: আমি কিয়ামতের দিন ন্যায়বিচারের মানদন্ড স্থাপন করব। অতঃপর কারো ওপর বিন্দুমাত্র যুলুম করা হবে না। আমল যদি সরিষা দানা পরিমাণও হয় তাও আমি উপস্থিত করব। বস্তুত হিসাব গ্রহণকারী হিসেবে আমিই যথেষ্ট। সূরাহ্‌ আল আম্বিয়া’ আয়াত ৪৭।

৩- জান্নাত ও জাহান্নাম: জান্নাত হলো চির স্থায়ী নিয়ামতের স্থান। আল্লাহ মুমিন মুত্তাক্বীনগণের জন্য তা প্রস্তুত করে রেখেছেন। যাঁরা তাঁর ও রাসূলের (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনুগত্য করেন। সেখানে আল্লাহ্‌ তায়া’লা খাদ্য, পানীয়, পোশাক-পরিচ্ছদ এবং পছন্দনীয় বস্তু সহ যাবতীয় নিয়ামত সমূহ জমা করে রেখেছেন।

কিন্তু জাহান্নাম!! তা চিরস্থায়ী শাস্তির স্থান। আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসূলের (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অবাধ্য কাফিরদের জন্য আল্লাহ  এ জাহান্নাম প্রস্তুত করে রেখেছেন। সেখানে রয়েছে বিভিন্ন রকম শাস্তি, যন্ত্রণা এবং দন্ড যা কোন দিন কেউ কল্পনাও করতে পারেনা।

জান্নাতের দলীল: আল্লাহ বলেন:

﴿وَسَارِعُوا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ﴾ آل عمران : 133

অর্থ: আর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা ও জান্নাতের জন্য দ্রুত অগ্রসর হও, যার প্রশস্ততা হলো আসমান ও যমীন সমতুল্য। যা মুত্তাক্বীনদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। সূরাহ্‌ আলি ইমরান আয়াত ১৩৩। আল্লাহ্‌ তায়া’লা অন্যত্র বলেন:

﴿فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ﴾ السجدة : 17

অর্থ: কেউ জানে না তাদের জন্য তাদের কৃতকর্মের প্রতিদান  স্বরূপ (আল্লাহর নিকট) চোখ জুড়ানো কি কি বস্তু গোপন রাখা হয়েছে । সূরাহ্‌ আস্‌ সাজদাহ্‌ – ১৭। জাহান্নামের দলীল হল: আল্লাহ বলেন:

﴿فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِي وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ﴾  البقرة : 24

অর্থ: সুতরাং তোমরা সে আগুনকে ভয় কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যা কাফিরদের জন্য তৈরী করা হয়েছে। সূরাহ্‌ আল বাক্বারাহ্‌ আয়াত ২৪। অপর স্থানে তিনি (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) বলেন:

﴿إِنَّ لَدَيْنَا أَنْكَالًا وَجَحِيمًا (12) وَطَعَامًا ذَا غُصَّةٍ وَعَذَابًا أَلِيمًا﴾  13   المزمل 

অর্থ: নিশ্চয়ই (তাদের জন্য) আমার নিকটে রয়েছে ভারী শিকল ও প্রজ্জলিত আগুন। আর গলায় আটকানো খাদ্য এবং যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। সূরাহ্‌ আল মুয্‌যাম্মিল আয়াত ১২-১৩।

হে আল্লাহ্‌ আমরা আপনার নিকটে জান্নাত এবং তার নিকটবর্তীকারী কথা ও কাজের তৌফীক্ব কামনা করছি। জাহান্নাম এবং তার নিকটবর্তীকারী  কথা ও কাজ থেকে আপনার নিকটে আশ্রয় চাচ্ছি। আমীন ।

 

ইসলামী আক্বীদাহ্‌ ও তার গুরুত্বের উপরে একটি প্রারম্ভিকা:

 আক্বীদাহ্‌ (বিশ্বাস) ও শরীয়তের (মতাদর্শের) সমন্বয় হল ইসলাম ধর্ম। আক্বীদাহ্‌  দ্বারা সেই সকল বিষয় উদ্দেশ্য যেগুলো আত্মা সত্যায়ন করে, তাতে অন্তর শান্তি পায় এবং হৃদয়ে এমন বিশ্বাস জন্ম হয় যাতে কোন সন্দেহ ও সংশয় থাকে না।

শরীয়ত দ্বারা উদ্দেশ্য হল: সেই সকল কাজ যা করতে ইসলাম আদেশ দিয়েছে। যেমনঃ সালাত (নামাজ), যাকাত, সিয়াম (রোযা), এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা ইত্যাদী।

ইসলামী আক্বীদাহ্‌ বা বিশ্বাসের ভিত্তি:

১- আল্লাহ্‌ তায়ালার প্রতি বিশ্বাস।

২- তাঁর মালাইকা বা ফেরেশ্‌তাগণের প্রতি বিশ্বাস।

৩- তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস।

৪- তাঁর রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস।

৫- কিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাস।

৬- তাক্বদীরের ভালো মন্দের প্রতি বিশ্বাস।

এর দলীল হলো আল্লাহ তায়ালার বাণী:

﴿لَيْسَ الْبِرَّ أَنْ تُوَلُّوا وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ﴾ البقرة : 177

অর্থ:  সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে। বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর, কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রাসূলগণের উপর। সূরাহ্‌ বাক্বারাহ্‌ আয়াত ১৭৭। ক্বদরের দলীল হলো আল্লাহর বাণী:

﴿إِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ (49) وَمَا أَمْرُنَا إِلَّا وَاحِدَةٌ كَلَمْحٍ بِالْبَصَرِ﴾  القمر : 49-50

অর্থ:  আমি প্রত্যেক বস্তুকে পরিমিতরূপে সৃষ্টি করেছি। আমার কাজ তো এক মুহূর্তে চোখের পলকের মত। সূরাহ্‌ আল ক্বামার আয়াত ৪৯-৫০। রাসূল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:

﴿قَالَ فَأَخْبِرْنِي عَنْ الْإِيمَانِ قَالَ أَنْ تُؤْمِنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ﴾  صحيح مسلم

অর্থ: জিবরীল রাসূল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকটে ঈমান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:ঈমান হলো তুমি; আল্লাহ্, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাব সমূহ, তাঁর রাসূলগণ, কিয়ামত দিবস এবং তাক্বদীরের ভালো মন্দের প্রতি বিশ্বাস রাখবে। সহীহ্‌ মুসলিম ১/৮৭।

Related Post